একটা জুতোর বকলস, ননম্বর সাইজের মোজা, ছোকরা চাকর অ্যালফ্রেডের গোয়েন্দা কাহিনি, মি. মর্লের অভিনীত অংশ, মি. অ্যামবেরিওটিসের চালচলন এবং সব শেষে বিকৃত একটা মুখ–এ সব যেন স্বপ্নের মতো তার চোখের পর্দায় ভেসে উঠেছে।
এই প্রথম পোয়ারো ঘটনাটা সঠিক দৃষ্টিকোণ থেকে উপলব্ধি করতে পারলেন।
যাজকের গম্ভীর কণ্ঠস্বর তার চমক ভাঙলো। তিনি শুনতে পেলেন, তুমি প্রভুর আদেশ অমান্য করেছ তাই তিনি তোমাকে রাজা হিসেবে পরিত্যাগ করলেন….।
০৭. তেরো, চোদ্দ, প্রেমে মজে সদ্য
জাহাজ কোম্পানির টিকিট কাউন্টারের লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন রেইলি। দূর থেকে তাকে দেখে এরকুল পোয়ারো এগিয়ে এলেন। বললেন–মি. রেইলি বোধ হয়?
গলা শুনে পাশ ফিরে তাকালেন রেইলি। বিশাল গোঁফ আর ডিম্বাকৃতি মাথার ছোটো খাটো একজন মানুষকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেন।
পোয়ারো আবার বলে উঠলেন–আমাকে চিনতে পারলেন না, মনে হচ্ছে,?
রেইলি হেসে জবাব দিলেন–আপনার মতো স্বনামধন্য মানুষকে একবার দেখলে সহজে ভোলা যায় না, মঁসিয়ে পোয়ারো।
-কোথায় চলেছেন এ দেশ ছেড়ে?
–আমি চলেছি সুদূর আমেরিকায়। আপনি নিশ্চয় ছুটি কাটাতে যাচ্ছেন। মঁসিয়ে?
পোয়ারো বললেন নিজের দেশ বেলজিয়ামে যাচ্ছি। মাঝে মধ্যে ওখানে গিয়ে কিছুদিন কাটিয়ে আসি।
রেইলি বিষণ্ণ কণ্ঠে বললেন–তাহলে আপনি আবার ফিরছেন। কিন্তু আমার ফেরার আশা নেই। কুইন শার্ট স্ট্রিটে আমাকে আর ডাক্তারি করতে দেওয়া হবে না, মঁসিয়ে পোয়ারো।
সত্যিই খুব দুঃখের কথা, মি. রেইলি!
–এতে আমি একটুও দুঃখ পাইনি। অনেক টাকা ঋণ করেছি এখানে। রেইলি হেসে আবার বললেন–তবে ভাবলে খুব আনন্দ পাই। একথা সত্যি ধার রেখে যাচ্ছি বলে গুলি করে আত্মঘাতী হব, এমন মানসিকতা আমার নেই। আমার মত হল, যা হয়ে গেছে তা পিছনে ফেলে আবার নতুন করে শুরু করতে হবে। আমি উচ্চশিক্ষিত। তাই কাজ পেতে আমার খুব একটা অসুবিধা হবে না।
সেদিন মিস জর্জিনা মলের সাথে দেখা হয়েছিল।
–তাতে কি আপনি খুব খুশি হয়েছিলেন? মনে হয় না। মেয়ে সৈনিকের মতো দশাসই চেহারা, গোমড়া মুখো, বদ মেজাজী মহিলা আর দ্বিতীয়টি আছে কিনা আমার জানা নেই।
পোয়ারো এবার প্রসঙ্গে ঘুরিয়ে বললেন মি. মর্লের মৃত্যু সম্পর্কে কানোর আদালত যে রায় ঘোষণা করেছে সেটা আপনি শুনেছেন? এ বিষয়ে আপনার কি মত?
রেইলি ধীরে ধীরে বললেন–আদালতে প্রমাণিত হয়েছে মি. মর্লে গ্রীক ভদ্রলোকটিকে ভুল ইঞ্জেকশান দিয়েছিলেন। যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে সে মাতাল অবস্থায় ছিল। নতুবা সে তাকে খুন করার জন্যই এই ভুল করেছিল। আমি একথা জোর দিয়ে বলতে পারি হেনরি কখনো মদ ছোঁয়নি।
আপনার বয়ান অনুযায়ী বলতে হবে এটা তার ইচ্ছাকৃত গাফিলতি।
–আপনি ভুল করছেন। আমি একথা বলিনি। এমন দোষারোপ অত্যন্ত অন্যায়। আসলে তার দ্বারা এরকম ভুল হওয়া আদৌ সম্ভব না। আর আমিও বিশ্বাস করি না।
–এর নিশ্চয়ই যুক্তিসঙ্গত কারণ আছে।
–অবশ্য আছে। তবে এনিয়ে এখনও আমি ভাবনা চিন্তা করিনি।
পোয়ারো জানতে চাইলেন–খুনের দিন মি. মর্লেকে শেষে কখন জীবিত দেখেছিলেন আপনি? মনে আছে?
মাথা নেড়ে রেইলি বললেন–হ্যাঁ, মনে আছে। তবে খুনের দিন হেনরির সঙ্গে আমার দেখা হয়নি। শেষ সাক্ষাৎ হয়েছিল ঘটনার আগের দিন। সন্ধ্যে সাতটা নাগাদ।
পোয়ারো গলার স্বরে তীব্রতা এনে বললেন–উঁহু, আপনি ঠিক বলছেন না। আমার যতদূর মনে পড়ে, আপনি ঘটনার দিন তার ঘরে গিয়েছিলেন। এই ধরুন সাড়ে এগারোটা হবে তখন।
–হ্যাঁ, হ্যাঁ, মনে পড়েছে, আমি গিয়েছিলাম। সেই সময় সে একজন রোগী দেখছিল। আমার কিছু যন্ত্রপাতি কেনার ছিল। তাই ওই বিষয়ে ওর কাছে পরামর্শ নিতে গিয়েছিলাম।
সায় দিয়ে পোয়ারো বললেন আপনার এক রোগী মি. রেইকস এসেছিলেন। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে তিনি চলে গিয়েছিলেন। আপনি ওই আধঘন্টা কি করছিলেন?
সুযোগ পেলে যা করে থাকি। গ্লাসে কিছু পানীয় ঢেলে পান করি। মর্লেকে টেলিফোন করি। তারপর এক মিনিট সেখানে থেকে চলে আসি।
পোয়ারো জেরার ভঙ্গীতে বললেন–সাড়ে বারোটা থেকে একটা পর্যন্ত মি. বার্নেস আপনার ঘরে ছিলেন। তারপর আর কোনো রোগী আপনার ছিল না। আপনি কটার সময় ওখান থেকে বেরিয়ে আসেন?
–সাড়ে বারোটার পর।
–তারপর কি করেন?
–ঠিক আগে যা করেছি। আপনি তো জানেন আমার মদ্য পানে অরুচি নেই।
আবার মর্লের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন?
–আপনি বলতে চাইছেন আমি তাকে গুলি করেছি। এর আগেও আমি বলেছি, ওটা আমার কাজ নয়। অবশ্য আপনার ওপর নির্ভর করছে বিশ্বাস করা না করা।
পোয়ারো প্রশ্ন করলেন–বাড়ির পরিচারিকা অ্যাগনেস সম্পর্কে আপনি কতটুকু জানেন?
বিস্ময়ের সুরে রেইলি বললেন, ভারী অদ্ভুত প্রশ্ন। তবুও বলছি, ওর বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। কাজের মেয়েদের ভার জর্জিনার ওপর। ও সব কিছুর তদারকি করে থাকে। মেয়েটা আমাকে ভীষণ ভয় পায়। চোখ তুলে দেখেনি কোনোদিন।
মেয়েটিকে দেখে আমার সন্দেহ হয়েছিল ও বোধহয় কিছু বলার চেষ্টা করেছিল।
রেইলি হেসে মাথা নাড়লেন। তারপর টিকিট নিয়ে চলে গেলেন।
পোয়ারো যাবেন কিনা এখনও স্থির করতে পারেননি। তাই কাউন্টারের সামনে থেকে সরে এলেন।
এরকুল পোয়ারো একদিন এলেন হ্যামস্টেডে। মিসেস অ্যাডামসের সাথে সাক্ষাৎ করতে। তাকে দেখে মিসেস অ্যাডামস অবাক হয়েছিলেন। পোয়ারো স্কটল্যাণ্ড ইয়ার্ডের চিফ ইনসপেক্টর জ্যাপের প্রতিভূ হয়ে গিয়েছিলেন। মিসেস অ্যাডামসের কাছে তাঁর পরিচয় বিদেশী হিসেবে।