–আপনি আজ সকালে দাঁতের ডাক্তার মি. মর্লের কাছে গিয়েছিলেন নাকি? খবরটা কি সত্যি?
-হ্যাঁ গিয়েছিলাম, কিন্তু এধরনের প্রশ্ন করার কারণ কী?
–আশা করি এই যাওয়ার পেছনে কোনো গোপন রহস্য নেই? নিছকই সৌজন্যের খাতিরে গিয়েছিলেন?
–অবশ্যই নেই। যদি সন্দেহ হয় তবে শুনুন আমি গিয়েছিলাম দাঁতের অসহনীয় যন্ত্রণার হাত থেকে মুক্তি পাবার জন্যে।
তার কোনো আচরণ কি আপনাকে ক্ষুণ্ণ করেছিল? তার হাবভাব কি আর পাঁচটি দিনের মতো স্বাভাবিক ছিল?
না, ঠিকই ছিল। কেন বলুন তো?
জ্যাপ কর্কশ স্বরে জবাব দিলেন–কারণ আপনি চলে আসার কিছুক্ষণ পরেই তিনি আত্মঘাতী হন, নিজের গুলিতেই তিনি মারা যান।
পোয়ারো আশ্চর্য হয়ে বললেন–না, এ হতে পারে না।
জ্যাপ কঠিন স্বরে বললেন–কথাটা শুনে আপনি বোধহয় আকাশ থেকে পড়লেন।
–সেটাই তো স্বাভাবিক।
আমিও একটা রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি। আপনার সঙ্গে এ ব্যাপারে কিছু আলোচনা করতে চাই। একবার এলে ভালো হয়।
–আপনি এখন কোথায়?
কুইন শার্লট স্ট্রিট।
–আমি এখনই যাচ্ছি বলে পোয়ারো রিসিভারটা নামিয়ে রাখলেন।
এরকুল পোয়ারো নিমেষের মধ্যে পৌঁছে গেলেন ৫৮ কুইন শার্ট স্ট্রিটের ওই বাড়িতে। যেখানে মি. মর্লে আত্মহত্যা করেছেন। একজন পুলিশ কনস্টেবল দরজা খুলে সসম্ভ্রমে বলল–আপনি কি মঁসিয়ে পোয়ারো?
–হ্যাঁ আমি, মাথা নেড়ে জানালেন মি. পোয়ারো।
চিফ ইন্সপেক্টর ওপরে দোতলার ঘরে আছেন। ঘরটা আপনার অচেনা নয় নিশ্চয়ই।
না, না, আমি চিনি–আজ সকালেই এখানে এসেছিলাম।
ঘরে তিনজন লোক ছিলেন। পোয়ারো ঘরে গিয়ে হাজির হলেন। তাকে দেখে জ্যাপ বললেন–আপনি আসায় আমার খুব উপকার হল মি. পোয়ারো। এখনও মৃতদেহটা এখানেই আছে সরানো হয়নি। আপনি আগে দেখুন।
ক্যামেরাম্যানও হাজির। তিনি মৃতদেহের পাশে বসে ফটো তুলছিলেন। পোয়ারোকে দেখে উঠে দাঁড়ালেন।
পোয়ারো এগিয়ে গেলেন চুল্লির দিকে। সেখানেই মি. মর্লের মৃতদেহটি পড়েছিল।
মি. পোয়ারো ঘুরে ঘুরে মৃতদেহটি জরিপ করতে লাগলেন। তিনি দেখলেন মৃত্যুর পরও মি. মর্লের শরীরে কোনো পরিবর্তন আসেনি। আগের মতোই আছেন তিনি, যেন নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছেন। তাঁর ডানদিকের রগের পাশে সামান্য ছোট একটা গর্ত। তার ডান হাতে একটা ছোট পিস্তল। পোয়ারো বিজ্ঞের মতো মাথা নাড়লেন, তারপর বললেন ঠিক আছে, দেহটা এবার সরানোর ব্যবস্থা করুন।
কাছেই পুলিশের লোক দাঁড়িয়েছিল। তারা এগিয়ে এসে মি. মর্লের দেহ তুলে নিয়ে গেল।
চিফ ইন্সপেক্টর জ্যাপ ও গোয়েন্দা প্রবর পোয়ারো ছাড়া বাকি সবাই ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।
জ্যাপ বললেন–রুটিনমাফিক সব কাজ করা হয়েছে। পোয়ারো বললেন–এবার ঘটনাটা খুলে বলুন তো।
জ্যাপ ঢোক গিলে বলতে লাগলেন আমার ধারণা মি. মর্লে নিজের গুলিতেই মারা গেছেন। মৃতদেহের পাশে পড়ে থাকা পিস্তলটাতে ওরই হাতের ছাপ পাওয়া গেছে। তবে আমি নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছি না।
আপনি কি সন্দেহ করছেন?
আপাত দৃষ্টিতে ওনার আত্মহত্যা করার কারণ পাওয়া যাচ্ছে না। উনি চমৎকার স্বাস্থ্যের অধিকারী। অর্থকড়ির অভাব নেই। কারো সঙ্গে শত্রুতা নেই। বিশেষ করে কোনো মেয়েমানুষঘটিত কিছু ছিল না বলেই শুনলাম। অথবা কোনো কিছু নিয়ে ভাবনা চিন্তা করতেও কেউ দেখেনি তাঁকে। যেহেতু আপনি তাঁকে চেনেন তাই আপনার কাছে তাঁর সম্পর্কে জানতে চাইছিলাম। আপনি কি আজ সকালে তার মধ্যে কোনো পরিবর্তন বা বেতাল কিছু লক্ষ্য করেছিলেন।
পোয়ারো মাথা নেড়ে বললেন–না, তেমন কিছুই না। সুস্থ স্বাভাবিক ছিলেন।
তাহালেই ভাবুন কাজ করতে করতে কেউ এভাবে কখনো আত্মহত্যা করতে পারে কি না? ব্যাপারটার মধ্যে কোনো একটা রহস্য লুকিয়ে রয়েছে, যেটা আমাকে ভাবাচ্ছে।
পোয়ারো বললেন বুঝতে পারছি, আপনার সন্দেহ হওয়াই স্বাভাবিক। আচ্ছা বলুন তো ঘটনাটা কখন ঘটেছিল।
ঠিক সময়টা বলতে পারব না। কেন না গুলি ছোঁড়ার আওয়াজ কারো কানে যায়নি। যাওয়া সম্ভবও নয়। এই ঘর থেকে অন্য ঘরে যাওয়ার জন্যে মাঝে বারান্দা ও দুটো দরজা আছে।
দরজায় মোটা পরদা দেওয়া এমনকি একসঙ্গে অনেক রোগী কথা বললেও কেউ শুনতে পায় না বাইরে থেকে।
পোয়ারো স্বীকার করলেন কথাটা। ঠিক তাই। তাছাড়া বাইরে গাড়ি ঘোড়াও চলছে, তাই কোনো কিছু শুনতে পাওয়া কঠিন। মৃত্যুর কথা কে কখন প্রথম জানতে পারে?
প্রায় দুপুর দেড়টা নাগাদ–ছোকরা চাকর অ্যালফ্রেড বিগম প্রথম জানতে পারে। ওর কাছেই শুনলাম সাড়ে বারোটায় একজন রোগী দেখার কথা। মি. মর্লের সেই রোগীটি পৌনে এক ঘণ্টা ধরে বসেছিলেন। শেষে বিরক্ত হয়ে তিনি চিৎকার করতে থাকেন। তাই অ্যালফ্রেড বিগম ডাক্তারের দরজায় টোকা দেয়। ভেতর থেকে কোনো উত্তর আসে না। আবার দরজা ঠেলে ঢোকার সাহসও তাঁর নেই। এর আগে না বলে ভেতরে ঢোকার জন্যে তাকে হেনরি মর্লে বকুনি দিয়েছিল। তাই দ্বিতীয় বার সে আর ভুল করতে চায়নি। ছোকরা চাকরটি নীচে নেমে যায়। পরে সেই মহিলা রোগী ক্রুদ্ধ হয়ে চলে যায়। তখন সওয়া একটা তাছাড়া ওই মহিলার দুপুরের খাওয়ার সময় হয়ে গিয়েছিল।
মহিলাটির নাম কি?
জ্যাপ মুচকে হেসে বললেন–ছোকরা ওই মহিলাটিকে মিস মার্টি নামেই চেনে তবে ডাক্তারের খাতায় লেখা আছে ডার্বি।