আচ্ছা মিঃ ডেসপার্ড, আমাকে সেই ঘরের একটা যথাযথ বিবরণ দিন, যে ঘরে মিঃ শ্যাতানা খুন হয়েছিলেন।
ডেসপার্ড হতাশভাবে বললেন, বিশেষ নজর দিয়ে দেখিনি…গোটাগতক ভালো জাতের কম্বল, কতগুলি মূর্তি, কিছু ছবি, একটি কৃষ্ণসার হরিণের মাথা ইত্যাদি।
মিঃ শ্যানার বনে জঙ্গলে গিয়ে শিকারের নেশা ছিল বলে আপনার নিশ্চয় মনে হয় না।
তিনি সেরকম পাত্রই নন, ঘরে বসে দাবা খেলা ছাড়া আর কিছুই খেলতেন না।
সেদিনের ব্রীজ খেলার কথা আপনার কিছু মনে আছে কি? মেজর ডেসপার্ড, ব্রীজ কি আপনি বেশি খেলেন?
না সেরকম কিছু মনে নেই আর ব্রীজ খেলা আমি ক্বচিৎ কদাচিৎ খেলি এই খেলায় যথেষ্ট বুদ্ধি দরকার।
পোয়ারো চিন্তামগ্ন কণ্ঠে বললেন, মিঃ শ্যাতানা তাসে তেমন আসক্ত ছিলেন না। একটা খেলায় তার উৎসাহ ছিল সেটা লোককে ভয় দেখানো।
ডেসপার্ড ঈষৎ বিব্রত হয়ে পড়লো। তিনি বললেন, এক হিসেবে তাকে ব্ল্যাকমেলার বলাই যুক্তসঙ্গত। এইজন্যেই প্রতিফলে তিনি মৃত্যুবরণ করলেন।
মিঃ পোয়ারো বললেন, তিনি মেয়েদের মনের গতিপ্রকৃতি ভালোভাবে বুঝতেন, তিনি তাদের গোপন কথা বার করার জন্য অনেক কৌশল অবলম্বন করতেন।
ডেসপার্ড অধৈর্য হয়ে বলে উঠলেন, সত্যিই অবিশ্বাস্য। লোকটা ছিলো পর্বতপ্রমাণ নির্বোধ। কথা বলতে বলতে ডেসপার্ড উঠে দাঁড়ালেন, তারপর বললেন, আচ্ছা আমার স্টপেজ এসে গেছে আবার দেখা হবে মিঃ পোয়ারো।
দ্রুত পায়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে গেলেন ভদ্রলোক।
পোয়ারো জানলা দিয়ে তাকিয়ে দেখলেন মেজর ডেসপার্ড লম্বা লম্বা পা ফেলে ফুটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন।
.
১৬.
সার্জেন্ট ওকোনার দেখতে শুনতে খুবই সুদর্শন। চওড়া, কাঁধ, দীর্ঘ দেহ, দুচোখে অকপট হাসির উচ্ছ্বাস। মেয়েরা তাকে দেখে প্রেমে পড়ে যেত। তার ফলে সে সহজেই কাজ উদ্ধার করতে পারত।
মিঃ শ্যাতানার খুনের চারদিন পর তাকে এলিসা ব্যাটেলের পাশের চেয়ারে বসে থাকতে দেখা গেছে।
এইমাত্র রাস্তা দিয়ে এক ভদ্রলোক গেলেন তাকে দেখতেই আমার পুরানো মনিব মিঃ ক্র্যাডকের কথা মনে পড়ে গেলো।
এলিসা কৌতূহলী হয়ে বলল, আমিও এক ক্র্যাডক দম্পতির বাড়ি কাজ করেছি। তাহলে আমরা একই বাড়িতে কাজ করেছি, ভদ্রমহিলা খুবই ঝামেলা পাকাতেন। তার সঙ্গে ডাক্তার রবার্টসের নাম জড়িয়ে অনেক রসালো খবর রটেছিলো। ডাক্তার ভদ্রলোক অতিশয় ভদ্র তিনি মিসেস ক্র্যাডককে পেশেন্ট হিসাবেই দেখতেন। মিঃ ক্র্যাডক অ্যানথ্রক্স রোগে মারা গিয়েছিলেন। সে সময় মিসেস ক্র্যাডক খুবই স্বামীর সেবা করেছিলেন। ডাক্তার রবার্টস যখন মিঃ ক্র্যাডক বেঁচেছিলেন তখন ক্র্যাডক দম্পতির বাড়িতে আসাযাওয়া করতেন কিন্তু তিনি মারা যাওয়ার পর আর আসেননি। মিসেস ক্র্যাডক হঠাৎ সমস্ত কিছু বিক্রী করে মিশরে চলে যান।
তা ঠিক, ওকোনার ঘাড় নেড়ে সায় দিলেন। ভদ্রমহিলা সেখানেই মারা যান।
.
১৭.
রোডা মনস্থির করল শ্ৰীমতী অলিভার তো তাকে দেখা করবার জন্য নিমন্ত্রণ জানিয়ে রেখেছেন, তবে কোনো সঙ্কোচ না করে শ্রীমতী অলিভারের বাড়ি যাওয়া যাক। এইসমস্ত চিন্তা করতে করতে রোডা রাস্তায় অনেকক্ষণ কাটিয়ে দিলেন। হাতে বাঁধা রিস্টওয়াচের দিকে নজর দিলেন, সাড়ে তিনটে বাজে, কারোর সঙ্গে দেখা করবার পক্ষে উত্তম সময়।
ফুট পেরিয়ে শ্রীমতী অলিভারের ফ্ল্যাটের সামনে এসে দাঁড়ালেন রোডা। হাত বাড়িয়ে কলিংবেলের বোতাম টিপলেন।
একজন মধ্যবয়স্কা মহিলা এসে দরজা খুলে দিলো।
মিসেস অলিভার কি বাড়িতে আছেন?
আসুন ভেতরে আসুন।
রোডা দরজা পেরিয়ে ভেতরে ঢুকলেন। প্রৌঢ়া দাসীর পেছন পেছন সরু বারান্দা পেরিয়ে শ্ৰীমতী অলিভারের ঘরের মধ্যে এসে দাঁড়ালেন। তার মনে হলো বুঝি আফ্রিকার জঙ্গলে এসে পড়েছেন। সারা ঘর জুড়ে নানারকম পাখির মেলা। টেবিলের সামনে একটা চেয়ারে শ্রীমতী অলিভার বসে আছেন। তার চুল উস্কোখুস্কো।
আরে রোডা যে। এসো এসো তোমাকে দেখে খুব খুশী হলাম।
আমি বোধহয় হঠাৎ এসে আপনাকে বিরক্ত করলাম, রোডা বিব্রত কণ্ঠে বললেন।
আরে না না, তোমাকে অতো ব্যস্ত হতে হবে না। শ্রীমতী অলিভার সহজভাবে বললেন, আমি অবশ্য লেখার কাজে মগ্ন ছিলাম।
রোডা অপ্রস্তুত হয়ে বললেন, বসে বসে একটা উপন্যাস লিখে ফেলা নিশ্চয়ই চমৎকার ব্যাপার।
শ্ৰীমতী অলিভার ব্যাজার মুখে বললেন, না, ব্যাপারটা কিন্তু সহজ নয়। লেখবার আগে, অনেক ভাবতে হয় আর এই ভাবনাটা খুবই ক্লান্তিকর।
কিন্তু বাইরে থেকে দেখলে তেমন কঠিন বলে মনে হয় না।
তোমার কাছে তা মনে না হবারই কথা, হাসিমুখে উত্তর দিলেন অলিভার; তোমার জন্য কফির বন্দোবস্ত করি।
দাসীকে ডেকে কফির অর্ডার দিলেন, তারপর ফিরে এসে মেরিডিথের কথা জিজ্ঞাসা করলেন।
রোজা বললেন, মেজর ডেসপার্ডের সঙ্গে মেরিডিথ সলিসিটরের কাছে গেছে। অ্যানা খুবই নার্ভাস হয়ে পড়েছে এই ঘটনার দরুন। সে আরও একবার এইরূপ সাংঘাতিক পরিস্থিতির মধ্যে জড়িয়ে পড়েছিলো। অ্যানা খুব স্পর্শকতার, কোনো কিছুর সম্মুখীন হতে ও খুব ভয় পায়।
শ্রীমতি অলিভার শান্ত ভাবে মাথা নাড়লেন এবং বললেন, তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমি সাহসী কিন্তু অ্যানার এই সাহসের একান্ত অভাব।
রোডা বিনীত কণ্ঠে বললেন, আপনাকে যা বললাম সেটা কিন্তু অ্যানার কাছে ফাঁস করে দেবেন না। এইসব বিষয়ে আলোচনা ও খুব অপছন্দ করে।