তার সঙ্গে আপনার আলাপ আছে? না, কখনো না। বাড়িতে তিনি খুব কম আসতেন। তাছাড়া স্বামী-স্ত্রী দুজনেরই প্রতিবেশীদের নিয়ে মাথা ব্যথা ছিল না। মিসেস চ্যাপম্যানের অন্তরঙ্গ কেউ আছে কি? অন্তরঙ্গ বলতে কোনো বন্ধু বান্ধব বা নিকট আত্মীয় কেউ ছিলেন?–না। অন্তত সিলভিয়া কখনো বলেননি।
সিলভিয়া কখনো এদের সম্পর্কে কিছু বলেনি। সুতরাং আমিও জানি না।
-উনি কি কখনো ভারতে গিয়েছিলেন?
দুঃখিত, আমি এতসব জানি না। মিসেস মারটনের চোখ মুখের ভাব বদলে গেল। তিনি সন্ধিগ্ধ স্বরে বললেন আপনারা কে? আপনারা কি স্কটল্যাণ্ড ইয়ার্ড থেকে এসেছেন। আর আমাকেই বা এত জেরা করছেন কেন? নিশ্চয় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেছে?
জ্যাপ বললেন, হ্যাঁ আপনার অনুমানই ঠিক, মিসেস মারটন। চ্যাপম্যানের ফ্ল্যাটে একটি মৃতদেহ পেয়েছি আমরা।
মিসেস মারটন বিস্ফারিত নেত্রে বললেন–ওহ গড! মৃতদেহ! কার হতে পারে? কোনো পুরুষের কি? জ্যাপ বললেন–না, এটি একটি স্ত্রীলোকের দেহ, পুরুষের নয়!
মিসেস মারটন অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন–আশ্চর্য, স্ত্রীলোক?
এবার পোয়ারো শান্ত স্বরে বললেন–দেহটা কোনো পুরুষের হবে ভাবলেন কেন?
–সেটাই স্বাভাবিক।
-কিন্তু কেন? মিসেস চ্যাপম্যান কি কোনো পুরুষ ভদ্রলোকদের তার ফ্ল্যাটে আপ্যায়ন করতেন?
মিসেস মারটন রুষ্ট হয়ে বললেন–আপনি ভুল করছেন। আমি এমন কথা বলিনি। সিলভিয়া নোংরা চরিত্রের মহিলা নয়। পোয়ারো বললেন মিসেস মারটন, আপনি আমাদের অনেক কিছুই গোপন করছেন।
মিসেস মারটন একটু অসন্তুষ্ট হলেন। কি করব বলুন তো। যে আমাকে বিশ্বাস করে তার অমর্যাদা করা উচিত হবে কি। তার কাছে আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, ঘনিষ্ঠ দু-একজন ছাড়া অন্যদের বলা নিষেধ।
জ্যাপ বললেন–কি এমন কথা তিনি আপনাকে বলেছেন যা আমাদের বলতে দ্বিধা করছেন মিসেস মারটন?
মিসেস মারটন নিচু স্বরে বলতে লাগলেন–একদিন কথা প্রসঙ্গে তার মুখ ফসকে বেরিয়ে আসে যে তার স্বামী মি. চ্যাপম্যান সিক্রেট সার্ভিসে রয়েছেন। এইজন্য তাকে বিদেশে থাকতে হত বেশি। তিনি মিথ্যে করে বলতেন অস্ত্র বিক্রি করেন। এই কাজটা মিসেস চ্যাপম্যানের পছন্দ নয়। সরাসরি স্বামীকে চিঠি লিখতে পারতেন না বলে তিনি রাগ করতেন। মি. চ্যাপম্যানের কাজটা নাকি খুব বিপজ্জনক। তাই তিনি আমাকে শপথ করিয়ে নেন কথাটা কাউকে না বলার জন্য।
এরকুল পোয়ারা ও চিফ ইন্সপেক্টর জ্যাপ বেরিয়ে এলেন মিসেস মারটনের ফ্ল্যাট থেকে। মিসেস মারটনের জবাবদিহি জ্যাপকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। তিনি সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বললেন নাঃ কোনো সুরাহা হল না। এবার আমার মাথাটাই খারাপ হবে দেখছি। তারা দু’জনে মিসেস চ্যাপম্যানের ফ্ল্যাটের সামনে এসে দাঁড়ালেন। সেখানে তরুণ অফিসার বেডোর্জ অপেক্ষা করছিল। সে সম্ভ্রমে বলল–স্যার, নেমি স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারেনি। মিসেস চ্যাপম্যান কাজের লোককে বেশিদিন রাখতে পছন্দ করতেন না। ঘন ঘন বদলাতেন। দুতিন মাস ধরে মেয়েটি কাজ করছে এখানে। ওর বয়ান অনুযায়ী মিসেস চ্যাপম্যান সরল সাদাসিধে মানুষ। সর্বক্ষণ রেডিও শুনে কাটিয়ে দিতেন। ওর স্বামী ধাপ্পাবাজ লোক। অহরহ মিথ্যে বলতেন। কিন্তু তিনি রাগ বা অভিমান করতেন না। জার্মানি, রাশিয়া, আমেরিকা থেকে প্রচুর চিঠি আসত তার কাছে।
মিসেস চ্যাপম্যানের চিঠিপত্রের মধ্যে সন্দেহজনক কিছু পাওয়া গেছে। সাধারণ কিছু কাগজপত্র পাওয়া গেছে। তার মধ্যে কয়েকটা বিল; কিছু রসিদ, পুরোনো নাটকের বিজ্ঞাপন জেনানা মিশনের হ্যাঁণ্ডবিল। এছাড়া উল্লেখযোগ্য কিছুই পাওয়া যায়নি।
সেগুলো কার মারফত আসছে কিংবা নিজেই আনছেন, তা কিছু বোঝা গেল? অচেনা কোনো লোককে আশে পাশে ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে?
না, স্যার, পোর্টার কিছু বলতে পারেনি বলাও সম্ভব না, বাড়িটা এত বড় আর এত লোক যাতায়াত করছে, বোঝা মুশকিল কে কোন মতলবে আসছে বা যাচ্ছে।
অন্যান্য ফ্ল্যাটের কেউ কিছু বলেছে?
–না, স্যার। এমন সময় ডিভিশনাল সার্জেন বাথরুম থেকে বেরিয়ে এলেন। তার নাক চাপা রুমালে। তিনি তিক্ত স্বরে বললেন,
–কি বিশ্রী গন্ধ। গা গুলিয়ে উঠছে। তাড়াতাড়ি দেহটা মর্গে পাঠানোর ব্যবস্থা করুন।
মৃত্যুর কারণ বোঝা গেল, ডাক্তার?
আগে ময়না তদন্ত হোক, তারপর যা বলার বলব। তবে এই মুহূর্তে বলতে পারি, খুনের পর মুখে আঘাত করা হয়েছে। শরীরের অন্য কোথাও কোনো আঘাতের চিহ্ন আছে কিনা দেখতে হবে। নিরুদ্দিষ্ট এক মহিলার কথা শুনেছি। ইনিই যে তিনি সেটা প্রমাণ সাপেক্ষ। ডাক্তার চলে গেলেন।
পোয়ারো ডেস্কের কাছে গেলেন। তাতে কিছু কাগজ-পত্র ছিল। তার মধ্যে থেকে তিনি একটি ছোট্ট বই তুলে নিলেন। বইটিতে বাদামী রঙের মলাট দেওয়া। বইটির ওপর একটা ঠিকানা লেখা ছিল। বেডোর্জ হেসে বলল, ওটা কোনো উপকারে লাগবে না। ওতে কয়েকটি দর্জির দোকানের নাম ও ঠিকানা আছে।
পোয়ারো ইংরেজি ডি নম্বর দেওয়া পাতাটি খুললেন।
তিনি পড়তে শুরু করলেন–ডঃ ডেভিস, ১৭ প্রিন্স অ্যালবার্ট রোড, ড্রেক ও পমপনেটি, মাছ বিক্রেতা। তার নিচে দু’লাইন ছেড়ে লেখা দাঁতের ডাক্তার মি. মর্লে, ৫৮ কুইন শার্ট স্ট্রিট।
পোয়ারেরে চোখ জ্বলজ্বল করে উঠল। তিনি বললেন-মৃতদেহ সনাক্ত করতে কোনো বেগ পেতে হবে না। জ্যাপ ক্রুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন পোয়ারের দিকে। বললেন–আপনি সত্যিই কিছু ভাবছেন?