কার কাছে আপনি শুনেছেন?
–মি-রেজিনাল্ড বার্নেসের মুখে শুনেছি। ক্যানেল গার্ডেন রোড, ইলিংসে তার বাড়ি।
জ্যাপ সন্দিগ্ধ মনে বললেন তিনি জানাতে পারেন। যখন তিনি স্বরাষ্ট্র দপ্তরের সচিব ছিলেন, তখন তিনি এদের খুব কাছ থেকে দেখেছেন।
–আপনি মানতে পারছেন না।
এসব আমার ডিপার্টমেন্টের আওতায় পড়ে না। এসব থাকতে পারে। কিন্তু তারা সব ক্ষেত্রে সফল হতে পারে না।
পোয়ারো একথার কোনো জবাব দিলেন না। বেশ কিছুটা সময় কেটে গেছে। হঠাৎ জ্যাপ বললেন–আমাদের হাতে আরও কিছু তথ্য এসেছে। ওই মহিলার সঙ্গে আগে থেকেই মি. অ্যামবেরিওটিসের পরিচয় ছিল। তারা দুজনে একই দিনে একই জাহাজে ভারত থেকে এসেছিলেন। তবে অ্যামবেরিওটিস ফার্স্ট ক্লাসের যাত্রী ছিলেন। আর উনি ছিলেন সেকেণ্ড ক্লাসের। এতে সন্দেহ করার মতো কিছু নেই। তবে ওই মহিলার সঙ্গে লোকটির দেখা হয়েছিল তার মৃত্যুর কয়েকদিন আগে। এক মধ্যাহ্নভোজের আসরে। সম্ভবত সেটাই ছিল তাদের শেষ দেখা।
–তাহলে বলছেন দু’জনের মধ্যে একটা যোগসূত্র ছিল?
–হয়তো ছিল–তবে আমার ধারণা অন্য। কোনো মিশনারী এরকম জঘন্য ব্যাপারে জড়িত থাকতে পারেন না।
আপনার মতে অ্যামবেরিওটিস ওই ব্যাপারে জড়িত?
— হ্যাঁ, ঠিক তাই। মধ্য ইউরোপে তার কিছু বন্ধু ছিল। তাদের সঙ্গে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। ভুলে যাবেন না গুপ্তচর বৃত্তি তার পেশা ছিল।
–এ বিষয়ে আপনি নিশ্চিত?
–অবশ্যই। তিনি নিজে কোনো নোংরা কাজে লিপ্ত ছিলেন না। তার কাজ ছিল খবর দেওয়া নেওয়া। কিন্তু তাকে প্রমাণের অভাবে ধরা যেত না। কিন্তু এই চক্রের সঙ্গে মিস সীল যুক্ত ছিলেন না।
পোয়ারো তীব্রস্বরে বললেন ভুলে যাবেন না, মিস সীল বহু বছর ভারতে বসবাস করেছিলেন।
জ্যাপ বললেন–আমি ভাবতে পারছি না অ্যামবেরিওটিস ও মিস সীল একসঙ্গে থাকতে পারেন?
পোয়ারো বললেন–আপনি নিশ্চয় জানেন না, মিস সীল ও মৃতা মিসেস অ্যালিস্টেয়ার ব্লাস্টের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল। তারা দুজনে খুব ভালো বন্ধু ছিলেন।
জ্যাপ বললেন–আমি বিশ্বাস করি না তারা দুজনে দুই মেরুর বাসিন্দা। আপনি বিশ্বাস না করতে পারেন। তবে মি. ব্লাস্ট নিজের মুখে একথা বলেছেন আমাকে।
জ্যাপ বললেন–ওহ, মি. ব্লাস্ট বলেছেন? তা উনি এসব জানতে পারেন। সত্যিই যদি মিস সীল মারা যান অথবা জীবিত থাকেন তাহলে কোথায় আছেন তিনি? গত মাসে কাগজে ছাপা হয়েছে তার ছবি ও বিবরণ।
–আপনার লোকেরাও তার সন্ধান করতে পারেনি? অনেক জায়গায় খোঁজ করেছে। ইংল্যাণ্ডের প্রতিটি লোককে ছবি দেখিয়ে জিজ্ঞেস করেছে, মাঝবয়সি জলপাই রঙের কার্ডিগান পরা কোনো মহিলাকে দেখলে ছুটে গেছে তার কাছে। ছবির সঙ্গে ওই মহিলার মিল খোঁজার চেষ্টা করেছে। যেখানে যেখানে মিস সীলের যাওয়ার সম্ভাবনা সেখানে সেখানে আমার লোক গেছে। ইয়র্কসায়ার থেকে লিভারপুল, কোথাও বাদ রাখেনি। ওই মহিলার বিবরণ অনুযায়ী কেউ কোনো খবর দিলেই আমার লোকেরা সেখানে গিয়ে হাজির। তল্লাসি চালিয়েছে কিন্তু সব পরিশ্রম বিফল হয়েছে।
পোয়ারো সহানুভূতি জানালেন। জ্যাপ আবার বলতে শুরু করলেন ভদ্রমহিলা খুব ভালো মানুষ ছিলেন। আমার কাছে খবর আছে তার অতীত জীবনেও কোনো কলঙ্ক ছিল না। অথচ তিনি বেপাত্তা।
পোয়ারো বললেন–অবশ্যই এর পেছনে কোন চাল আছে।
জ্যাপ বললেন–আপনি বলতে চাইছেন উনি মি. মর্লেকে গুলি ক. পাকতে পারেন। অথচ আপনি জানেন উনি চলে যাওয়ার পরেও অ্যামবেরিওটিস মর্লেকে জীবিত দেখেছেন।
পোয়ারো তীব্র প্রতিবাদ করে বললেন–আমি একথা বলিনি।
জ্যাপ বললেন–তাহলে আপনি বলতে চাইছেন মর্লের ব্যাপারে অ্যামবেরিওটিস মিস সীলকে কিছু বলেছেন। সে যাতে বাইরের কাউকে জানাতে না পারে তাই তাকে সরিয়ে দেওয়া হল। পোয়ারো বললেন–এসব কোনো পাকা খেলোয়ারের কাজ। আর এর সঙ্গে অনেকেই জড়িত আছে। তা না-হলে এক নিরীহ সহজ সরল দাঁতের ডাক্তারকে বেঘোরে প্রাণ দিতে হত না।
জ্যাপ বললেন–রেজিনান্ড বার্নেসকে একদম পাত্তা দেবেন না। উনি আজেবাজে খবর সংগ্রহ করেন। উনি লোককে ঠকিয়ে আনন্দ পান। গুপ্তচরগিরি ও রাজনীতির বুলি আওড়ানো ছাড়া ওনার কাছে আর কিছু পাবেন না। জ্যাপ এবার উঠে দাঁড়িয়ে বললেন–চলি বন্ধু, ও নিয়ে আর বৃথা চিন্তা করবেন না। যথাসময়ে সব জানতে পারবেন। জ্যাপ বিদায় নিলেন। পোয়ারোর চোখ গেল সামনের টেবিলের দিকে। ভ্রু কুঁচকে তিনি সেদিকেই তাকিয়ে রইলেন কিছুক্ষণ। তিনি ভাবছেন, অনেকগুলো নাম সংগ্রহ করা হয়েছে। তাদের সম্পর্কে বহু তথ্যও এসেছে হাতের মুঠোয়। তবুও বার বার মনে হচ্ছে কি যেন একটা বাদ যাচ্ছে। ঠিক মতো সাজাতে পারছেন না কেসটা। এরপরের কাজটাইবা কি হবে? কিছুই বুঝতে পারছেন না। চিন্তারা সব জট পাকিয়ে যাচ্ছে তাঁর মাথার ভেতর।
সন্ধ্যার একটু পরেই পোয়ারো একটি দুঃসংবাদ পেলেন। জ্যাপ টেলিফোনে সেই সংবাদ দিয়েছেন। মিস সেইনসবারি সীলের খোঁজ পাওয়া গেছে। তবে তিনি মৃত। এখুনি তাকে কিং লিওপোল্ড ম্যানসনস, ব্যটারসি পার্ক, পঁয়তাল্লিশ নম্বর ফ্ল্যাটে হাজির হতে হবে। মিনিট পনেরোর মধ্যে রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লেন এরকুল পোয়ারো। কিং লিওগোল্ড ম্যানসানসের সামনে এসে দাঁড়ালেন।