মি. কার্টারের উকিল ওই একটি যুক্তিতে সন্তুষ্ট নন। তিনি বলছেন, তাকে নির্দোষ প্রমাণ করতে হলে আরও কয়েকটি মোক্ষম যুক্তি দেখাতে হবে।
উকিলরা সবাই একরকম হয়। তারা যুক্তি ছাড়া কিছু বিশ্বাস করেন না। আমি নিশ্চিত মি. হেনরি মর্লেকে ও খুন করতে পারে না। এর কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণও নেই। আমি চিফ ইনসপেক্টর জ্যাপের অভিযোগ মানতে পারছি না।
–যেদিন মি. মর্লে খুন হন সেদিনও কি মি. কার্টার বেকার ছিলেন? অর্থাৎ তখনও তিনি চাকরি পাননি?
–হ্যাঁ, ও তখনও বেকার ছিল। কিন্তু মঁসিয়ে পোয়ারো, এতে কি যায় আসে?
–সে জবানবন্দি দিয়েছে, সে সেদিন গিয়েছিল নতুন চাকরি পাওয়ার সংবাদ জানাতে। কিন্তু সেটা সত্যি ছিল না। তবে সত্যিটা কি? কেন গিয়েছিল?
–ওহ মঁসিয়ে পোয়ারো, আপনি কিছুতেই বুঝতে চাইছেন না। আমাকে নিয়ে মি. মর্লে ও ফ্র্যাঙ্কের মধ্যে তিক্ততার সৃষ্টি হয়েছিল। ও জানত মি. মর্লে ওকে পছন্দ করেন না। ওকে যাতে আমি বিয়ে না করি সেই চেষ্টা করতেন তিনি। এতে ও খুব দুঃখ পেয়েছিল। তাই মি. মর্লেকে বোঝাবার জন্যে সেদিন সে কুইন শার্লট স্ট্রিটে গিয়েছিল। বেচারা, কি ভুলই না সেদিন করেছিল সে
–আমার মনে হয় সে বোঝাতে যায়নি, সে গিয়েছিল মি. মর্লেকে খুনের হুমকি দিতে।
না, মঁসিয়ে পোয়ারো, আপনার সঙ্গে একমত হতে পারছি না আমি। গ্ল্যাডিস কাঁদতে কাঁদতে বলল।
এরকুল পোয়ারো তার সজল চোখের দিকে তাকিয়ে বললেন মি. কার্টারের কোনো বন্দুক ছিল কিনা আপনি জানেন?
–ওহ, না, আমার জানা নেই। ওর মুখে কখনো শুনেছি বলে মনে পড়ছে না।
পোয়ারো দীর্ঘনিশ্বাস ফেললেন।
গ্ল্যাডিস বিষণ্ণ কণ্ঠে বলল–মঁসিয়ে পোয়ারো, দয়া করে আমাদের বাঁচান, আমাদের সাহায্য না করলে….।
পোয়ারো মাথা নেড়ে বললেন–অবশ্যই, আমাকে সত্য উদঘাটন করতেই হবে।
পোয়ারোর কাছ থেকে আশ্বাস পেয়ে গ্ল্যাডিস বিদায় নিল।
গ্ল্যাডিস চলে যেতে এরকুল পোয়ারো স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডে ফোন করলেন। ফোন ধরলেন সার্জেন্ট বেডোর্জ।
পোয়ারো জানতে চাইলেন–চিফ ইনসপেক্টর জ্যাপ আছেন?
ও প্রান্ত থেকে উত্তর এল না, তিনি এখনও ফেরেননি।
পোয়ারো বললেন আমার কিছু জিজ্ঞাস্য ছিল, আপনি কি আমাকে সাহায্য করতে পারবেন?
মি. বেডোর্জ বললেন–হ্যাঁ, বলুন।
ক্রমহ্যামে যে বন্দুক থেকে মি. ব্লাস্টকে গুলি করা হয়েছিল সেটা কি মি. কার্টারের নিজের?
না, স্যার, সেটা এখনও প্রমাণ সাপেক্ষ।
কার্টারকে জেরা করে আর কিছু জানতে পেরেছেন?
-হ্যাঁ, সে তার চাকরি সংক্রান্ত কিছু খবর জানিয়েছে। সে বলেছে, সিক্রেট সার্ভিস থেকেই তাকে ক্রমহ্যামে পাঠানো হয়েছে। মালি হিসেবে। এর জন্য তাকে অগ্রিম প্রচুর টাকা দেওয়া হয়েছে। মালির কাজের প্রশংসাপত্রও সে পায়। মি. ব্লাস্টের প্রধান মালি ম্যাকের কাছে প্রথমে ফ্র্যাঙ্ক যায়। ম্যাক মি. ব্লাস্টকে আবেদন জানাতে বলে। এছাড়া বলা হয় সে যেন নিজেকে একজন কমিউনিস্ট বলে পরিচয় দেয়। এজন্য তাকে একজন মহিলার অধীনে কিছুদিন থাকতে হয়েছিল। যিনি কিউ. এইচ. ৫০ নামে খ্যাত। তার কাছে তালিম নিতে হয়েছিল। শিক্ষানবাস সময়ে মহিলাকে সে ভালোভাবে দেখতে পেত না। কেবল তার কণ্ঠস্বরকে অনুসরণ করতে হত। যেখানে তালিম দেওয়া হত সেখানে আলোর ব্যবস্থা ক্ষীণ ছিল। তাই সে দ্বিতীয়বার দেখলে চিনতে পারবে না ওই মহিলাকে।
পোয়ারোর মুখ থেকে অস্ফুষ্ট একটা শব্দ বের হল। তিনি রিসিভার নামিয়ে রাখলেন। সেই একই নকশা। তবে এই প্রমাণটা কার্টারের পক্ষে যাবে। তিনি ভাবলেন, মি.বার্নেসের সঙ্গে পরামর্শ করলে কেমন হয়।
সন্ধ্যার ডাকে তার নামে একটি চিঠি এল। সস্তা দামের একখানা খাম। হাতে লেখা চিঠি। অশিক্ষিত হস্তাক্ষর। হার্টফোর্ড সায়রের ডাকঘরের স্ট্যাম্প দেওয়া। তিনি চিঠিটা খুলে ফেললেন। তাতে লেখা আছে।
শ্রদ্ধেয় মহাশয়,
আপনাকে চিঠি লিখে বিরক্ত করার জন্য ক্ষমা চাইছি। এছাড়া আমার আর কোনো উপায় নেই। আমি খুব দুশ্চিন্তায় আছি। আগেই আপনাকে সব কথা জানানো উচিত ছিল আমার। আমি ভেবেছিলাম মি. মর্লে আত্মহত্যা করেছেন। তাই কোনো গোলমাল হবে না। এছাড়া আমি পুলিশকে ভীষণ ভয় পাই। সেই কারণে পুলিশ থেকে দূরে থাকতে চেয়েছিলাম। আমি মিস নেভিলের তরুণ বন্ধুকে চিনি। তাই তাকে ঝামেলায় জড়াতে চাইনি। এমনকি আমি ভাবিনি তার দ্বারা একাজ সম্ভব হবে। এখন দেখছি ফ্র্যাঙ্ক সব পারে। খবরের কাগজ পড়ে জানলাম ক্রমহ্যামে কোনো একটি বাড়িতে মালির কাজ করত সে। সেই বাড়ির মালিককে সে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করেছিল। খবরটা পড়ে শিউরে উঠেছিলাম। মারাত্মক একটা খুনে। আপনি আমার মালকিনের বন্ধু। তাই আপনাকে বলাই শ্রেয় মনে করলাম। আপনাকে সব জানাব যা এতদিন গোপন রেখেছিলাম।
—আপনার বিশ্বস্ত
অ্যাগনেস ফ্লেচার।
এরকুল পোয়ারো চিঠিটা পড়ে বিচলিত হলেন। ভাবলেন, একজন এত কান্ডের মূল পাণ্ডা সেটা ঠিক বুঝতে পেরেছি। কিন্তু যাকে ধরে ছিলাম সে নয়। এখানেই মস্ত বড় ভুল করেছি।
০৮. পনেরো, ষোলো, হেঁসেলেতে চলো
পোয়ারো এলেন হার্ট ফোর্ডনায়ারে। সেখানের একটি ছোট্ট চায়ের দোকানে গিয়ে বসলেন। আগেই সেখানে হাজির ছিলেন অ্যাগনেস ফ্লেচার। কথাবার্তার মধ্যে দিয়ে তাদের বেশ কিছুটা সময় কেটে গেল।