অ্যাগনেস তার মা ও বাবার গল্প বললেন পোয়ারোকে। তিনি মন দিয়ে মিস ফ্রেচারের কথা শুনছিলেন।
অ্যাগনেসের বাড়ি ছিল গ্লস্টারসায়ারের লিটল ডারলিংহামে। তারা দু’ভাইবোন। তার বাবা-মা সর্বদা পুলিশি ঝামেলা থেকে দূরে থাকতেন। তাদেরও সাবধানে থাকার পরামর্শ দিতেন। তাই এখন তার চিন্তা তিনি যদি পুলিশি ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েন। তাহলে তার বাবা-মা নিশ্চয়ই মারা যাবেন। আর তাদের মৃত্যুর দায় তাকেই নিতে হবে।
এরকুল পোয়ারো ধীরে ধীরে জিজ্ঞাসা করলেন–আপনি মিস মর্লেকে কি কিছু জানিয়েছেন?
অ্যাগনেস বলল–না, স্যার, আমি তাকে কিছু জানাইনি। কারণ তিনি শুনলে আমার ওপর রাগ করতেন। কাগজে দেখলাম, কর্তামশাই ভুল করে কাউকে ওষুধ দিয়েছিলেন। পরে ভুল বুঝতে পেরেছিলেন এবং অনুতপ্ত হয়ে আত্মহত্যা করেন।
পরে অন্য ভাবনা এল কখন থেকে?
মিস নেভিলের প্রেমিক ফ্রাঙ্ক কার্টারের সংবাদ যেদিন কাগজে বেরিয়েছিল। আমিও সেই খবরটা পড়েছি। দেখলাম সে একজন ভদ্রলোককে গুলি করে মারার চেষ্টা করেছিল। তখনই ভাবলাম নিশ্চয়ই ওর মাথার গণ্ডগোল আছে। তার ধারণা ছিল চারপাশের সব মানুষই তার শত্রু। তাদের কাউকেই সে বিশ্বাস করত না। এরকম মানসিক রোগে অনেকেই ভোগেন শুনেছি। মি. কার্টারও তাদের মতোই একজন। আমি জানি মি. মর্লের ওপর মি. কার্টারের আক্রোশ আছে। কারণ মি. মর্লে মিস নেভিলকে ফ্র্যাঙ্ককে বিয়ে করতে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু মিস নেভিল সে কথা কানে নেননি। তা সত্ত্বেও আমরা ভাবতে পারিনি তিনি আমার মনিবের হত্যাকারী হবেন। তাই ব্যাপারটা কি রকম। অদ্ভুত লাগছে আমার।
পোয়ারো প্রকৃত ঘটনা জানার জন্য বললেন–কি অদ্ভুত?
–যেদিন আমার মনিব আত্মহত্যা করেন সেদিনের ঘটনা। সকাল বেলার চিঠিগুলো চিঠির বাক্স থেকে বের করে অ্যালফ্রেড। তারপর সেগুলো মি. মর্লের টেবিলের ওপর রাখে। স্যার সময় সুযোগ মতো সেগুলো দেখে নেন। সেদিন অ্যালফ্রেড ব্যস্ত থাকায় চিঠিগুলো বের করতে পারেনি সেইজন্য আমি ভাবছিলাম বের করে আনার কথা। সেই কারণে সিঁড়ির নীচের ধাপে দাঁড়িয়ে। অ্যালফ্রেড কি করছে তা দেখার চেষ্টা করছিলাম। এমন সময় একজনকে দেখে আমি চমকে উঠি। ফ্র্যাঙ্ক কার্টার কর্তার ঘরের ওপরের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে আছে। ও নীচের দিকে কি যেন খুঁজছিল। তার চোখে মুখে উত্তেজনা ফুঠে উঠেছিল। দৃশ্যটা যতই ভাবি ততই কেমন যেন অদ্ভুত মনে হচ্ছিল।
পোয়ারো জানতে চাইলেন তখন কটা বেজেছিল?
–তখন প্রায় সাড়ে বারোটা হবে, স্যার। অ্যাগনেস একটু থামল। তারপর আবার বলতে শুরু করল, এদিকে সেদিন মিস নেভিল অনুপস্থিত। তাই ভাবলাম একবার তার সামনে গিয়ে দাঁড়াই। ঠিক সেই মুহূর্তে দেখলাম ফ্রাঙ্ক অস্থির পায়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, যেখানে কর্তার সার্জারির ঘর আছে। আমি ভাবলাম ও মনস্থির করে ফেলেছে কর্তার সঙ্গে বোঝাঁপড়া করার। তাই আমার ভয় হল। কারণ কর্তা ওকে মোটেই পছন্দ করতেন না। বিশেষ করে রোগী দেখার সময়। নিশ্চয়ই তাদের মধ্যে বিবাদ শুরু হবে। এমন সময় মিস মর্লে আমাকে ডাকলেন আর আমিও ওপরে চলে যাই। পরে শুনলাম কর্তা নিজেই গুলি করে আত্মহত্যা করেছেন। খবরটা শুনে প্রথম মুহ্যমান হয়ে পড়ি যে ফ্র্যাঙ্কের কথাটা ভুলে গিয়েছিলাম।
এক নাগাড়ে এতগুলো কথা বলে একটু থামল অ্যাগনেস। দম নিল। মুহূর্ত কয়েক কেটে গেল। আবার বলে উঠল সে, এরপর পুলিশ এলো। সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করল। তারপর কর্তার মৃতদেহ নিয়ে সবাই চলে গেলে আমি এমাকে ফ্রাঙ্কের কথা বলি। কার্টার যে কর্তার ঘরে গিয়েছিল তা পুলিশের কাছে গোপন করেছি। এতে এমা অসন্তুষ্ট হন এবং বলেন পুলিশকে জানানো উচিত ছিল। কিন্তু আমরা কেউই চাইনি মিস নেভিলের বন্ধুকে বিপদে ফেলতে। তাই এতদিন মুখ বন্ধ করেছিলাম। সময় ও সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম। তারপর পুলিশের সিদ্ধান্ত জানতে পারলাম। তাদের মতে কর্তা আত্মহত্যা করেছেন। কেউ তাঁকে খুন করেনি। এতে স্বস্তি পেয়েছিলাম একথা ভেবে ফ্র্যাঙ্ক নির্দোষ। আবার যখন খবরের কাগজে দেখলাম সে একজনকে গুলি করেছে তখন অন্য ভাবনা মাথায় এল। ভাবলাম ওর মাথা খারাপ হয়ে গেছে। আর ওই কর্তাকে খুন করেছে।
পোয়ারো লক্ষ্য করলেন কথা বলার সময় অ্যাগনেসের চোখ ভয়ে বড় হয়ে উঠেছে। সে কাতরভাবে মিনতি করল–আমি যাতে বিপদে না পড়ি দেখবেন, স্যার।
পোয়ারো তাকে আশ্বস্ত করলেন। বললেন–ভয় নেই তোমার অ্যাগনেস। তোমার কোনো ক্ষতি হবে না। নিশ্চিন্ত থাকো। তবে আমাকে বলে তুমি ঠিক কাজই করেছো।
ধন্যবাদ, স্যার। আমার মনটা অনেকখানি হালকা হল। তখন থেকে চিন্তা হচ্ছে মা এটা কিভাবে নেবেন। পুলিশের সঙ্গে এভাবে জড়িয়ে পড়াটা বোধহয় ভালো হল না।
না, না, কিছু চিন্তা করো না অ্যাগনেস। তুমি আমাদের সহযোগিতা করায় আমাদের খুব সুবিধা হল। সব মায়েরা চান তাদের ছেলে মেয়েরা সর্বদা সুখে থাকুন।
এরকুল পোয়ারো অ্যাগনেসের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে এলেন স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডে।
চিফ ইনসপেক্টর জ্যাপ সেই সময় তাঁর অফিস ঘরে বসেছিলেন। তাঁকে পোয়ারো বললেন–আমি একবার কার্টারের সঙ্গে দেখা করতে চাই। আপনি ব্যবস্থা করুন।
জ্যাপ কটাক্ষ করে বললেন–ব্যাপার কি, বন্ধু? কোনো খবর আছে কি?