জেন ঠোঁট কামড়ে বলল–আশ্চর্যজনক ঘটনা কিনা তাই হয়তো…..।
–এতে বোঝা যায় আপনি মি. মর্লের কথা আগেই জানতেন, আপনি আশা করেছিলেন ওর বাড়িতে কিছু একটা অঘটন ঘটবে। তবে মি. মর্লের নয়, আপনার কাকার কোনো ক্ষতি হতে পারে। এমন একটা আশঙ্কা আপনার ছিল। তাই এমন কিছু আপনি জানেন যা আমরা এখনও জানি না। সেদিন মি. মর্লের চেম্বারে যারা ছিলেন তাদের সবার সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়েছে। কথাও বলেছি। সেদিন যারা ওখানে ছিলেন তাদের কোনো একজনের সঙ্গে আপনার নিয়মিত যোগাযোগ আছে। আমার ধারণা তিনি হলেন আমেরিকান ভদ্রলোক হাওয়ার্ড রেইকস। পোয়ারো একটু থেমে আবার বললেন আমি তার সঙ্গে দেখা করেছি। সাংঘাতিক মানুষ তিনি এবং সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
জেন বিষণ্ণ সুরে বলল–ঠিক আছে, মঁসিয়ে পোয়ারো, আপনার কাছে আমি হার মানলাম। আপনি সঠিক পথে এগোচ্ছেন।
জেন সামনের দিকে একটু ঝুঁকে বসল। তারপর নিচু স্বরে বলতে থাকল–আমি সব বলছি। আমি হাওয়ার্ড রেইকসকে পাগলের মতো ভালবাসি। আমার মা সব জানতেন। তাই তিনি পছন্দ করতেন না যে আমি ওর সঙ্গে মেলামেশা করি। আমাকে এখানে আনার পিছনে মায়ের দুটি উদ্দেশ্য ছিল। একটি হল রেইকসের কাছ থেকে আমাকে দূরে রাখা। অন্যটি হল অ্যালিস্টেয়ার কাকা মারা যাবার পর তার সব সম্পত্তি অধিগ্রহণ করা, আমার কাকিমা রেবেকা আর্নহোস্টের বোন হলেন আমার মায়ের মা। অ্যালিস্টেয়ার কাকা নিঃসন্তান। এছাড়া তাদের আমরা ছাড়া কোনো আত্মীয়স্বজন নেই। তাই মায়ের দাবি একমাত্র উত্তরাধিকারী হিসেবে আমাকে তার সম্পত্তি দিতে হবে। তবে পদমর্যাদায় কোনো দিনই আমরা কাকার সমকক্ষ হতে পারব না।
জেন কিছু একটা ভেবে নিয়ে বলে চলল–আপনাকে ঠিক বোঝাতে পারছি না। এতদিনের সব পরিকল্পনা হাওয়ার্ড ভেস্তে দিতে চায়। সব ও ঘৃণা করে। আমি অ্যালিস্টেয়ার কাকাকে ভালোবাসি, তবে মাঝে মধ্যে তার আচরণ আমাকে দ্বিধা বিভক্ত করে তোলে। তখন ভাবি হাওয়ার্ডের কথাই ঠিক। তাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়াই উচিত। তা–হলে আমরা উন্নতির মুখ দেখতে পাব না। উন্নতির পথের কাঁটা হয়ে রয়েছেন তিনি।
–মি. রেইকসের মৃত্যুদশী হয়েই কি আপনার মধ্যে পরিবর্তন এসেছে?
–হয়তো তাই, আবার হয়তো না। হাওয়ার্ড উগ্র প্রকৃতির মানুষ। অ্যালিস্টেয়ার কাকার কথা শুনলে হয়তো ওকে পাল্টানো যেত। ওরা বিশ্বাস করে পুরোনো ধ্যান ধারণায় চললে আমাদের দেশ আর্থিক দিক থেকে দুর্বল হয়ে পড়বে। তাই পিছনে না তাকিয়ে এগিয়ে চলতে হবে আমাদের। সেই কারণে প্রথমেই সরতে হবে অ্যালিস্টেয়ার কাকাকে।
–খুবই চিত্তাকর্ষক মতবাদ। –আপনিও আমাকে ভুল বুঝছেন, মঁসিয়ে পোয়ারো।
হয়তো আমার বয়স হয়েছে, তাই ওদের কাছে আমার মতো বুড়োদের স্বপ্ন অতীত ইতিহাস হয়ে যায়।
পোয়ারো মাথা চুলকে বললেন–সেদিন মি. রেইকস কেন দাঁতের ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলেন? দাঁতের কোনো সমস্যা?
না, সেটা নয়। আমার ইচ্ছে ছিল তার সঙ্গে কাকার আলাপ করিয়ে দেওয়া। আলাপ হলে ও বুঝতে তিনি কত ভালো মানুষ, তিনি ঘৃণার পাত্র নন। এছাড়া আর কোনো পথ ছিল না আমার কাছে। কেন না মা জানতে পারলে সব পণ্ড করে দিতেন।
তারপর আপনার ভয় পাবার কারণ কি ছিল?
জেন চোখ দুটো বন্ধ করল। কোনোরকমে বলল–কারণ হল, মাঝেমধ্যে হাওয়ার্ড বড় নিষ্ঠুর হয়ে যায়। সে তখন বদ্ধপরিকর
–একেবারে শেষ করে দেবার।
জেন আর্তনাদ করে উঠল
না, না।
০৪. সাত, আট, সাজানোর পাট
মিঃ মর্লের মৃত্যুর পর একমাস কেটে গেছে। আর মিস সেইনসবরি সীল? সে আজও পলাতক। তার খোঁজ এখনও চলছে।
চিফ ইন্সপেক্টর জ্যাপ বিষয়টি নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন! একদিন তিনি বিরক্ত হয়ে এরকুল পোয়ারোকে বললেন–মহিলাটি যদি জীবিত থাকেন, তাহলে কোথায় থাকতে পারেন বলে আপনার মনে হয়। আর যদি মারা যায় তাহলে তার লাশ কে গায়েব করল? আর যদি আত্মহত্যা করে থাকেন তাহলে?
পোয়ারো তার মুখ থেকে কথাটা কেড়ে নিয়ে বললেন–আবার একটা আত্মহত্যার কেস সাজাচ্ছেন, বন্ধু।
–এটা ঠিক বললেন না। আপনার বিশ্বাস মর্লেকে হত্যা করা হয়েছে। আর আমি প্রমাণ করেছি তিনি আত্মহত্যাই করেছেন।
–আপনারা পিস্তলটার মালিকের খোঁজ পেয়েছেন?
–না, ওটা বিদেশী জিনিস।
তা আমি অস্বীকার করছি না। আমার বক্তব্য ওটা এল কোথা থেকে? ওটার মালিক কে?
–ওটার মালিক মর্লে নিজে। তিনি ওটা বিদেশ থেকে কিনেছিলেন হয়তো। জাহাজে চড়ে তিনি ও তার বোন বহুবার বিদেশে বেড়াতে গিয়েছিলেন। বিদেশে গেলে বহু লোকই এরকম পিস্তল কেনেন। বিদেশী জিনিস কেনা মর্লের একটা নেশাও হতে পারে।
জ্যাপ দম নেবার জন্যে থামলেন। আবার বলা শুরু করলেন–আমি নিশ্চতভাবে কিছু বলিনি। আমি যদির ওপর জোড় দিয়ে বলছি। ধরুন যদি মিস সীল নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে থাকেন অথবা কেউ তাকে নদীতে ফেলে দিয়ে খুন করে থাকেন তাহলে তার দেহ জলে ভেসে উঠবে।
পোয়ারো তীক্ষ্ণ স্বরে বললেন–যদি না তার দেহে ভারী কিছু বেঁধে টেমসের জলে ফেলে দেওয়া হয়।
জ্যাপ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন–আপনি এটাও বলবেন, কোনো আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদীরা খুন করেছে নিশ্চয়ই?
পোয়ারো বললেন–এরকম কিছু ঘটনা খবরের কাগজে ছাপাও হয়। লোকমুখে তা প্রচারও পায়।