আসলে কারটিস বলছিল–
কি বলছিল কারটিস? হার্ট অ্যাটাকের কথা, হেস্টিংস দুঃখ কোরো না। এই জীবনের এই শেষ হত্যার ঘটনা। আমি শেষ করে যেতে চাই। এখনও আমি পাঁচজন সুস্থ ব্যক্তির চেয়ে একটু বেশিই করতে পারি। আমার অঙ্গ পঙ্গু হলেও মস্তিষ্ক পঙ্গু নয়।
সেদিনের মতন ওর ঘর ছেড়ে চলে এলাম।
ঠিক পরের দিনই পোয়ারো আবার ডাক্তারের প্রসঙ্গ তুলল। ভাবছি ডঃ ফ্রাঙ্কলিনকে দেখাবো।
ফ্রাঙ্কলিন। অবিশ্বাসী দৃষ্টি আমার চোখে।
অবাক হওয়ার কিছু নেই। উনিও তো ডাক্তার। তাছাড়া এখানে একসঙ্গে আছি। আমার ধাত ওনার অজানা হয়। বাইরের ডাক্তারের চেয়ে উনিই ভালো।
ফ্রাঙ্কলিন চিকিৎসা জগতের সঙ্গে এখন সম্পর্কহীন। আর পোয়ারোর মতন খুঁতখুঁতে লোক কিনা ওকেই বেছে নিল।
ফ্রাঙ্কলিন পোয়ারোকে দেখা করার পথে আমি সংগোপনে আলোচনার জন্য আমার ঘরে টেনে নিয়ে গেলাম।
কেমন দেখলেন?
একজন অসাধারণ মানুষ। তা জানি। স্বাস্থ্য কেমন দেখলেন? ওহ স্বাস্থ্য! শরীরে পদার্থ বলতে কিছু নেই, তিনি এখন ডাক্তারী চিকিৎসার বাইরে।
কম্পিত কণ্ঠে বলি অর্থাৎ আপনি! উনি সব জানেন, যে কোনো সময়ে মারা যেতে পারেন, কিন্তু ওনার সঙ্গে কথা বলে ভীষণ উৎকণ্ঠিত মনে হল। একটা কী কাজ হাতে নিয়েছেন, সেটা শেষ না করে ইহজগৎ থেকে যেতে চান না, কী কাজ আপনি জানেন?
হা।
ওনার কথা শুনে মনে হল বাঁচা মরা ওনার নিজের উপর নির্ভর করছে।
কোনোভাবেই কি রোগ সারানো যায় না?
সম্ভব নয়। যেভাবে হার্ট থেকে রেহাই পেতে অ্যাসিল নাইট্রেট ক্যাপসুল খাচ্ছেন। তার পরই একটা মজার কথা বললেন–প্রত্যেকটি মানুষের জন্য তার গভীর শ্রদ্ধা রয়েছে, তাই না?
বোধহয় তাই।
ওর সঙ্গে মনে হয় আমাদের এইখানেই পার্থক্য।
বিরক্ত হয়ে বলি, বাঁচা মরা সম্পর্কে এমন ঠুনকো ধারণা তো, ডাক্তার হয়েছিলেন কেন?
আমাদের শুধু রোগ সারানো কাজ নয়, রোগের জীবাণু উৎপাদন করাও আমাদের সাধনা। ফ্রাঙ্কলিনকে দেখে মনে হল স্ত্রী মারা যাওয়ার পর তিনি নতুন উদ্যমে গবেষণার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
আচ্ছা আপনার আর জুডিথের মধ্যে মিলের চেয়ে অমিলটাই বেশি না?
না! আমার তা মনে হয় না, আমি একটু বেশি কাজের ভার দিয়ে ফেলাতে হয়তো ও এইরকম হয়েছে। হঠাৎ একটু থেমে উনি বললেন, এবার আমি সত্যি মুক্ত বিহঙ্গ। যা ইচ্ছে তাই করতে পারি। ভাবছি সেই চাকরীটা নেব।
সেই আফ্রিকায়?
হা। আসলে আমার কোনো ভণ্ডামি নেই, স্ত্রী মারা গেছে বলে যে সব ছেড়ে দেব, ভালোবেসে বিয়ে করেছি বলে ওর কথায় ওঠা বসার বান্দা আমি নই। নিজের পছন্দসই ভাবে : আমি বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতে চাই। আমি বারবারার পছন্দ-অপছন্দ সবদিকে নজর রাখতাম।
আপনি আপনার স্ত্রীর মৃত্যু নিছক মৃত্যু নয় জেনেও বিচলিত নন?
এবার চিন্তিত মনে হল তাকে। বললেন, হুঁ হতে পারে ও আত্মহত্যা করেনি, এটা ওর ধাত নয়।
তা হলে কী আপনার–ওসব নিয়ে আমি কিছু জানাতে বা বলতে চাইনা। বুঝেছেন?
অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম।
বারবারার মৃত্যুর পর নরটন একটু বেশি চুপ হয়ে গিয়েছিলেন। কারো সঙ্গে কথা বলতেন না। যেন সবসময় চিন্তায় কুঁদ হয়ে আছেন।
তিনি তার মাথার চুল খাড়া করে বলতে লাগলেন, কোনো জিনিষটা ভালো বা মন্দ তা চট করে বলে দেওয়া যায়। কিন্তু যেটা সাধারণের মধ্যে পড়ে না, সেটার বেলায় বিচার করা মুস্কিল। ধরুন, যদি কেউ কারোর চিঠি ভুলবশত পড়ে ফেলে তখন কি করবে সে?
উত্তরে বলি, কী আর করবে, গর্হিত কাজ হলেও ক্ষমা চেয়ে নেবে।
একটু ভেবে নরটন বলেন, যতটা সোজা ভাবছেন ততটা নয়। আসলে আমি ঠিক আপনাকে বোঝাতে পারছি না। হয়তো চিঠির মধ্যে এমন কিছু থাকতে পারে যা অন্যের কাছে বেশি মূল্যবান। আসলে আমি যেটা বলতে চাই সেটা অন্য কিছু। চিঠির কথা বলে আমি আপনাকে ব্যাপারটা শুধু বোঝাতে চেষ্টা করছিলাম। ধরুণ এমন কোনো কথা আপনি জেনেছেন যাতে প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য আছে যা কাউকে না কাউকে বলা জরুরী হয়ে পড়ে। বললেন, ধরুন, কেউ যদি দরজার চাবির ফুটো দিয়ে কিছু দেখে ফেলে।
চাবির ফুটো! পোয়ারোর কথাটা মনে পড়ে।
নরটন বলে চলল, আসলে চাবিটা আটকে গিয়েছিল, তাই খুলতে গিয়ে আপনি আচমকা কিছু দেখে ফেলেছেন।
আমি ঘুরে প্রশ্ন করি আপনি কি বলতে চাইছেন?
আপনি দূরবীণ দিয়ে সেদিন এমন কিছু দেখেছিলেন যা আপনার দেখা উচিত হয়নি।
-বললাম।
আঁ, আপনি কি করে এটা অনুমান করলেন।
বললাম, এর সঙ্গে কি মিসেস ফ্রাঙ্কলিনের মৃত্যুর কোনো সম্পর্ক আছে?
না, সোজাসুজি বলতে গেলে কিছু নেই। আবার থাকতেও পারে। এর বেশি আমায় কিছু আর জিজ্ঞেস করবেন না।
কি করি, জানাও প্রয়োজন অথচ ওনাকে বেশি চাপ দিতেও পারছি না। বললাম এবিষয়ে আপনি পোয়ারোর সঙ্গে কথা বলতে পারেন।
পোয়ারো? শত হলেও তিনি বিদেশী।
বললাম, উনি আপনার সব কথা শুনবেন, নিশ্চয়ই সদুপদেশও দেবেন।
পোয়ারোকে ঘটনার বর্ণনা দিতেই বিস্মিত হয়ে বলল, সাংঘাতিক, চটপট বলে ফেললো।
সব ঘটনা বিস্তারিতভাবে বললাম।
হঠাৎ পোয়ারো আমার হাত চেপে ধরে বললেন, উনি একথা কাউকে বলেননি তো?
অবাক হয়ে বললাম, মনে হয় না।
দেখো হেস্টিংস একথা উনি আকারে ইঙ্গিতে বললেও বিপদ।
বিপদ!
হা। ও যেন সন্দেহ না করে এইরকম ভাবে একটা ব্যবস্থা কর যাতে আজ বিকেলেই আমার সঙ্গে দেখা করে। আচ্ছা সেদিন কে ছিল বললে?