ক্লাভেনের সঙ্গে পরিচয় হল। আমার দিকে তাকিয়ে সম্ভ্রমে মাথা নোয়ালো। দেখে মনে হল ঘরের সুন্দরী বৌ।
সত্যি বলতে কি জন নিষ্ঠুর জোতদারের মত ওর উপর ভীষণ কাজ চাপিয়ে দিয়েছে। কিছু ভুল বললাম জন। মিঃ ফ্রাঙ্কলিন চেয়ার ছেড়ে উঠে জানলার ধারে গিয়েছিলেন। চমকে উঠে বললেন, কিছু বললে বারবারা?
হুঁ জুডিথকে ভীষণ খাটাচ্ছো। এখন মিঃ হেস্টিংস এসে পড়েছেন, আমি আর উনি দুজনে এখন জুডিথের সুখ সুবিধার দিকে নজর দিতে পারব।
জুডিথ হঠাৎ ঘরে ঢুকতে ওর দিকে তাকিয়ে ফ্রাঙ্কলিন বললেন, তোমাকে কি ভীষণ পরিশ্রম করাচ্ছি?
আমাদের দিকে এক পলক দেখে জুডিথ বলল, ওরা আপনার সঙ্গে মজা করছে। আমি জানতে এসেছিলাম কাঁচের টুকরোতে যে রক্তের নমুনা নেওয়া হয়েছে তার কী করবেন?
খুব ভালো করেছ মনে করিয়ে দিয়েছ। কিছু মনে করবে না, আমাকে এখনই একবার ল্যাবরেটরিতে যেতে হচ্ছে–আমার দিকে তাকিয়ে বললেন। তারপর জুডিথ ও ফ্রাঙ্কলিন দুজনে ঘর ছেড়ে চলে গেল।
সে সময় মিসেস ফ্রাঙ্কলিনের চেহারা দেখে বড় কষ্ট হল। ক্লাভেন বলল, আসলে মিঃ ফ্রাঙ্কলিনের অত তাড়া থাকে না, মিস হেস্টিংস ওঁনাকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরাচ্ছে।
লজ্জায় আমার মুখটা লাল হয়ে উঠল। বারবার নিজের মনেই বললেন, হা ঈশ্বর, আমি যদি এদের কোনো কাজে সাহায্য করতে পারতাম, ভীষণ খারাপ লাগে আমার।
ফায়ারপ্লেসের পাশে দাঁড়িয়ে বয়েড ক্যারিংটন বলল, ওসব বাজে কথা ভেবে নিজেকে ব্যস্ত কোরো না, তুমি বেশ সুস্থ আছো।
কান্নার গলায় বারবারা ফ্রাঙ্কলিন বলে উঠলেন, ও সব তুমি বুঝবে না, ঐ সব অবলা গিনিপিগ, ইঁদুর ধরে কেটে ফেলা…., উহঃ কি নিষ্ঠুর, প্রকৃতিতে এই সব প্রাণীদের স্বচ্ছন্দ বিচরণ আমি কি ভালোবাসি।
বয়েড ক্যারিংটন বারবারার বিছানার কাছে এগিয়ে এলেন। তারপর প্রেমিকের মতন তার হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললেন, তুমি একটুও বদলাওনি, সেই সতেরো বছরের কিশোরীর মত আছে। পুরোন স্মৃতিচারণা করতে করতে হঠাৎ আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, জানেন আমরা দুজনে ছোটবেলার খেলার সঙ্গী ছিলাম।
বারবারা প্রতিবাদ করলেন, খেলার সঙ্গী
ওহঃ, আমি কি জানি না, তুমি আমার থেকে অন্ততঃ পনেরো বছরের ছোট হবে। বাচ্চা ছেলের মত তোমার সঙ্গে খেলা করেছি। যখন ভারতবর্ষ ছেড়ে ফিরে এলাম, দেখলাম তুমি এক বিকশিত পূর্ণা যুবতী। তখনও তোমায় নিয়ে গলফ খেলেছি, খেলা শিখিয়েছি তোমার মনে নেই?
লজ্জায় বারবারার গাল লাল হয়ে উঠল, বেশ বুঝতে পারলাম।
সে ভুলবার কথা নয়। জানেন মিঃ হেস্টিংস, আমার পরিবারের লোকেরা একসময় এদিকটায় বাস করতেন। আর তখন বিল আসত ন্যাটনে ওর কাকা স্যার এভার্ডের কাছে বেড়াতে
ন্যাটন যাচ্ছেতাই। আমার মনে হত ওটা একটা কবরখানা ছাড়া আর কিছুই নয়।
বারবারা আহত হলেন। বললেন, একটা কবরখানাকেও ইচ্ছে করলে মোহনীয় করে তোলা যায়
হয়তো যায়। আমার অত ধৈৰ্য্য বা কল্পনাশক্তি কোনোটাই নেই। ওসব সাজানো গোছানো মেয়েদের কাজ, পুরুষের নয়।
কেন আমিতো সব গুছিয়ে সুন্দর করে দেব বলেছি।
ক্লাভেনের দিকে তাকিয়ে ক্যারিংটন বললেন, যদি আপনি অনুমতি দেন তাহলে ওকে নিয়ে একবার চেষ্টা করে দেখতে পারি।
সে তো, ভালো কথা। তাহলে ওঁরও একঘেয়েমী কাটবে। কিন্তু যেন বেশি পরিশ্রম না হয়–
আনন্দে লাফিয়ে উঠে ক্যারিংটন বললেন, তাহলে কাল আমি তোমায় নিয়ে যাব।
আমি এক নির্বাক শ্রোতা ও দর্শকের মত সব দেখতে শুনতে লাগলাম। তারপর আমি ও ক্যারিংটন বিদায় নিয়ে চলে গেলাম। ক্যারিংটন আমার পাশে বসে বলল, জানেন সতেরো বছর বয়সে ও কত প্রাণবন্ত মেয়ে ছিল। যখন বার্মা থেকে ফিরেছি দেশে, তখন স্ত্রী মারা গেছেন। কিছু মনে করবেন না, ওকে দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় ফ্রাঙ্কলিনের সঙ্গে ওর বিয়ে হয়ে গেল। কিন্তু সুখী হল না। ও একটু আবেগপ্রবণ। সামাণ্য আঘাতে নুইয়ে পড়ে। ওকে নিয়ে একটু বেড়াতে গেলে খুশীতে ভরে উঠে। কিন্তু স্বামীটা একটা হনুমান। দিনরাত টেস্টটিউব আর ল্যাবরেটরি নিয়ে পড়ে আছে…।
আড়চোখে একবার ক্যারিংটনকে দেখলাম। এই হাড় সর্বস্ব মহিলার মধ্যে তার মত দশাসই দেহের পুরুষ কি দেখতে পেয়েছে। ব্যবস বলতে অজ্ঞান।
নিচে নেমে আসার সময় লাটরেল পাকড়াও করল। বলল, একহাত ব্রিজ খেলা যাক।
সবিনয়ে জানালাম, ওটা আমার ধাতে সয় না। তাছাড়া অথর্ব পঙ্গু বন্ধুকে সঙ্গ দেওয়াটা জরুরী বলে মনে করি।
পোয়ারো বিছানায় বসে। কারটিস আমাকে আসতে দেখে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গেল। বললাম, কোথায় তুমি সাড়া বাড়ি তোলপাড় করে বেড়াবে, না বিছানায় বন্দী। আমি কিন্তু তোমার এক্স-এর পিছনে লেগে পড়েছি।
মুচকি হেসে বলল, ভালো, শুনে আশ্বস্ত হলাম। ইতিমধ্যে কেউ কেউ নিশ্চয়ই তোমাকে সন্দেহের চোখে দেখতে শুরু করেছে।
শুনে লজ্জা পেলাম, আন্দাজ করে ফেলেছো, জুডিথের কথা মনে হল কিন্তু কি করে সেকথা বলি?
কোনো সমাধানে পৌঁছতে পেরেছ কী?
না। তবে তোমার ওই নরটন মিঃ এক্স হতে পারে। তবে এটা অনুমান। অস্পষ্ট ভাবে একটা চিন্তা করেছি মাত্র। কিন্তু এই অস্পষ্ট বা ছায়া নিয়ে খেলারও রকমফের আছে।
কী রকম?
কোনো ঘটনা ঘটেনি এরকম একটা ঘটনার কথা ভাবা যাক। ধরো এক সাদাসিধে লোকের আবির্ভাব হল সেই খুনী। খুব মিশুকে, শোনা যাচ্ছে তার মাছ ধরার একটা নেশা আছে।