বেলা একটা নাগাদ ফ্রাঙ্কলিন ও জুডিথ এল। জুডিথকে খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছিল। তাই ও সোজা নিজের ঘরের দিকে চলে গেল। হয়তো স্ত্রীর শরীরের অবনতির কারণে ফ্রাঙ্কলিন স্বস্তি পাচ্ছিলেন না। নরটন এক বাক্স চকলেট নিয়ে বসেছিলেন, হঠাৎ উঠতে গিয়ে তিনি নরটনের সব চকলেট মেঝেয় ফেলে দেন। তারপর ওগুলো কুড়োতে কুড়োতে বলেন, দুঃখিত, খুবই দুঃখিত।
নরটন ভুরু কুঁচকে বলেন, আপনাকে খুব ক্লান্ত মনে হচ্ছে।
হুঁ। তা বলতে পারেন। আসলে একটা পরীক্ষা ঠিক ভাবে শেষ করতে পারলাম না।
বিকেল বেলা একটু যেন সুখের পরশ এল। মিঃ ও মিসেস লাটরেল দুজনেই বেশ আনন্দিত বলে মনে হল, ব্রিজ খেলার প্রস্তাব করলেন হঠাৎ।
নরটন কিন্তু দ্বিখণ্ডিত হয়ে বলে, এতটা ধকল তোমার সইবে কি?
উনি বললেন, একবার খেলব। আর জর্জকে আমি মোটেই জ্বালাতন করব না।
ডেইজি-তুমি তো জানো আমি ব্রিজে কতটা কাঁচা
ভালোই তো, তোমার ঐ হেরে যাওয়া মুখটা দেখে আমি মজা পাব। বলেই হেসে ফেললেন।
বিকেলে লাটরেলরা বাদে আমরা সবাই বাগানে বসেছিলাম। কথায় কথায় স্বামী-স্ত্রীর অন্তরঙ্গতার প্রসঙ্গ উঠল। মনে হল যতদিন সিণ্ডারস বেঁচে ছিল, আমারও সুখ ছিল।
নরটন বলে, খুব দেরিতে এটা বুঝতে পারলাম।
তাই নাকি? বয়েড একেবারে ভুরু কুঁচকে বলে। একেবারে প্রাণের কথা?
ঠিক এই সময় মিস কেলি এলেন। নরটনের দিকে ওর চোখের দৃষ্টি দেখে মনে হল, গোপনে ওদের মন-দেওয়া নেওয়া চলছে। এর মধ্যেই হৈ হৈ করে জুডিথ এসে পড়ল। এসে ঘোষণা করল, এখন মিসেস ফ্রাঙ্কলিন বেশ সুস্থ। তিনি সবাইকে ঘরে কফি খেতে ডাকছেন।
আমরা সবাই আমন্ত্রণ পেয়ে সেখানে গেলাম।
মিসেস ফ্রাঙ্কলিনের বিভিন্ন সময়ের গতি প্রকৃতির সঙ্গে এখনকার কোনো মিল নেই। হয়তো নার্সের সঠিক মূল্যায়নের ফল এটি। ঘরের মধ্যে ফ্রাঙ্কলিন একটু দূরে চেয়ারে বসে। বয়েড দাঁড়িয়ে আছে মিসেস ফ্রাঙ্কলিনের পাশেই। আর মিস কেলি ও নরটন পাশাপাশি জোড়া পায়রার মত বসে। নার্স ক্লাভেন বিছানার এক প্রান্তে বিশ্রাম নিচ্ছেন। আমি দ্য টাইমস কাগজটা পড়ছিলাম। হঠাৎ সবার দিকে ছুঁড়ে দিয়ে বললাম। এখানে একটা বাঁধা দিয়েছে। টেনিসনের একটা পংক্তি। বলছি শুনুন প্রতিধ্বনি যেভাবেই উঠুক, তার একটি মাত্র উত্তর শেষ শব্দটা নেই। কী হবে বলুন তো?
মিসেস ফ্রাঙ্কলিন কিছু না ভেবেই বললেন, ওখানে হবে কোথায়।
মিস কেলি বললেন, লাইনটা এরকম–প্রতিধ্বনি যেভাবে উঠুক তার একটি মাত্রই উত্তর মৃত্যু।
ঠিক আছে। এবার বলুন তোকে বলেছে–ঈর্ষা একটি হরিৎ চক্ষু দানব-ক্যারিংটন বলেন –শেক্সপীয়র।
মিসেস ফ্রাঙ্কলিন সঙ্গে সঙ্গে বলেন এর সঙ্গে বলতে হবে এটা কোনো চরিত্রের সংলাপ।
ইয়াগো।
কিন্তু আমার মনে হচ্ছে ওথেলো।
না। আমি বললাম ওটা রোমিও বলেছে জুলিয়টকে। হঠাৎ বাচ্চা মেয়ের মতন জুডিথ বারান্দা থেকে বলল, দেখুন, কী সুন্দর একটা ধূমকেতু।
সবাই দেখতে গেলাম। বয়েড হঠাৎ বারবারাকে কোল পাঁজা করে নিয়ে বারান্দার দিকে গেলেন। আমি শুধু উঠলাম না। একটু পরেই সবাই ফিরে এল, শুধু এলিজাবেথ ও নরটন কফি শেষ করে বিদায় নিল।
কফি শেষ করেই মিসেস ফ্রাঙ্কলিন বললেন, আমার ওষুধ, বাথরুমে রেখেছিলাম
জুডিথ-বাথরুম থেকে এনে দিল। ফ্রাঙ্কলিন উদ্দেশ্যবিহীনভাবে ঘরের মধ্যে ঘোরাফেরা করছিল। আর সেজন্য হঠাৎ টেবিলে ধাক্কা খেলেন।
বারবারা চিৎকার করে ওঠে–কী হচ্ছে কী?
লজ্জিত হয়ে, বাগান থেকে একটু বেরিয়ে আসি, বলেই বেরিয়ে গেলেন। জুডিথও চলে গেল। বয়েড বলল একহাত তাস খেললে কেমন হয়?
চমৎকার!
বারান্দায় শুনতে পেলাম ফ্রাঙ্কলিন জুডিথকে বলছে একটু বাগানে বেরিয়ে আসার কথা। কিন্তু জুডিথ ভীষণ ক্লান্ত বলে যেতে অস্বীকার করাতে ফ্রাঙ্কলিন একাই চলে গেল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এত খুশী দেখাচ্ছে আপনাকে–
ফ্রাঙ্কলিন তখন বললেন, আসলে অনেক দিন আগের একটা কাজ শেষ করতে পেরেছি।
পোয়ারোর ঘরে দেখি জুডিথ বসে। ঘরে ঢুকতেই পোয়ারো আমাকে বলল, দেখ, ও ঐ রকম মেয়েই নয়, তোমায় আগেই বলেছি, ও তোমায় ক্ষমা করেছে।
তাই নাকি?
বাবা তুমি আঙ্কল পোয়ারোর কথায় কিছু মনে কোরো না, আসলে তুমিই আমায় ক্ষমা কর। সবকিছু ঠিক হয়ে গেছে। আমি কিছু বলার আগেই ও ঘর থেকে চলে গেল।
এবার পোয়ারো আমার দিকে তাকিয়ে বলল-ওহে হেস্টিংস বিকেলের ব্যাপারটাও তো আমার জানতে ইচ্ছে করে।
বললাম, নতুন কোনো সংবাদ নেই। মনে হচ্ছে কোনো অঘটন এখানে ঘটছে না।
কিন্তু রাতেই যে অঘটন ঘটল তার জন্য কেউই প্রস্তুত ছিলাম না। মিসেস ফ্রাঙ্কলিন হঠাৎ শেষ রাতে আরো অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং শেষ পর্যন্ত দুজন ডাক্তারও তাকে বাঁচাতে পারেনি, এবং চব্বিশ ঘন্টা পরে জানতে পারলাম বিষক্রিয়ায় তার মৃত্যু হয়েছে, এই মৃত্যু স্বাভাবিক নয়।
৪. অনুসন্ধান শুরু হল
১৪.
দুদিন পর অনুসন্ধান শুরু হল। ফরেনোর এক মধ্যবয়সী ভদ্রলোক এ তদন্তের জন্য মনোনীত হয়েছেন। যেমন কুটিল চাউনি, তেমন জটিল জেরা।
ডাক্তারের সাক্ষাৎ থেকে জানা গেল শেকড় বাকড়ে প্রাপ্ত ক্ষার যুক্ত রাসায়নিক রক্তের সঙ্গে মিশে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে। এর পর ডঃ ফ্রাঙ্কলিন সাবলীল ভাবে যে সাক্ষ্য দিলেন তাতে পুলিশ সন্তুষ্ট হয়েছেন। তিনি বললেন যেখানে বোতলে ক্যালাবার জাতীয় বিষাক্ত গাছের সারাৎসার ছিল, সেখানে তা নেই। জল ভরা আছে। তিনি এ বোতল সাত-আট দিন হল স্পর্শও করেনি। তার ল্যাবের দুটো চাবির মধ্যে একটা থাকে মিস হেস্টিংসের কাছে। যদিও তার স্ত্রী মাঝে মাঝে আত্মহত্যার কথা বলতেন তবুও এত মানসিক শক্তি তার ছিল না। অসুস্থ বলেও তিনি মৃত্যুর রাতে বেশ খোসমেজাজেই ছিলেন।