পোয়ারো দ্রুত বললেন–আপনার অনুমতি পাওয়া যাবে কি?
জ্যাপ কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললেন–ওহ, বন্ধু, এত চটে যাচ্ছেন কেন? আমি কি আপত্তি করেছি। করে কি লাভ হবে? হোম সেক্রেটারির প্রিয়পাত্র স্বয়ং এসেছেন। সমস্ত ক্যাবিনেট যাঁর অঙ্গুলি হেলনে ওঠাবসা করে। তাকে আমি দেব বাধা। এত সাহস আমার নেই।
এরকুল পোয়ারোর চোখের সামনে ভেসে উঠল বহুদিনের পুরোনো একটি ঘটনা, অভিযান স্টেবল সাঙ্গ করার ঘটনা। তিনি বললেন–কত মাথা খাঁটিয়ে বুদ্ধি বের করতে হয়েছে বলুন। এটা অস্বীকার করতে পারবেন না, বন্ধু।
আপনিই একমাত্র সেই মানুষ যিনি এতবড় ঝুঁকি নিতে পারেন। সত্যিই অসম্ভবকে সম্ভব করেছিলেন সেদিন। আমার মনে হয় আপনার জীবনের প্রতি মায়া নেই। জ্যাপ পোয়ারোর দিকে তাকালেন। তাঁর মুখ গম্ভীর হয়ে রয়েছে। তিনি আবার বললেন–আপনি কার্টারের সঙ্গে দেখা করতে চাইছেন কেন? শুনতে পারি কি কারণটা?
জ্যাপকে অবাক করে দিয়ে পোয়ারো বললেন–ওকে জিজ্ঞাসা করব সে কি মি. মর্লেকে খুন করেছে?
জ্যাপ হাসতে হাসতে বললেন–আর কার্টারও আপনার কথায় সায় দেবে?
পোয়ারো গম্ভীর স্বরে বললেন–হয়তো বলবে, আবার নাও বলতে পারে।
পোয়ারোর দিকে আড় চোখে তাকিয়ে জ্যাপ বললেন–আপনাকে আমি বহু বছর ধরে চিনি। তবু আজও আপনাকে ভালোভাবে বুঝতে পারলাম না। আপনি কখন কি উদ্দেশ্যে কাজ করেন তা জানি না। তবে এটা জানি আপনার মনে কোনো রকম সন্দেহ উদয় হলে একাজ করে থাকেন। তবে কি ধরে নেব ফ্র্যাঙ্ক কার্টার সম্পর্কে এমন কোন অভিযোগ পেয়েছেন যা আপনাকে অস্থির করে তুলেছে। আপনি যাচাই করে নিঃসন্দেহ হতে চান সে নির্দোষ কিনা?
পোয়ারো সজোরে মাথা নেড়ে বললেন–না, না, আপনি ভুল করছেন, বন্ধু এর উল্টোও হতে পারে।
মাঝে মাঝে আমার মনে হয় আপনি বড় বেশি আবেগপ্রবণ। ফ্র্যাঙ্কের প্রেমিকার জন্যই বুঝি তাকে বাঁচাতে চাইছেন? কথাটা বলে জ্যাপ হেসে উঠলেন।
পোয়ারো উত্তেজিত হয়ে বললেন–আমি আবেগতাড়িত নই। এটা আমার স্বভাববিরুদ্ধ। এটা ইংরেজদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আমি যুক্তি দিয়ে বিবেচনা করি। ফ্র্যাঙ্ক কার্টার যদি খুনি প্রমাণিত হয় তাহলে আমি নিশ্চয়ই চাইব না মিস নেভিল তাকে বিয়ে করুক। আবেগের বশবর্তী হয়ে যদি বিয়ে করে তাহলে দু-এক বছরের মধ্যে তাকে বিধবা হতে হবে। কারণ সে ক্ষেত্রে ফ্র্যাঙ্ক কার্টারের ফাঁসি অবধারিত।
–তাহলে কেন আপনি মানতে পারছেন না যে সে অপরাধী?
–আমি বিশ্বাস করি সে নিরপরাধী।
–আপনি এত জোর দিয়ে বলছেন কি করে? তাহলে কিছু কি আপনি জানতে পেরেছেন? যদি জানেন তাহলে গোপন করছেন কেন আমাকে? আমার পরিষ্কারভাবে জানা উচিত। বলুন, পোয়ারো।
পোয়ারো শান্ত স্বরে বললেন–সময় হলে সব জানাব আপনাকে। কিছুদিনের মধ্যেই একজন প্রত্যক্ষদশীকে আপনার কাছে এনে হাজির করব। সে আপনাদের তদন্তের কাজে সহযোগিতা করবে। তার সাক্ষে কার্টারের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণ সহজ হয়ে যাবে। আর তদন্তের কাজও দ্রুত এগিয়ে যাবে।
জ্যাপ বিরক্ত হয়ে বললেন–তাহলে তার সঙ্গে দেখা করার দরকার কি আপনার? আমার সব গোলমাল হয়ে যাচ্ছে।
পোয়ারো বললেন নিজেকে খুশি করার জন্য।
জ্যাপ আর কথা না বাড়িয়ে পোয়ারোকে নিয়ে গেলেন গারদের কাছে। যেখানে ফ্র্যাঙ্ক কার্টারকে রাখা হয়েছিল।
বিপর্যস্ত, ফ্যাকাশে দেখাচ্ছিল ফ্র্যাঙ্ককে। রুক্ষ মেজাজ। তার সাক্ষাপ্রার্থী এরকুল পোয়ারোকে দেখে সে বেশ অসন্তুষ্ট হল। সে মুখ বিকৃত করে বলল–লালমুখো গোয়েন্দা, এখানেও এসেছেন? কি চাই আপনার? আমাকে গ্রেপ্তার করেও খুশি হননি আপনি?
পোয়ারো শান্ত স্বরে বললেন–আপনাকে কিছু বলার আছে।
–বেশ, আমার উত্তর কিন্তু আপনি পাবেন না। অন্তত আমার উকিল না আসা পর্যন্ত। যা বলার আমি তার সামনেই বলতে চাই। আমার অধিকার আছে উকিল নেবার। এর বিরুদ্ধাচরণ করতে পারেন না আপনি।
–অবশ্যই উকিল নেবার অধিকার আপনার আছে। তাকে আপনি ডাকতে পারেন। তবে আমি পরামর্শ দেব এখন তাকে ডাকার প্রয়োজন নেই। আপনার মঙ্গলের জন্যই বলছি।
ফ্র্যাঙ্ক দাঁত মুখ খিঁচিয়ে বলল–কৌশলে আমার থেকে স্বীকারোক্তি আদায় করার মতলব করেছেন বুঝি। নিজেকে খুব চালাক মনে করেন তাই না।
–এটা আপনার ভুল ধরণা। এটা আমাদের গোপন সাক্ষাৎ। আমরা তিনজন ছাড়া আর কেউ জানতে পারবে না।
ফ্র্যাঙ্ক কার্টার বিদ্রূপ করে বলল–সেটাই আশ্চর্য লাগছে। নিশ্চয় আড়ালে অন্য পুলিশরা রয়েছে। তাছাড়া আমি আপনার ফাঁদে পা দিচ্ছি না। বুঝেছেন?
পোয়ারো ধীরে ধীরে বললেন–অ্যাগনেস ফ্রেচার নামে কোনো মহিলাকে আপনি চেনেন?
ফ্র্যাঙ্ক সংক্ষেপে উত্তর দিল না। কখনো নাম শুনিনি।
–সে ৫৮ কুইন শার্লট স্ট্রিটের পার্লার মেইড।
হতে পারে, তাতে আমার কি?
–যেদিন সকালে হেনরি মর্লেকে গুলি করা হয় সেদিন সে আপনাকে ওখানে দেখেছিল। সেদিন সে উপরের তলায় সিঁড়ির পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। নীচের তলায় অ্যালফ্রেডকে সে তখন খুঁজছিল। আর সেই সময় আপনাকে দেখতে পায় মি. মর্লের ঘরের দিকে যেতে। সময়টা বারোটা থেকে সাড়ে বারোটার মধ্যে হবে।
ফ্র্যাঙ্ক কার্টারের শরীর কেঁপে উঠল; সে দরদর করে ঘামতে লাগল। সে অস্থির হয়ে উঠল। সে চিৎকার করে বলল–বাজে কথা! আপনারা ওকে টাকা খাইয়ে মিথ্যে সাক্ষী সাজিয়েছেন। আমাকে ফ্যাসাদে ফেলার জন্য। ও মিথ্যে বলছে। আমি তখন ওখানে ছিলাম না। ও আমাকে দেখতে পারে না।