এলিজাবেথ কেলি।
.
১৬.
পোয়ারোর সঙ্গে দেখা করার কথা নরটনকে বলতে উনি বললেন, মনে হয় আপনাকে বলেও কথাটা ঠিক করিনি।
আশাকরি আমাকে ছাড়া আর কাউকে বলেননি?
না।
এরপর যখন আমি উঁচু ঢিবিটার উপর বসতে যাই ওখানে মিস কেলিকে দেখে একটু অবাক হই। আমাকে দেখে বললেন, নতুন কিছু ঘটল নাকি?
না, না, ওসব কিছু নয়। মনে হচ্ছে আজ বৃষ্টি হবে–কথার কথা বললাম।
হ্যাঁ, আমারও তাই মনে হয়। তারপর আমরা সামনের দিকে তাকিয়ে চুপ করে রইলাম। তারপর পোয়ারোর দুঃখের কথা বলতে উনি বললেন, তাহলে আমি যে এখানে একেবারে একা হয়ে যাব।
সান্ত্বনা দিয়ে বললাম, কেন জুডিথ আছে তো।
ওতো নিজের কাজ নিয়ে থাকে। আমার কে আছে?
কেন মিঃ নরটন আপনাকে দেখবেন।
উনি শুধু আমার বন্ধু মাত্র। আমার এক বোন হত্যাকারী না হলেও, বিকৃত মস্তিষ্ক। অসম্ভব!
কিন্তু আপনিই তো বলেছিলেন, ম্যাগী খুন করতে পারে না।
অনেকে মনে করে। আর এই মনে করাটা অনেক সময় সত্য হয়ে যায়।
আমি শান্ত কণ্ঠে বলি, আপনার বোন, আপনার বাবাকে খুন করেনি।
কে বলছে একথা, বিস্ফারিত চোখে উনি জানতে চান।
সময় হলে প্রমাণ দেব, উত্তেজিত হবেন না।
বাড়ির কাছাকাছি বয়েডের সঙ্গে দেখা হতে উনি বললেন, আজই এখানে আমার শেষ দিন, কালই চলে যাচ্ছি।
কোথায়? ন্যাটনে? হয়তো ভালোই হবে।
হা। বোধহয় তাই। আসলে এ বাড়িটা দিনকে দিন ভুতুড়ে হয়ে উঠেছে। যেখানে একবার খুন হয়েছে সেখানে আবার ঘটতে পারে। মিসেস লাটরেল মোটেই আত্মহত্য করার মতন মেয়ে না।
হু-তবে ও নিয়ে আর আলোচনা না করাই ভালো।
আপনি না চাইলেও আমি করব, শুধু জনের জন্যই ওর একমাত্র দুঃখ। আমার মনে হয় ওর মৃত্যুর জন্য ওর স্বামীই দায়ী। উনি খুনী প্রমাণিত হলে আমি মোটেই আশ্চর্য হব না।
এটা নিশ্চয়ই কথার কথা।
মোটেই নয়। যদিও যেভাবে ওর মৃত্যু হয়েছে তাতে এটা প্রমাণ করা মুস্কিল, কিন্তু আমি গোপন সূত্রে কিছু আভাস পেয়েছি।
কী সেই গোপন সূত্র?
কাউকে বলবেন না, নার্স ক্লাভেন।
কে!
চেঁচাবেন না। ওই সব বলেছে।
শুনেছিলাম উনি রোগীকে দেখতে পারতেন না, কিন্তু এখন বলছেন ফ্রাঙ্কলিনকে।
হা। সেই শেষকৃত্যের সময়ই তো উনি কর্মচ্যুত হয়ে বিদায় নিয়েছেন।
হতে পারে। তীক্ষ্ণ স্বরে বলি, কিন্তু ওর সাক্ষ্যতেই তো পুলিশ একে আত্মহত্যা বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তাছাড়া পোয়ারোও ওনাকে একটা বোতল নিয়ে আসতে দেখেছিল।
আরে মশাই মেয়েরা নয় তেলের, নয় নখ পালিশ ইত্যাদি নানা কাজে বোতল ব্যবহার করে। ওসব অঙ্গের ভূষণ। কি বোতল নিয়ে আসছিল কে বলতে পারে?
খলনায়কের মত হন্তদন্ত হয়ে এলারটনকে আসতে দেখা গেল।
পোয়ারোর ক্ষুরধার বুদ্ধির জোরেই আমার বিশ্বাস যে এক্স কে ও বার করবেই।
সেদিন খাওয়ার আগে পোয়ারোর কাছে যেতেই ও বলল, যদি আমার কিছু হয়?
হায় বন্ধু, তুমি কি ডঃ ফ্রাঙ্কলিনের কথা মনোযোগ দিয়ে শোননি? আজ তোমায় বলি এক্স এর সামনে আমি এখন প্রতিরোধের দেওয়াল, যে করেই হোক, আমাকে টপকে যেতে হবে ওকে।
একথার মানে কি পোয়ারো? এক্স বুদ্ধিমান, বিচক্ষণ চতুর ও ধূর্ত। ও ভাবতে পারে যদি আমার স্বাভাবিক মৃত্যুর দু-চার দিন আগে আমার মৃত্যু ঘটে যায়, তাহলে ওর সুবিধেই হবে।
তাহলে কি হবে পোয়ারো? আকুল হয়ে বলি।
যুদ্ধে কর্নেল মারা গেলে তার দ্বিতীয় পদাধিকারী হয়। তুমিও তাই হবে।
না, বন্ধু না।
আমি কিন্তু নিশানা রেখে যাব। যাতে তুমি সত্যের কাছাকাছি পৌঁছবে।
জানি না, নিজেকে পীড়ন করে তুমি কি সুখ পাও।
এ আমার জীবনের গভীরতাবোধ। কিন্তু আমার উপর আস্থা রাখো। আমার রেখে যাওয়া নিশানায় তুমি সত্যের আলোয় পৌঁছবে।
.
১৭.
অনেক দিন পরে আবার সবাই খাবার টেবিলে বেশ আনন্দে ছিলাম। সবাইকে যেন ভালো বেশ খুশী দেখাচ্ছিল।
মিসেস লাটরেল তাসের প্রস্তাব রাখতে আমরা খেলতে বসলাম, আবহাওয়াও ভালো ছিল। হঠাৎ নরটন বললেন, পোয়ারোর সঙ্গে অনেকদিন দেখা হয়নি। উনি কেমন আছেন দেখে আসতে যাচ্ছেন।
বললুম, এখন কথা বলা মনে হয়, ওনার স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো হবে না।
নরটন আমার ইঙ্গিত বুঝে বললেন, খুব বেশি বিরক্ত করব না। একটা বই চেয়েছিলেন ওটা দিয়েই চলে আসব।
আমাকে নরটনের পিছনে পিছনে যেতে দেখে বয়েড বললেন, মিঃ হেস্টিংস আপনি ফিরে আসছেন তো?
নিশ্চয়ই। নরটনের সঙ্গে গেলাম, দু-চারটে কথা বলেই বিদায় নিলাম। আমরা আরো কিছুক্ষণ তাস খেলোম।
রাত এগারোটা বাজতে পনেরোয় আমি শুতে গেলাম। পোয়ারো নিশ্চয়ই ঘুমিয়ে পড়েছে। মনে করে আর দেখা করলাম না।
সবে মাত্র বিছানায় উঠেছি দরজায় কার টোকা দেবার শব্দে আহ্বান জানাই, ভেতরে আসুন। কেউ না আসাতে আলো জ্বেলে দেখি নরটন দরজা খুলে নিজের ঘরে ঢুকলেন। মাথা চুলকোতে চুলকোতে ঘরে গিয়ে দরজায় তালা দিলেন শুনতে পেলাম।
নরটন কী প্রতিরাতেই এমন করেন না আজ পোয়ারোর কাছে কোনো সাবধান বাণী শুনে এমন করলেন? বিছানায় শুয়ে স্বস্তি এল না।
প্রাতঃরাশে যাওয়ার আগে পোয়ারোর সঙ্গে দেখা করলাম। বললাম, কেমন আছো, বুড়ো খোকা?
আছি, এখনও বেঁছে আছি।
যন্ত্রণা নেই তো?
না।
নরটন কি সব কথা বলল?
হ্যাঁ।
কী বললে? কী দেখেছে?
সেকথা তোমায় বলা ঠিক হবে না। দ্বিধাগ্রস্ত গলায় বলল, বললেন তিনি দুজনকে সেখানে