আহা বেচারা মর্লে, যে নাকি কারো কাছেই বিপজ্জনক নয়। অথচ তাঁকেও মরতে হল অপঘাতে। বিষাদের সুর জ্যাপের গলায়। হয়েছে।
পোয়ারো বললেন–সত্যিই আমি বিস্মিত।
জ্যাপ সরাসরি পোয়ারোর মত জানতে চাইলেন।
মর্লের সঙ্গে আজ সকালের কথোপকথন সম্পর্কে জ্যাপকে জানালেন পোয়ারা। মর্লের মুখে শোনা একজন রোগীর নামও বললেন।
জ্যাপ প্রশ্ন করলেন আপনি আজ সকালে মি. মর্লের কাছে আসা অন্যান্য রোগীদের ভালো করে দেখেছিলেন?
পোয়ারো সতর্কভঙ্গিতে বললেন–আজ সকালে আমি ওয়েটিং রুমে একজন যুবককে দেখেছিলাম, যাকে দেখতে অনেকটা খুনিদের মতো।
জ্যাপ সচকিত হয়ে বললেন–কেসটা কি মশাই? পোয়ারো হেসে বললেন না, না সেরকম কিছু না। যুবকটিকে আমার খুব অদ্ভুত লাগছিল। তার ভাবভঙ্গি অপরাধসুলভ।
জ্যাপ বললেন–বুঝতে পারছি, আপনার খুনি যুবকটি বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। আত্মহত্যা কিংবা খুন যাই হয়ে থাকুক তদন্ত করে আমরা দেখব। এখন চলুন মিস মর্লের কাছে। ওর সঙ্গে আর একবার কথা বলা দরকার, ভাইয়ের মৃত্যু তাঁর পক্ষে খুব শোকের। যদিও তিনি কঠিন মনের মানুষ তাই সহজে মুষড়ে পড়বেন না।
জর্জিনা, মর্লে, জ্যাপও পোয়ারোর কথা শুনলেন।শান্তভাবে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করলেন। তিনি দৃঢ় কণ্ঠে জবাব দিলেন–এটা অবিশ্বাস অবাস্তব ঘটনা, আমার ভাই আত্মহত্যা করতে পারে না। আমি তাকে ভালোভাবে জানি এমন মানসিকতার মানুষ নয় সে।
পোয়ারো বললেন–এর উল্টোটা কি হতে পারে, আপনি ভাবতে পারেন, মাদামোয়াজেল।
মিস মর্লে একটু ভেবে বললেন–এটা তবে ঠিক আত্মহত্যা না হলে খুন, এই সত্যটা আমাদের মেনে নিতে হবে। এছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই।
সেটা অসম্ভব নয়?
না–প্রথম সম্ভাবনার ব্যাপার যদি ধরেন তাহলে আমি আবার বলব, তার আত্মহত্যা করার মতো কোনো কারণ নেই। সে নিজের জীবন শেষ করে দেবার পাত্র নয়।
আজ সকালে আপনার সঙ্গে তাঁর দেখা হয়েছিল?
হ্যাঁ, প্রাতরাশের সময়।
সে সময় সম্পূর্ণ প্রকৃতিস্থ ছিলেন বলে আপনার মনে হয়েছিল? তার মধ্যে কোনো চঞ্চলতা প্রকাশ পায়নি?
হ্যাঁ, সেটাও আমি লক্ষ্য করেছি। সে সামান্য উত্তেজিত ছিল। তবে যা ভাবছেন তা নয়। তার সেক্রেটারি ও সহকারীর ওপর বিরক্ত হয়েছিল এই যা।
কেন তারা কি করেছিল?
আজ সকালে তাঁর ঢের ব্যস্ততা ছিল, আর ওর সেক্রেটারি গ্ল্যাডিস নেভিল ও সহকারী তরুণটি ছুটি নিয়েছিল।
মিস নেভিল মি. মর্লের চেম্বারে কি কাজ করতেন?
সে হেনরির চিঠিপত্র দেখত, অ্যাপয়েন্টমেন্ট বই রাখত, সব চার্ট ভর্তি করত। যন্ত্রপাতি নির্বীজ করত। আর দাঁত ভরাট করার মতো জিনিস তৈরি করে হেনরিকে সহযোগিতা করত।
সে এখানে কতদিন কাজ করছে?
তিন বছর। সে খুব নির্ভরযোগ্য মেয়ে এবং বিশ্বাসী। ওকে আমরা দুজনেই খুব। ভালোবাসতাম।
আপনার ভাই কথায় কথায় আমাকে বলেছিলেন মিস নেভিল কোনো এক আত্মীয়ার শরীর খারাপের খবর পেয়ে চলে গেছে।
হ্যাঁ–ওর দিদিমার স্ট্রোকের খবর দিয়ে কে একজন ওকে টেলিফোন করেছিল। তাই খুব ভোরের ট্রেনে সে সমারমেটে রওনা দেয়।
এই কারণে তার প্রতি আপনার ভাই অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন।
মিস মর্লে বললেন–হ্যাঁ, ঠিক তাই। তা বলে আপনি আমার ভাইকে নিষ্ঠুর ভাববেন না। সে ভেবেছিল, পোয়ারো মিস মর্লের কথার ইঙ্গিত বুঝতে পেরে তাড়াতাড়ি বললেন হ্যাঁ বলুন, মি. মর্লে কি ভেবেছিলেন?
জর্জিনা মর্লে ইতস্তত করে বললেন–হেনরি ভেবেছিল গ্ল্যাডিস তাকে মিথ্যে বলেছিল। ও ইচ্ছে করে ছুটি নিয়ে ওই যুবকের সঙ্গে বেড়াতে গিয়েছিল। যদিও আমি জানি গ্ল্যাডিস সে ধরনের মেয়ে নয়। হেনরিকে আমি সে কথা বলেছিলাম। তবে কথাটা হল অযোগ্য এক যুবকের সঙ্গে সে ঘোরাফেরা করে সেটা হেনরির পছন্দ নয়। তাই হেনরি ভেবেছিল মিস নেভিল ওই যুবকের পরামর্শে মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছিলেন। দিদিমার অসুস্থতার খবরটা নিছকই বাহানা। ওরা একদিন ছুটি নেওয়ার জন্যে এই মতলব ফেঁদেছিল। তবে আমি নিশ্চিত ও এমন অন্যায় কাজ করতে পারে না। ও কাজ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল, ওর বিবেচনা বোধ অত্যন্ত প্রখর।
তবে ওই যুবকের পক্ষে এরকম প্রস্তাব করা সম্ভব?
হ্যাঁ–সে সব পারে। আমাকে ভুল বুঝবেন না। আমি একথা বাধ্য হয়েই বলছি।
পোয়ারো বললেন ওই যুবকের নামটা জানা হল না। তাছাড়া ও আপনার ভাইয়ের কাছে কি কাজ করে?
মিস মর্লে জবাব দিলেন ওর নাম কার্টার! ফ্র্যাঙ্ক কার্টার। হেনরির বক্তব্য অনুযায়ী ও একটি বখাটে ছেলে। ওর সঙ্গে হেনরির আলাপ বীমা করার সূত্রে, ছেলেটি আগে বীমা কোম্পানিতে কেরানির কাজ করত। কোনো কারণে তার চাকরি যায়। সেই থেকে হেনরির চেম্বারে এসে বসত। রোগীদের নাম লিখতো। গ্ল্যাডিসকে বিয়ে করতে চায়। তাই গ্ল্যাডিস জমানো টাকা থেকে কিছুটা কার্টারকে দেয়। সেই কারণে হেনরি খুবই ক্ষুব্ধ।
এতক্ষণ জ্যাপ চুপচাপ বসে ওদের কথা শুনছিলেন। এবার তিনি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন–আপনার ভাই কি মিস নেভিলকে বলেছিলেন কার্টারকে বিয়ে না করতে?
হ্যাঁ–হেনরি এই বিয়েতে বাধা দেবার চেষ্টা করেছিল।
তাহলে আপনার ভাইয়ের ওপরে ফ্রাঙ্ক কার্টারের রাগ, বিদ্বেষ থাকতেই পারে? মিস : মলে তারস্বরে চেঁচিয়ে উঠলেন–একথা সত্যি নয়। আপনি কি বলতে চান কার্টার হেনরিকে গুলি করে হত্যা করেছে। যদিও আমার ভাই গ্ল্যাডিসকে পরামর্শ দিয়েছিল কার্টারকে এড়িয়ে চলার কিন্তু মেয়েটা সেই পরামর্শ কানে তোলেনি, সে কার্টারকে গভীরভাবে ভালোবেসে ফেলেছিল।