- বইয়ের নামঃ কার্ডস অন দি টেবল
- লেখকের নামঃ আগাথা ক্রিস্টি
- প্রকাশনাঃ সমতট
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, রোমাঞ্চকর, গোয়েন্দা কাহিনী
কার্ডস অন দি টেবল
১. মিঃ শ্যাতানা
০১.
মিঃ শ্যাতানা আর্জেন্টিয়ান, পর্তুগীজ, গ্রীক না অন্য কোনো জাতির লোক সে সম্বন্ধে কারো কিছু জানা নেই। ভদ্রলোক পার্ক লেনের আড়ম্বরপূর্ণ পরিবেশে বাস করেন।
মাঝে মাঝেই তিনি নানা রকমের পার্টি দেন। সেই পার্টিতে বিশিষ্ট সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিই স্থানলাভ করেন। পার্টির একটা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য আছে।
মিঃ শ্যাতানা এমনই লোক যে তাকে দেখলেই সকলে কেমন ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে ওঠেন।
সকলের ধারণা ভদ্রলোকের দৃষ্টি প্রচ্ছন্নভাবে বিরাজ করছে। মিঃ শ্যানার রসিকতার ধরনটাও কেমন অদ্ভুত।
সকলে তাকে এই কারণে এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করে।
আজকে যাকে কেন্দ্র করে কৌতুকপ্রবণতা গেজিয়ে উঠলো তিনি হচ্ছেন খর্বাকৃতি পোয়ারো।
মিঃ শ্যাতানা পোয়ারোকে তার ফ্ল্যাটে আমন্ত্রণ জানালেন। তিনি বললেন, আমার ফ্ল্যাটে একদিন চলে আসুন, অনেক আকর্ষণীয় জিনিষ দেখাতে পারবো। আমার সংগ্রহশালায় কেবলমাত্র পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ দ্রষ্টব্যগুলোই স্থান পেয়ে থাকে।
অপরাধ জগতের সর্বশ্রেষ্ঠ দ্রষ্টব্য বস্তু বলতে আপনি তাহলে কি মনে করেন?
আমি তাদেরই বলছি, যারা পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ খুনী!
হ্যাঁ যারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকেও নির্বিঘ্নে তাদের কাজ হাসিল করে গেছে। যাদের ইতিহাস কেবল সফলতায় ভরা, কোনো ঘনিষ্ঠ অন্তরঙ্গ পর্যন্ত এই সমস্ত অপকীর্তির বিন্দুবিসর্গও জানে না।
তিনি আরও উচ্ছ্বসিত ভাবে বললেন, জানেন মিঃ পোয়ারো, কেউ যদি কোনো কাজ নিখুঁত শিল্পসম্মত উপায়ে সমাধা করতে পারে তবে তাকে নিশ্চয় পুরস্কার দেওয়া উচিত। সব খুনীকেই হাতকড়া পরিয়ে ফাঁসির দড়িতে ঝোলাতে হবে, দূরদর্শিতার অভাব থেকেই আপনার মনে এমন ধারণার উদ্ভব হয়েছে। আমার মতে সরকারের তরফ থেকে এইসব খুনীদের জন্যে বিশেষ ভাতার বন্দোবস্ত থাকা প্রয়োজন। প্রত্যেক সভ্য নাগরিকের কর্তব্য এদের মহাসমারোহে সান্ধ্য ভোজে আপ্যায়িত করা। তাই আপনাকে শুক্রবার আঠারো তারিখে আমার ফ্ল্যাটে আসতে বলছি।
মিঃ শ্যাতানা বিদায় নিয়ে এগোলেন। পোয়ারো অনেকক্ষণ একদৃষ্টে তাকিয়ে রইলেন।
.
০২.
শুক্রবার মিঃ পোয়ারো মিঃ শ্যাতানার ফ্ল্যাটে গেলেন। উর্দিপরা খানসামা তাকে দরজা খুলে দিলেন।
পোয়ারোকে মহাসমারোহে ভেতরে নিয়ে গেলেন শ্যাতানা। আসুন সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিই…।
ইনি হচ্ছেন শ্রীমতি অলিভার, গোয়েন্দা ও রহস্য গল্পের লেখিকা। ভদ্রমহিলার খ্যাতি সর্বজনবিদিত। খুনীদের মানসিক গতিপ্রকৃতি, অপরাধীর প্রবণতা, গভীর তত্ত্বের কিছু প্রবন্ধও হালকা সুরে পরিবেশন করেছেন।
ভদ্রমহিলা হাসিমুখে পোয়ারোকে সাদর অভিবাদন জানালেন।
ধীর গম্ভীর কণ্ঠে প্রশ্ন করলেন শ্যাতানা, সুপারিন্টেন্টে ব্যাটেলের সঙ্গে নিশ্চয় আপনার আলাপ আছে?
লম্বাচওড়া ভদ্রলোক এগিয়ে এসে হাত বাড়িয়ে দিলেন।
স্কটল্যাণ্ড ইয়ার্ডের সুচতুর অফিসারদের মধ্যে সুপারিন্টেন্টে ব্যাটেলই সর্বশ্রেষ্ঠ।
শ্যাতানা আবার মুখ খুললেন, ইনি হচ্ছেন ব্রিটিশ সরকারের গুপ্তচর বিভাগের একজন উচ্চপদস্থ ধুরন্ধর কর্মচারী, কর্নেল রেস।
পোয়ারো চিন্তা করল যে মিঃ শ্যাতানার অতিথি নির্বাচনের ক্ষমতা আছে।
এরপর আরও অতিথি একে একে প্রবেশ করলেন–ডাঃ রবার্টস…ইনি একজন বিচক্ষণ ডাক্তার এবং তার রোগনির্ণয়ের মধ্যে যে কোনো ভুল থাকে না, রুগীর মনে এ বিশ্বাস জাগিয়ে তুলতেও ভদ্রলোক যথেষ্ট পারদর্শী।
এবারে মিঃ শ্যাতানাকে খানসামা এসে জানাল মিসেস লরিমার কথা।
মিসেস লরিমার বয়স ষাটের কাছাকাছি, ভব্যসভ্য পোষাকআসাক, মাথার চুল ধূসর বর্ণের, গলার স্বরও বেশ তীক্ষ্ণ।
খানসামার কণ্ঠস্বর আবার ধ্বনিত হলো–মেজর ডেসপার্ড। দীর্ঘকায় স্বাস্থ্যবান পুরুষ হচ্ছেন ইনি। নানাধরনের শিকার সম্পর্কে নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা গল্প করতে লাগলেন দুজনে।
এবার প্রবেশ করলেন…মিস মেরিডিথ…, ইনি সেদিনের শেষ অতিথি। বয়স বাইশ তেইশের মধ্যে। সর্বাঙ্গে একটা বিষাদকোমল শ্ৰী আছে।
মিস মেরিডিথের সঙ্গে মিঃ পোয়ারোর আলাপ করিয়ে দিলেন মিঃ শ্যাতানা।
মিস মেরিডিথ বললেন, আমি আপনার বিষয়ে অনেক কথাই কাগজে পড়েছি। এ.বি.সি. মার্ডারের মতো রোমহর্ষক মামলার আসামীকে আপনিই তো পুলিসের হাতে ধরিয়ে দিয়েছিলেন। স্কটল্যাণ্ড ইয়ার্ডের বড় বড় কর্তারা এই রহস্যের কোনো হদিশ পাচ্ছিলেন না।
মিস মেরিডিথ এবার মিঃ শ্যাতানার সম্বন্ধে বলতে শুরু করলেন কিন্তু মাঝপথে থেমে গেলেন।
পোয়ারো শান্ত কণ্ঠে বাকিটা ব্যক্ত করলেন। ভদ্রলোক খুবই অপরাধপ্রবণ। তার চোখের দৃষ্টিও ক্রুর। তাকে দেখলে লোকের মনে ত্রাসের সঞ্চার হয়। কিন্তু ভদ্রলোকের ডিনারটা খুবই উপভোগ্য।
ইতিমধ্যে ডিনারের ডাক পড়লো। পোয়ারোর অনুমান সর্বৈব সত্য রাজকীয় আয়োজন খাদ্য তালিকায় ত্রুটিহীন পরিবেশন।
অতিথিরা সবাই খুব তৃপ্তি করে এবং রসিকতা করতে করতে এই ডিনারটি উপভোগ করলেন। ডিনার সারতে সারতে এক একজন নানাধরনের খুনের প্রক্রিয়া ব্যক্ত করতে লাগলেন।
মেজর ডেসপার্ড শুষ্ক স্বরে বললেন, বুনো জাতিরা স্বভাবতই প্রাচীন পন্থী। তারা তাদের পিতা-প্রপিতামহের বহু ব্যবহৃত পুরানো পন্থাই অনুসরণ করে চলে।