না, খুব একটা অস্বাভাবিক নয়। তবে ধীরে ধীরে তাদের জীবনী শক্তি, প্রতিরোধ ক্ষমতা, হারিয়ে যাচ্ছে। পরীক্ষা করে দেখেছি এই সব গাছের মধ্যে দু বর্ণের প্রজাতি আছে, একটি বিষাক্ত অন্যটি ততটা নয়। এই শিকড় থেকে এক ধরনের সুরাসার তৈরি করার চেষ্টা করছি যা যুগান্তকারী সৃষ্টি হয়ে থাকবে মানব জাতির ইতিহাসে।
পোয়ারো বলল, জেনে ভালো লাগল যে আপনি দুটো প্রজাতির মধ্যে কোনোটা ভালো, কোনোটা মন্দ তা চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছেন। হা ভগবান, যদি মানুষের মধ্যে এই রকম কোনো ব্যবস্থার দ্বারা ভালো-মন্দটুকু চটপট জানা যেত!
আপনার কথা ঠিক বুঝতে পারলাম না মঁসিয়ে পোয়ারো।
হেসে পোয়ারো বলল, আপনার মত বিজ্ঞানীর পক্ষে এই সহজ কথাটা বোঝা উচিৎ ছিল। ধরুন কোনো অত্যাচারী, উৎপীড়ককে খুন করার পূর্বে আপনার ঐ সব কোনো আবিষ্কারের দ্বারা কি খুনের পূর্বে খুনীকে চিনে ফেলা যাবে?
পোয়ারো থামতেই বলে উঠলুম, এর জন্য কোনো বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার প্রয়োজন কী। তার মনের মধ্যে সে অপরাধ বোধতো থেকেই যাবে।
হঠাৎ অত্যুৎসাহে ফ্রাঙ্কলিন বলে উঠল, পৃথিবীকে সুন্দর ও বাসযোগ্য করে তোলার জন্য আমি অনেক মানুষকে মেরে ফেলতে চাই। তার জন্য আমার সারা রাতের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটবে না। বলেই শিস্ দিতে দিতে ঘর থেকে প্রস্থান করলেন।
তারপর পোয়ারোর দিকে তাকিয়ে বললাম, মনে হয় বন্ধু অজান্তেই সাপের গর্তে হাত ঢুকিয়ে দিয়েছি।
পোয়ারো বলল, এটা হয়তো ডাক্তারের কথা, মনের কথা নয়।
নিরাশ হয়ে বললুম তাই যেন সত্যি হয়।
.
(খ)
নিজের সঙ্গে অনেক যুদ্ধ করার পর সিদ্ধান্তে এলাম জুডিথকে এলারটন সম্পর্কে একটু সতর্ক করে দিতে হবে। জানি জুডিথ অন্য পাঁচটি মেয়ের চেয়ে আমার কাছে আলাদা। ও বুদ্ধিমতী, কোনো কাজ কিভাবে করা উচিৎ সে জ্ঞান আছে। তবুও ছেলে নয়, মেয়ে মেয়েই।
তবু ওর সঙ্গে যখন কথা বললাম যথেষ্ট সজাগ ছিলাম। কিন্তু আজকালকার ছেলেমেয়েরা বয়োঃজেষ্ঠ্যদের সম্মান দিতে জানে না।
আমার কথায় ক্ষিপ্ত হয়ে বলল, এ সবের মানে কী? সন্তানের ওপর পিতা মাতার সেই চিরন্তন অধিকারের পরাকাষ্ঠা দেখানো?
না, আমায় ভুল বুঝো না, আমি সেকথা বলতে চাইনি।
জানি এলারটন কে তুমি দু চক্ষে দেখতে পারো না।
তা অস্বীকার করছি না। তবে তুমিও আমার সঙ্গে একমত হবে।
কেন?
কারণ তোমার সঙ্গে ওর কোনো চারিত্রিক মিল নেই।
এ তোমার শাসন, আমি এখন সাবালিকা। বিদ্রুপের সঙ্গে হেসে বলল, এখন আমার, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে তোমার নতুন কি ধারণা জন্মাল শুনি? যদিও তুমি ওকে পছন্দ কর না, তবে উনি বেশ মিশুকে এবং ফুর্তিবাজ।
হ্যাঁ মেয়েদের কাছে উনি আকর্ষণের বস্তু হলেও ছেলেদের কাছে নয়।
এটা তো স্বাভাবিক।
তবে তোমাদের ওভাবে রাত অব্দি ঘুরে বেড়ানো ভদ্রতার মধ্যে পড়ে না।
আগুনে ঘি পড়ার মত জ্বলে উঠে বলল, ওহ-কী নিচ! তোমার মতন এমন পরস্ত্রীকাতর অভিভাবক দুটো দেখিনি। তুমি কি আমায় কচি খুকী মনে করেছ? দ্বিতীয় মিঃ ব্যারেট সাজতে যেও না–
সত্যিই এবার ভীষণ আঘাত পেলুম। শরবিদ্ধ আহত পাখির মতন মেয়ের এই ব্যবহারে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম।
ক্লাভেন আসতে নিজেকে একটু সামলে উঠলুম।
কী-ব্যাপার! মুখখানা অমন পাচার মত করে আছেন কেন?
হেসে বললাম এবার, এমনিই।
ক্লাভেন সহানুভূতির সঙ্গে বলল, না, গুরু গম্ভার ভাবে থাকবেন না, আপনাকে মানায় না।
হেসে বললাম, ধন্যবাদ।
ক্লাভেন মুখ ঝামটা দিয়ে বলল, সেকথা আর বলবেন না, এই সব মহিলারা কোনোদিনই সুখী হতে পারে না। বলছি মিসেস ফ্রাঙ্কলিনের কথা। একেবারে বোকার হদ্দ।
বললুম, যা বলেছেন।
ক্লাভেন আমাকে শ্রোতা পেয়ে বলল, মিসেস ফ্রাঙ্কলিন সবসময় খিটমিট করে, এতে স্বামী বশে থাকে? সত্যি মিঃ ফ্রাঙ্কলিন ভালো মানুষ, ওর জন্য কষ্ট হয়।
না জানার ভান করে বললুম, আপনার দুঃখের কারণটা ঠিক বুঝতে পারলাম না।
আহ। সাধারণ কথা–স্বামী-স্ত্রীর মনের মিল না থাকলে সংসারে সুখ থাকে না।
আচ্ছা আপনি কি মনে করেন, মিঃ ফ্রাঙ্কলিন ওনাকে বিয়ে করে ভুল করেছেন?
কেন? আপনার তা মনে হয় না? দেখছেন না দুজনের মধ্যে মিল নেই।
চিন্তিত হওয়ার ভান করে বলি, বাইরে থেকে ওদের সুখী মনে হয়। স্বাস্থ্যের নজর রাখেন, ভালোবাসেন।
মেয়ে মানুষের মনের কথা কে বোঝে বলুন?
তবে তার অসুখটা তাহলে সত্যি নয়।
নার্স ক্লাভেন সুচতুর হেসে বলল, বড় বেয়াড়া প্রশ্ন করেন আপনি। সেকথা আমি বলতে চাইনি। এই সংসারে নানাধরণের মহিলা আছে। তবে মিসেস ফ্রাঙ্কলিনের ধাতটা আলাদা, সারারাত জেগে থাকেন, দিনে ঝিমিয়ে কাটান। কে জানে কেন?
মিসেস ফ্রাঙ্কলিন অসুস্থ বলেই হয়তো এইসব উপসর্গ।
অদ্ভুত ভঙ্গি করে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, হ্যাঁ অসুস্থ যখন উপসর্গ থাকবেই।
এ নিয়ে কথা বাড়িয়ে দরকার নেই। তবে আপনি তো এখানে অনেকদিন আগে ছিলেন?
হা। ফিসফিস করে ভয়ার্ত গলায় বলল তখন আপনি এই স্টাইলসে ছিলেন?
হ্যাঁ ছিলুম। নিজের মনেই কেঁপে উঠে বলল, ঠিক যা ভেবেছি।
আপানার সবকিছু হেঁয়ালী বলে মনে হচ্ছে। নতুন করে আবার কী ভাবলেন?
হিমশীতল গলায় বলল, এখানকার থমথমে, গা কাঁপানো পরিবেশ দেখে মনে হয় কোথায় একটা গণ্ডগোল আছে। আপনার মনে হয় না?