জ্যাপ আবার বললেন–আপনি কি জানেন আপনার ভাইয়ের আর কোনো শত্রু আছে কিনা?
মিস মর্লে মাথা নেড়ে না বললেন।
মি. মর্লের অংশীদার মি. রেইলি সম্পর্কে আপনি কি জানেন?
মিস মর্লে তিক্তস্বরে বললেন–ওর সম্পর্কে হেনরি যা বলত তা হল, ও একজন আইরিশ। রুক্ষ মেজাজ। সব সময় ঝগড়া করতে পছন্দ করে। আর রাজনীতি নিয়ে তর্ক শুরু করলে তো কথাই নেই। নাওয়া খাওয়া ভুলে যাবে। বিরক্তিকর ব্যক্তিত্ব। তবে তার প্রশংসা করে হেনরি বলত, তার কাজে গাফিলতি নেই। দক্ষ চিকিৎসক হিসেবে তাঁর নাম আছে। দাঁতের যে কোনো জটিল অসুখ সে অতি সহজেই সারিয়ে তুলতে পারত।
আপনি যে বললেন–বিরক্তিকর ব্যক্তিত্ব, সেটা কোনদিক থেকে?
মিস মর্লে একটু ভাবলেন। তারপর বললেন–সে প্রচন্ড নেশাগ্রস্ত। সবসময় মদ পান করত। বদ্ধ মাতাল–তবে দয়া করে একথাটা খবরের কাগজে ছাপিয়ে দেবেন না।
এ নিয়ে তার সঙ্গে আপনার ভাইয়ের কি কোনো ঝামেলা হয়েছিল?
হেনরি তাকে দু-একবার সাবধান করেছিল। বলেছিল–দাঁতের চিকিৎসা, সূক্ষ্ম কাজ, খুব সতর্ক হয়ে করতে হয়। তাছাড়া মদের গন্ধ যে কোনো রোগী অপছন্দ করবে।
জ্যাপ সায় দিয়ে বললেন–আপনার ভাইয়ের টাকা পয়সার ব্যাপারটা একটু বলুন।
হেনরি খারাপ আয় করত না। সে সঞ্চয়ীও ছিল। বেশকিছু টাকা জমিয়েছিল সে। তাছাড়া আমাদের বাবার কাজ থেকে পাওয়া কিছু টাকাও আছে দুজনের নামে।
মি. মর্লে কি কোনো উইল করেছিলেন?
হ্যাঁ–সে উইল করেছিল। তাতে যা লেখা আছে তা হল গ্ল্যাডিস নেভিল পাবে একশো পাউন্ড, বাকিটা আমার।
হুম বলে জ্যাপ চুপ করে গেলেন।
এমন সময় দরজায় একটা শব্দ হল। দরজার পাল্লা খুলে যে মুখ বের করল সে আর কেউ নয় ওই ছোকরা চাকর অ্যালফ্রেড। পোয়ারো আর জ্যাপকে দেখে তার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। ঢোক গিলে সে বলল–মিস নেভিল এসেছেন। তিনি শোকে বিহ্বল। তিনি জানতে চাইলেন এখানে আসতে পারেন কি না।
জ্যাপ ইঙ্গিত করতেই মিস মর্লে বললেন–যাও অ্যালফ্রেড, ওকে এখানে নিয়ে এসো।
ঠিক আছে বলে অ্যালফ্রেড বিদায় নিল।
মিস মর্লে জোরে একটা নিশ্বাস ছাড়লেন।
মিনিট কয়েক পরে বছর আঠাশের একটি তরুণী ঘরে এসে ঢুকলেন। ফ্যাকাসে গায়ের রঙ, দীর্ঘাকায় বুদ্ধিমতী মহিলা। দেখে মনে হবে সত্যিই সে ভেঙে পড়েছে মি. মর্লের আত্মহত্যার খবর শুনে। তবে চটজলদি সামলে নিতে সে সক্ষম হয়েছে।
জ্যাপের ইচ্ছে ছিল না মিস নেভিল, মিস মর্লের মুখোমুখি হয়। তাই তিনি মি. মর্লের কাগজপত্র দেখার অজুহাতে গ্ল্যাডিসকে নিয়ে পাশের ছোট ঘরে গেলেন।
সেখানে যাওয়ার পর মিস নেভিল বারবার বলতে লাগলে–আমি কিছুতেই মানতে পারছি না, মি. মর্লে এমন একটা অবিশ্বাস্য কাজ করতে পারেন। গতকালও সে তার সঙ্গে কাজ করেছে। তার মধ্যে অপ্রত্যাশিত কোনো লক্ষণ দেখেনি সে।
জ্যাপ এই সুযোগে বলে ফেললেন মিস. নেভিল আপনাকে কেউ খবর পাঠিয়ে ডেকেছিল?
গ্ল্যাডিস বলল–আর বলবেন না, পুরোটাই তামাশা, কেউ যে এমন বিশ্রী খবর কাউকে পাঠাতে পারে তা আমার জানা ছিল না। বিশ্বাস করুন, আমি সত্যি বলছি।
জ্যাপ বললেন–আপনার কথাটা ঠিক বুঝলাম না। একটু খোলাখুলি বলুন।
গ্ল্যাডিস বলে চলল, আমার দিদিমার অসুস্থতার খবর দিয়ে আমাকে কেউ টেলিগ্রাম করেছিল। আমিও তাকে দেখতে ছুটে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি আসলে দিদিমার কিছুই হয়নি। তিনি সুস্থ আছেন। দিদিমাও আমাকে দেখে হতবাক, মিথ্যে খবর দিয়ে টেলিগ্রাম করায় তখন আমার ভীষণ রাগ হয়েছিল। আবার সত্যি কথা বলতে কি ভালো লেগেছিল দিদিমাকে দেখে। তবে যেই করে থাকুক কাজ হয়েছে। আমি অকারণে স্যারের কাছে খারাপ হলাম।
মিস নেভিল, টেলিগ্রামটা দেখাতে পারেন?
দুঃখিত, স্টেশনে পৌঁছনোর পর ওটা আমি ফেলে দিয়েছি। ওটায় লেখা ছিল, গত রাতে তোমার দিদিমার স্ট্রোক হয়েছে। তুমি যত তাড়াতাড়ি পারো এসো।
আপনি কি নিশ্চিত করে বলতে পারেন এই টেলিগ্রামটা আপনার বন্ধু ফ্র্যাঙ্ক কার্টার পাঠাননি?
মিস নেভিল অবাক হয়ে বলল—-অসম্ভব! ফ্র্যাঙ্ক এটা করতেই পারে না। আর করবেই বা কেন? ওই! বুঝতে পারছি, আপনি বোধহয় ভেবেছেন আমরা দুজনে পরামর্শ করে এমন কাজ করেছি? আপনার ভাবনা ভুল ইন্সপেক্টর। এমন কাজ আমরা স্বপ্নেও ভাবি না।
মিস নেভিল বেশ উত্তেজিত হয়ে পড়েছেন। তাকে সামলাতে জ্যাপের যথেষ্ট বেগ পেতে হল। কোনো রকমে তাকে শান্ত করে জ্যাপ আবার প্রশ্ন করলেন–সকালের রোগীদের নাম, কে, কখন এসেছিল সেগুলি কিছু মনে আছে?
গ্ল্যাডিস নিজেকে ধাতস্থ করে বলতে শুরু করল–তাদের নাম ঠিকানা সবই খাতায় নথিভুক্ত করা হয়েছে। নিশ্চয় এতক্ষণে তা দেখে নিয়েছেন। তবুও আমি বলছি বেলা দশটায় মিসেস সেমিসকে সময় দেওয়া হয়েছে। তার নতুন দাঁতের প্লেট বসানো হবে। সাড়ে দশটায় আসার কথা লেডি গ্রাটের। মধ্যবয়সি মহিলা। তিনি থাকেন লোন্ডস স্কোয়ারে। এগারোটায় আসবেন এরকুল পোয়ারো, তিনি এখানে প্রায়ই আসেন। ওহ! আপনি যে এখানে আছেন আগে খেয়াল করিনি। দুঃখিত মি. পোয়ারো, দয়া করে কিছু মনে করবেন না। এত গোলমালে মাথাটা ঠিক রাখতে পারছি না। সাড়ে এগারোটায় মি. অ্যালিস্টেয়ার ব্ল্যাস্ট-ইনিই সেই বিখ্যাত ব্যাঙ্কার।
তারপর আসার কথা মিস সেইনসবারি সীলের। তিনি দাঁতের যন্ত্রণায় ভীষণ কষ্ট পাচ্ছিলেন। তাই ফোনের মাধ্যমে নাম লিখিয়েছিলেন। ভীষণ খুঁতখুঁতে স্বভাবের মহিলা। আর বড় বাজে বকেন। কথা শুরু করলে আর থামতে চান না। বেলা বারোটায় মি. অ্যামবেরিওটিস। তিনি থাকেন স্যাভয় হোটেলে। তিনি এই প্রথম এখানে দাঁত দেখাতে আসবেন। তারপর সাড়ে বারোটায় মিস গার্বির পালা। তার ঠিকানা ওয়াদিং। এছাড়া বন্ধু, বিদেশী আমেরিকান রোগীও আসেন মি. মর্লের কাছে।