গুলির শব্দ জেন অলিভেরার কানে গিয়েছিল। সে ছুটে এল। তার চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ, সে হাওয়ার্ডকে দেখে বলল–তুমি? এখানে?
হাওয়ার্ড শান্তস্বরে বলল–হ্যাল্লো জেন, এক্ষুনি তোমার কাকাকে এই ছেলেটি গুলি ছুঁড়েছিল। আমি বাঁচালাম।
জেন থতমত খেয়ে বলল–তুমি বাঁচালে?
মি. ব্লাস্ট ইতস্তত করে বললেন–আমার ত্রাণকর্তা হিসেবে আপনি সর্বদা ঠিক সময়েই এসে হাজির হন, তাই না। আপনার পরিচয়?
জেন তাড়াতাড়ি বলে উঠল–ওর নাম হাওয়ার্ড রেইকস। ও আমার বন্ধু।
ওহ। আপনিই জেনের বন্ধু। ধন্যবাদ, আমার প্রাণ বাঁচানোর জন্য।
সেই মুহূর্তে সেখানে এসে হাজির হলেন জুলিয়া অলিভেরা। তিনি উদ্বিগ্ন স্বরে বললেন একটা গুলির শব্দ শুনলাম। অ্যালিস্টেয়ার তুমিও নিশ্চয়ই শুনেছ? ভ্রু কুঁচকে হাওয়ার্ড রেইকসের দিকে তাকিয়ে বললেন–তুমি? তুমি এখানে কেন? তোমার সাহস তো কম না।
জেন আমতা আমতা করে বলল–ও এখানে এসে না পড়লে অ্যালিস্টেয়ার কাকাকে রক্ষা করা যেত না, না।
মিসেস অলিভেরা বিকট চিৎকার করে বললেন–কি? কে এমন দুঃসাহস দেখিয়েছে? আমি–আমি তাকে…….।
জেন ফ্র্যাঙ্ককে দেখিয়ে বলল–এই লোকটা।
ফ্র্যাঙ্ক কার্টারের প্রচণ্ড রাগ হল। সে দাঁত খিঁচিয়ে বলল–মিথ্যে কথা। আপনারা কেন আমাকে বিশ্বাস করছেন না বলুন তো?
মিসেস অলিভেরার চোয়াল শক্ত হয়ে গেছে। কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলেন ফ্র্যাঙ্ক কার্টারকে। কিন্তু নিজেকে সামলে নিলেন। তারপর অপলক দৃষ্টিতে সবাইকে দেখে নিলেন। এবার বললেন প্রিয় অ্যালিস্টেয়ার, এসব কি হচ্ছে? ভগবানের অশেষ দয়া তোমাকে জীবিত রেখেছেন। আমার শরীর কেমন করছে, মাথা ঘুরছে। একটু ব্রাণ্ডি খাওয়াতে পারেন?
ব্লাস্ট তাড়াতাড়ি বলে উঠলেন–অবশ্যই। বাড়ির ভেতরে যাওয়া যাক। ব্লাস্ট তাঁর হাত ধরে এগিয়ে গেলেন। যেতে যেতে পোয়ারোকে বললেন আপনারা ওকে নিয়ে বাড়িতে আসুন। আমি পুলিশে খরব দিচ্ছি। পুলিশ এলে ওকে তাদের হাতে তুলে দেব।
ফ্র্যাঙ্ক কার্টার কিছু বলার চেষ্টা করল, কিন্তু তার গলা দিয়ে একটিও শব্দ বেরোল না। তাছাড়া তার হাত-পা থর থর করে কাঁপছিল।
হাওয়ার্ড রেইকসের চোখে নিষ্ঠুর হাসির ঝিলিক। তিনি তাকে টানতে টানতে নিয়ে চললেন।
হাওয়ার্ড রেইকস এবার পোয়ারোকে উদ্দেশ্য করে বললেন–কি গোয়েন্দা মশাই, আপনার কি কিছু বলার আছে? আপনাকে এবার চাকরি থেকে বরখাস্ত করবেন মি. ব্লাস্ট। তিনি যে বেঁচে আছেন তাতে আপনার কৃতিত্ব নেই।
এরকুল পোয়ারো শান্ত স্বরে বললেন–এই নিয়ে দুবার আপনি মি. ব্লাস্টকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচালেন, তাই না। মি. রেইকস?
–কি বলতে চাইছেন?
–আমি বলতে চাইছি, কিছুদিন আগেও আপনি এভাবে একটি লোককে পাকড়াও করেছিলেন। সে মি. ব্লাস্টকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়েছিল, তাই তো?
হাওয়ার্ড ঢোক গিলে বললেন–ইয়ে হ্যাঁ–মানুষের উপকার করা আমার স্বভাব।
পোয়ারো তির্যক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন–তবে এটা অন্যরকম। সেদিন যে লোকটিকে গুলি ছুঁড়তে দেখেছিলেন সে গুলি ছোঁড়েনি। আপনি ভুল করেছিলেন।
ফ্র্যাঙ্ক কর্কশ স্বরে বলল, এখনও উনি ভুল করেছেন।
রেইকস তাকে ধমকে থামিয়ে দিলেন।
পোয়ারো নিজের মনে বললেন–কি আশ্চর্য কাণ্ড, আমি ভাবতে পারছি না।
এরকুল পোয়ারো নৈশ ভোজের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন। পোশাকে সজ্জিত হয়ে তিনি আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন। টাই ঠিক করতে করতে ভাবলেন, ব্যাপারটা কিছুতেই আমার বোধগম্য হচ্ছে না। যদিও ব্যাপারটা পুরোপুরি স্বচ্ছ। কিন্তু ফ্র্যাঙ্ক কার্টারকেও বিশ্বাস করা যায় না। ও গ্ল্যাডিসকে যা বলেছে তা সবই মিথ্যে। ও বলেছিল সে সেক্রেটারির পদে নিযুক্ত হয়েছে। কিন্তু সেই কাহিনির মধ্যে সত্যতা নেই। ফ্র্যাঙ্ক যে স্বভাবের মানুষ তার পক্ষেই এইরকম মিথ্যাচার করা সম্ভব। তাই হাতে হাতে ধরা পরার পর বার বার একটা কথা বলছে, সে গুলি করেনি, তাকে ইচ্ছে করে ফঁসানো হচ্ছে। এছাড়া বলার মতো তেমন জোড়ালো কোনো যুক্তি নেই তার কাছে।
এদিকে হাওয়ার্ড রেইকস? অ্যালিস্টেয়ার ব্লাস্টকে দু-দুবার গুলি করার মুহূর্তে তার হাজির হওয়া। ব্যাপারটা খুবই অস্বাভাবিক বোধ হচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে সে বলতে পারে, এখানে সে এসেছিল তার প্রেমিকা জেনের সঙ্গে দেখা করতে। আর এই গল্পের মধ্যে কোনো অযৌক্তিকতা নেই।
আর এটাও সত্যি কেউ গৃহকর্তার প্রাণরক্ষা করলে তাকে তো সমাদর করতেই হয়। তাই তাকে বাড়িতে থাকতে দিতে আপত্তি করা উচিত নয়। সেইরকম মি. ব্লাস্ট কৃতজ্ঞতা বশত তাকে বাড়িতে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আর এতেই মিসেস অলিভেরার আপত্তি। এমনিতেই রেইকস তাঁর অপছন্দের পাত্র। তাই অসন্তোষ প্রকাশ করলেও মেনে নেওয়া ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই।
এরকুল পোয়ারো সন্ধ্যে থেকেই হাওয়ার্ড রেইকসকে লক্ষ্য করেছেন। সে বন্ধুসুলভ আচরণ করেছে। তার মধ্যে কোনো ধবংসাত্মক মনোভাব প্রকাশ পায়নি। রাজনীতি নিয়েও সরব হয়নি। তার ব্যবহার কাউকে রুষ্ট করেনি। সে সারাক্ষণ ভদ্র মানুষের মুখোশ পরে থেকেছে।
রাতে পোয়ারো বিশ্রামের জন্য ব্যবস্থা করছিলেন। এমন সময় দরজায় ঠুক চুক শব্দ শুনতে পেলেন তিনি। তিনি সচকিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন–কে ওখানে? ভিতরে আসুন।