গোলাপের ঝোঁপের মধ্যে দিয়ে তিনি এগিয়ে চললেন। নিখুঁত জ্যামিতিক পদ্ধতি দেখে তিনি অভিভূত। মাঝে মাঝে রাখা পাথরের খণ্ডগুলি বাগানের শোভা বর্ধন করেছে। বাগানের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে ইংরেজদের বলল তৈরির ইচ্ছা তিনি অনুভব করলেন। হাঁটতে হাঁটতে তিনি বাগানের একপাশে চলে এলেন।
সেখানে একজন মহিলা ও একজন মালি গোছের লোককে দেখতে পেলেন। মহিলার পরনে টুইডের কোট ও স্কার্ট। সম্ভবত তিনি ওই মালিকে কিছু নির্দেশ দিচ্ছিলেন। মালির মুখ দেখে মনে হচ্ছে সেই কথাগুলো তাকে খুশি করতে পারেনি। পোয়ারো ভাবলেন মালিটি বোধহয় কোদাল রেখে বিশ্রাম নিচ্ছিল।
মালিটি আবার কোদাল চালাতে লাগলেন। পোয়ারো নিঃশব্দে মালির কাছে এগিয়ে গেলেন। সে পেছন ফিরে মাটি কাটছিল। তাই সে পোয়ারোকে লক্ষ্য করেনি। এই সুযোগে তিনি মালীকে ভালো করে জরিপ করতে চাইলেন।
পোয়ারো শান্ত স্বরে বললেন–সুপ্রভাত।
সে কোদাল না থামিয়ে কর্কশ গলায় বলল–সুপ্রভাত, স্যার।
পোয়ারো লোকটির আচরণে অবাক হলেন। তিনি এর আগে এমন অনেক মালির সঙ্গে কথা বলেছেন তারা সবাই হাতের কাজ বন্ধ করে কথা বলতেই বেশি উৎসাহিত হয়। কিন্তু এ অন্য ধরনের। তাঁর মনে সন্দেহ জাগলো। তিনি দাঁড়িয়ে লোকটির কাজ দেখতে লাগলেন। মালির হাত ওঠা নামার মধ্যে তিনি চেনা কিছু যেন খুঁজতে চাইলেন। নাকি তিনি রহস্য সন্ধানী বলে সবার মধ্যে রহস্যের গন্ধ পাচ্ছেন? অথবা তিনি কাজ করার ক্ষমতা হারিয়েছেন। দৃষ্টিশক্তি কমে এসেছে।
ভাবতে ভাবতে তিনি আবার চলা শুরু করলেন। এবার এসে দাঁড়ালেন দেয়ালের ধারে বড় একটা ঝোঁপের পাশে। সেই মালিকে লক্ষ্য করলেন, তার মুখ পরিশ্রমে ক্লান্ত ও ঘামে ভেজা, মনে মনে ভাবলেন, কি অদ্ভুত?
পোয়ারো ঝোপ থেকে বেরিয়ে এলেন। পোশাকে লেগে থাকা দু-একটা শুকনো পাতা ফেলে দিলেন। এরপর আপন মনে সামনের দিকে এগিয়ে চললেন।
হ্যাঁ, ব্যাপারটা সত্যিই অদ্ভুত। এভাবে এখানে ফ্র্যাঙ্ক কার্টারকে মালির ভূমিকায় দেখবেন তা পোয়ারো ভাবেননি। এই যুবকটি মিস নেভিলকে বলেছিলেন যে সেক্রেটারির কাজ করে। শেষপর্যন্ত ও কিনা অ্যালিস্টেয়ার ব্লাস্টের মালি হল।
চিন্তাক্লিষ্ট মনে তিনি বাড়ির দিকে এগোলেন। তখন একটা ঘন্টাবাজার শব্দ তিনি শুনতে পেলেন। পথে মি. ব্লাস্ট ও হেলেনের সঙ্গে তার দেখা হল। তাঁরা দুজনে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন।
হেলেনের আইরিশ ঘেঁষা কিছু কথা পোয়ারোর কানে গেল। তিনি বলছেন–অ্যালিস্টেয়ার, তুমি মহৎ। তাই তুমি দয়া করে আমাকে এখানে থাকতে দিয়েছ। কিন্তু তোমার ওই আমেরিকান আত্মীয়রা আমাকে পছন্দ করেন না। আমি তাদের কাছে অনাহুত। সেইজন্য এই সপ্তাহে তোমার নিমন্ত্রণ আমি রাখছি না।
ব্লাস্ট বললেন জুলিয়ার কথাবার্তার ধরনই ওরকম। তবে কখনো অন্তর থেকে বলে না।
হেলেন মস্ট্রেসর ধীরে ধীরে জবাব দিলেন–ওর ব্যবহারে আমি অপমানিত বোধ করি। আমি এসব সহ্য করব না। একজন আমেরিকান মহিলার কাছ থেকে এরকম ব্যবহার আমি আশা করিনি।
হেলেন আর কথা না বাড়িয়ে বিদায় নিলেন। এরকুল পোয়ারো এগিয়ে গেলেন মি. ব্লাস্টের সামনে। তিনি অত্যন্ত বিব্রত হয়েছেন। কোনো মহিলাকে নিয়ে যেমন হয়ে থাকে।
তিনি বিমর্ষ চিত্তে বললেন–মেয়েরা সত্যিই ঈর্ষাপরায়ণ হন। তাইনা মঁসিয়ে পোয়োররা। সুপ্রভাত। ভারী চমৎকার আবহাওয়া, বাগানটা ঘুরে দেখলেন?
কথা বলতে বলতে দু’জনে বাড়ির দিকে এগিয়ে চললেন। ক্লান্ত স্বরে ব্লাস্ট বললেন আজ স্ত্রীর কথা বড় বেশি মনে পড়ছে।
ডাইনিং রুমে এসে তাঁরা বসলেন। সেখানে আগে থেকে উপস্থিত ছিলেন মিসেস অলিভেরা।
অ্যালিস্টেয়ার ব্লাস্ট রাগত কণ্ঠে বললেন–জুলিয়া তোমার ঔদ্ধত্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। তুমি কেন হেলেনকে আঘাত করেছ?
মিসেস অলিভেরা গম্ভীর স্বরে বললেন–হেলেন মিথ্যে কথা বলেছে।
মি. ব্লাস্ট তাঁর কথায় ভীষণ অসন্তুষ্ট হলেন।
এবার পোয়ারো বললেন–আপনার একজন তরুণ মালিকে দেখলাম, মনে হয় সে নতুন। কাজে যোগ দিয়েছে সম্প্রতি।
–হ্যাঁ, আপনি ঠিক ধরেছেন। ওই তরুণকে তিন সপ্তাহ আগে নিয়োগ করা হয়েছে। আমার তিন জন মালি ছিল। তার মধ্যে একজন বার্টন। সে চলে যাওয়ায় এই ছেলেটিকে রেখেছি।
আপনি কি বলতে পারবেন ও আগে কোথায় থাকত?
–না, আমি বলতে পারব না। ম্যাক অ্যালিস্টার ওকে বহাল করেছে। তবে ম্যাক ওর কাজে সন্তুষ্ট নয়। সে ওকে তাড়াতে চায়।
–ওর নাম শুনেছেন?
–শুনেছি, তবে ঠিক মনে নেই।
–ওকে কত টাকা পারিশ্রমিক দেন?
–যতদূর মনে হয় দু’পাউণ্ড পনেরো শিলিং হবে।
পোয়ারো চিন্তিত মুখে বললেন–হুঁ।
অ্যালিস্টেয়ার ব্লাস্ট অবাক দৃষ্টিতে তাঁর দিকে তাকিয়ে আছেন। কিছু প্রশ্ন করার জন্য উদ্যত হয়েছেন, এমন সময় কাগজ হাতে ঝড়ের বেগে প্রবেশ করল মিস অলিভেরা। কথায় ইতি টেনে তাঁরা দুজনেই তাঁর দিকে তাকালেন।
জেন তীব্র স্বরে বলে উঠল–মনে হচ্ছে তোমাকে খতম না করে ওরা শান্তি পাচ্ছে । তোমার রক্তপাত ঘটানোর জন্য কিছু লোক উন্মুখ হয়ে আছে।
অ্যালিস্টেয়ার হেসে বললেন–আজও ওই ভদ্রলোকের বিতর্কের খবর বেরিয়েছে। তুমি তা পড়ে বিচলিত হয়েছ। উনি ঠিক করছেন। আচরিটনের অর্থনীতি সম্বন্ধে ওঁর অগাধ জ্ঞান। ওঁকে যদি দায়িত্ব দেওয়া হয় তাহলে ইংল্যাণ্ডকে কপর্দকশূন্য করতে বেশিদিন সময় লাগবে না।