পোয়ারো জানতে চাইলেন, মিসেস চ্যাপম্যান কোথায় যেতে পারেন বলে আপনার মনে হয়, বন্ধু? হয়তো এই মৃতদেহ মিসেস চ্যাপম্যানের। তাকে কেউ খুন করে বাক্সে ঢুকিয়ে রেখেছে। আর আমরা মিস সীল বলে মনে করছি।
পোয়ারো সম্মতি জানিয়ে বললেন–মুখ বিকৃত করার অর্থ কি?
–সঠিক বলতে পারব না। তবে অনুমানের ভিত্তিতে বলতে পারি, নিছক বিকৃত ঈর্ষা বা লালসা মেটানোর জন্য। আর একটি সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না, সেটা হল মহিলার পরিচয় গোপন রাখার জন্যই এরকম করা হয়েছে। এতে তার পরিচয় গোপন রয়েছে কি?
–না, কারণ আমরা জেনেছি মিস ম্যাবেল সেইনসবারি সীল কি পোশাক পড়ে বাইরে বেরিয়েছিলেন। তার হাতে একটি ব্যাগ ছিল। সেই ব্যাগ থেকে একটি পুরোনো চিঠি পাওয়া গেছে। যেটা রাসেল স্কোয়ার থেকে পাঠানো হয়েছিল।
–এর থেকে কি প্রমাণিত হয়?
–কিছুই না। হয়তো এটাও মস্তবড় একটা ভুল। পোয়ারো উঠে দাঁড়ালেন, বললেন ভুল? হয়তো তাই। আপনারা ফ্ল্যাটের সব কিছু নিখুঁত ভাবে দেখেছেন? হ্যাঁ, বন্ধু, গুরুত্বপূর্ণ কিছু নেই। আমি মিসেস চ্যাপম্যানের শোবার ঘরটা দেখব।
জ্যাপ ও পোয়ারো শোবার ঘরে এলেন। ঘরটি নিপুণ হাতে সাজানো। পরিপাটি করে বিছানা পাতা। বোঝা যাচ্ছে এখানে অনেকদিন কেউ ঘুমোননি। চারদিকে শুধু ধুলো আর ধুলো।
জ্যাপ বললেন–আমরা খুব ভালোভাবে দেখেছি। কোথাও হাতের ছাপের চিহ্নমাত্র নেই। বাসনপত্রের গায়ে কিছু হাতের ছাপ রয়েছে। তবে তা হয়তো ওই পরিচারিকা নেমির হবে।
অর্থাৎ খুনের পর সব প্রমাণ মুছে লোপাট করে দিয়েছে। হ্যাঁ, ঠিক বলেছেন।
পোয়ারো মিসেস চ্যাপম্যানের ফ্ল্যাটটা ঘুরে ঘুরে দেখলেন, বসার ঘর সাজানোতে আধুনিকতার ছোঁয়া আছে। আসবাবপত্রের দাম খুব কম হলেও দেখতে খুব সুন্দর, একটা দেয়াল আলমারি রয়েছে। সেটা কম দামি পোশাকে ভরা। তবে প্রত্যেকটি অতি মনোরম। সুর্যাকে কয়েকজোড়া জুতো রয়েছে। পোয়ারো একটা জুতো তুলে নিয়ে দেখলেন। সেটির নম্বর পাঁচ। দেয়ালের এককোণে একটি লোমের কোটের ওপর তার নজর আটকে গেল। এছাড়া ড্রেসিং টেবিলে বেশ কিছু দামি প্রসাধনী রয়েছে। রুজ, পাউডার, ভ্যানিসিং ক্রিম, শ্যাম্পু, লিপস্টিক, নেলপালিশ সবই আছে।
পোয়ারো মজার সুরে বললেন–ভদ্রমহিলা চল্লিশটি বসন্ত পাড় করেছেন। চুলে রূপালির আভাস। তবুও তিনি প্রকৃতির নিয়ম মানতে রাজি নন। জ্যাপ প্রশ্ন করলেন, আপনি কি কিছু আন্দাজ করতে পারছেন? না, না, কোথা থেকে শুরু করব বুঝতে পারছি না। কথা বলতে বলতে তিনি এগিয়ে গেলেন সিন্দুকটার দিকে। মৃতার পায়ের জুতো খুলে নিলেন। বকলসটা হাতে নিয়ে পরীক্ষা করতে লাগলেন। বকলসটা খুলে গিয়েছিল, আবার সেটাকে সেলাই করা হয়েছিল। দেখে মনে হচ্ছে হাতে সেলাই করা হয়েছে।
পোয়ারো জোরে শ্বাস ফেললেন। পরে বললেন আমার কাছে এসব ধাঁধাঁর মতো লাগছে। জ্যাপ বিরক্ত হয়ে বললেন–আপনার মতলব কি বলুন তো? সামান্য একটা বকলস নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি করতে চাইছেন? পোয়ারো হেসে বললেন, ঠিক তাই। জ্যাপ বললেন–এতে গণ্ডগোলের কি আছে? পোয়ারো বললেন–সেটাই আমি বোঝার চেষ্টা করছি।
এরকুল পোয়ারো পোর্টারের কাছে জেনেছেন মিসেস চ্যাপম্যানের প্রিয় বান্ধবী হলেন মিসেস মারটন। তিনি থাকেন ৮২, কিং লিওপোল্ড ম্যানসনসে। জ্যাপ ও পোয়ারো সেখানে উপস্থিত হলেন।
মিসেস মারটন কথা বলায় পটু। কালো দুটি গভীর চোখ। সুবিন্যস্ত এক মাথা চুল। তার মুখ দিয়ে কথা বার করার জন্য কোনো কসরতের প্রয়োজন হল না। কোনোরকম ভূমিকা ছাড়াই জ্যাপ সরাসরি তাকে প্রশ্ন করলেন মিসেস সিলভিয়া চ্যাপম্যান কি আপনার পরিচিত?
সিলভিয়া চ্যাপম্যান? ভদ্রমহিলা একটু ভাবলেন। তারপর বললেন হ্যাঁ, তাকে চিনি। মাঝে মধ্যে সন্ধ্যেবেলায় ব্রিজ খেলতাম আমরা, একসঙ্গে আমরা দু’জনে ছবিও দেখেছি কতবার, কেনাকাটাও করেছি দু’জনে। কিন্তু, বলুন তো কি হয়েছে? তার কোনো অঘটন ঘটেনি তো? জ্যাপ তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, না, না ওসব কিছু হয়নি। আপনি বিচলিত হবেন না।–যাক শুনে আশ্বস্ত হলাম। সত্যি কথা বলতে কি, কিছুক্ষণ আগে একটা খবর আমার কানে এল। এক ডাকপিওন বলছিল কোনো ফ্ল্যাট থেকে একটা মৃতদেহ পাওয়া গেছে। তবে নোকমুখে শুনেছি তাই বিশ্বাস করতে পারছি না। জ্যাপ বললেন মিসেস চ্যাপম্যান সম্পর্কে আপনি কি জানেন? বিশেষ কিছুই না। তিনি চলে যাবার পরও কিছু শুনিনি। তিনি হঠাৎ চলে যান, তাই বোধহয় আমাকে বলার সুযোগ পাননি। এছাড়া আমাদের রোজার্সে যাবার কথা ছিল। মিসেস চ্যাপম্যান মিস সেইনসবারি সীল সম্পর্কিত কোন কথা আপনাদের কাছে বলেছেন?
-নামটা যেন চেনা চেনা লাগছে। কোথায় মনে হয় শুনেছি। জ্যাপ রুক্ষস্বরে বললেন কাগজে দেখতে পারেন। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে এই খবরটি কাগজে ছাপা হচ্ছে। হা, হা মনে পড়েছে। নিরুদ্দেশের কলামে দেখেছি। তবে আপনি বলছেন চ্যাপম্যান ওই মহিলাকে চেনেন। অসম্ভব কথা, সিলভিয়া কখনো ওই নাম আমাদের কাছে বলেননি, অফিসার। মিসেস মারটন, মি. চ্যাপম্যান সম্পর্কে কিছু জানেন? মিসেস মারটনের মুখ রক্তশূন্য হয়ে গেল। কোনোরকমে ঢোক গিলে তিনি বললেন, মিসেস চ্যাপম্যান একবার বলেছিলেন তার স্বামীকে ব্যবসার খাতিরে দেশের বাইরে প্রায়ই যেতে হয়। তিনি যে সংস্থায় চাকরি করতেন, সেই সংস্থার তৈরি অস্ত্র সারা ইউরোপের বাজারে চড়া দামে বিক্রি হত। তাই মি. চ্যাপম্যানকে বেশির ভাগ সময় ইউরোপে থাকতে হত।