এর পর নার্স ক্লাভেন বললেন, উনি মাঝে মাঝে বলতেন স্বামীর বোঝা হয়ে তিনি বেঁচে থাকতে চান না।
কেন? এ নিয়ে কি তার স্বামীর সঙ্গে কোনো বাগবিতণ্ডা হয়েছিল?
না, না। আসলে ওনার জন্যই ওর স্বামী বিদেশে এক চাকরী গ্রহণ করতে পারেননি। এজন্য মাঝে মাঝে দুঃখ পেতেন।
একথাও ফ্রাঙ্কলিন জানতেন?
না, মনে হয় না।
আচ্ছা কখনও কি ওনার কোনো কথায় মনে হয়েছে যে উনি আত্মহত্যা করতে পারেন?
নিজেকে শেষ করে দিতে পারলেই ভালো হয়, এরকম কথাই উনি মাঝে মাঝে বলতেন।
তিনি কি কখনও বলেছেন কি ভাবে নিজের জীবন নষ্ট করতে চান?
না। ভাসাভাসা বলতেন। আচ্ছা ডঃ ফ্রাঙ্কলিনের সঙ্গে কি আপনিও একমত যে উনি মৃত্যুর রাতে হাসিখুশি ছিলেন?
হ্যাঁ, তবে সামান্য উত্তেজিত ছিলেন, আপনি কি এমন কোনো বোতল দেখেছেন যা ওষুধ না হয়ে অন্য কিছু হতে পারে?
না। তবে তিনি সেদিন এক পেগ বারগাণ্ডি মদ খেয়েছিলেন।
কোথায় পেলেন?
নিজের কাছেই রাখতেন।
আচ্ছা আপনার কি মনে হয়, ঐ ওষুধটা ঐ মদের সঙ্গে মিশে গেছে?
অসম্ভব নয়। হয়তো মিশিয়েও নিতে পারেন।
আচ্ছা বোতল নিয়েছেন ধরে নিলে, নেওয়ার পর তিনি কোথায় ফেলতে পারেন?
ওয়েস্ট পেপার বাস্কেটে, জানালা দিয়ে ছুঁড়ে বা ধুয়ে আলমারিতে রেখে দিতে পারেন। ওখানে অনেকগুলো শিশি বোতল আছে যা আমরা অন্য কাজে লাগাই।
শেষবারের মতন তাকে কখন দেখেছেন?
যখন ওষুধ দিতে যাই। সামান্য উত্তেজিত ছিলেন। তিনি আত্মহত্যা করতে পারেন এই রকম হলে কিনা জানতে চাইলে, ক্লাভেন বলেন, ঠিক বলতে পারি না।
বয়েড ক্যারিংটনকে দেখে মনে হল বেশ আঘাত পেয়েছেন। তিনি বললেন, যখন রাতে তিনি তাস খেলছিলেন তখন কোনো হাতাশার ভাব দেখা যায়নি।
জুডিথকে ডাকাতে ও বলল, ল্যাবে কেউ যে ক্যালাবার গাছের বিষাক্ত সারাৎসারটা সরিয়েছে সে সম্পর্কে তার কোনো সম্যকজ্ঞান ছিল না।
এর পর এরকুল পোয়ারো। তিনি বললেন মৃত্যুর আগের দিন রাতের আলোচনায় তার মনে হয়েছে, তিনি ছিলেন নিঃস্বার্থ মহিলা, স্বামীর জন্য গভীর প্রেম, স্বামী স্বনামখ্যাত হোক এরকমও তিনি চাইতেন। তাই তিনি চাইতেন নিজের স্বাস্থ্যের জন্য চিরকালের জন্য সরে যেতে।
আচ্ছা দশই জুন যখন আপনি ল্যাবরেটরির খোলা দরজার সামনে বসে ছিলেন তখন কি ওনাকে ওখান থেকে বেরিয়ে আসতে দেখেছিলেন?
হা।
হাতে কিছু ছিল?
একটা ছোট্ট বোতল লুকিয়ে আনছিলেন, ঠিক লক্ষ্য করেছেন?
হা।
আপনাকে দেখে কোনো ভাবান্তর হয়েছিল?
একটু চমকে গিয়ে ছিলেন মাত্র। তারপর ফরেনোর রিপোর্ট থেকে জানা গেল এখন স্থির সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব নয়। সবার রায় একসঙ্গে শোনার পর সিদ্ধান্তে আসা গেল অপ্রকৃতিস্থ অবস্থার জন্য তিনি নিজের জীবন শেষ করে দিয়ে দেন।
পোয়ারোর সঙ্গে যখন মিলিত হলাম তখন ওকে কারটিস সেবা করছিল।
কারটিস চলে যেতে বললাম, সত্যিই কি তুমি মিসেস ফ্রাঙ্কলিনকে বোতল হাতে নিয়ে বেরিয়ে যেতে দেখেছিলেন?
তুমিও কি তা দেখনি বন্ধু?
না। কখনও নয়।
হয়তো তুমি লক্ষ্য করনি প্রিয়তম।
এ তুমি কি বলছ এ যে অসম্ভব। তুমি কি সত্যি বললে?
কেন? মিথ্যে বলেছি মনে হয়।
তোমাকে কখনই অবিশ্বাস করতে পারি না।
তোমার কথায় হেস্টিংস আঘাত পেলাম। তাহলে এখন আমায় অবিশ্বাস করছ কেন?
হঠাৎ বলি, এ আমি কখনই বিশ্বাস করব না যে তুমি হলফ নিয়ে সাক্ষী দেবে।
এ মোটেই হলফ নিয়ে সাক্ষ্য নয়। কারণ সাক্ষ্য দেবার সময় আমাকে দিয়ে কোনোরকম শপথ করিয়ে নেয়া হয়নি।
তাহলে তুমি মিথ্যে বলছ, তোমায় আজও আমি বুঝে উঠতে পারলাম না।
কোনো জিনিষটা?
তোমার সাক্ষ্য, তোমার বলা, এইসব।
হায় বন্ধু কী আর বলব। তাহলে তুমি কি চেয়েছিলে জুরীরা সব আত্মহত্যা বলে রায় দিক?
মনে হয় হেস্টিংস তুমি বর্তমান অবস্থার সঙ্গে পা মিলিয়ে চলতে পারছ না। আসলে আমি ও তুমি সবাই জানি এটা হত্যা।
তাহলে এত একটা সাংঘাতিক ব্যাপারকে তুমি ধামাচাপা দিতে চাইছ?
পোয়ারো শুধু বলল, আগেই তোমাকে বলেছি হত্যাকারী শুধু ধূর্তই নয়, নির্মমও। এটা একটা হত্যা। এখনকার মত একটা হত্যার ঘটনা শেষ হল। এবার আমরা ঘটনার গভীরে প্রবেশ করব ও এক্স-এর মুখোমুখি হব।
যদি এর মধ্যে আরেকটি হত্যা ঘটে যায়?
আপাততঃ সেরকম সম্ভাবনা নেই।
.
১৫.
মিসেস ফ্রাঙ্কলিনের তদন্ত শেষ হবার পর তার শ্রাদ্ধ শান্তি হয়েছিল। ওনার অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়ার দিন এক কুশ্রী মহিলা হঠাৎ আমায় বলেছিলেন–আপনাকে আমি চিনি–কী বলেন চিনি না?
থতমত খেয়ে বলছিলাম, মানে–ইয়ে, তিনি বলে গেলেন, মনে নেই যেবার বৃদ্ধা ইঙ্গলথর্পকে তার স্বামী খুন করেছিল, এবারও সেইরকম কিছু হতে পারে।
রেগে গিয়ে বলেছিলাম, শুনেছেন তো এটা একটা আত্মহত্যা। কিন্তু উনি বললেন, জানেন তো স্বামীর সঙ্গে ওনার বনিবনা ছিল না, যেখানে স্বামীই ডাক্তার-এরপর কারটিসের সঙ্গে দেখা হতে সে বলল, মনে হয় স্যারকে একবার ডাক্তার দেখানো ভালো। ছুটে গিয়ে পোয়ারোকে বলতেই, ও আশ্চর্যভাবে আপত্তি জানাল। যে পোয়ারো এমনি সামান্য সর্দি কাশিতেও ডাক্তার দেখাতো। রেগে গিয়ে বলল, কত নামী ডাক্তার দেখিয়েছি, হাওয়া বদল করেছি। কিন্তু কি হল তাতে, বরঞ্চ মাঝে যেটুকু সুস্থ ছিলাম তাও হারিয়ে এলাম। আসলে বন্ধু আমার প্রাণবায়ু ধীরে ধীরে শেষ হয়ে আসছে।