এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে জেন একটু থামল। আবার বলল–বলুন, আমি ঠিক বলেছি কিনা?
পোয়ারো মাথা নেড়ে সায় দিলেন।
এরকুল পোয়ারোর বাড়ি ফিরতে বেশ রাত হয়ে গেল। তিনি বাড়িতে ঢুকতেই জর্জের মুখে জানতে পারলেন চিফ ইনসপেক্টর জ্যাপ এসেছেন।
পোয়ারো দ্রুতবেগে ঘরে ঢুকলেন। জ্যাপের মুখের ওপর তার চোখ পড়ল। সেখানে বিষণ্ণতার পরশ রয়েছে।
পোয়ারোকে দেখে জ্যাপ বললেন–আমি এসে গেছি বন্ধু। সত্যিই আপনার তুলনা নেই! দারুণ খেল দেখালেন মশাই! আপানার মাথায় এসব আসে কোথা থেকে?
আগে বলুন কি নেবেন? কফি না হুইস্কি?
হুইস্কি হলে ভালই হবে।
ঠিক আছে। পোয়ারো জর্জকে হুইস্কি আনার নির্দেশ দিলেন। জর্জ মনিবের হুকুম তামিল করল। দুজনে গ্লাস তুলে নিলেন।
পোয়ারো সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে জ্যাপকে দেখছেন। তিনি প্রশ্ন করলেন–কি ব্যাপার, এত প্রশংসার কারণ কি?
জ্যাপ বললেন–এরকুল পোয়ারো যেটা বলেন সেটা ঠিক হয়।
–কি রকম, বন্ধু।
–একটা অপমৃত্যুর ঘটনা ঘটল। আমরা অর্থাৎ পুলিশের ভাষায় সেটা আত্মহত্যা আর পোয়ারোর মতে সেটা খুন হল। অতএব তিনি যা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত সেটা সত্যিই খুন বলে প্রমাণিত হল।
–তাহলে আপনি আমার সঙ্গে এক মত?
–আমি কি খুব বোকা? সাক্ষ্য প্রমাণ এড়িয়ে চলব কি করে। সমস্যা হল এর আগে কোনো প্রমাণ আমার হাতে ছিল না। সম্প্রতি আমি পেয়েছি। তাই আপনার কাছে চলে এলাম। আপনাকে সব জানাব বলে। সেই সঙ্গে নিজের ভুলও শুধরে নেওয়ার ইচ্ছে আছে।
–আমার আর দেরি সইছে না, দয়া করে তাড়াতাড়ি বলুন বন্ধু।
–একটু ধৈর্য ধরুন, বলছি। যে পিস্তল দিয়ে ফ্র্যাঙ্ক কার্টার অ্যালিস্টেয়ারকে গুলি করার চেষ্টা করেছিল সেইরকম একটা পিস্তল দিয়ে মি. মর্লেকে গুলি করা হয়েছিল। অর্থাৎ মর্লের মৃতদেহের পাশে যে পিস্তলটি পাওয়া গেছে সেটি এরই জোড়া।
পোয়ারো বিস্ময়ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন–এ কি করে সম্ভব?
-হ্যাঁ, ফ্র্যাঙ্কের পক্ষে এটা সম্ভব।
–এটাই কি আপনার প্রকৃত সূত্র।
-না, তা, নয়, দুটো বন্দুকই বিদেশ থেকে আনা হয়েছে। এছাড়া এগুলো সচরাচর ব্যবহার করা হয়নি।
এরকুল পোয়ারো বিস্ময়ে বিহ্বল। তিনি সুযুগল বাঁকিয়ে বললেন–ফ্রাঙ্ক কার্টার? না, আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।
জ্যাপ বিরক্ত হয়ে বললেন–বন্ধু, আপনার হাবভাব আমার ঠিক ভালো লাগছে না। এতদিন আপনি বলে এসেছেন হেনরি মর্লে আত্মহত্যা করেনি, তাকে খুন করা হয়েছে। এখন সেই আমি বললাম আপনার মতকেই আমরা সানন্দে গ্রহণ করেছি, এখন আপনি সেটা মানতে রাজি নন।
–আপনার স্থির বিশ্বাস মলের খুনি ফ্র্যাঙ্ক কার্টার?
–সাক্ষ্য প্রমাণ তো সেটাই বলছে। আপনি জানেন মর্লে কার্টারকে পছন্দ করত না। তাই তার ওপর কার্টারের রাগ থাকা স্বাভাবিক। তার বক্তব্য থেকে জানা যায়, সে সেদিন কুইন শার্ল স্ট্রিটে গিয়েছিল। তার বান্ধবী গ্ল্যাডিসকে নতুন চাকরির কথা জানাতে। তবে আমাদের কাছে খরব আছে সে তখনও চাকরিটা পায়নি। পরে অবশ্য সে কাজটা পেয়েছিল। এছাড়া বারোটার পরে সে কোথায় ছিল তাও সঠিক বলতে পারেনি, সে বলেছে ওই সময় সে মেরিলিকোশ রোড ধরে হাঁটছিল। তবে একটার সময় সে একটা বারে বসে মদ খাচ্ছিল। একথা সে সত্যি বলেছে। আমাদের কাছে তার প্রমাণ আছে। সেখানকার বারম্যানকে চাপ দিয়ে জানতে পেরেছি। তাকে সে সময় খুব অন্যমনস্ক দেখাচ্ছিল।
এরকুল পোয়োরো হতাশ হয়ে বললেন, আমার মন কিন্তু একথা বলছে না, বন্ধু।
ঠিক বুঝলাম না। একটু স্পষ্ট করে বলুন।
আপনার কথা আমায় চিন্তায় ফেলল। আমি যা অনুমান করেছিলাম তার সঙ্গে একটুও. মিল খুঁজে পাচ্ছি না। আর যদি আপনার কথাই ঠিক হয় তাহলে….
এমন সময় জর্জ দরজার সামনে এসে দাঁড়াল, সে বলল–দুঃখিত, স্যার।
কথাটা সে শেষ করতে পারল না। তার আগেই ঝড়ের গতিতে এসে প্রবেশ করল গ্ল্যাডিস নেভিল। তার চোখে জল। সে বলল–ওহ, মঁসিয়ে পোয়ারা।
–এখানে আমি অবাঞ্ছনীয়, বলেই জ্যাপ বিদায় নিলেন।
পলায়নরত জ্যাপের দিকে মিস নেভিল তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাল।
সে চিৎকার করে বলল–এই লোকটা–স্কটল্যাণ্ড ইয়ার্ডের এই অফিসার বেচারা ফ্র্যাঙ্ককে ফাঁসিয়েছেন। ওর বিরুদ্ধে নানা মিথ্যে অভিযোগ এনেছেন।
–ঠিক আছে, আপনি বসুন মিস নেভিল। আপনার সব কথা শুনব আপনি। অত উত্তেজিত হবেন না। পোয়ারো তাকে শান্ত করার চেষ্টা করলেন।
প্রথমে উনি বললেন–ফ্র্যাঙ্ক মি. ব্লাস্টকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়েছে, আর এখন মি. মর্লের খুনের জন্যে ওকে দোষী সাব্যস্ত করছেন।
একটু হেসে পোয়ারো বললেন যেদিন মি. ব্লাস্টকে গুলি করা হয় সেদিন আমি তাঁর সাথে ছিলাম। আর তখনই বন্দুক সহ ফ্র্যাঙ্ককে ধরা হয়। প্রত্যক্ষদশী হিসেবে এটা অস্বীকার করতে পারি না আমি।
এ কথায় গ্ল্যাডিস নিজের রাগ সংবরণ করে বলল আমি বিশ্বাস করি না ফ্র্যাঙ্ক একাজ করতে পারে। যদিও করে থাকে তাহলে বলতে হবে তার বুদ্ধির অভাব ঘটেছে। ও দেশকে খুব ভালোবাসে, ওর খারাপ মতলব ছিল না, বিশ্বাস করুন, মঁসিয়ে পোয়ারো।
–তাহলে ধরে নেব, মি. কার্টারের আত্মপক্ষ সমর্থনের এটাই একমাত্র ব্যাখ্যা?
–ওহ না। যদিও পুলিশ ওর সঙ্গে আমাকে দেখা করতে দেয়নি। আমি কথা বলার সুযোগ পাইনি। তবুও ওর উকিলের কাছে জেনেছি, ফ্র্যাঙ্ক একাজ করেনি, বন্দুকটাও কখনো দেখেনি। ফ্র্যাঙ্ককে ফাঁদে ফেলার ষড়যন্ত্র এটা।