ঘটনা গ-এডওয়ার্ড রিগস।
কৃষি শ্রমিক। তার সুন্দরী স্ত্রীর সঙ্গে জমির মালিকের গোপন প্রণয় ছিল। একদিন হঠাৎ জমির মালিক ক্রেগ ও এডওয়ার্ডের স্ত্রীকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া গেল। রিগসের বন্দুক ছিল। পুলিশ প্রমাণ পেয়েছে সেই বন্দুক থেকে গুলি ছোঁড়া হয়েছে। রিগসকে অ্যারেস্ট করা হল। প্রথমে মৃত্যুদণ্ড হলেও, মস্তিষ্ক বিকৃতির জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হল।
ঘটনা ঘ–ম্যাথু লিচফিল্ড।
নিষ্ঠুর বয়স্ক প্রকৃতির। চার মেয়ে। লিচফিল্ডের দাপটে সবাই তটস্থ। এক কানাকড়িও খরচ করে কাউকে দেয় না। এক সন্ধ্যায় যখন বাড়ি ফেরেন কে যেন হাতুড়ির ঘা বসিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেয়। হাসপাতালে মৃত্যু হয়। পুলিশি তদন্ত শুরু হলে, তার বড় মেয়ে মার্গারেট থানায় কবুল করে সেই বাবাকে মেরেছে। কারণ কী? না, বাবা বড় অত্যাচারী ও কৃপণ। পরের বোনেরা যাতে সুখে থাকে, সেই ভেবে একাজ সে করেছে। মিঃ লিচফিল্ড প্রভূত ধনসম্পত্তি রেখে গেছেন। বিচার কালে মার্গারেটের মস্তিষ্ক বিকৃতি দেখা গেল, হাসপাতালে ভর্তি করা হল এবং কিছুদিন পরে মারা গেল।
পর পর সাজানো ঘটনা, সুন্দর হলেও এর মাথামুণ্ডু কিছু বুঝলাম না। পোয়ারো চোখ বুজে বসেছিল, আমি থামতেই বলল–কেমন বুঝলে?
বললাম হুঁ যদিও তোমার এই পর্যায় ক্রমিক ঘটনায় কোনো খুঁত নেই, তবে বহুদিন পূর্বের ব্রাডলির মামলার কথা মনে আসছে। কাগজে পড়েছিলাম, ভদ্রমহিলা সুন্দরী ছিলেন।
কোনো কথা না বলে পোয়ারো মাথা ঝাঁকালো।
আমি নাছোড়বান্দা ভাবে বললাম, চুপ করে থাকলে হবে না এর রহস্য আমায় বুঝিয়ে বল।
কিন্তু উল্টে পোয়ারো বলল, ঘটনাগুলো তোমার কেমন লাগল?
কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললাম, বুঝিয়ে না দিলে বুঝতে পারব না। এখানে শুধু বিভিন্ন সময়ে ঘটে যাওয়া পাঁচটি মৃত্যুর ঘটনাছাড়া কিছু নেই, সূক্ষ্মভাবেও কোনো মিল নেই এদের মধ্যে। একটি হিংসা থেকে, একটি অর্থের লোভে, একটি নির্দয় স্বামীর হাত থেকে মুক্তির জন্য, বাকি দুটোর কোনো উদ্দেশ্য খুঁজে না পেলেও অতিরিক্ত সুরাপান এর কারণ হলেও হতে পারে। দ্বিধাগ্রস্ত ভাবে জিজ্ঞেস করলাম, এসব হত্যার মধ্যে কী কোনো যোগসূত্র আছে যা আমার নজর এড়িয়ে গেছে?
পোয়ারো বলল, সুন্দর বিশ্লেষণ। একটা ব্যাপার যা তুমি উল্লেখ করনি তা হল, এসব হত্যার মধ্যে সন্দেহের কোনোকিছুই নেই।
বিমূঢ় হয়ে বললুম, তোমার কথা বুঝতে পারলুম না।
মিসেস এথারিটনের মামলাটিই ধরো। তিনি খালাস পেয়েছেন ঠিকই, যদিও সবার মনেই স্থির বিশ্বাস ছিল তিনিই হত্যাকারী। তার পর ফ্রেডা ক্লে। স্থির দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে কি একটা ভেবে বলল, কেউ কি ওর দিকে কুটি করে বলতে পেরেছে, হা তুমিই খুনী। তুমিই খুন করেছ। না, পারেনি। কারণ জুরীদের হাতে তেমন কোনো অকাট্য সাক্ষ্য ছিল না। রিগস বলছে সে মনেই করতে পারছে না যে সে-ই তার স্ত্রীর হত্যাকারী। অথবা, তার প্রণয়ীর যদিও এক্ষেত্রে সে ছাড়া আর কেউই খুনী হতে পারে না। একমাত্র মার্গারেট লিচফিল্ড বলেছিল সে তার বাবাকে আঘাত করেছে। অথচ সে মানসিক হাসপাতালে মারা গেল। আসলে প্রত্যেকটি ঘটনায় একজন না একজন অপরাধী থেকেই যাচ্ছে। এটা কি তোমার মনেই হচ্ছে না বন্ধু? বললাম, হতে পারে আবার নাও হতে পারে। ঠিক বুঝতে পারছি না। পোয়ারো বলল, আমি ঠিক তোমাকে সত্যের সন্ধানে পৌঁছে দিতে ব্যর্থ। ধর কোনো ঘটনাই বিচ্ছিন্ন নয়। প্রত্যেকটি ঘটনায় একটা যোগসূত্র আছে।
কিভাবে? ঠিক পরিষ্কার হচ্ছে না।
পোয়ারো আরো রহস্যময় হল। খুব গোপন কথা উচ্চারণ করার ভঙ্গিতে বলল, সেকথা উচ্চারণ করতে আমায় সাবধানী হতে হবে। কারণ অদৃশ্য সূত্রটি ঘন কুয়াশায় ঢাকা পড়ে আছে। এটাকে আরও স্পষ্ট করতে হবে। সমস্ত ঘটনাকে আমি যেভাবে ভেবেছি, তোমায় বলছি। ধর সমস্ত ঘটনার পিছনে এক্স-এর হাত আছে। কিন্তু সে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। সে শুধু কল্পনামাত্র। আপাত দৃষ্টিতে হত্যার পিছনে তার কোনো উদ্দেশ্য নেই। শুধু একটি ঘটনায় তার ছায়া খুব কাছাকাছি ঘোরাফেরা করছে। তবুও অস্পষ্ট যে সেই ঘটনার সময় এক্স এর খুব কাছে হলেও দু-শো মাইল দূরে থাকার কথা হিসেব মত। এখন এই ভদ্রলোকের পশ্চাৎপদ শুনে যাও। মিঃ এথারিটনের সঙ্গে তার অন্তরঙ্গতা ছিল। একসময় রিগসের সঙ্গে এক বাড়িতে থাকত। মিসেস ব্রাডলি তার খুব কাছাকাছি এসে ছিলেন। একটি ফটো পেয়েছি যেখানে এই ভদ্রলোক ফ্রেডা ক্লের সঙ্গে হেঁটে যাচ্ছেন। বৃদ্ধ লিচফিল্ড যেদিন মারা যান সেদিন এক্স খুব ধারে কাছেই ছিলেন। হঠাৎ পোয়ারো বলল, কেমন বুঝছো বন্ধু?
ওর দিকে তাকিয়ে বললাম যদিও বাড়াবাড়ি হচ্ছে তবুও বলতে পারি দুই কি তিনটি ক্ষেত্রে এক্স এর আনাগোনা সম্ভব। পাঁচটি ঘটনার ক্ষেত্রে…. না অতটা উদার হতে পারছি না।
পোয়ারো মুচকি হেসে বলল, একেবারে বিশ্বাস না হলেও উড়িয়ে দিতে পারছি না। তারপর বলল, এবার তোমায় একটু চমকে দেব। যদি বলি এক্স ভদ্রলোক এই বাড়িতেই আস্তানা গেড়েছে; তাহলে কেমন হয়?
যেন মহাশূন্যে তুলে, আমায় কেউ আছড়ে দিল। এ-এই বাড়িতে?
পোয়ারো আমার হৃদপিণ্ড মুচড়ে দেওয়ার জন্য যেন থমথমে গলায় বলল, যদি এতদিনের অভিজ্ঞতা মিথ্যে না হয়ে থাকে তবে এখানে আর একটা মৃত্যুর ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে….