এটাও কি সম্ভব, সেই বহুকাল আগের হত্যার রেশ এখনও রয়েছে।
আমায় চিন্তান্বিত দেখে উৎসাহিত গলায় ক্লাভেন বলল, এইরকম আমার জীবনে এক ঘটনা ঘটেছিল। আমার এক রোগী হঠাৎ রোগ শয্যায় খুন হল। সেকী ভয়ংকর দৃশ্য, সে কথা ভাবলে গা শিউরে ওঠে।
ঠিক, আমার জীবনেও একবার, কথা শেষ হতে না হতেই, বয়েড ক্যারিংটন হৈ হৈ করে ঘরে ঢুকল। ঢুকেই বললেন, সুপ্রভাত মিঃ হেস্টিংস। সুপ্রভাত নার্স। বারবারাকে তো ঘরে দেখলাম না?
ক্লাভেন বিনয়ের সঙ্গে বলল, উনি নিচে বাগানে মুক্ত বাতাস সেবন করছেন। আমিই বসিয়ে এসেছি।
সহাস্যে ক্যারিংটন বললেন, নিশ্চয়ই একা।
ক্লাভেন মাথা নাড়ল হা।
ফ্রাঙ্কলিন কোথায়? সেই বদ্ধ খাঁচায় ডাক্তার, অবশ্য একা নন। মিস হেস্টিংস আছেন।
মিঃ হেস্টিংস আপনি তো একটু বাধা দিতে পারেন, যৌবনের মুহূর্তগুলো ঐ বদ্ধ ঘরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
মোটেই তা নয়, বরঞ্চ ঐটাতেই উনি আনন্দ পান। ডাক্তারেরও ওকে ছাড়া এক মুহূর্ত চলে না।
জানেন জুডিথের মতন একজন সেক্রেটারী পেলে আমি ঐ বিচ্ছিরি গিনিপিগগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখতাম না–ক্যারিংটন বলল।
ঐ কথা বলবেন না, মিঃ ফ্রাঙ্কলিন অন্যধাতের মানুষ। কাজ ছাড়া কিছুই বোঝে না। নার্স ক্লাভেন দুঃখের সঙ্গে বললেন।
বয়েড মুচকি হেসে বলল, খুব ভালো। বারবারাও যে পিছিয়ে নেই তা দেখেও ভালো লাগছে। ঠিক সময় মত ঠিক জায়গাটি বেছে নিয়ে বসেছে। স্বামীর ওপর তদারকিটা ভালোই চলবে। হা ঈশ্বর, মেয়েদের কি হিংসুটে করেই না পাঠিয়েছে পৃথিবীতে।
রূঢ় কণ্ঠে ক্লাভেন বলল, আপনি দেখছি সব জেনে বসে আছেন, বলেই চলে গেল।
ক্যারিংটন ক্লাভেনের দিকে তাকিয়ে বলল, ঈশ্বর এই সোনালী চুলের সুন্দরী মেয়েকে দিয়ে তুমি নার্সের কাজ করাচ্ছ।
আমি চকিত কণ্ঠে বললুম, আপনি কি ভাবছেন জীবনে কোনোদিন আর ওর বিয়ে হবে না?
হলেই ভালো।…যাবেন নাকি আমার সঙ্গে ন্যাটনে বেড়াতে?
ভালো প্রস্তাব, তবে এখন নয়। পোয়ারোর সঙ্গে দেখা করতে হবে।
দেখলুম ও ওর ঘরের সামনের বারান্দায় বসে। ওকে বয়েডের প্রস্তাবের কথা জানাতে বলল, নিশ্চয়ই যাবে, ঐ বিশাল অট্টালিকা ও প্রভূত সম্পত্তি দেখতে না পেলে তোমার জীবন বৃথা যাবে।
কিন্তু তোমাকে যে একা ছেড়ে যেতে হবে
তোমার কাছে অনেক পেয়েছি। একবার ঘুরে এসো। ওর সঙ্গে তোমার ভীষণ মিল আছে। সময়টাও তো কাটানো চাই।
.
(গ)
বয়েড ক্যারিংটন প্রকৃত অর্থেই মানুষ। বেশ সুন্দর কিছু মুহূর্ত ওঁর সঙ্গে কেটে গেল, ন্যাটনের প্রাসাদোপম অট্টালিকায়।
দেখুন গৃহকত্রী না থাকায় এ সব অযত্নে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
স্ত্রী বিয়োগে সত্যিই বয়েড কাতর হয়ে পড়েছে। দুঃখ প্রকাশ করা ছাড়া আমার আর বলার কিছু নেই। বললুম দ্বিতীয় বার বিবাহ করলেন না কেন?
অনেকেই সেকথা বলেন। তবে ব্যাচেলার জীবন ভালো লাগছে।
তখনকার মতন এই প্রসঙ্গ চাপা দিয়ে পোয়ারোর কথা তুললাম। ওর প্রাণশক্তির কথা বললাম।
ভাবতে রোমাঞ্চ লাগে আমাদের মধ্যেই আছেন সেই এরকুল পোয়ারো। তারপর সকৌতুকে বলল, যদি এখনই খুব চটপট একটা খুন করে ফেলি?
নির্দ্বিধায় বললুম, দেহ পঙ্গু হলেও মস্তিষ্ক ওর সতেজ। তাই ধরে ঠিকই ফেলব।
সত্যিই ওঁর মতন মানুষ দুটো জন্মাবে না। ও সব খুনখারাপী আমার দ্বারা হবে না। কিন্তু যদি কেউ ব্ল্যাকমেল করে, আমি তাহলে তাদের চোখবুজে খুন করে ফেলতে পারি। মনে হয় রাস্তার কুকুরের মতন ওদের মেরে ফেলা উচিৎ।
স্বীকার করতেই হল ওর কথা।
এর পর এই অট্টালিকার প্রাচীন ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে। তার প্রসঙ্গ উঠল। বয়েড ক্যারিংটনের খুল্লতাত স্যার এভার্ট ভোগ করবে। সেইসব সম্পত্তি অন্যকে দান না করে তার ভাইপোকে দান করে গেছেন।
কথায় কথায় লাটরেলের কথা উঠল। বয়েড ছোটবেলা থেকে জানে। কেমন যেন হয়ে গেছেন। স্ত্রীর কথায় ওঠেন বসেন। অবস্থার বিপাকে অতিথিশালা খুলেছেন।
ক্যারিংটন সুপুরুষই নয়, সুবক্তাও। স্টাইলের অনেক ক্ষুদ্র অকিঞ্চিৎকর ঘটনায় সূক্ষাতিসূক্ষ্ম বর্ণনা দিলেন। নরটন বদ্ধ পাগল। পাখি দেখার আনন্দের থেকে শিকারে বেশি আনন্দ-বললেন বয়েড।
সেদিন আমরা ঘৃণাক্ষরেও ভাবতে পারিনি নরটনের এই পাখি দেখার আগামী দিনে এক মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী হয়ে থাকবে…..
.
০৮.
(ক)
পোয়ারো আশাবাদী হলে আমার চারপাশে নিরাশার একটা প্রাচীর গড়ে তুলেছে।
সহজাত উৎসাহে বলল, বন্ধু কোনো মেলা কী জলসা নয়। অথবা, কোনো শিকার খেলাও নয়। এভাবে অনেক কিছু আমাদের বুদ্ধি দিয়ে দেখতে হবে।এক্সকে দেখতে পাচ্ছ না বলে হয় তো তুমি ধৈৰ্য্য হারাচ্ছ। এক্স আমাদের চোখের সামনে। কিন্তু এখন প্রশ্ন হল কে সেই : ব্যক্তি যে অনতিকালের মধ্যে এক্স এর শিকার হতে চলেছে? জানতে পারলে নিশ্চয় তাকে বাঁচাবার চেষ্টা করতাম। পোয়ারোর স্থৈর্য দেখে বললাম, তোমার অনুশোচনা আমি বুঝতে পারছি। কিন্তু আমরা এখনও অন্ধকারে হাতড়ে বেড়াচ্ছি।
পোয়ারো হঠাৎ বলল, বলতে পারো কে খুন হতে পারে?
এ আবার কী প্রশ্ন? এ তো তুমি জানো।
পোয়ারো হঠাৎ ধমক দিয়ে বলে উঠল, এতদিন এসেছ এটা বুঝতে পারছ না?
তুমি এখনও জানালে না যে কে সেই এক্স…. কতদিন আর এরকমভাবে নাচাবে?
বিরক্ত হয়ে পোয়ারো বলল, এক্স-এর মৌলিকত্ব তো ওখানেই, ও জানতে দেবে কেন, আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।