অথবা পাখি ধরার পোয়ারোর কথা মাঝে জুড়ে দিলাম।
পোয়ারো বলল, অন্য ভাবেও বলা যায়। মাংস বিক্রি করে। আর সেই ছুরিটি একদিন মানুষের রক্তে লাল হয়ে উঠবে ভাবা যায়নি
বাধা দিয়ে বললাম, বড্ড খাপছাড়া শোনাচ্ছে। যদি কোনোদিন ঐ মাংস বিক্রেতার সঙ্গে বিস্কুটওয়ালার তুমুল ঝগড়া হয়।
যদি না এই মাংস বিক্রেতা ঐ বিস্কুটওয়ালাকে খুনের পরিকল্পনা করে থাকে। তবে তা নয়। আমাদের ব্যাপারটা অন্যভাবে চিন্তা করতে হবে।
পোয়ারোর কথা বুঝে ওঠা দুঃসাধ্য। কর্নেল লাটরেল কি তাহলে কাউকে খুন করার উদ্দেশ্য নিয়ে অতিথিশালা খুলে বসেছেন? এমন ঘটনা তো আগেও ঘটেছে।
আমার বোকার মত মুখ দেখে পোয়ারো বলল, বন্ধু যদি আমার মুখ দেখে সব কথা বুঝে যাবে ভাবো, তাহলে ভুল করবে।
সত্যি পোয়ারো, আজও তোমায় বুঝতে পারলাম না। শুধু নরটনই নয়, এলারটনও আমার সন্দেহের উর্ধ্বে নয়
ও নিশ্চয়ই তোমার পছন্দ নয়।
নিশ্চয়ই নয়–বললাম।
এদের আমরা ভালো চোখে দেখি না। ওরা মেয়েদের নিয়ে বড্ড বেশি মাতামাতি করে।
কেন যে মেয়েরা ঐ সব ফেরেববাজ লোকগুলোর দিকে আকৃষ্ট হয় বুঝি না।
এটাই পৃথিবীর বিস্ময়কর নিদর্শন।
কেন এমন হয় বলতো?
সেটাই তো আমি তোমার কাছে জানতে চাই।
পোয়ারো বলল, এটাই পার্থিব জীবনের ভয়ঙ্কর খেলা। দেখো অনেকে ষাঁড়ের লড়াই দেখে মজা পায় আবার অনেকের কাছে তা দৃষ্টিকটু। মেয়েদের মধ্যে একটা বাঁধন ছেঁড়ার প্রবণতা আছে। তাই এই টাইপের পুরুষেরা ওদের বেশি টানে। অথচ কত ভালো ছেলে সুন্দরী মেয়ের পাণিপ্রার্থী হয়ে ফিরে আসে।
এবার যেমন করে তোক আমি এক্সকে বার করবই। এলারটনই আমাকে জেদী করে তুলল।
বন্ধু তোমাকে ডেকেছি বিপাকে পা ফেলার জন্য নয়। একসময় আমরা একসাথে হেঁটেছি, এ পথটা যতটা সহজ ভাবছ ততটা নয়। এখানকার কেউ বরাহুত অথবা যে অর্থে আমরা হোটেল বুঝে থাকি, এখানকার স্টাইলকে সেভাবে দেখলে ভুল হবে। লাটরেল অর্থ সংকটে পড়েই এই অতিথিশালা খুলেছেন। এখানে যারা আছেন তারা ওদের বন্ধু বা বন্ধুদের পরিচিত। বয়েড ক্যারিংটন ফ্রাঙ্কলিনদের এখানে এনেছেন। আবার ফ্রাঙ্কলিনরা নরটনের জন্য সুপারিশ করেছেন। মনে হয় মিস কেলিও এই একই ভাবে এসেছেন। এখানে সবাই আত্মীয়ের মত আছে। তাহলে দেখ এক্স-এর এখানে কত সুবিধে। সে এল এবং অন্যকেও আসতে প্রলোভিত করল। এবার শ্রমিক রিগসের কথা মনে কর। যে গ্রামে সেই দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছিল তা বয়েড ক্যারিংটনের কাকার বাড়ি থেকে বেশি দূরে নয়। ফ্রাঙ্কলিনরাও কাছাকাছি বাস করতেন। সেখানকার ঐ সরাইখানাটিতে অনেক মানুষের আনাগোনা ছিল। মিসেস ফ্রাঙ্কলিনদের পরিবারের লোকেরা এখানে বেড়াতে আসতেন। তিনি নিজেও কখনও কখনও এসেছেন। নরটন ও মিস কেলি ঐভাবেই ওদের কাছাকাছি এসেছে। না বন্ধু তোমাকে যে অগ্নিকুণ্ডের খোঁজ আমি দিইনি, তাতে তুমি অজান্তে হাত দিলে পুড়বে, তা হতে দিতে পারি না।
কী করব বল। ক্ষোভের সঙ্গে বললাম, তুমি আমায় এখন বিশ্বাস করে উঠতে পারছ না।
তুমি বুঝতে পারছ না বন্ধু। তোমার নিরাপত্তা আমার কাছে কতটা জরুরী যে পাঁচটা খুন করেছে সে যদি টের পায় কেউ তাকে ছায়ার মত অনুসরণ করছে তাহলে সে তাকে হত্যা করার চেষ্টা করবে।
পোয়ারোকে চেপে ধরে বললাম, তুমি কী এসবের উর্দ্ধে?
পোয়ারো গভীর দুঃখের সঙ্গে বলল, আমার চেয়ে তা আর কে বেশি জানে? সেইজন্যই তো তোমাকে তাড়াতাড়ি ডেকে এনেছি।
২. পোয়ারোর চিরদিনের অভ্যাস
পোয়ারোর চিরদিনের অভ্যাস তাড়াতাড়ি শয্যায় গমন ও তাড়াতাড়ি শয্যাত্যাগ। তাই ওকে বিশ্রামের সুযোগ দিয়ে বেরিয়ে এলাম।
সিঁড়ির মুখে কারটিসের সঙ্গে দেখা। একটা দুটো কথা বলে বুঝলাম লোকটা কর্মঠ ও বিশ্বাসী। জানাল এর মধ্যে দুবার পোয়ারোর হার্ট অ্যাটাক হয়ে গেছে। ঈজিপ্টে গিয়ে বিশ্রাম নিয়েও ফল হয়নি। ওঁকে ছাড়া কিভাবে জীবন কাটাব আমি।
ড্রয়িংরুমে আমাকে দেখেই ক্যারিংটন হৈ হৈ করে উঠল। ব্রিজ খেলতে আমায় আহ্বান করল। মনটা বিক্ষিপ্ত হলেও ওদের খেলার পার্টনার হয়ে গেলাম। ভদ্রলোক তার স্ত্রীকেই সঙ্গী করেছেন। কর্নেলের কাছে এ এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতি। মাঝেমাঝে ভুল হলেই মিসেস লাটরেল মুখিয়ে উঠছিলেন স্বামীর প্রতি। তিনি ভয়ে গুটিয়ে যাচ্ছিলেন। এভাবে খেলা যায় না, একটা অজুহাত করে উঠে পড়লাম। নরটনও একই কারণ দেখিয়ে বেরিয়ে এল।
বারান্দা দিয়ে একসাথে হাঁটতে হাঁটতে জানালেন, এ সহ্য করা যায় না। ভাবা যায় না কিভাবে তিনি ভারতবর্ষে একসময় দাপটের সঙ্গে সৈন্য পরিচালনা করে ছিলেন, আর এখন কিভাবে বেড়াল ছানা হয়ে থাকেন।
আমি ওনাকে সাবধান করে দিই, কারণ মিসেস লাটরেলের থেকে আমরা বেশি দূরে এখনও যেতে পারিনি।
তবে বললুম, আপনার সঙ্গে আমিও একমত। তবে এ বয়সে তিনি কিভাবে স্ত্রীকে কচুকাটা করবেন? যা বলেছেন, এই বয়সে হা প্রিয়তমা, না প্রিয়তমা না বললে স্ত্রী কি আর বশে থাকে?
নিরীহ নরটনের জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ ছাড়া কি করতে পারি?
হলঘরে ঢুকে নরটনকে বললুম, ব্যাপার কি এত রাতে দরজা খুলে বসে আছেন হাওয়া আসছে। বন্ধ করে দেওয়া উচিৎ বলে মনে হয়।
না, তা নয়। তবে বাড়ির সবলোক ঘরে ফিরেছে বলে মনে হয় না।