অসম্ভব। ফরেনসিক এক্সপার্টরা নিশ্চয়ই বার করবেন। পরবর্তী পর্যায়ে কি কি করা হয়েছে। পুলিশের দোষ নেই, কারণ আমরাই বলেছিলাম অজ্ঞানবশত হঠাৎ গুলি ছুঁড়েছেন, তাই বন্দুক সম্বন্ধে, খোঁজ খবর নেননি। কিন্তু মজার ব্যাপার এখানেই যে এ ব্যাপারটাতে কেন যে আমরা সবাই এত নিশ্চিত ছিলাম? পোয়ারোর সেবারের মত সেই ঘটনার সঙ্গে আর একটি হত্যা নিছক দুর্ঘটনা বলে যোগ করে দিয়েছি। হঠাৎ মনে হল পোয়ারো যেন আমার কর্ণকুহূরে বলে গেল, কেমন বন্ধু তোমার মস্তিষ্ক এবার সাবালক হয়ে উঠেছে…
৩. পোয়ারো লাফিয়ে উঠল
(ক)
সব শুনে পোয়ারো লাফিয়ে উঠল। সাবাস! এই রকমই চেয়েছিলাম, আমি চেয়েছি, তুমি নিজেই বিশ্লেষণ করে সত্য উদ্ধার করো।
তাহলে বন্ধু ঠিক বিশ্লেষণ করেছি? এটাও তোমার সেই এক্স নামীয় ব্যক্তিটি দ্বারা সংঘটিত আরো একটি ঘটনা!
প্রশ্নাতীত ভাবে সত্য! নির্দ্বিধায় পোয়ারো বলে গেল।
এই হত্যার উদ্দেশ্য কি, তাহলে?
কিছুই কি তোমার মাথায় ঢুকছে না?
নাঃ!
একটা ধারণা আমি করতে পারছি, সব ঘটনাগুলোর মধ্যে কি সেই একই যোগসূত্র?
ঠিক তাই।
কী সেই যোগসূত্র? অধীর হলাম আমি। হঠাৎ সে প্রথম দিনের পোয়ারোর মত খোলসে ঢুকে গিয়ে বলল, ভালো হয়, যদি তুমি এখনই না জানো।
অস্ফুট চিৎকার করে বলি, না–আমায় এখনই জানতে হবে। আমায় ভুল বুঝো না। শুধু জেনে রাখো তোমার বিশ্লেষণ মিথ্যে নয়।
থ্রাইটিসে কষ্ট পাচ্ছ, পঙ্গু শরীর তবু একা লড়ে যেতে চাও। তোমাকে শোধরানো যাবে না।
ভুল-ভুল। প্রিয়বন্ধু আমার। তুমি তো আমার হয়ে লড়ে যাচ্ছে। আমি তো তোমার চোখে, তোমার কানেই দেখছি, শুনছি। শুধুমাত্র সেই কথাটা বলে একটা বিপদ ডেকে আনতে চাই।
বিপদ। কার? আমার?
হত্যাকারীর।
আশ্চর্য। তুমি তাকে ধরতে চাও কিন্তু ধরা দাও না। অথবা, তুমি এখনও ভাবছো এমন আমি দুর্বল যে নিজেকে রক্ষা করতেই পারব না।
মনে রাখবে একটা কথা হেস্টিংস যে একবার খুন করেছে, প্রয়োজনে সে দ্বিতীয়, তৃতীয়, …..অজস্র খুন করতে পারে।
হুঁ, গুম হয়ে বলি, কিন্তু আরেকটা হত্যার ঘটনা ঘটতে পারেনি এখানে, নিশানা ব্যর্থ হয়েছে।
হ্যাঁ, খুব সৌভাগ্য, এসব ব্যাপার আগে থেকে আঁচ করা যায় না। তাই তো আমি তোমাকে বাঁচিয়ে রাখতে চাই।
ওর সকরুণ কণ্ঠ আমার ব্যথিত করল। তবে একথা বলতে পারি, আগের পোয়ারো এখন থাকলেও, পোয়ারোর বর্তমানের উপস্থিতিই হত্যাকারীর হৃদ কম্পন বাড়িয়ে তুলেছে নিশ্চয়ই।
বিষণ্ণ মনে পোয়ারোর ঘর ছাড়লুম, কে সেই এক্স? একটু অস্পষ্ট সন্দেহ আমার মনে ঘুরে বেড়াচ্ছে, এই সময় জুডিথকে পাকড়াও করলাম।
গত সন্ধ্যায় এলারটনের সঙ্গে তুমি কোথায় গিয়েছিলে?
জানতাম ও একটা চোখা কোনো উত্তর দেবে যার জন্য আমাকে প্রশ্ন থেকে শত দূরে ছিটকে ফেলে দেবে। তাই হল…..। ঝাজের সঙ্গে উত্তর এল, সত্যি বাবা, বুঝে পাই না তোমরা অত আমাদের পেছনে লেগে থাকো কেন?
না- মানে কেবল জানতে চাইলাম।
কিন্তু কেন? কেন এসব প্রশ্ন করে আমাকে তুমি খোঁচাও?
আমি ওর কাছে এলারটনের খোঁজ পেতে চেয়েছিলাম। তাই ঠান্ডা মেজাজে বললাম, বললাম, রাগ কোরো না জুডিথ। এই সামান্য উত্তর পাওয়ার অধিকারটাও কি আমার নেই?
বুঝি না, কেন এসব জানতে চাও।
আসলে আমিও তো সবকিছু জানি না, তাই একটু জানার আগ্রহে জিজ্ঞেস করলাম। তুমি তো একেবারেই নিস্পৃহ, দেওয়ালের দিকে মুখ ঘুরিয়ে আছে।
মিসেস লাটরেলের দুর্ঘটনার কথা বলছ, সে তো শুনেছি। আমি তো তখন গ্রামের বাইরে স্ট্যাম্প আনতে গিয়েছিলাম। শান্ত গলায় জুডিথ উত্তর দিল।
মেজর এলারটন তোমার সঙ্গে ছিলেন না?
না। গতকাল রাতে তোমার সঙ্গে দেখা হওয়ার দু-তিন মিনিট আগে আমরা একসাথে হয়েছিলাম। এবার হলো তো? কোথায় কার সঙ্গে কখন যাব, এসব জানতে চেয়ে আমাকে বিরক্ত করো না। আমি আমার মতন চলব।
তা, ঠিক। এটা আমাদের মেনে নিতেই হবে। মেজাজ না হারিয়ে বললাম।
লক্ষ্য করলাম ওর একগুঁয়েমি ভাবটা কাটছে।
শুনে খুশি হলাম। সবসময় ঐ রকম হেডটিচারের মতন শাসন করবে না তো।
ঠিক এমন সময় ডঃ ফ্রাঙ্কলিন এসে উপস্থিত হলেন।
বলে জুডিথ, আমাদের এর মধ্যে অনেক সময় নষ্ট হয়ে গিয়েছে।
ফ্রাঙ্কলিনের কথাগুলো শুনে মনে হল উনি যেন ওর অভিভাবক। জুডিথ ওঁর সেক্রেটারী হলেন, হুকুম চালাবার তো একটা শালীনতা থাকা দরকার। এ বরদাস্ত করা যায় না। তবে ফ্রাঙ্কলিনের বিদ্যের বোঝা দেখে সবসময় নিশ্চয়ই মেয়েরা কাত হয়ে পড়বে না। এলারটন ও ফ্রাঙ্কলিনের মধ্যে তফাৎটা বড্ড বেশি প্রকট হয়ে উঠল। জুডিথের জন্য কষ্ট হল। বেচারা, দু-নৌকায় পা দিয়ে হাবুডুবু খাচ্ছে। তবুও এলারটনকে ও পরিত্যাগ করুক–এটা আমি চাই না।
জুডিথ স্ট্যাম্প কিনতে গিয়েছিল, তাহলে এলারটন কোথায় ছিল? যদি ধরি ও গুলি ছুঁড়েছে, তাহলে উদ্দেশ্যবিহীন এই গুলি ছোঁড়ার কারণ কী? এলারটনের তো মস্তিষ্ক বিকৃতি হয়নি, কি জানি ওর মধ্যে কি দেখেছে জুডিথ।
.
(খ)
জুডিথের সুখ-দুঃখ আমায় আহত করে। কিন্তু যখনই অদৃশ্য এক্স-এর ঘোরাফেরা এবং একটা হত্যাকান্ড ঘটতে চলেছে–এরূপ একটা চিন্তা আমায় তাড়া করে, তখন যে ব্যক্তিগত সমস্যাগুলো বা জুডিথের কাছ থেকে আমায় অনেক দূরে টেনে নিয়ে যায়।