বুঝেছি। আর বলার দরকার নেই।
জুডিথ আর এলারটন।
উতলা হয়ো না বন্ধু। মোটেই জুডিথ আর এলারটন নয়।
নয়? তবে?
আজ নয় কাল বলব, একটু চিন্তা করে, গুছিয়ে নিয়ে বলব।
বারবারার হত্যা রহস্যে এ কী কোনো সাহায্যে আসবে?
হুঁ। মাথা নাড়লও। তারপর বলল যাও, প্রাতঃরাশ সারো, আর কারটিসকে পাঠিয়ে দাও।
নরটন তখনও প্রাতঃরাশে আসেনি বলে অপেক্ষা করতে হল।
বয়েডের সঙ্গে দেখা হতেই বললাম, নরটনকে দেখছি না?
দেখুন গে মৌজ করে ঘুমোচ্ছে।
আমরা একসঙ্গে ওনাকে ডাকতে উপরে গেলাম। দরজা ভেতর থেকে বন্ধ থাকায় দু-একবার ঘা দিলাম।
কিন্তু কোনো সাড়া নেই।
পরিবেশটা যেন থমথমে হয়ে উঠল। যখন কোনো সাড়া পেলাম না, তখন ছুটলাম কর্নেল লাটরেলের কাছে। মিসেস লাটরেল বললেন, দরজা ভেঙে ফেলতে হবে। যাও শীগগির।
দরজা ভেঙে ভেতরে দেখি এক কঠিন মৃত্যুর চিত্র। রাতের পোষাক পরে। দরজার চাবিটা ছিল পকেটে, হাতে ছোট পিস্তল, কপালের মাঝে এক ছোট্ট রক্তাক্ত গর্ত।
পোয়ারো কী ভেবে তাড়াতাড়ি বলে উঠল, কী হয়েছে নরটনের? মৃত! কেমন করে? কখন?
সবাই বলছে আত্মহত্যা, কারণ কাল রাতে আমি ওকে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করতে দেখি।
সত্যিই তুমি ওকে দেখেছিলে?
হা। ভদ্রলোকের ওই বিচিত্র রাতের পোষাক জঙ্গলে গেলেও আমি চিনতে পারব।
হুঁ। রাতের পোষাক। যে কোনো লোকই ঐ রকম পোষাক পরতে পারেন কী, ঠিক নয়?
যে কেউ ওর চলার ভঙ্গী নকল করতে পারে।
হুঁ, হতে পারে। তবে কি বলতে চাও আমি নরটনকে দেখিনি?
না, তেমন কিছু বলতে চাই না, আমি বিশ্বাস করি না, এটা আত্মহত্যা, এটা সুপরিকল্পিত হত্যা।
একটা ঘোরের মধ্যে নিচে নেমে এলাম, বিদায় বন্ধু বিদায় নরটনের এই দুটো কথা আমার মনে বাজছে। কারণ কারটিস যখন তার প্রভুর সেবা করতে ঢুকেছিল, তাকে সে জীবিত পায়নি। আগেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে…..।
এরকুলের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই আর্থার হেস্টিংসেরও মৃত্যু হয়ে গেছে। তাই আর কিছু লেখার প্রবৃত্তি নেই। শুধু আসল ঘটনাটি জানিয়ে যাই
অন্য সকলের মতন হার্ট অ্যাটাকেই তার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছিল। শুধু হার্টের জন্য, যে অ্যাসিল নাইট্রেটের শিশিটা ব্যবহার করত সেটা পাওয়া যায়নি। তবে কি কেউ এটা সরিয়ে দিয়েছে?
কিন্তু এটা নিশ্চিত যে পোয়ারোর মৃত্যু স্বাভাবিক নয়। বারবারা, নরটনের মৃত্যুর মতও তার মৃত্যুও অস্বাভাবিক, কেন, কোনো উদ্দেশ্যে ওদের খুন করা হল?
নরটনের মৃত্যুতে পুলিশী তদন্তে জানা গেল, মানুষ আত্মহত্যা করার সময় তার কপালের ঠিক মাঝখানে গুলি ছুঁড়তে পারে না। কিন্তু মৃত্যুর দিনের নরটনের যে চিত্র দেখা গিয়েছিল তাতে আত্মহত্যার সপক্ষে যুক্তি যায়। তথ্য, নিদর্শন, জুরীর রায়, পিস্তল সব থেকে প্রমাণ হল এ নিছকই আত্মহত্যা।
পোয়ারোর ঘরে এলাম। যে বাক্সে কল্পিত এক্স-এর কাগজগুলি রাখা ছিল সেগুলো বার করলাম। কিন্তু বাক্স খুলে দেখি সেখানে কাগজের ছিটে ফোঁটাও নেই। কিন্তু সব কাগজগুলো পোয়ারো এখানেই রেখেছিল। হয় পোয়ারো নিজে নষ্ট করেছে কাগজগুলো। নয় এক্স-এর হাত এখন পর্যন্ত পৌঁচেছে।
হঠাৎ পোয়ারোর নিশানার কথা মনে পড়ল। বাক্সে কাগজগুলো না থাকলেও সেখানে দুটো বই ছিল। একটি শেক্সপীয়রের ওথেলোর সুলভ সংস্করণ অন্যটি সেন্ট জন আরভিনের নাটক জন ফার্গুসন। এই নাটকের তৃতীয় অঙ্কের আরম্ভে দুটো পাতার মাঝখানে একটুকরো কাগজ দিয়ে দৃষ্টি গোচর চিহ্ন দেওয়া রয়েছে।
অনেকক্ষণ বসে থাকার পর মনে হল হয়তো নাটকের কোনো সংলাপে পোয়ারো রেখে গেছে পথের নিশানা। শব্দের মধ্যে নিঃশব্দ ইঙ্গিত।
কিন্তু কোনো লাইনেও দাগ কাটা দেখতে পেলাম না। এই অঙ্কে যুবক ফার্গুসন যে তার বোনকে নষ্ট করেছে সে মানুষের খোঁজ করছে। কিন্তু পোয়ারো কেন এই নাটকের বই রেখে গেল। তারপর
পরের অংশ যেতে একটা টুকরো কাগজ বই থেকে পড়ল যেখানে লেখাছিল –আমার ভৃত্য জর্জের সঙ্গে কথা বোলো।
এই তো ইঙ্গিত।
প্রিয়তম বন্ধুকে এখানে সামধিস্থ করলাম, সঙ্গে ছিল জুডিথ, মিস কেলি, ও বয়েড। এখানে জুডিথ একেবারে অন্য রকম। ও আমায় একসময় বলল, আমি আর এখানে থাকছি না বাবা, হয়তো দুঃখ পাবে। কিন্তু না বললেই নয়। আমি ডঃ ফ্রাঙ্কলিনের সঙ্গে আফ্রিকায় চলে যাচ্ছি।
না, এ হতে পারে না, অসংখ্য যুক্তি দেখালাম। কিন্তু ও প্রতিবাদ করল না। শেষে সামান্য হেসে বলল, ভুল করছ বাবা, আমি যাচ্ছি ফ্রাঙ্কলিনের স্ত্রী হয়ে, সহকারী হয়ে নয়।
তাহলে এলারটন?
আমায় অবাক হতে দেখে ও বলল, ওর সঙ্গে তেমন ঘনিষ্ঠতা কোনোদিনই ছিল না। আসলে আমি জানতে দিতে চাইনি আমার সঙ্গে ওর সম্পর্ক।
কিন্তু তোমাকে যে এলারটনের সঙ্গে ঝোঁপের ধারে ঘনিষ্ঠ হতে দেখলাম। নির্লজ্জের মত বললাম।
মাঝেমাঝে ওরকম ঘটে যাবে। তবে কি নরটন সেদিন দুজনকেই একসঙ্গে দেখেছিল? না, না, আমার সন্তান এমন জঘন্য কাজ করতে পারে না। সেদিন কি উনি এই কথার জন্য ঘর থেকে জুডিথকে ডেকেছিলেন?
হঠাৎ আমার চিন্তা এক নতুন মোড় নিল, তাহলে কি এখন এক্স সুদুর নীহারিকা আর জুডিথ-বিয়োগান্তক ঘটনার নায়িকা? হা ঈশ্বর!
.
১৮.
এবার ইস্টবোর্নে বসে কাহিনী লিখছি। এখানে জর্জের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলাম। পোয়ারোকে ও ভালোভাবে জানত। পোয়ারোর মৃত্যু সংবাদ দিতে দুঃখিত হল। জিজ্ঞেস করলাম, পোয়ারো কি কোনো সংবাদ রেখে গেছে তোমার কাছে?