অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন মি. ব্লাস্ট। পরে বললেন–আপনি ভারি মজার মানুষ, মঁসিয়ে পোয়ারো।
মৃদু হেসে পোয়ারো বললেন–সত্যি কথা হল, আমার একটা আদর্শ আছে, নিয়ম নীতি মেনে চলতে হয় যা কিছু সব যুক্তি দিয়ে বিচার করি। এছাড়া কোনো কিছুর ওপর নিজের মত চাপিয়ে দেওয়াও আমি পছন্দ করি না।
ব্লাস্ট বললেন–ঘটনার গতি প্রকৃতি আমাকে ভাবিয়ে তুলেছে। সব কেমন অদ্ভুত লাগছে। প্রথমে ওই দন্তচিকিৎসকের আত্মহত্যা, তারপর ওই মিসেস চ্যাপম্যানের দেহ সিন্দুক থেকে উদ্ধার, মুখ বিকৃত হওয়া। সব কেমন যেন গোলমাল হয়ে যাচ্ছে। আমার ধারণা এই কুৎসিত জঘন্য হত্যাকাণ্ডের পিছনে নিশ্চয় কোনো কারণ আছে।
পোয়ারো মুখে কিছু না বলে মাথা নাড়লেন।
ব্লাস্ট বললেন আমার যতদূর মনে পড়ছে ওই স্ত্রীলোকটিকে কখনোই আমার স্ত্রীর সঙ্গে দেখিনি। কোনোদিনই তার সঙ্গে আমার স্ত্রীর আলাপ পরিচয় হয়নি। আমার সঙ্গে দেখা করার একটা ছল মাত্র। কিন্তু কেন? এতে তার কি লাভ? অতিরিক্ত টাকার লোভ? বাড়ির সামনে ওইভাবে দেখা করাটা আমার সন্দেহজনক বলে মনে হচ্ছে। বুদ্ধি খাঁটিয়ে পরিকল্পনা করে ওই সময়টা উনি বেছে নিয়েছেন। তাই বার বার আমার মনে আশঙ্কা জাগছে, এর কারণ কি হতে পারে?
পোয়ারো বললেন–দুঃখিত মি. ব্লাস্ট আমিও এই মুহূর্তে আপনার প্রশ্নের জবাব দিতে পারছি না।
–এই ব্যাপারে আপনার ধারণা কি? মঁসিয়ে পোয়ারো–আমার ধারণাকে হাস্যকর বলে মনে হতে পারে যাকে এই কাজে নিয়োগ করা হয়েছে, সে চাইছিল আপনার ওপর অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে। যেহেতু আপনি দেশের একজন সম্মানীয় ব্যক্তি। ব্লাস্ট অধৈর্য হয়ে বললেন–এতে তাদের কি আসে যায়?–অবশ্যই তাদের আসে যায়। যেদিন মি. মর্লে আত্মহত্যা করেন সেদিনের কথা ভাবুন। সেদিন মর্লের ব্যবহার আপনাকে কোনোভাবে ক্ষুণ্ণ করেছিল? এমন কিছু অসংলগ্ন কথা যার থেকে কোনো সূত্র পাওয়া যায়? ব্লাস্ট মনে করার চেষ্টা করলেন। বললেন–না মঁসিয়ে পোয়ারো, কিছুই মনে করতে পারছি না। তার মুখ থেকে মিস সেইনসবারি সীলের নামও শোনেন কি? অথবা মিসেস চ্যাপম্যানের নাম? তিনি অসন্তুষ্ট হয়ে বললেন–না, না, মঁসিয়ে পোয়ারো, উনি কারো নাম বলেননি। আমাদের আলোচনার বিষয় ছিল খেলাধুলা, বাগান, বৃষ্টি–এইসব।আপনারা যখন কথা বলছিলেন তখন অন্য কেউ ছিলেন? আলিস্টেয়ার ব্লাস্ট ভাবার জন্য সময় নিলেন। মিনিট কয়েক পর বললেন–না, তেমন কিছু মনে পড়ছে না। গতবার একজন সুন্দরী মহিলাকে দেখেছিলাম। এবার সে আসেনি–কিন্তু মর্লের সেই অংশীদার মি. রেইলি একবার এসেছিলেন, যিনি আইরিশদের মতো কথা বলেন। তার সঙ্গে মলে কি কথা বলেছিলেন? হা, মি. রেইলি মাত্র মিনিট দুয়েক ছিলেন। সামান্য কিছু কথা বলেছিলেন তারা দু’জনে। তারপর মি. রেইলি চলে গিয়েছিলেন। এরপরও তিনি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ছিলেন।
পোয়ারো চিন্তিতভাবে বললেন–আমিও তাকে সুস্থ ও স্বাভাবিক দেখেছিলাম। ঘরে পিন পতন নীরবতা। অনেকক্ষণ পরে নীরবতা ভঙ্গ করে এরকুল পোয়ারো প্রশ্ন করলেন–ভুলে যদি না যান তবে বলুন তো মি. ব্লাস্ট, সেদিন সকালে ওয়েটিং রুমে একজন তরুণকে অপেক্ষায় থাকতে দেখেছিলেন?
ভ্রু কুঁচকে ভেবে নিয়ে মি. ব্লাস্ট বললেন–না, না, ভুলিনি–একজন তরুণকে দেখেছিলাম। সে অস্থির হয়ে পায়চারি করছিল। তবে তার প্রতি বিশেষ কোনো মনোযোগ ছিল না আমার। কিন্তু কেন বলুন তো?
–তাকে আবার দেখলে চিনতে ভুল করবেন না তো?
মাথা নেড়ে না বললেন তিনি।
–সেকি আপনার সঙ্গে কথা বলার জন্য উদগ্রীব ছিল? ব্লাস্ট উৎসাহিত হয়ে বললেন, ব্যাপার কি? আমি কি ওই তরুণকে চিনি? ওর নাম কি?
পোয়ারো তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ব্লাস্টের প্রতিক্রিয়া বোঝার চেষ্টা করলেন কিন্তু পারলেন না। শেষে তিনি বললেন–আপনি তাকে চেনেন কিনা আমি বলতে পারব না। তবে আপনার ভাইঝি জেন তাকে ভালোভাবেই চেনে। তাদের মধ্যে গভীর বন্ধুত্বের সম্পর্ক। নাম হাওয়ার্ড রেইকস।
–ওহ, জেনের বন্ধু। আমি তো শুনেছি ওর মা ওদের সম্পর্ক মেনে নেননি। মি. ব্লাস্ট আনমনা হয়ে বললেন–তাতে জেনের কোনো ক্ষতি হবে না।
তিনি এতটাই রুষ্ট হয়েছেন যে আমেরিকা থেকে মেয়েকে এখানে নিয়ে এসেছেন। তাঁর ধারণা এতে মেয়েকে ওই তরুণটির কবল থেকে মুক্ত করা যাবে।
অ্যালিস্টেয়ার ব্লাস্টের মুখে চিন্তার কালো মেঘ। তিনি বললেন–এবার তাকে চিনতে পারছি। শুনেছি ছেলেটা খুব খারাপ। তার নামে নানা কুৎসা রটেছে। সে সন্ত্রাসমূলক কাজে লিপ্ত।
মিস অলিভেরা আমাকে বলেছে সে সেদিন সকালে মর্লের চেম্বারে গিয়েছিল। ছেলেটির উদ্দেশ্য ছিল আপনার মুখোমুখি হওয়া।
লাভ? তাকে কি আমার কাজে যোগ দিতে বলব?না, না, তা নয়, যাতে আপনাদের দুজনের মধ্যে একটা মধুর সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
ঘৃণায় ব্লাস্টের মুখ বিকৃত হল। তিনি বললেন–একটা অপদার্থ।
পোয়ারো হাসি চেপে বললেন আপনার কিছু কিছু মতবাদ ওর অপছন্দের।
অ্যালিস্টেয়ার ব্লাস্ট নাক কুঁচকে বললেন–ওর মতো নোংরা চরিত্রের ছেলেকে আমি কখনো মেনে নেব না। অশিক্ষিত, অপদার্থ, আদর্শবাদের ধ্বজাধারী। দুষ্কর্ম ছাড়া ভদ্রজনোচিত কাজ তার দ্বারা সম্ভব নয়।
পোয়ারো কিছুক্ষণ মাথা নীচু করে বসে রইলেন। দুই জনেই চুপচাপ। তারপর এক সময় পোয়ারো মাথা তুলে জানতে চাইলেন–আপনাকে যদি কোনো ব্যক্তিগত প্রশ্ন করি তাহলে অনধিকার চর্চা বলে এড়িয়ে যাবেন না তো?