এ সময় আবার কে বাইরে থাকতে পারে?
জুডিথ ও এলারটনের কথা–ওরা মাঝে মধ্যে রাত করে বাড়ি ফেরে।
লোকটার নাম শুনেই হাড়পিত্তি জ্বলে ওঠে। পোয়ারোকে বলে দিলাম ঐ লোকটা মোটেই নির্ভরযোগ্য নয়। বন্ধু আমার সে কথা শুনতেই চায় না। এখন আমার ভদ্র নম্র মেয়েটা জুটেছে ওর সঙ্গে।
রাগে বিছানায় শুয়ে রইলাম। ঘুম এল না। উঠে পড়ে ভাবলাম এক ডোজ অ্যাসপিরিন নেব। তবে কাজ হবে বলে মনে হয় না। এর একটা হেস্তনেস্ত করা দরকার। এর আগে একটা পোয়ারোর সঙ্গে আলোচনা করা দরকার। শেষে রাতের পোষাক চাপিয়ে ওপরে চলে এলাম।
অসুস্থ পোয়ারোকে এই সময় বিরক্ত করব কিনা ওর ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ভাবছিলাম, এমন সময় পিছনে পায়ের শব্দে চমকে উঠে দেখি এলারটন হাসতে হাসতে উপরে উঠে আসছে।
আমার সামনে এসে হেসে জিজ্ঞেস করল, কি ব্যাপার মিঃ হেস্টিংস এখনও শুতে যাননি?
দাঁত কিড়মিড় করে বললুম, ঘুম আসছে না।
আসুন আমার সঙ্গে ঘুমের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি, মানুষটাকে বোঝার জন্য ওর আহ্বান পেতেই চলে গেলাম, একটু ঝালিয়ে দেখবে বলে।
দুজনের ঘর একেবারে পাশাপাশি। বললুম, আপনিও দেখছি অনেক রাত পর্যন্ত জেগে থাকেন। এলারটন উত্তর দিল, বিছানায় শুয়ে সুন্দর সন্ধ্যাটা নষ্ট করতে চাই না। আলমারি থেকে একটা শিশি নিয়ে আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, আপনার নিচ্ছিদ্র ঘুম হবে এতে। ডাক্তারি নাম প্লাম্বারিন।
ভুরু কুঁচকে বলি, তাই কী? খেলে বিপদও হতে পারে।
নির্দ্বিধায় বলল, হতে পারে তবে পরিমাণটা বেশি হলে। খলনায়কের মত একটা বাঁকা হাসি হাসল। মনে হল লোকটা কোনোদিক দিয়েই সুবিধের নয়।
প্রতিবাদ করে বললাম, ডাক্তারের অনুমোদন ছাড়া এসব ব্যবহার করা যায়; জানা ছিল না।
তবে, এসব ব্যাপারে আমার একটু পড়াশুনা ছিল।
বেমক্কা একটা প্রশ্ন করে বসলুম, এথারিটনকে আপনি চেনেন? তাই না?
প্রশ্নটা ভুল হয়নি বুঝলাম যখন দেখলাম এলারটন হঠাৎ গম্ভীর হয়ে গেল, তবে মুহূর্তের জন্য। চিনি, বেচারা নিজের ভুলে মৃত্যু ডেকে আনল। তবে ওরস্ত্রীর ভাগ্য সুপ্রসন্ন বলতে হয়। জুরীরা নিরপেক্ষ না হলে ওকে ফাঁসি কাঠে ঝুলতে হত।
শিশি থেকে কয়েকটা বড়ি বার করে আমার হাতে দিয়ে বলল, এথারিটনকে আপনি চেনেন বলে মনে হচ্ছে?
বড়িগুলো নিয়ে বললাম না, চিনি না।
মানুষ হিসেবে তিনি খুব আমুদে ছিলেন, বলল এলারটন।
ধন্যবাদ জানিয়ে ঘরে ফিরে এলাম। আবার চিন্তা করতে লাগলাম, ভুল করলাম না তো? প্রশ্নটা কি বোকার মতন হল? পোয়ারো আমাকে সাবধান করে দিয়েছিল বটে। কিন্তু হঠাৎ মনে হল এই এক্স। পরক্ষণেই ভয়। না বুঝেই কী নিষিদ্ধ ফলে হাত দিয়ে ফেলেছি?
.
০৭.
(ক)
স্টাইলসের এর পরের দিনগুলো তুলতে গেলে হয়তো এলোমেলো হবে, হয়তো কোনো ধারাবাহিকতা থাকবে না। তবু চেষ্টা করছি……
বৃদ্ধ, অথর্ব, পঙ্গু পোয়ারোর সঙ্গে তার বশম্বদ অনুচর কারটিস বেশ মিলেমিশেই আছে। ক্ষণিকের জন্য পোয়ারো মুক্ত বাতাস সেবন করে যখন কারটিস তাকে বাগানের এককোণে রেখে আসে। হাওয়া খারাপ হলে, হয় ড্রয়িংরুমে নয় নিজের ঘরে শুয়ে থাকে। সেই সময়ে আমাকে ওর চোখ কান হয়ে চারদিকে দেখতে শুনতে হয়। কোনো সুফল না হলেও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
এরপর ফ্রাঙ্কলিন, ভদ্রলোক তার ছোট ল্যাবরেটরির ঘরে নিয়ে গিয়েছিলেন। নানারকম গন্ধে অন্নপ্রাশনের ভাত উঠে আসে। অনভিজ্ঞ লোকের পক্ষে কাজকর্ম অনুধাবন করা অসম্ভব। আনাড়ির মত কাজকর্ম বোঝার চেষ্টা করছিলাম। উৎসাহভরে তিনি সব পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলেন তবে ঐ সব বিদঘুঁটে নাম মনে নেই। তবে যা শুনেছি, তা মনে রাখতেই হবে আমায়। জুডিথও সেখানে ছিল। ও আরো বেশি উৎসাহের সঙ্গে বৈজ্ঞানিক নামগুলো আমাকে শোনাচ্ছিল। এইটে কিমোষ্টিগ মাইন, ওটা এসরিন, এটা ফিমোভেইন, জেনেসেরিনা, ড্রিহাই-ড্রোস্ফিফিল ট্রিমিফাইল ল্যামোনাম ইত্যাদি। দম বন্ধ হয়ে আসছিল, তাই নেমে এলাম।
বিরক্ত হয়ে জুডিথকে প্রশ্ন করেছিলুম, মানুষের কোনো উপকারে ফলপ্রসু হবে তোমাদের এ সাধনা। প্রকৃত বিজ্ঞানির মত কোনো উত্তর না দিয়ে আমার দিকে এমনভাবে তাকাল যেন বেণু বনে মুক্ত ছড়ানো হয়েছে এতক্ষণ। তখন আমায় ছেড়ে নিজেদের মধ্যে ওরা আলোচনা শুরু করল। সেই আলোচনা থেকে উদ্ধার করলাম। পশ্চিম আফ্রিকার আদিবাসীদের মধ্যে একধরনের অদ্ভুত রোগ আছে যার প্রতিষেধক আজ পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি। এখন সেই প্রতিষেধকই আবিষ্কার করতে হবে।
ওরা আসতেই বললুম, তোমরা বাপু যদি হামের পরে মানুষের দেহে যে বিষটুকু থাকে তার প্রতিকারের জন্য কোনো প্রতিষেধক ওষুধ বার কর তাহলে মনুষ্য জাতি তোমাদের দু-হাত তুলে আশীর্বাদ করবে।
জুডিথ রেগে গিয়ে একপ্রকার যা বলল তা এইরকম–এই সব বুড়ো হাবড়াদের জন্য বিজ্ঞান সাধনা এতটা পিছিয়ে পড়েছে। এই তিরস্কার আমাকে নীরবে হজম করতে হয়েছিল।
খাঁচার ভেতরে একটা ইঁদুরের ছটফটানি দেখে বুঝলুম ওর গবেষণা চলছে।
ওদিকে কানে যা এল তাতে মনে হল, ফ্রাঙ্কলিন পোয়ারোকে তার সাধনার কথা শোনাচ্ছিলেন।
বুঝলেন মঁসিয়ে পোয়ারো, পশ্চিম আফ্রিকার আদিবাসীরা জীবনধারণের জন্য এমনসব গাছের শেকড় খাচ্ছে যার ফলে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে অপরিণত বয়সে মৃত্যু হচ্ছে তা ওরা জানতে বা বুঝতে পারছে না। পোয়ারো সহজ মন্তব্য করেছিল এবং তাতে মৃত্যুর সংখ্যাও অস্বাভাবিক।