–আপনি পুলিশকে জানিয়েছেন সেই সময় আপনি মেরিলিবোস রোড দিয়ে হাঁটছিলেন। তাই তো?
–হুঁ, ঠিক তাই। সে আমাকে দেখে থাকলে আগে পুলিশকে জানায়নি কেন?
–সে একটু দোটানায় পড়েছিল। বুঝতে পারছিল না। তার কি করা উচিত। সে তার বন্ধু এমাকে বলেছিল। এমা মি. মর্লের বাড়ির রাঁধুনি। যখন আদালতের সিদ্ধান্ত জানতে পারল তারা তখন নিশ্চিন্ত বোধ করল। ভাবল মি. মর্লে আত্মহত্যা করেছেন। তাই তোমার কথা তারা পুলিশকে জানানো দরকার মনে করল না।
আমি এসব কথা বিশ্বাস করি না। আপনারা ষড়যন্ত্র করে ওদের দিয়ে এইসব কথা বলাচ্ছেন। ফ্র্যাঙ্ক ক্ষিপ্ত হয়ে গাল দিয়ে চলল।
পোয়ারো ও জ্যাপ চুপ করে শুনছেন। ধীরে ধীরে কার্টারের রাগ স্তিমিত হল। সে শান্ত হতে পোয়রো বলতে শুরু করলেন রাগ করলে আর বোকার মতো গালমন্দ করলে আপনার ক্ষতিই হবে। লাভ কিছুই হবে না। ওই দুজন মহিলা এখনও পুলিশকে কিছুই জানায়নি। তবে কোনো একদিন জানাবে নিশ্চয়। অ্যাগনেস ফ্রেচার আপনাকে দেখে চিনতে পেরেছিল। ওই সময় আপনি ছাড়া অন্য কেউ সেখানে ছিল না। আর আপনি সত্যিই মি. মর্লের ঘরে গিয়েছিলেন। তারা সত্যি কথাই বলছে। আর পুলিশও তা বিশ্বাস করবে। কার্টারের ভাব বোঝার চেষ্টা করলেন তিনি। তিনি অপেক্ষায় রইলেন। আবার তিনি বলতে শুরু করলেন, এবার আপনি বলুন এরপর কি হয়েছিল?
ক্রুদ্ধ স্বরে বলল–সব মিথ্যে সব মিথ্যে!
তার বলার ধরন দেখে এরকুল পোয়ারোর ভীষণ খারাপ লাগল। তিনি ভাবলেন, ফ্র্যাঙ্ক কার্টার একজন মিথ্যেবাদী, অসৎ প্রকৃতির মানুষ। তাকে রক্ষা করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। এ না থাকলে কারো কোনো ক্ষতি হবে না। এ যেভাবে মিথ্যে বলছে তাতে মৃত্যুদণ্ডই তার উপযুক্ত শাস্তি হবে।
তবুও পোয়ারো একবার শেষ চেষ্টা করলেন। তিনি বললেন–আমি চাই সত্যিটা প্রকাশ পাক।
ফ্র্যাঙ্ক কার্টার বোকা নয়। সে বুঝতে পারল এই মিথ্যে বলাই তার আত্মসমর্থনের শ্রেষ্ঠ অস্ত্র। সে যদি একবার বলে ওই সময় মর্লের ঘরে গিয়েছিল তাহলে বিপদ বাড়বে বই কমবে না। আর তার অন্যান্য কথাও মিথ্যে বলে ধরা হবে।
সুতরাং সে ঠিক করল সে মিথ্যেই বলবে। ক্রমাগত মিথ্যে বলে চললে পোয়ারোর আর কিছু করার থাকবে না।
এরকুল পোয়ারো ভীষণ ক্লান্ত বোধ করলেন। তিনি চলে যেতে উদ্যত হলেন।
সেই মুহূর্তে তীক্ষ্ণ চিৎকার করে ফ্র্যাঙ্ক কার্টার বলল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে।
কিছু সময় কেটে গেল। পোয়ারো চলে গেলেন অনিচ্ছা সত্ত্বেও তিনি অপেক্ষা করলেন।
পোয়ারো এবার ফ্র্যাঙ্কের খুব কাছে ঝুঁকে দাঁড়ালেন। তাঁর কণ্ঠস্বরে ব্যক্তিত্বের তীব্র প্রকাশ। তিনি বললেন আমি মিথ্যে বলছি না। আমাকে বিশ্বাস করলে ঠকবেন না। আমার আশা আমি আপনাকে বাঁচাতে পারব। নির্দোষ প্রমাণ করব। যদি আপনি সত্যি কথা বলেন। আপনি যদি মর্লেকে হত্যা না করে থাকেন তাহলে সত্যি বলতে আপনার অসুবিধা কোথায়? সেদিন সকালে ঠিক কি ঘটেছিল খুলে বলুন আমাকে।
ফ্র্যাঙ্ক কার্টার চঞ্চল হয়ে উঠল। সে জিভ দিয়ে ঠোঁট চাটল। তার চোখের তারা স্থির হয়ে গেছে। ঠাণ্ডা দুটি চোখে বাস্তবিকই আতঙ্ক ফুটে উঠল। সে নিজেকে ধরে রাখতে পারছে না। শেষ পর্যন্ত আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হল সে।
সে রূঢ় স্বরে বলল–ঠিক আছে, আমি সব বলব। আপনাকেই আমি গোপন জবানবন্দী দেব। আর যদি আপনি আমাকে প্রতারণা করেন তাহলে ঈশ্বর আপনাকে ক্ষমা করবেন না। আমি স্বীকার করছি আমি সেদিন মি. মর্লের চেম্বারে গিয়েছিলাম। আমার আশা ছিল তখন উনি ঘরে একা থাকবেন। ওই মহিলা সত্যিই আমাকে দেখতে পেয়েছে, ও মিথ্যে বলেনি। আমি সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলাম। তখনই মর্লের ঘর থেকে একজন বেরিয়ে এল। সে নীচে চলে যেতেই আমি ঘরে প্রবেশ করলাম। অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন মনে করলাম না। আমি ইতিমধ্যে মনস্থির করে ফেলেছি যা করার এই সুযোগে করতে হবে। উত্তেজনার বশে কি করব ঠিক করতে পারছিলাম না। ভেবেছিলাম তার সাথে দেখা করে দু-চার কথা শুনিয়ে দেব। আমার বিরুদ্ধে আমার বান্ধবীকে বলে তার মন ভেঙে দেওয়ার উচিত শিক্ষা দেব। কিন্তু ঘরের ভেতরে গিয়ে দেখলাম
একটু থামল ফ্র্যাঙ্ক। সে ঘন ঘন নিশ্বাস নিতে লাগল।
তারপর অনুনয়ের সুরে বলল-আপনি বিশ্বাস করুন, আমি একটিও কথা মিথ্যে বলছি না। দেখলাম মি. মর্লে মাটিতে পড়ে আছেন। প্রথমে চমকে উঠেছিলাম। কাছে গিয়ে দেখলাম তার নিশ্বাস পড়ছে না। তিনি মারা গেছেন। সারা শরীর বরফের মতো ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। কপালে গুলির গর্ত। আর সেখান থেকে গলগল করে রক্ত বের হচ্ছে। দৃশ্যটা মনে পড়ায় ফ্র্যাঙ্ক শিউরে উঠল।
পরক্ষণে বুঝতে পারলাম ঝামেলায় জড়িয়ে পড়তে চলেছি। সবাই বলবে আমিই তাকে গুলি করেছি। আমি তার হাত ও দরজার হাতল ধরেছিলাম। সেগুলোতে আমার হাতের ছাপ পড়েছিল। তাই রুমাল দিয়ে ভাল করে মুছে ছিলাম। এবং দ্রুতবেগে নীচে নেমে এলাম। একেবারে সোজা বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আসি আমি। তখন আমার কোনো হিতাহিত জ্ঞান ছিল না।
আমি প্রতিজ্ঞা করে বলছি এতে এক বর্ণ মিথ্যে নেই। তিনি আমার যাওয়ার আগেই মারা গিয়েছিলেন। আমাকে বিশ্বাস করুন। ভয়ার্ত চোখে সে পোয়ারার দিকে তাকাল।
এরকুল পোয়ারো করুণ কণ্ঠে বললেন আমি বিশ্বাস করছি।