জেন বিরক্ত হয়ে বলল–তোমার চিন্তাধারা বড় সেকেলে। নতুন কিছু ভাবো, কাকা।
–পুরোনোকে বজায় রেখে যদি কিছু করা যায় তাহলে আমার সমর্থন আছে।
–তা যে সম্ভব সেকথা তুমি কখনো ভাবোনি। তোমার ধারণা এতে ভালো কিছু। হতে পারে না। চেষ্টা করে দেখে না।
–যারা পরীক্ষায় বিশ্বাসী তারা কখনো দেশের উপকার করতে পারে না।
কিন্তু গতানুগতিক জিনিস নিয়ে তুমি কি করে সুখী থাকতে পারো, অ্যালিস্টেয়ার কাকা?
এ দেহে যা আছে তাতেই আমি সুখী, সোনা।
জেন আবেগতাড়িত হয়ে বলল–আসলে, আমাদের মতো তরুণ প্রজন্মের দরকার নতুন পৃথিবী। আর তুমি ইচ্ছে করলেই সেটা গড়া যায়।
অ্যালিস্টেয়ারকে অপ্রস্তুতে ফেলে জেন বিদায় নিল। তিনি বিস্ময়ের সুরে বললেন–দিনে দিনে জেন কেমন পাল্টে যাচ্ছে। এসব ভাবনা ওর মাথায় কে ঢোকাচ্ছে?
জুলিয়া অলিভেরা অপ্রতিভ হয়ে বললেন–জেনের কথায় কিছু মনে করো না। ওর ছেলেমানুষি বুদ্ধি এখনও যায়নি।
বুঝলাম, তবে ওকে আমি বিচক্ষণ ও বুদ্ধিমতী বলেই জানতাম।
তাঁকে কিছুটা বিভ্রান্ত বলে মনে হল এরকুল পোয়ায়োর।
জুলিয়া অলিভেরা উঠে দাঁড়ালেন। পোয়ারো এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলেন। তিনি অবজ্ঞাভরে তাকিয়ে বেরিয়ে গেলেন ঘর থেকে।
অ্যালিস্টেয়ার ব্লাস্ট বলে উঠলেন–এদের কথাবার্তা আমার সব গোলমাল করে দিচ্ছে। এসব কথার অর্থ আমার বোধগম্য হচ্ছে না মঁসিয়ে পোয়ারো।
সব সময় ওরা আমার বিরুদ্ধচারণ করে চলেছে। ওরা নিজেরাও জানে না নতুন স্বর্গ ও নতুন পৃথিবী আসলে কি? তাই ওরা আমাকে বোঝাতে পারে না। কেবল ফাঁকা বুলি।
তিনি একটু হেসে বলেলেন, ওদের বুঝিয়ে দিতে হবে, এই পৃথিবীতে আমিই শেষ প্রাচীন স্তম্ভ।
পোয়ারো সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকালেন। বললেন–আপনাকে যদি মেরে ফেলে, তাহলে?
–মেরে ফেলবে! অতই সহজ কাজ নাকি! তাহলে একদল মূক বার বার পরীক্ষা চালাবে আর তাতেই স্থায়িত্ব ধ্বংস হবে, পচন ধরবে অর্থনীতির, তার সঙ্গে সঙ্গে ভেঙ্গে পড়বে আমাদের দেশ ইংল্যাণ্ডের সামাজিক ব্যবস্থা।
পোয়ারো বললেন আমি আপনার মতে একমত, মি. ব্লাস্ট আমিও চাই স্থায়িত্ব। অ্যালিস্টেয়ার ব্লাস্টের বক্তব্য তিনি উপলব্ধি করলেন এবং মনে মনে শঙ্কিত হলেন।
অ্যালিস্টেয়ার ব্লাস্ট ও এরকুল পোয়ারো বেলা বাড়তে বেরিয়ে পড়লেন বাগান দেখতে। দু’জনে কেয়ারি করা পথ ধরে হাঁটছেন। মাঝে-মধ্যে ব্লাস্ট সোৎসাহে নিজের বাগান করার শখ সম্পর্কিত কিছু কথা বলছেন। নানা ধরনের গাছ চিনিয়ে দিচ্ছিলেন। পোয়ারাও আগ্রহের সঙ্গে তা শুনছিলেন। তবে কড়া রোদ তাঁকে সোয়াস্তি দিচ্ছিল না। শান্ত, নিস্তেজ দুপুর।
ব্লাস্ট বাগানের এক পাশ দেখিয়ে বললেন–ওদিকের উইলিয়ামগুলো কি চমৎকার ফুটেছে দেখুন। এত সুন্দর রঙের ফুল এর আগে আমি দেখিনি।
দুম! দুপুরের শান্ত পরিবেশ গুলির শব্দে খানখান হয়ে গেল। হাওয়ার বেগে কি যেন ছুটে গেল।
বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে অ্যালিস্টেয়ার ব্লাস্ট পেছনে ঘুরলেন। গাছের মধ্যে দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে।
হঠাৎ কে যেন চিৎকার করে উঠলেন। সেই শব্দ অনুসরণ করে ঝোঁপের দিকে তাকাতে তাদের নজরে এল দু’জন মানুষ। একজন আমেরিকান উচ্চস্বরে বলছেন–হতভাগা, শয়তান, তোকে ধরে ফেলেছি। বন্দুকটা ফেলে দে বলছি।
একজন অন্যজনকে দুহাতে জাপটে ধরে ঝোঁপের ভেতর থেকে বেরিয়ে এল। সকালের দেখা সেই তরুণ মালি একজন দীর্ঘকায় আমেরিকানের হাত থেকে পালাবার চেষ্টা করছিল।
এরকুল পোয়ারো ওই আমেরিকান ভদ্রলোকের গলার স্বর শুনেই চিনতে পেরেছিলেন, তার অনুমান বৃথা যায়নি। ওই গলার স্বর হাওয়ার্ড রেইকসের। ফ্রাঙ্ক কার্টার তীব্র কণ্ঠে বলল–ছেড়ে দাও বলছি। আমি গুলি করিনি।
হাওয়ার্ড রেইকস ব্যঙ্গ করে বললেন–তাহলে তুমি কি পাখি মারতে গুলি ছুঁড়েছ? নাকি মজা করছিলে?
হাওয়ার্ড এবার অ্যালিস্টেয়ারকে উদ্দেশ্য করে বলল, মি. ব্লাস্ট, এই লোকটা আপনাকে গুলি ছুঁড়তে সচেষ্ট হয়েছিল। সেই মুহূর্তে আমি দেখি এবং ওকে জাপটে ধরে ফেলি।
ফ্র্যাঙ্ক কার্টার নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য চিৎকার করে বলল, উনি মিথ্যে কথা বলছেন। আমি ঝোপ ছাঁটছিলাম। তখন একটা গুলির শব্দ শুনতে পাই। আর দেখি বন্দুটা আমার পায়ের কাছে পড়ে আছে। আমি স্বভাববশত সেটাকে তুলে নিই। সঙ্গে সঙ্গে উনি আমায় পাকড়াও করেন।
হাওয়ার্ড রেইকসও নাছোড়বান্দা। লোকটিকে ছেড়ে দেবেন না সহজে। তিনিও সমস্বরে বললেন–আমি মিথ্যে বলছি না তুমি বলছ? আমি দেখেছি তোমার হাতে বন্দুক। এটা থেকেই গুলি ছুঁড়েছ তুমি। তিনি এরকুল পোয়ারোকে বন্দুকটা দিয়ে বললেন, আপনি বন্দুকটা পরীক্ষা করে দেখুন তো। মনে হয় ওটার মধ্যে আরও কিছু কার্তুজ এখনও আছে।
পোয়ারো বললেন–হ্যাঁ, আপনার অনুমানই ঠিক।
অ্যালিস্টেয়ার ক্ষুব্ধ হয়ে বললেন–তোমার নামটা যেন কি?
পোয়ারো বলে উঠলেন–আমি বলছি। এর নাম ফ্র্যাঙ্ক কার্টার।
সে তিরিক্ষি মেজাজে বলল–প্রথম থেকেই আপনি আমাকে অনুসরণ করছেন। গত রবিবারও নানারকম প্রশ্ন করে আমাকে বিরক্ত করেছিলেন। কেন মিথ্যে আমাকে দোষারোপ করছেন? আমি ওঁকে গুলি ছুঁড়িনি।
পোয়ারো বললেন তাহলে কে গুলি ছুঁড়েছে বলে তোমার মনে হচ্ছে? এখানে আমরা ছাড়া আর কে আছে?