না, করুন। মি. ব্লাস্ট সংক্ষেপে উত্তর দিলেন।
–আপনার মৃত্যুর পর আপনার সম্পত্তি কে কে পাবে?
মি. ব্লাস্ট উষ্মার সুরে বললেন–এরকম প্রশ্ন করার মানে কি?
–মানে–এই ঘটনার সঙ্গে এই উত্তরটা ও তপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে।
বাজে কথা। কেউ আমাকে খুনের চেষ্টা করতে পারে না।
ধরুন, আপনার জন্মদিনে ফুলের মধ্যে টাইম বোমা ভরে উপহার দিল কেউ হয়তো। কোনো সভায় আপনি গিয়েছেন সেখানে আপনাকে লক্ষ্য করে কেউ গুলি ছোঁড়ে তাহলে?
–ওহ এই ব্যাপার। পৃথিবীতে যে ব্যক্তি অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করে তার জীবনে এমন ঘটনা তো ঘটতেই পারে।
না, এমন হালকা ভাবে নেবেন না মি. ব্লাস্ট। এতে আপনার প্রাণহানির আশঙ্কা আছে। ব্লাস্ট বিহ্বল হয়ে তাকিয়ে রইলেন। বিহ্বল ভাব কাটিয়ে তিনি বললেন আমি বুঝতে পারলাম না। আমি জানতে চাইছি, আপনার অবর্তমানে কে বেশি লাভবান হবে?
ব্লাস্ট হেসে বললেন আমার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির বেশিটাই দান করেছি ক্যানসার হাসপাতালে, অন্ধদের রয়্যাল ইনস্টিটিউটকে এবং এডওয়ার্ডস হাসপাতালকে। বাকি অর্থ দিয়েছি আমার বিবাহ সূত্রের ভগ্নী। মিসেস জুলিয়া অলিভেরা, তার কন্যা জেন অলিভেরাকে সম পরিমান অর্থ বেশ কিছু অর্থ দিয়েছি আমার এক দূর সম্পর্কের বোন হেলেন মন্ট্রেসরকে। সে আমার একমাত্র জীবিত আত্মীয়। তাকে দেখার মতো কেউ নেই। এবং আর্থিক দিক দিয়েও সে দুর্বল। তাই তাকে আমার এই কটেজে থাকতে দিয়েছি।
একটু থেমে আবার বলতে শুরু করলেন ব্লাস্ট, আপনাকে বিশ্বাস করে এসব কথা বললাম দেখবেন আবার প্রচার না হয়।
–আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। আমি বিশ্বাসহানি করব না।
ব্লাস্ট মজা করে বললেন–মঁসিয়ে পোয়ারো, এবার হয়তো বলবেন, যে জুলিয়া বা জেন কিংবা হেলেন মসের আমাকে খুন করার ষড়যন্ত্র করছে।
–আমি এখন কিছুই বলব না, মি. ব্লাস্ট।
–তাহলে নার কাজটা আপনি করছেন?
মিস সেইনসবারি সীলকে খুঁজে বের করা? হ্যাঁ, আমি করব।
মি. ব্লাস্ট তৃপ্তির হাসি হেসে বললেন–ধন্যবাদ, মঁসিয়ে পোয়ারো। সত্যিই আপনি খাঁটি ইংরেজ এবং কাজের মানুষ।
পোয়ারো ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এলেন, দরজায় দাঁড়ানো ছিল দীর্ঘাঙ্গী জেন অলিভেরা। প্রায় তার গায়ের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে আর কি। সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলেন তিনি ক্ষমা করবেন, মাদামোয়াজেল।
মিস অলিভেরা একটু সরে দাঁড়িয়ে বলল–আপনার সম্পর্কে আমার কি ধারণা জানেন, মঁসিয়ে পোয়ারো?
–কি, মাদামোয়াজেল?
–আমার ধারণা আপনি গুপ্তচর বৃত্তিতে পাকা, নীচ, আপনার ওই নোংরা বিশ্রী নাকটা সব ব্যাপারে গলিয়ে গণ্ডগোল সৃষ্টি করায় ওস্তাদ।
–আপনি শান্ত থাকুন, মাদামোয়াজেল।
জেন অলিভেরা প্রচণ্ড রেগে গিয়ে বলল–আমি জানি আপনি কি করতে পারেন আর না পারেন। আপনি কাকাকে মিথ্যে স্তোকবাক্য শুনিয়েছেন। আপনার কিছু করার ক্ষমতা নেই। আপনি কিছুই খুঁজে পাবেন না। কিছুতেই না! আমার প্রিয় কাকার ক্ষতি কেউ করতে পারবে না। তিনি সম্পূর্ণ নিরাপদে আছেন। আপনাকে দেখলে আমার শরীর জ্বলে যায়। আপনি একজন সখের গোয়েন্দা ছাড়া আর কিছুই না। যাকে বলে বুর্জোয়া গোয়েন্দা।
পোয়ারো হতবাক, চোখ দুটি বিস্ফারিত, ভ্রুযুগল কুঞ্চিত। একবার তিনি গোঁফে হাত বুলিয়ে নিলেন।
বুর্জোয়া শব্দটি তাঁর খারাপ লাগেনি। জীবনের প্রতি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গী বুর্জোয়া সুলভই বটে, তাই এই কথাতে তিনি অপমানিত বোধ করেননি। কিন্তু জেন অলিভেরার অন্যান্য কটুক্তি তাঁকে আঘাত করেছে। সেসব ভাবতে ভাবতে তিনি ড্রয়িংরূমে এলেন।
সেখানে মিসেস অলিভেরা পেসেন্স খেলছিলেন।
পোয়ারোর পায়ের শব্দে মহিলা মুখ তুলে তাকালেন। সেই দৃষ্টিতে ছিল তাচ্ছিল্য আর অবজ্ঞা। ওই নিষ্ঠুর চাহনি দেখে পোয়ারো চমকে উঠলেন। তিনি কিছু না বলে ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন। তিনি ভাবলেন এখানে তিনি অবাঞ্ছিত।
তিনি বাগানে এলেন। বাতাসে সন্ধ্যামালতীর মিষ্টি সুবাস। খুশি মনে কেয়ারী করা পথ ধরে এগিয়ে চললেন তিনি।
বাগানের কোণে যেতেই তিনি দুটি ছায়া মূর্তি দেখতে পেলেন। তারা তাকে দেখে অন্ধকারে মিলিয়ে গেল। মনে হয় একজোড়া প্রেমিক-প্রেমিকা প্রেম নিবেদনে ব্যস্ত। তিদি দ্রুত পায়ে সেখান থেকে এগিয়ে গেলেন। তিনি মি. ব্লাস্টের খোলা জানলার সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন। দেখলেন মি. ব্লাস্ট ও তার সেক্রেটারি কিছু নিয়ে আলোচনা করছেন।
শেষ পর্যন্ত এরকুল পোয়ারো নিজের জন্য বরাদ্দ ঘরটিতে প্রবেশ করলেন। এই ঘরটিতেই তাঁর রাত্রি যাপনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিছানায় বসে তিনি চিন্তা করতে লাগলেন। সমস্ত ঘটনার অদ্ভুত পরম্পরার কথা তার মনে পড়ল।
সত্যিই কি টেলিফোনে মিসেস অলিভেরার কণ্ঠস্বর শুনেছিলেন? না কি অন্য কারোর?
তাঁর মনের পর্দায় ভেসে উঠল সেই রহস্যময় মি. কিউ. এক্স ৯১২ ওরফে চ্যাপম্যানের কথা। মনে পড়ল সেই পরিচারিকা জ্যাগরোসের উদ্বিগ্ন দুটি চোখের চাহনি। মি. বার্নেসের সেই বৈচিত্র্যময় খোলাখুলি বলা কথাগুলি ভাবলেন।
সব ক্ষেত্রে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। সকলেই ইচ্ছে করে কিছু না কিছু গোপন করেছে। সেই সঙ্গে আর একটি সমস্যা হচ্ছে মিস সীলের অন্তর্ধান সূত্র পাওয়ার জন্য প্রচুর পরিশ্রম করতে হবে তাকে।
০৬. এগারো, বারো, খোঁড়া চাই আরও
এরকুল পোয়ারো সারা রাত জেগে কাটিয়েছেন। কেমন একটা অস্বস্তি বোধ করছিলেন তিনি। তাই ভোর হতেই তিনি বিছানা ছাড়লেন। ভোরের আলোয় বাইরের পরিবেশ চমৎকার লাগছে। তিনি পায়ে পায়ে বাগানে গিয়ে হাজির হলেন।