মি. ব্লাস্ট শিহরিত হলেন। বললেন, আপনি পাগলের মতো কিসব বলছেন, মঁসিয়ে পোয়ারো?
পোয়ারো বললেন, আমি দ্বৈত সত্ত্বাকে আবিষ্কার করেছি। একজন নিরীহ, সৎ মহিলা। যিনি ভারত থেকে এখানে এসেছেন। অন্যজন চালাক বুদ্ধিমতী নামকরা এক অভিনেত্রী। এবার আপনাকে বলতে হবে দাঁতের ডাক্তারের চেম্বারের সামনে কাকে দেখেছিলেন। যিনি আলাপ হওয়ার মুহূর্তেই বলেছিলেন, আপনার স্ত্রী তাঁর প্রিয় বান্ধবী ছিলেন। মিস সীলের বন্ধুদের জেরা করে জেনেছি আসল মিস সীল এত প্রগলভ নন। তাঁর পক্ষে কোনো অপরিচিত ব্যক্তিকে একথা বলা সম্ভব নয়। তাহলে ধরতে হবে যার সঙ্গে আপনার সাক্ষাৎ হয়েছে তিনি মিথ্যে। আসল মিস সীল ইনি নন। ইনি জাল, প্রতারক। এর বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য ছিল, তাই মিথ্যের আশ্রয় নেন তিনি। আসল মিস সীল এভাবে অবলীলায় মিথ্যে বলতে পারতেন না।
ব্লাস্ট মাথা নেড়ে সায় দিলেন। হ্যাঁ, আপনার এই ব্যাখ্যা যুক্তিসঙ্গত। এ বিষয়ে এখনও অজানা। তবে এর সঙ্গে আর কারা জড়িত আছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে নিশ্চয়ই?
এরকুল পোয়ারো বললেন–অবশ্যই দেখা হচ্ছে। কিন্তু এটা ঠিক আপনার স্ত্রী একজন যশস্বী মহিলা। তাই তার সাথে মিস সেইনসবারি সীলের পরিচয় থাকা অসম্ভব কিছু নয়। তিনি হতে পারেন একজন অ্যাংলো ইন্ডিয়ান অথবা একজন মিশনারী, এমনকি অভিনেত্রী ভাবলেও ভুল হবে না। সুতরাং রেবেকা আর্নেস্ট নয়।
মি. ব্লাস্ট, আমি যে ব্যক্তিগত ও জনগণের জীবনের কথাটা বলেছিলাম এখন তা আপনার কাছে স্পষ্ট হয়েছে। আপনি সামান্য একজন জুনিয়র পার্টনার ছিলেন। একজন ধনী স্ত্রীলোককে বিয়ে করে আপনি বিরাট ব্যাঙ্কার হয়েছেন। খবরের কাগজে ছবিসহ আপনার কথা মাঝে-মধ্যে প্রকাশিত হয়। এবার নিশ্চয়ই আপনাকে বোঝাতে পেরেছি, আমি সঠিক দৃষ্টিকোণ থেকেই ঘটনাটা দেখেছি। আপনার কাছে মানুষের জীবন তুচ্ছ বলে মনে হয়। আপনি একনায়কতন্ত্রে বিশ্বাসী। সেভাবেই জীবনযাপন করছেন। অন্যের মূল্য আপনার কাছে কখনো ছিল না।
অ্যালিস্টেয়ার ব্লাস্ট গম্ভীর স্বরে বললেন আপনার বক্তব্য বোধগম্য হল না, মঁসিয়ে পেয়ারো?
পোয়ারো শান্তভাবে বললেন–আপনি রেবেকা আর্নেস্টকে বিয়ের আগে অন্য একজনকে বিয়ে করেছিলেন, আপনার প্রথমা স্ত্রী বেঁচেছিলেন তখন, সে কথা গোপন করে দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন রেবেকা আর্নেস্টকে। আপনার প্রথমা স্ত্রীর এক্ষেত্রে সম্মতি ছিল। আপনার বিলাসিতা ও ক্ষমতার লোভে আপনি দু’জনকেই প্রতারণা করেছেন।
অ্যালিস্টেয়ার ব্লাস্ট বিরক্ত হয়ে বললেন–কে আমার প্রথমা স্ত্রী?
এরকুল পোয়ারো ধীরে ধীরে বললেন তিনি থাকতেন কিং লিওপোন্ড ম্যানসনে। আপনার বাড়ির খুব কাছেই থাকতেন মিসেস অ্যালবার্ট, চ্যাপম্যান নামে পরিচিত তিনি। আপনি একজন সিক্রেট এজেন্টকে খুঁজে পান। আপনার পরিকল্পনা মতো কাজ এগোতে থাকে। কারো মনে সন্দেহ জাগেনি। তবে প্রকৃত সত্যটা অন্তরালেই থেকে যায়। আপনি জানেন রেবেকা আর্নেস্টের সঙ্গে আপনার বিয়ে হওয়া সম্পূর্ণ অবৈধ। এতবছর পরে কোনো বিপদের সম্মুখীন হবেন তা আপনার আশাতীত ছিল। যেন বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো। হঠাৎ সেদিন চার্চে একজন মহিলা আপনাকে চিনতে পারেন। কথা বলতে বলতে আপনার স্ত্রীর প্রসঙ্গ তোলেন। সেসময় আপনার ভাইঝি মিস ব্লাস্ট সেখানে উপস্থিত ছিলেন। মহিলাটির সব কথা তার কানে যায়। অতএব রহস্য উন্মোচন করা আমার পক্ষে সহজ হয়ে যায়।
ব্লাস্ট কাতর স্বরে বললেন–সেদিন আমাদের দুজনের মধ্যে কি কথা হয়েছিল তা আমি নিজেই আপনাকে বলেছি মঁসিয়ে পোয়ারো।
না, আপনার ভাইঝির চাপে বলতে বাধ্য হয়েছিলেন। যাতে আপনাকে সন্দেহের তলিকার বাইরে রাখা হয়, তারপরও মারাত্মক একটা ঘটনা ঘটে। ম্যাবেল সেইনসবারি সীলের সঙ্গে অ্যামবেরিওটিসের পরিচয় হয়। তিনি তাঁকে মধ্যাহ্ন ভোজে আমন্ত্রণ জানান, কথা প্রসঙ্গে মিস সীল আপনার সঙ্গে দেখা হওয়ার কথা বলেন। মিস সীল জানতেন না অর্থনীতির জগতে আপনিই একচ্ছত্র সম্রাট। কিন্তু অ্যামবেরিওটিস সেটা জানতেন। গুপ্তচর বৃত্তি ছাড়াও ব্ল্যাকমেলিং তার স্বভাব ছিল। তিনি বুঝেছিলেন সোনার খনির দরজা খোলার চাবি হাতে পেয়ে গেছেন। তাই তিনি ব্ল্যাকমেল করার জন্য আপনাকে চিঠি লিখেছিলেন অথবা টেলিফোন করেছিলেন। তাই না, মি. ব্লাস্ট?
এরকুল পোয়ারো একটু থামলেন। তিনি বোঝার চেষ্টা করলেন ব্লাস্টের মনোভাব। তিনি লক্ষ্য করলেন রাস্ট মাথা নীচু করে বসে আছেন, আর তার মুখ থমথম করছে।
পোয়ারো সেসব গ্রাহ্য করলেন না। তিনি আবার বলতে শুরু করলেন।
–একজন ব্ল্যাকমেলার মোকাবিলার পথ একটাই। সে যাতে পৃথিবীর আলো আর না দেখতে পারে তার ব্যবস্থা করা। আর সবচেয়ে সহজ উপায় হল কোনো দন্তচিকিৎসকের চেয়ার, যেখানে মানুষ অসতর্ক থাকে।
এই নাটকের আর এক মজাদার চরিত্র হল অ্যালফ্রেড। হেনরি মর্লের ছোকরা চাকর। তার বয়ানে আমি আলোর দিশা দেখতে পাই। সে আমাকে বলেছে সে গোয়েন্দা গল্প পড়তে খুব পছন্দ করে। সেদিন যে গল্পটি পড়ছিল তার নাম পৌনে বারোটার খুন। সমাপতন এটাই, কারণ মলে খুন হন ঠিক সেই সময়েই। আপনি তার ঘর থেকে বেরিয়ে আসার আগে তাকে গুলি করেছিলেন। সেটা চাপা দেওয়ার জন্য মর্লেকে অনুকরণ করে বেল বাজান। বেসিনের কল খুলে দেন এবং বেরিয়ে আসেন ঘর থেকে। আপনি এমন সময় বেছে নেন যে নীচে নামার সময় অ্যালফ্রেড ছদ্মবেশী সেইনসবারি সীলকে উপরে পৌঁছে দিচ্ছিল! আপনি এলিভেটরে উঠে দরজা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। পরমুহূর্তে দরজা খুলে বেরিয়ে এসেছিলেন তারপর উপরে গিয়ে সোজা সার্জারিতে ঢোকেন।