তাই যখন দেখলাম কারটিস নিচে, এলারটন বাথরুমে এবং তোমার অপছন্দ অনুযায়ী দরজার ফুটো দিয়ে ভেতরের সব দেখে বুঝলাম, তুমি করতে যাচ্ছে। তাই তখন কাজে নেমে গেলাম। কারটিসকে দিয়ে তোমায় ডেকে পাঠিয়ে তোমার মাথা যন্ত্রণা জেনে চকলেটের রসে ঘুমের বড়ি দিয়ে তোমায় খাইয়ে দিলাম।
তুমি আমার প্রিয়তম বন্ধু। আর ঐ জন্য তুমি ঠিকানা ফাঁসির কাঠে ঝুলবে আর, ঐ শয়তানটা দাঁত বার করে হাসবে।
আমি জানতাম এবার আমায় কাজে নামতেই হবে। কারণ আমি কবে আছি কবে নেই, তার কোনো ঠিক নেই। তাই হত্যার অপরাধবোধ আমায় চিরকাল পীড়ন করবে না।
এবার বারবারার মৃত্যুর কথা ধরা যাক, এর কারণ তুমিই যে ওর হত্যাকারী।
অবাক হয়ো না। বারবারা, জুডিথ ও ফ্রাঙ্কলিনের মধ্যে যে এক চতুর্থ কোণ বিরাজ করছে তা কেউ ধরতে পারিনি।
তাহলে শোন, বারবারা এমন কিছু সুন্দরী নয়। সতেরো, আঠারো বছর বয়সে বয়েডের শৌর্য ও প্রাচুর্য বিহ্বল করলেও ফ্রাঙ্কলিনের মত কৃতি ছাত্রের প্রস্তাবে বিয়ে করতে রাজী হয়েছিল। বারবারা ভাবতো জন একদিন কৃতীবিজ্ঞানী হবে কিন্তু বাস্তবে তা রূপায়িত হওয়া সম্ভব নয়। তাই যখন প্রৌঢ় বয়েডের সঙ্গে এখানে দেখা হল তখন ফ্রাঙ্কলিনের মৃত্যু হলে বয়েডের সঙ্গে ঘর বাঁধার এক স্বপ্ন তার মনে এল। এখানেও নরটন উপস্থিত।
আসলে মিসেস ফ্রাঙ্কলিন নিজের মৃত্যুর কথা বললেও, মনে মনে চাইতেন কি করে জনকে শেষ করা যায়। তাই ছল করে উনি জানালেন কিভাবে প্রয়োজন হলে উনি নিজের উপর পরীক্ষা চালান। আমাদের বোঝা উচিত ছিল জনের জন্যই আসলে উনি এভাবে মরণফাঁদ পাতছিলেন। তাই তাড়াতাড়ি কাজটা সারতে চাইছিলেন কারণ, জীবনের আরো বেশি দিন বাকি নেই। ওদিকে নার্স ক্লাভেন জনকে মোহিত করতে চাইছিলেন। কিন্তু জন অন্য ধাতের মানুষ হওয়ায়, ক্লাভেন বয়েডকে তখন আকর্ষণ করল। এইজন্যই বারবারা আরো মরিয়া হয়ে উঠেছিল।
তাই একদিন কফির আসর ঠিক করে নিজের পেয়ালা কাছে রেখে, জনের পেয়ালাটা রাখলেন বুক সেলফের পাশে। হঠাৎ ধূমকেতু দেখার ধাঁধায় তুমি বুক সেলফ থেকে ছন্দ মেলাতে শেক্সপীয়ার তুলে নিলে। কিন্তু ছন্দ পতন ঘটল। ফলে দুজনের কফি বদল হয়ে যায় এবং অপরাধীই বিষাক্ত পানীয় পান করে।
কিন্তু মিসেস ফ্রাঙ্কলিনের মৃত্যু আত্মহত্যা না হয়ে অন্যরকম ভাবে হলে জুডিথের ঘাড়ে চাপত। কাজেই বাধ্য হয়ে আমাকে সাক্ষ্য দিতে হল আত্মহত্যা। কিন্তু এই আত্মহত্যা বলে প্রমাণিত ঘটনাটাতে নরটন একমাত্র খুশী হয়নি। যখন বুঝলেন সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে তখন এক নতুন পথের সন্ধান করছিল। তাই ফ্রাঙ্কলিন ও জুডিথকে ডেকে অশান্তির ভয়ে তখন তা চেপে গিয়েছিলেন। এটা প্রকাশ হলে বারবারার মৃত্যু নতুন ভাবে হত্যা কিনা প্রমাণ করার ভাবনা শুরু হত।
তাই অবস্থা বুঝেই আমি তোমার মারফৎ নরটনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাই। সেদিন সাক্ষাতে আমি ওকে ওর সব পরিচয় জানিয়ে দিলাম, ও অস্বীকার করল না এতে। বললাম আসুন আমরা একসঙ্গে বিষপান করে পৃথিবী থেকে বিদায় নিই। কিন্তু মুচকি হেসে বললেন, আমি আপনার জন্য নির্দিষ্ট কাপটিই বেছে দিতে চাই। আপনার আপত্তি আছে। আপত্তি জানালাম না। কারণ দীর্ঘদিন ঘুমের ওষুধ পান করার ফলে ধীরে ধীরে আমার প্রতিরোধ শক্তি গড়ে উঠেছে, তাই নরটন আমার পাত্রটি ও আমি ওর পাত্রটি পান করলাম। আমার পাশেই হার্টের স্ট্রাইপ নাইন টনিক থাকে যা ঘুমের ওষুধের বিষময় ফল সময় মত নিলে নষ্ট করে দিতে পারে।
নরটনের প্রতিক্রিয়া সঙ্গে সঙ্গে শুরু হল। আমি ঠিক যে ভাবে বসে জানলা দিয়ে বাইরের আকাশ দেখতাম সেভাবে ঐ জায়গায় ওকে বসিয়ে দিই। কারটিস আমি ভেবে ওকে শুইয়ে দেয় যেহেতু আমার পরচুলা ও গোঁফটি নকল বলে হয়তো। কারটিস চলে যেতে নরটনের মতন পোষাক চাপিয়ে সাদা চুল, গোঁফ নিয়ে সোজা ওর ঘরে চলে যাই। তোমার খুঁটিয়ে দেখার সময় নেই বলে আমাকে বুঝতে পারনি।
এবার সবার থেকে লুকিয়ে রাখা পিস্তলটা কাজে লাগিয়ে ওর রাতের পোষাক পরিয়ে শুইয়ে দিলাম। আর ওর হাতে পিস্তল ও পকেটে চাবিটা দিলাম। নরটনের পিস্তল আছে জানলেও আমার পিস্তল আছে, একথা জর্জও জানতেন না।
আসলে আমি খেলিয়ে খেলিয়ে নরটনকে হত্যা করতে চেয়েছিলাম। অবশেষে তাকে আমি হত্যা করেছি কিন্তু তাকে কোনো আঘাত বা কষ্ট দিইনি। তাই গভীর নিদ্রায় ওকে হত্যা করেছিলাম। তোমার বোঝা উচিৎ ছিল।
এবার বলি যদি জুডিথ ফ্রাঙ্কলিনকে বিবাহ করে তাহলে ওরা সুখী হবে, তুমি ওদের বাধা দিও না। আর এ কাহিনী পড়া শেষ হলে সোজা মিস কেলির কাছে চলে যাবে, ও লিচফিল্ড। বলো, ওর পিতার খুনী ওর বোন নয় নরটন।…একবার পুলিশে চাকরীর সময় একজনকে গুলি করে হত্যা করেছিলাম যে ছাদে বসে এক নিরীহ পথচারীকে, অবিশ্রান্ত গুলি চালিয়ে যাচ্ছিল।…. তাই ঐ ভাবেই নরটনকে হত্যা করে নিরীহ মানুষের প্রাণ বাঁচালাম।….
শেষে বলি আমি ইচ্ছে করেই হার্টের ওষুধের শিশিটা ফেলে দিয়েছিলাম যাতে জীবনের লোভ এসে আমার চিরকালের সকর্মকে কলঙ্কময় করে দেয়।
সেসব কত সুখ স্মৃতিময়…।
হ্যাঁ। কত স্মৃতি বিজরিত মধুর সব দিন
(এরকুল পোয়ারোর স্মৃতিচারণ এখানেই শেষ।)
ক্যাপ্টেন আর্থারের শেষ সংযোজন….