পোয়ারো যাবার জন্য পা বাড়ালেন। ফ্র্যাঙ্ক কার্টার চিৎকার করে বলল পুলিশ জানতে পারলে আমাকে ফাঁসি দেবে। আপনি আমায় বাঁচান।
পোয়ারো তাকে আশ্বস্ত করে বললেন–সত্য প্রকাশ করে আপনি নিজেকে ফাঁসির দড়ি থেকে রক্ষা করেছেন।
কিন্তু, ওরা বলবে।
পোয়ারো বাধা দিয়ে বললেন–আপনার বক্তব্য আমার অনুমানের সাথে মিলে যাচ্ছে। এখন আমি কি করি তাই দেখুন।
এরকুল পোয়ারো সেখান থেকে চলে এলেন। তাকে দেখে মনে হচ্ছে না যে তিনি সন্তুষ্ট হয়েছেন।
ইলিং-এ মি. বার্নেসের বাড়ি। এরকুল পোয়ারো যখন তাঁর বাড়ি পৌঁছলেন তখন সাতটা বাজে। মি. বার্নেস বাড়িতেই ছিলেন। তিনি পোয়ারোকে সাদরে অভ্যর্থনা জানালেন।
বসার ঘর। তাঁরা দুজনে পাশাপাশি দুটি সোফায় বসে কথাবার্তা শুরু করলেন।
মি. বার্নেস বললেন–ভীষণ গরম পড়েছে। একটু বৃষ্টির প্রয়োজন। তা নাহলে আমার বাগানের সমস্ত ফুল গাছ নষ্ট হয়ে যাবে।
হঠাৎ পোয়ারোর গম্ভীর মুখের দিকে তার নজর পড়ল। তিনি বললেন–আপনাকে খুব ডিসটার্ব দেখাচ্ছে। কোনো তদন্ত নিয়ে চিন্তায় আছেন?
পোয়ারো বললেন–হ্যাঁ, আপনি ঠিক ধরেছেন। মাঝে মধ্যে এমন কেস আমার হাতে আসে যা ইচ্ছে না থাকলেও করতে হয়, মি. বার্নেস।
মি. বার্নেস সহানুভূতির সুরে বললেন আমি তা বুঝি, মঁসিয়ে পোয়ারো।
বাড়িতে ঢোকার মুখে পোয়ারো বাগানটি লক্ষ্য করেছিলেন। তিনি বার্নেসের রুচিবোধের প্রশংসা করে বললেন, বাগানটি খুব সুন্দর করে সাজিয়েছেন তো। বাহারি ফুলের গাছ লাগিয়েছেন। প্রত্যেকটি যেমন চমৎকার তেমনি সুগন্ধী। ছোট হলেও বাগানটি সত্যিই মনোরম।
বার্নেস প্রশংসায় কর্ণপাত করলেন না। তিনি শান্ত ও স্বাভাবিক কণ্ঠস্বরে বললেন, আশা করি, আপনি অপরাধীর খোঁজ পেয়েছেন?
-কে? ফ্র্যাঙ্ক কার্টার?
–অবশ্যই সে।
–আপনি হয়তো ভাবেননি এটা কোনো ব্যক্তিগত খুন?
–না, আমি তা ভাবিনি। অ্যামবেরিওটিস এবং অ্যালিস্টেয়ার ব্লাস্টের ব্যাপারে আমি ভেবেছিলাম এটা কোনো গুপ্তচরদের কাজ।
–প্রথমে আপনার এই সন্দেহের কথাটা জানিয়েছিলেন আমাকে, মি. বার্নেস।
–হ্যাঁ, মনে পড়ছে। কারণ আমি তখন এই ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলাম।
–কিন্তু আপনার সন্দেহ ভুল ছিল।
–হ্যাঁ, সে কথা বলে আর লজ্জা দেবেন না, মঁসিয়ে পোয়ারো। ঝামেলায় পড়লে সকলে পূর্ব অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করে। আর তার থেকেই নানা রকম মন্তব্য করে থাকে।
–পোয়ারো মিষ্টি হেসে বললেন আপনি কখনো কোনো ম্যাজিসিয়ানের তাসের জাদু খেলা দেখেছেন? অনেকগুলো তাসের মধ্যে থেকে একটি বেছে নিতে বলে।
–হ্যাঁ, নিশ্চয়ই।
–এখানেও ঠিক তাই করা হয়েছে। যখনই কেউ হেনরি মর্লের মৃত্যুর কোনো ব্যক্তিগত কারণ খোঁজার চেষ্টা করেছে তখনই মাথায় এসেছে কয়েকটি শব্দ। তা হল অ্যালিস্টেয়ার ব্লাস্ট, অ্যামবেরিওটিস, রাজনীতি, অর্থনীতি ইত্যাদি। আর সবচেয়ে বেশি বিভ্রান্ত করেছেন আপনি, মি.বার্নেস। কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললেন এরকুল পোয়ারো।
মি. বার্নেস বিষণ্ণ সুরে বললেন–দুঃখিত, মঁসিয়ে পোয়ারো আমাকে ক্ষমা করবেন।
–আপনি দেশের অনেক খবর রাখেন। আমি আশা করেছিলাম আপনিই আমাকে সঠিক পথের সন্ধান দিতে পারবেন। তাই আপনার কথায় গুরুত্ব দিয়েছিলাম আমি।
–তাহলে আপনি বলছেন মি. মর্লের মৃত্যুর পেছনে কারো ব্যক্তিগত আক্রোশ আছে।
–হ্যাঁ। খুনের মোটিভ অনুসন্ধান করতে গিয়ে আমি ইতিমধ্যে অনেক সময় ব্যয় করেছি। যদিও এই ব্যাপারে ভাগ্য আমাকে সহায়তা করেছে।
বার্নেস ভ্রু কুঁচকে বললেন–ঠিক বুঝলাম না।
পোয়ারো কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললেন–কথাবার্তার কিছু অংশ আমাকে ভাবিয়ে তুলেছিল। যদিও তখন এর তাৎপর্য বুঝতে পারিনি আমি।
বার্নেস বললেন–আপনি কেন হেঁয়ালি করে কথা বলছেন?
–আমাকে বিশ্বাস করে খোলাখুলি ভাবে কোনো কথা বলেননি আপনি। আমি আপনার কথার ভিত্তিতে এগোতে চেয়েছিলাম। তাই আপনার ভুল তথ্যের জন্য আমি দুঃখ পেয়েছিলাম।
বার্নেস অবাক হয়ে বললেন–আমি?
পোয়ারো কণ্ঠে তীব্রতা এনে বললেন–হ্যাঁ, আপনিই।
বার্নেস কাতর স্বরে বললেন–মঁসিয়ে পোয়ারো আপনি বিশ্বাস করুন ফ্র্যাঙ্ক কার্টারের সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা ছিল না। আমি যেটুকু শুনেছি সে মর্লের মৃত্যুর আগেই তাঁর বাড়ি ছেড়ে ছিল। তার কথার সূত্র থেকে আপনি জানতে পেরেছেন আসল তথ্যটা। ফ্র্যাঙ্ক সেসময় সেই বাড়িতেই হাজির ছিল।
পোয়ারো বললেন–ফ্র্যাঙ্ক তখন ওই বাড়িতে ছিল বলেই খুনিকে দেখতে পেয়েছিল।
–তাহলে কার্টার নির্দোষ আর সে কি খুনিকে দেখতে পেয়েছিল, মঁসিয়ে পোয়ারো?
পোয়ারো মাথা নেড়ে জানালেন সেটা এখনও জানা যায়নি।
০৯. সতেরো, আঠারো অপেক্ষা করো
এরকুল পোয়ারো পরদিন সাক্ষাৎপ্রার্থী হয়ে গেলেন পরিচিত একজন এজেন্টের সঙ্গে। তিনি নাট্য জগতের এক স্বনামধন্য ব্যক্তি। তার সঙ্গে আলাপচারিতায় বেশ কিছুটা সময় কাটিয়ে দিলেন পোয়ারো। তার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে এলেন অক্সফোর্ডে।
পোয়ারো মনস্থির করলেন মি. অ্যালিস্টেয়ার ব্লাস্টের সঙ্গে দেখা করবেন। তার কাছে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানার আছে। আগে থেকেই সমস্ত আয়োজন করে রাখলেন।
পরদিন ভোরবেলা তিনি বেরিয়ে পড়লেন গ্রামের উদ্দেশ্যে। সাড়ে নটায় গথিক হাউসে এসে উপস্থিত হলেন। সেই সময় মি. ব্লাস্ট লাইব্রেরিতে ছিলেন। ছোকরা একটি চাকর পোয়ারোকে তার কাছে নিয়ে গেলেন।