পোয়ারো জানতে চাইলেন–রোগীদের ওপরে পৌঁছে দেওয়ার জন্য কিরকম ব্যবস্থা চালু ছিল?
মর্লে পরের রোগীদের ডাকার জন্যে বেল বাজাতেন।
এরপর ওই চাকরটা পরের জনকে ওপরে নিয়ে যেত।
মর্লে কখন শেষ বেল বাজিয়েছিলেন?
বারোটা পাঁচে। সেই রোগীর নাম মি, অ্যামবেরিওটিস, স্যাভয় হোটেল। ডাক্তারের নথি থেকে জানা গেছে।
ওই ছেলেটা নামটা শুনে কিভাবে উচ্চারণ করল, ভেবেই আমার হাসি পাচ্ছে।
একটা আস্ত গবেট ওকে নানা প্রশ্ন করে আমরা হাসির খোরাক জোগাতে পারি।
ওই রোগীটি অর্থাৎ মি. অ্যামবেরিওটিস কখন চলে গিয়েছিলেন?
মি. অ্যামবেরিওটিস একা বাইরে বেরিয়ে এলিভেটরে উঠেছিলেন। তাই ছেলেটি জানে না। এমন অনেক রোগী আছেন যারা কারো সাহায্য নিতে পছন্দ করেন না। ইতিমধ্যে আমি একটা কাজ করেছি। স্যাভয় হোটেলে ফোন করেছি। মি. অ্যামবেরিওটিসের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি খুবই সপ্রতিভ, সব কথাই বলেছেন। কোনো কিছু গোপন করেননি। তিনি যখন বেরিয়ে এসেছিলেন তখন ঘড়িতে বারোটা পঁচিশ হয়েছিল।
আমাদের কাজে লাগতে পারে এমন কোনো কথা কি তাঁর কাছে জানতে পেরেছেন?
তিনি বলেছেন–মি. মর্লের মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু লক্ষ্য করেননি তিনি।
তাহলে ঘটনাটা ঘটতে পারে বারোটা পাঁচ থেকে বিশ মিনিট আর দেড়টার মধ্যে। নীচের সময়টার সম্ভাবনা বেশি।
অবশ্যই কারণ তা যদি না হত……….। পোয়ারো তাকে নামিয়ে দিয়ে বললেন তাহলে তিনি পরবর্তী রোগীকে বেল টিপে ডাকতেন।
এটাই ঠিক। ডিভিশানাল সার্জনের মতও তাই। তিনি দুটো কুড়িতে মৃতদেহ পরীক্ষা করে কিছু বলেননি? তাঁর বয়ান অনুযায়ী এটা স্পষ্ট যে মি. মর্লে একটার পরে নিজেকে গুলি করে থাকতে পারেন, নয়তো সামান্য আগেও হতে পারে। তবে এই ঘটনার সঙ্গে সন্দেহজনক কিছু জড়িয়ে আছে।
পোয়ারো চিন্তিতি মুখে বললেন মি. মর্লে বারোটা পঁচিশেও অত্যন্ত স্বাভাবিক, হাসিখুশি, দক্ষ দন্তচিকিৎসকই ছিলেন। এরপর এমন কি ঘটল? হতাশা–অবসাদ-আর তাই তিনি এপথ বেছে নিলেন। নিজের গুলিতে শেষ হলেন।
ব্যাপারটা ভারি অদ্ভুত না, মি. পোয়ারো?
পোয়ারো জানতে চাইলেন বন্দুকটা কি মি. মর্লের ছিল?
না, না আমি যতটা জানি তার কোনো বন্দুক ছিল না। তার বোন মিস মর্লেও সেকথা স্বীকার করেছেন। অবশ্য এটা ঠিক, কেউ যদি মনে করেন নিজেকে শেষ করবেন, তাহলে একটা বন্দুক কিনতেই পারেন। আর যদি তাই হয় তাহলে খবরটা আমরা জানতে পারব। আর একটা বিষয় আমাকে ভীষণ ভাবাচ্ছে, সেটা হল মি. মর্লের পড়ে থাকার ভঙ্গি দেখে আমি একথা নিশ্চিত করে বলতে পারি না যে কেউ ওভাবে পড়তে পারে না। তবুও ভঙ্গিটা একটু অন্য ধরনের।
পোয়ারো মাথা ঝাঁকিয়ে বললেন–আপনি কি ওই ছোরাকে এ বিষয়ে কিছু জিজ্ঞেস করেছেন?
না, তেমন কিছু নয়–এটা আমার অনুমান মাত্র, আমার ধারণা ছোকরাটা মি. মর্লেকে ও ভাবে পড়ে থাকতে দেখে ভয় পেয়েছিল। তাই সরিয়ে দেখতে চেয়েছিল। সে অবশ্য একথা স্বীকার করেনি।
পোয়ারো ঘরের চারপাশটা ভালো ভাবে লক্ষ্য করলেন। একে একে তিনি চোখ বুলিয়ে গেলেন দেয়ালের কোণে থাকা হাত ধোয়ার বেসিন, দরজার পাশে থাকা ফাইল ক্যাবিনেট, চুল্লি, রোগীর বসার চেয়ারের ওপর দিয়ে। শেষে তিনি দৃষ্টি রাখলেন যেখানে মর্লের দেহটা শায়িত ছিল সেদিকে। হঠাৎ তার চোখ পড়ল চুল্লি কাছে আরও একটি দরজার দিকে।
পোয়ারোকে অনুসরণ করে জ্যাপের দৃষ্টিও ঘুরে গেল চারদিকে।
দরজাটার দিকে জ্যাপ এগিয়ে গেলেন। দরজাটা খুলে বললেন–এটা ছোট একটা অফিস ঘর। এখানে মর্লের সেক্রেটারি মিস নেভিল কাজ করত। ছোকরা চাকরটার বক্তব্য থেকে বুঝলাম তিনি আজ অনুপস্থিত।
হ্যাঁ মনে পড়ছে, মর্লের কাছে শুনেছিলাম। এই বক্তব্য আত্মহত্যার বিরুদ্ধে যাচ্ছে।
মিস নেভিলের বসার ঘরটিতে ছোট একটি ডেস্ক, একটা স্পিরিট ল্যাম্প, চায়ের সরঞ্জাম আর কয়েকটা চেয়ার রয়েছে। এখানে প্রবেশের দ্বিতীয় কোনো দরজা নেই।
জ্যাপ নাক চুলকে বললেন আপনি বলতে চাইছেন কৌশলে মেয়েটাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে? এটা আত্মহত্যা নয়, খুন? কিন্তু খুনের মোটিভ কি? কে-ই বা তাকে খুন করবে? এমন শান্ত নস্ত্র মানুষটির ওপর কার আক্রোশ ছিল?
পোয়ারো বললেন আপনি ভেবে বলুন তো? কে হতে পারে?
যে কেউই হতে পারে। ওপরের কোনো ফ্ল্যাটের প্রতিবেশী কিংবা বাড়ির চাকরের কেউ এসেও গুলি করে পালিয়ে যেতে পারে। তার কিছু কাজ পার্টনার রেইনিকেও সন্দেহের তালিকায় রাখা যায়। এমনকি ওই ছোকরারও কাজ হতে পারে। তাছাড়া আজ সকালে আসা রোগীরাই বা বাদ যাবে কেন? তাদের মধ্যে কেউ একজন গুলি করে থাকতে পারে। মি. অ্যামবেরিওটিসও সন্দেহমুক্ত নন। তার পক্ষে একাজ করা সম্ভব।
পোয়ারো মাথা নেড়ে স্বীকার করলেন। তাহলে এর কারণ খুঁজে বের করতে হবে আমাদের।
জ্যাপ বললেন–অবশ্যই, তাহলে আপনিও বলছেন আমার ধারণাটা সঠিক, কিন্তু মি. অ্যামবেরিওটিসের মতো একজন সম্ভ্রান্তধর্মী গ্রিক কেন নিরীহ দন্তচিকিৎসককে খুন করবেন। স্যাভয় হোটেল থেকে এখানে এসে? উদ্দেশ্য কি? এটাই আমাদের কাছে প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কাঁধ ঝাঁকিয়ে পোয়ারো বললেন–খুব কাঁচা হাতের কাজ। পেশাদারি কোনো খুনি নয়। ভুল লোককে গুলি করেছে। এ যদি কোনো কোটিপতি বা ঝানু গোয়েন্দা হত তাহলে ঠিক ছিল, এদের খুন করলে খুনির লাভ হত। কোটিপতিকে খুন করলে অনেক টাকা–পেত আর গোয়েন্দাকে মারলে দোষীদের সাজা লাঘব হত।