–তোমরা যদি ওই নোংরা ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলো তাহলে আমি এঘরে আর থাকব না।
–আমারও একমত মা, জেন অলিভেরা বলল।
মিসেস অলিভেরা এরকুল পোয়ারোকে না দেখার ভান করে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন।
মি. ব্লাস্ট হাসতে হাসতে বললেন–মঁসিয়ে পোয়ারো আপনি আসায় আমি আনন্দিত হয়েছি। আপনাকে আমার ভাইঝি জেন আমন্ত্রণ জানিয়েছে। ওর সঙ্গে আপনার আগেই পরিচয় হয়েছে।
সেই মুহূর্তে জেন বলল–কাগজে নিরুদ্দেশ কলামে যে মহিলার নাম বেরিয়েছে তার সম্বন্ধে কিছু বলার ছিল। মিস সীল নাকি কি যেন নাম ওই মহিলার?
পোয়ারো বললেন–সেইনসবারি সীল।
মিস অলিভেরা নাক কুঁচকে বলল–কি বিচ্ছিরি নামরে বাবা, তাই মনে রাখতে পারছি না। কাকা তুমি বলবে না আমি বলব?
–ওই গল্পটা তুমি ভাল রপ্ত করেছে, মামনি। তাই তুমিই বলো।
জেন একবার পোয়ারোর দিকে তাকাল। তারপর বলতে শুরু করল–ব্যাপারটার মধ্যে তেমন কোনো বিশেষত্ব নেই হয়তো। তবুও আপনাকে ডেকে এনেছি। কারণ আপনার এ কাহিনি জেনে রাখা উচিত।
–হুঁ বলুন, আমি শুনতে আগ্রহী।
–আমি তিন মাস আগে ঘটা একটা ঘটনার কথা বলছি। আমি কাকার সঙ্গে সেদিন বেরিয়েছিলাম রোলসে চড়ে। কথা ছিল তিনি ৫৮ কুইন শার্লট স্ট্রিটে নামবেন আর আমি যাব রিজেন্ট পার্কে। সেখানে আমার এক বন্ধু থাকে। গাড়ি গিয়ে থামল ৫৮ কুইন শার্লট স্ট্রিটে। কাকা গাড়ি থেকে নামলেন। আর সেই মুহূর্তে ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলেন এক ভদ্রমহিলা, মধ্যবয়স্কা ওই মহিলার পরনে ছিল ডবল ছাঁটের পোশাক। তিনি কাকার দিকে ছুটে এসে বললেন, ওহ, মি. ব্লাস্ট, আমাকে চিনতে পারছেন? কাকার ভাবভঙ্গী দেখে আমি বুঝতে পারলাম তিনি ওই মহিলাকে চিনতে পারছিলেন না।
মি. ব্লাস্ট বললেন, সত্যিই আমি সব কথা ভুলে যাই। জেন আবার বলতে শুরু করল, কাকা যেন চিনতে পেরেছেন এমন ভাব করে। বলল, ওহ ঘঁ, অবশ্যই। মহিলা আবার বললেন, আপনার স্ত্রীকে আমি বহুদিন থেকে চিনি। সে আমার খুব ভাল বন্ধু ছিল।
মি. ব্লাস্ট বিষণ্ণ সুরে বললেন–চাঁদা নেওয়ার জন্য সবাই ওরকম কথা বলে থাকে। সেদিনও পাঁচ পাউণ্ড চাঁদা দিয়ে রেহাই পেয়েছিলাম।
পোয়ারো জিজ্ঞেস করলেন–ওই ভদ্রমহিলার কথা সত্যি? উনি কি আপনার স্ত্রীকে চিনতেন?
চিনতেও পারেন। তবে বন্ধু বলতে পারব না। মিশনের কাজে তাকে দেশের বাইরেও যেতে হয়। সেখানে কোনো অনষ্ঠানে আলাপ হয়েছিল হয়তো।
জেন অলিভার দ্রুত বলে উঠল–রেবেকা কাকিমার সঙ্গে ওর বন্ধুত্ব ছিল তা কখনোই বিশ্বাসযোগ্য নয়। এটা তোমার সাথে কথা বলার একটা অজুহাত মাত্র। মি. ব্লাস্ট সায় দিয়ে বললেন–তা হবে হয়তো। পোয়ারো জানতে চাইলেন–ওই মহিলার সঙ্গে আর কোনোদিন আপনার দেখা হয়েছিল?
মাথা ঝাঁকিয়ে ব্লাস্ট বললেন–ওকথা কবেই আমি ভুলে গিয়েছি। ইদানীং পেপারে তার খবর ছাপা হয়েছে তা শুনেছি।
জেন ধীরে ধীরে বলল–মঁসিয়ে পোয়ারোর ব্যাপারটা জানা দরকার ভেবেই আমি ফোন করেছিলাম।
পোয়ারো হাসি মুখে বললেন–ধন্যবাদ মাদামোয়াজেল, এরপর ব্লাস্টকে উদ্দেশ্য করে বললেন মি. ব্লাস্ট আপনি খুব ব্যস্ত মানুষ, আপনার অনেকটা সময় অপচয় করেছি, আর নয়। এবার আমি উঠব।
জেন বলল–চলুন আমি আপনাকে এগিয়ে দিয়ে আসছি।
পোয়ারোর মুখে মুচকি হাসি। তারা দুজনে নিচে নেমে এলেন। জেন একটা ঘর দেখিয়ে বলল–এই ঘরে একবার আসুন।
পোয়ারো জেনের পেছন পেছন ঘরটিতে গিয়ে প্রবেশ করলেন। ঘরটি খুবই ছোট্ট।
জেন এবার পোয়ারোকে সরাসরি প্রশ্ন করল–তখন ফোনে বললেন আপনি আমার ফোনের অপেক্ষায় ছিলেন? কিন্তু কেন?
পোয়ারো দ্রুত বললেন–ওটা কথার কথা ছিল, মাদামোয়াজেল।
–মানে হল এই, ওই মহিলার বিষয়ে আমি কিছু জানাতে চাইব তা আপনি আগেই ভেবে রেখেছিলেন।
তাহলে বলুন সেইনসবারি সীল সম্বন্ধে ওই তুচ্ছ খবর আমাকে দিলেন কেন? কেন স্কটল্যাণ্ড ইয়ার্ডকে জানালেন না? আছে আপনার কোনো ব্যাখ্যা এই বিষয়ে?
–ঠিক আছে, মঁসিয়ে পোয়ারো। আপনি আর কি জানতে পেরেছেন?
আমি জানি আপনি আমার ব্যাপারে কৌতূহলী। আর যখন জানতে পারেন আমি হর্বোন প্যালেস হোটেলে গিয়েছিলাম তখন থেকেই ছুতো খুঁজছিলাম কিভাবে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করা যায়। একথা শুনে জেনের চোখ মুখ রক্তহীন ফ্যাকাশে হয়ে গেল। পোয়ারো তার দিকে একদৃষ্টিতে চেয়ে বললেন মি. হাওয়ার্ড রেইকস সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানতে আপনি আগ্রহী ছিলেন।
জেন অবাক হবার ভাব করে বলল–লোকটা কে জানতে পারি কি?
পোয়ারো জেনের ছলনা ধরতে পারলেন। তিনি বললেন আমাকে উত্তেজিত করে লাভ নেই। আমি যা জানি সব বলব। তবে তা অনুমানসাপেক্ষ। সেদিনের কথা আপনার মনে আছে নিশ্চয়। যেদিন আমি ও আমার বন্ধু চিফ ইন্সপেক্টর জ্যাপ প্রথম এখানে। এসেছিলাম। আপনি আমাদের দেখে চমকে উঠেছিলেন। আপনার অনুমান আপনার কাকার কিছু হয়েছিল। কেন, এরকম ধারণা হয়েছিল আপনার সেদিন?
কারণ তিনি একজন বিখ্যাত মানুষ। তাই ঈর্ষা করেই হোক বা রাগেই হোক তাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে চায় অনেকে। হার্জো স্লোভাকিয়ার ঋণের পর কাকাকে কত রকম ভয় দেখানো চিঠি দেওয়া হয়েছিল। এমনকি তাকে মেরে ফেলার জন্য ডাকে বোমা পাঠানো হয়েছিল।
এরকুল পোয়ারো বললেন–দন্ত চিকিৎসক মি. মর্লেকে, কে বা কারা গুলি করে, সেকথা চিফ ইন্সপেক্টর জ্যাপ আপনাকে বলেছিলেন। আপনি গম্ভীর মুখে উত্তর দিয়েছিলেন, এ অসম্ভব। মনে কি পড়ে আপনার মাদামোয়াজেল?