ভুল বুঝো না বন্ধু, শরীরটা আসলে ভালো যাচ্ছে না।
এই বয়সে অত রোদে ঘুরলে শরীরের আর দোষ কী। নিশ্চয়ই মাথারও যন্ত্রণা হচ্ছে?
হা তাও হচ্ছে।
কারটিসকে ডেকে আমাকে কয়েকটি অ্যাসপিরিন দিতে বলল।
খেয়েছি, কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি, বলে উঠি।
হুঁ, তাহলে দুটো মিশিয়ে সেই চকোলেট দাও।
চকোলেট! সে আবার কী? এই প্রশ্ন করার মতন মানসিক অবস্থা নেই, কারণ, তখন মাথায় এলারটন ঘুরছে, বিনাবাক্যে বিশ্রী দুর্গন্ধ যুক্ত দুধটা খেয়ে নিলাম।
যাও, আর ঘোরাঘুরি কোরো না, শুয়ে পড়। পোয়ারো আমায় নির্দেশ দিল।
ঘরে এসে দরজা একটু ফাঁক করে রেখে এলারটনের অপেক্ষা করতে লাগলাম।
একা বসে থাকলেই আমার স্ত্রী সিণ্ডারস-এর কথা মনে পড়ে। আমাদের সন্তানকে বাঁচাতেই হবে প্রিয়তমা, আমাকে ক্ষমা করো…..
হঠাৎ মনে হয় অন্ধকারে আমার স্ত্রী–আমার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। বিড় বিড় করে বলি…. সিণ্ডারস.সিণ্ডার…সিণ্ডা…..সি-ই-ই।
.
১৩.
পাখির কিচির মিচির শব্দে ঘুম ভাঙে। কোথায় একটা রোমহর্ষক মৃত্যুর ঘটনা ঘটতে পারতো, তা নয় একটা রোদ ঝলমলে দিন। ছি ছি! এই কি পিতার প্রতিভা? নিজের ওপর ধিক্কার এসে যায়।
পরক্ষণেই সব ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। সত্যিই তো আমি কি করতে যাচ্ছিলাম! ঠান্ডা মাথায় একজনকে খুন করতে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ টেবিলের ওপর হুইস্কির গ্লাস ও বোতল চোখে পড়তেই ওগুলো বেসিনে ফেলে দিয়ে আসি। তারপর পরিপাটি হয়ে পোয়ারোর ঘরের দিকে যাই।
সব শুনে পোয়ারো বলেন, কি কাণ্ডটাই না তুমি করতে যাচ্ছিলে বন্ধু, কাল রাতে কেন আমায় জানালে না?
অন্যায় হয়েছে পোয়ারো।
আমি নিঃসন্দেহে তোমায় বাধা দিতাম। ভেবে দেখো, ঐ ইতর শ্রেণীর লোকটার জন্য তোমায় ফাঁসির কাঠে তো আমি ঝুলতে দিতাম না।
না, তা হত না, কারণ আমি সাবধানতা অবলম্বন করেছিলাম, আচ্ছা বন্ধু তুমি কি সত্যিই অতটা বুদ্ধিমান হতে পেরেছো? পোয়ারো আমায় জিজ্ঞেস করল।
কেন নয়? আমি তো আঙুলের ছাপ যদি না পড়ে তার জন্য ব্যবস্থা নিয়েছিলাম।
আচ্ছা, তা নয় নিয়েছিলে, ভাবো যদি এলারটন মারা যেতো তাহলে কি কি হতে পারতো। পুলিশ ময়না তদন্ত করে জানতে পারলো স্লাম্বারিনের কারণে মৃত্যু হয়েছে। তখন ওটি দুর্ঘটনা না ইচ্ছাকৃত এটা প্রমাণ হত। তাহলে এখানে প্রশ্ন উঠত যদি এলারটন আত্মহত্যা করে থাকে, তাহলে ওকে কে শিশিটা এনে দিল? কারণ শিশিতে তো কারুর আঙুলের ছাপ নেই।
মিনমিনে গলায় বললাম, অনেকে তো মৃত্যুর পূর্বেও আঙুলের ছাপ মুছে ফেলে।
হুঁ, রাখে। কিন্তু অনেকেরই এখানে তেমন কোনো বিবাহযোগ্য কন্যা নেই যার পেছনে অসৎ উদ্দেশ্যের জন্য এলারটন ঘুর ঘুর করছে, কারণ এ নিয়ে তুমি কালই জুডিথের সঙ্গে ঝগড়া করেছে। ক্যারিংটন, নরটন এরা জানেন তুমি তোমার মেয়ের জন্য সহ্য করতে পারতে না ওকে। তখন সন্দেহ পড়ত তোমার কাজকর্ম কেউ লুকিয়ে দেখে ফেলেছে। না, তা সম্ভব নয়।
হয়তো কেউ ও পাশের ঝুলন্ত বারান্দায় লুকিয়ে থেকে দরজার চাবির ফুটো থেকে লক্ষ্য রাখতে পারে।
কারো খেয়ে দেয়ে কাজ নেই, ওকাজ করবে।
না হলেই ভালো। তবে তোমাকে বলে রাখি ওই দরজার চাবির ওপর এখানে অনেকেরই নেক নজর আছে। কারটিসও ঘরের পাশেই থাকে।
গলার স্বর খাদে নামিয়ে বলি, তোমার কী মনে হয় না, এখানে সেই বহুপূর্বের হত্যার বীজ প্রোথিত আছে।
আসলে তুমি বলতে চাও সংক্রামক রোগের মতন হত্যার ব্যাপারটা এখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে?
হা এ বাড়ির একটা বদনাম রয়ে গেছে। হা তা অস্বীকার করা যায় না। আচ্ছা, এখন জুডিথ ও এলারটনকে আসবার একটা বুদ্ধি দাও।
৬৬২
চুপ করে থেকে পোয়ারো বলল, এখন তার কোনো দরকার নেই।
নেই?
ভুলে যেও না জুডিথ নাবালিকা ও নিজে রোজগার করে। আমি যতটা জানি এলারটন লোকটা অসম্ভব ধূর্ত ও শয়তান, তোমার মতন নির্বোধ পিতাদের পাঠিয়ে ও মজা দেখে। আর জুডিথকেও তুমি বাগে আনতে পারবে না। তার থেকে এখন চুপ করে থাকাই ভালো। আমি এখন পঙ্গু, তাই অতটা ঝুঁকি তুমি এখন নিতে যেও না। বিপদ বেশি দূরে নয়, ধীরে ধীরে হত্যাকারী তার জাল গুটিয়ে আনছে। সাবধান হেস্টিংস।
অপলক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম।
গতকাল রাতের টুকরো ভেসে আসা কথাতেই বুঝতে পারলাম বিপদ ঘনিয়ে আসছে। পোয়ারো জুডিথের উপর আস্থা রাখতে বলছে। হঠাৎ জুডিথের ফ্রাঙ্কলিনের সঙ্গে ল্যাবরেটরিতে মনসংযোগ আমাকে কিছুটা শান্তি দেয়। এলারটন কিন্তু প্রাতঃরাশের পরই লণ্ডনের পথে রওনা হয়ে যায়।
হয়তো জুডিথের সঙ্গে মিলনের আশা নিয়ে। দেখে মনে মনে হাসলাম।
বয়েড ক্যারিংটন আমার মুখ চোখ দেখে বললেন, আপনাকে ভীষণ খুশী মনে হচ্ছে, কী ব্যাপার? নার্স ক্লাভেন আসাতে আমাদের কথোপকথনে বাধা পড়ল। সে আমাদের জানালো মিসেস ফ্রাঙ্কলিনের শরীর আবার বেশ খারাপ হয়েছে। শুধু এটা-ওটা চাইছিলেন। উদ্বিগ্ন হলেও বয়েডের মুখ দেখে তা বোঝা গেল না। বয়েড তবুও তাড়াতাড়ি চলে গেলেন।
এই ফাঁকে ক্লাভেন আমাকে জানাল, বুঝলেন না এসবই একরকমের চাল। স্বামীকে পাশে পাশে রাখা। এর মধ্যেই ডক্টর এসে গেছেন।
কিন্তু দেহের উত্তাপ?
আমি দেখেছি, নাড়ির গতি স্বাচ্ছন্দ্য, দেহও স্বাভাবিক নিরুত্তাপ, আসলে কারোর মুখ উনি সহ্য করতে পারেন না।