আমরা নিশ্বাস ফেলার সময় পেলাম না। কি নাটকীয়তার মধ্যে একটি খুনের কাহিনী শুনিয়ে গেল।
নরটন বলল, কী ভয়ঙ্কর। ভাবতেই পারি না।
আমরা চুপ করেই রইলুম।
নরটন আবার বলল, কিছু মানুষ আছে যারা অনেক সুখ নিয়ে জন্মায়।
কার কথা বলছেন বয়েড না তার বন্ধুর?
আমি স্যার উইলিয়ামের কথাই বলছি। দূরে এক পায়রার শব্দ শুনেই কর্নেল বন্দুক তুলে নিলেন।
কিন্তু বন্দুক তাক করার আগেই ঝোঁপঝাড় কাঁপিয়ে পায়রাটা উড়ে গেল।
গোঁফ চুমরে বললেন, ব্যাটা খরগোস কচি ফুলের গাছের রস পেয়েছে। রোসো মজা দেখাচ্ছি। বলেই বন্দুক থেকে গুলি ছুঁড়লেন।
আর সঙ্গে সঙ্গে গুলির শব্দ বাতাসে মিলিয়ে যেতে না যেতেই এক নারী কণ্ঠের তীব্র আর্তনাদ শোনা গেল।
কর্নেল লতানো গাছের মত কেঁপে উঠলেন। বন্দুক হাত থেকে খসে পড়ল। এ যে ডেইজির কণ্ঠস্বর।
আমি আগেই ছুটে ঝোঁপের দিকে ছুটলুম, পেছনে নরটন। ঝোঁপ সরিয়ে দেখলুম– মিসেস লাটরেল উবু হয়েছিলেন। খরগোস ভেবে গুলি চালিয়ে দেন কর্নেল। জ্ঞান হারিয়েছেন মিসেস লাটরেল। নরটনকে বললাম শীঘ্র ডঃ ফ্রাঙ্কলিন অথবা নার্সকে ডাকুন
নরটন স্বগতোক্তি করল, উফ, এত রক্ত সহ্য করতে পারি না।
নার্স ক্লাভেন এলেন। ফ্রাঙ্কলিনও প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই এলেন।
ক্লাভেন ও ফ্রাঙ্কলিন মিসেস লাটরেলকে কোল পাঁজা করে তার ঘরের দিকে ছুটে গেল। তার পর প্রাথমিক শুশ্রূষা সেরে ফোন করতে ছুটলেন। রিসিভার নামিয়ে বললেন, খুব অল্পের জন্য বেঁচে গেছেন।
ছোট করে তাকে ঘটনাটা জানালুম। বললেন, দুর্ভাগ্য, ভয়টা কর্নেলকে নিয়ে, দুর্বল মানুষ, মনে হয় এখন স্ত্রীর চেয়ে স্বামীর দিকে বেশি নজর দিতে হবে।
কর্নেল একটা ছোট্ট বৈঠকখানায় বাচ্চার মতন ফুঁপিয়ে কাঁদছে। আ-আমার ডেইজি ডেইজি।
ওঁনাকে সান্ত্বনা দিলাম। সব ঠিক হয়ে যাবে।
আসলে অল্প আলোয় আমি মনে করেছিলাম খরগোস।
এতে ঘাবড়াবার কিছু নেই। ভুল মানুষ মাত্রেরই হয়। আপনার হার্ট দুর্বল অত ভেঙে পড়বেন না। ভালো হয় একটা ইনজেকশন নিয়ে নিন।
না, না, আমি বেশ সুস্থ আছি। ডেইজির কাছে যেতে পারি একবার?
ফ্রাঙ্কলিন বললেন, ঠিক এখন নয়, ক্লাভেন ওর কাছে আছে। ডঃ অলিভারকে ফোন করেছি, এখনই এসে পড়বেন।
ওদেরকে বৈঠকখানায় রেখেই চলে এলাম।
হঠাৎ কয়েকজন মেয়ে পুরুষের গলার শব্দে তাকিয়ে দেখি এলারটন ও জুডিথ নবদম্পতির মত গায়ে গা লাগিয়ে হাসতে হাসতে এগিয়ে আসছে। পূর্বের এই বিয়োগান্ত ঘটনার রেশ মাত্র ওদের মধ্যে নেই, অসহ্য। একটু ঝাঁঝালো কণ্ঠে জুডিথকে ডাকতেই দুজনে থমকে দাঁড়াল। সন্ধ্যার ঘটনাটা জানিয়ে ওদের প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করতে লাগলাম।
জুডিথ সহজভাবেই বলল, কি সব যাচ্ছেতাই ঘটনা এখানে ঘটে।
এলারটন বিষোদগার করে বলল, যা প্রাপ্য বুড়ির তাই পেয়েছে। যেমন হিংসুটে তেমন বদ মেজাজী। যেকোনো স্বামীই একাজ করতে পারে। আপনি কি মনে করেন এটা বুড়োর ইচ্ছাকৃত?
ধমকের সুরে বলি, না, এটা নিছকই দুর্ঘটনা।
ধমক শুনে, গলা নামিয়ে এলারটন বলে, হয়তো ঠিক। তবে এইরকম দুর্ঘটনা মাঝে মাঝে সংসারে শান্তি আনে। এটা আপনি হয়তো মানবেন না। আর যদি কর্নেল ইচ্ছাকৃত এটা করেন, তাহলে আমি তাকে বাহবা দিই।
এ অন্যায়, প্রগলভতা, ও সব কিছু নয়।
এলারটন নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, যেহেতু আমরা সমস্ত ঘটনাটা কিভাবে ঘটেছে জানি না, তাই এখন কোনো সিদ্ধান্তে আসা যাবে না। দুটো ক্ষেত্রেই দুই ভদ্রলোক স্ত্রীর হাত থেকে মুক্তি পাবার জন্য এই ঘটনাটা ঘটিয়েছে। প্রথম ভদ্রলোক রিভলবার পরিষ্কার করতে উপরে আচমকা গুলি ছুঁড়ছেন, যা দুর্ঘটনা হলে আসলে খুন। দ্বিতীয় ভদ্রলোকটি আরো সরেস। খেলা খেলতে গিয়ে গুলি ফস্কে গেল। এদের দুজনের স্ত্রীরাই জীবন অতিষ্ট করে তুলেছিল।
কিন্তু কর্নেল সে ধাতের লোক নয়। এলারটন বলল, এরকম চিন্তা করা আপনার মত ভদ্রলোকের পক্ষে সম্ভব নয়। অথচ দিনরাত দেখছি শুনছি উনি স্ত্রীর হাতে নির্যাতিত হচ্ছেন। এ যে বিধাতার আশীবাদ নয় তার পক্ষে সেকথা কে বলতে পারে।
এদের সঙ্গে কথা বলতে প্রবৃত্তিতে বাধছিল। তবে ওর কথার মধ্যে যে সত্যি নিহিত নেই, তা নয়। সেটাই আমার বিভ্রান্তির কারণ হল।
ফেরার পথে আবার ক্যারিংটনের সঙ্গে দেখা হল। হঠাৎ জিজ্ঞেস করল, মিঃ হেস্টিংস, কি মনে হয় উনি কি অজ্ঞাতসারেই করেছেন?
শেষ পর্যন্ত আপনিও একথা বলছেন? অবাক হয়ে বললাম।
না, আসলে সেকথা বলতে চাইনি। আসলে মিসেস লাটরেলের বিশ্রী ব্যবহারের কথাও যে ভুলতে পারছি না।
এটা সত্য। কারণ সেদিন সামান্য হুইস্কি নিয়ে যা করলেন। অবশেষে বিদায় নিয়ে পোয়ারোর কাছে গেলাম। ওখানে গেলেই হয়তো শান্তি পাব।
হয়তো কারটিসের কাছে পোয়ারো সব কথা শুনেছে। একের পর সবার প্রতিক্রিয়া, চলন বলন সব বললাম।
পোয়ারো আমার কথাগুলো মন দিয়ে শুনল। ও কিছু বলার আগেই ক্লাভেন ঘরে ঢুকল।
বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত। ভেবেছিলাম ডঃ ফ্রাঙ্কলিন এখানে আছেন হয় তো, মিসেস লাটরেল এখন কিছুটা সুস্থ। কর্নেলের সঙ্গে দেখা করতে চাইছেন। তিনি কোথায় জানেন মিঃ হেস্টিংস?
পোয়ারোকে জিজ্ঞেস করলাম, খুঁজে দেখব কিনা, ও নিঃশব্দে মাথা নাড়ল। ক্লাভেনকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে এলাম।