–একজন মোটাসোটা ভদ্রলোক ছিলেন। তিনি চলে যেতে আমি একাই ছিলাম।
সাড়ে বারোটায় একজন ভদ্রমহিলা সেখানে গিয়েছিলেন। তাকে কি আপনি দেখেছিলেন?
-না। সংক্ষেপে জবাব দিল ফ্র্যাঙ্ক কার্টার।
–তাহলে আপনি সাড়ে বারোটার আগেই চলে এসেছিলেন, তাই না?
হবে হয়তো। ঘড়ি দেখা আমার অভ্যেস নেই। তাই সময়টা বলতে পারব না।
পোয়ারো ফ্র্যাঙ্ককে অপলক দৃষ্টিতে পরখ করছিলেন। ওর অস্থিরতা তাঁর দৃষ্টি এড়ালো না। তিনি বুঝতে পারলেন ও একটা কথাও সত্যি বলছে না। তাই ও মনে মনে ভয় পেয়েছে।
পোয়ারো নরম সুরে বললেন মিস নেভিলের কাছে জানতে পারলাম আপনি একটা ভাল চাকরি পেয়েছেন। মাইনেও বেশ ভাল।
-হ্যাঁ, সপ্তাহে দশ পাউণ্ড, খারাপ নয় নিশ্চয়ই? আমারও যে ভাল কাজ জোগাড় করার যোগ্যতা আছে, সেটা জানাতে পারলাম না মি. মর্লেকে, এই দুঃখটা আমার রয়ে গেল।
–তা ঠিক। আশা করি পরিশ্রম করতে হয় না খুব বেশি?
–তেমন নয়।
কাজটা ভাল?
–খুব ভাল নিঃসন্দেহে। ব্যঙ্গের সুরে বলল, আমার অদম্য কৌতূহল ছিল বেসরকারি গোয়েন্দারা কিভাবে তদন্তের কাজ করে তা প্রত্যক্ষ করার। শার্লক হোমসের মতো গোয়েন্দা এখন আর দেখা যায় না। সব গোয়েন্দাই এখন বিবাহবিচ্ছেদের কাজ করেই খুশি।
এরকুল পোয়ারো বিরক্তির সুরে বললেন আমি বিবাহ বিচ্ছেদের তদন্ত করি না।
–অবিশ্বাস্য! আপনার সংসার খরচ জোগানের উৎস কি?
–আছে কোনো রহস্য।
গ্ল্যাডিস নেভিল বলল–কেন? মঁসিয়ে পোয়ারো, আপনি তো রাজা মহারাজা, স্বরাষ্ট্র দপ্তর আর ডাচেসদের কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। একথা মি. মর্লের মুখেই শুনেছি আমি।
হাসি মুখে পোয়ারো বললেন অসংখ্য ধন্যবাদ, মাদামোয়াজেল।
একরাশ চিন্তা মাথায় নিয়ে বাড়ি ফিরে এলেন এরকুল পোয়ারো। চিফ ইন্সপেক্টরকে ফোন করলেন। বললেন–বন্ধু, প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি বিরক্ত করা জন্য গ্ল্যাডিস নেভিলের পাওয়া টেলিগ্রামটার খোঁজ নিয়েছিলেন? কে করেছে? কোথা থেকে এসেছে?
জ্যাপ বললেন–খুনের চিন্তা এখনও মাথা থেকে বের হয়নি দেখছি। হ্যাঁ, খোঁজ পেয়েছি। বুদ্ধি খাঁটিয়ে এই টেলিগ্রামটা করা হয়েছিল। মিস নেভিলের দিদিমা থাকেন সমারসেটের রিচবোর্নে। টেলিগ্রামটা পাঠানো হয়েছিল লণ্ডনের শহরতলি রিচবোর্ন থেকে। এরকুল পোয়ারো উৎসাহিত হয়ে বললেন–হুঁ, খুবই পাকা বুদ্ধির কাজ। তাড়াহুড়োয় দেখলে রচবার্নকে রিচবোর্ন ভাবা খুবই স্বাভাবিক। আচ্ছা এই টেলিগ্রাম সম্পর্কে আপনার যুক্তি কি?
–কিছুই না। নিছক তামাশা। একাজ কে করতে পারে বলে আপনি ভাবেন?
–কে আবার? মানসিক বিকারগ্রস্ত কেউ। লোক ঠকাতেই যে আনন্দ পায়।
–আর কাজটা সেদিনেই করতে হল যেদিন মি. মর্লে ইঞ্জেকশান দিতে ভুল করলেন।
আপনি যেহেতু ঘটনাটাকে খুন বলে ভেবেছেন তাই রহস্যের গন্ধ পাচ্ছেন। তা না হলে এত সাধারণ ব্যাপার, সেদিন মিস নেভিল অনুপস্থিত। তাই মর্লেকে একা হাতেই সব রোগীকে দেখতে হয়েছে। ব্যস্ত হাতে কাজ সারতে হয়েছে। তাই তার ভুল হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
-আপনার ব্যাখ্যা আমার মনঃপুত হল না।
–আমি বেশ বুঝতে পারছি, আপনার এই সন্দেহ ঘটনার মোড়কে অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিচ্ছে। মি. মর্লেই মিস নেভিলকে ছলনা করে বাইরে পাঠিয়েছিলেন। তাই ইচ্ছাকৃতভাবে অ্যামবেরিওটিসকে অতিমাত্রায় ওষুধ প্রয়োগ করেছিলেন। এতে তার মৃত্যু হয়। সুতরাং এটা কোনো দুর্ঘটনা নয়। যুক্তিটা এবার বোধগম্য হল আপনার?
না, মানতে পারলাম না। অ্যামবেরিওটিসের মৃত্যুর কারণ অন্য হতে পারে।
-না, আপনার ধারণা ভুল। আমি যেটুকু জেনেছি, তা হল তিনি স্যাভয় হোটেল থেকে বের হননি। তার কাছে কেউ আসেননি। নিজের ঘরে বসে মধ্যাহ্নভোজ সেরেছেন। আর পোস্ট মর্টেম রিপোর্টেও এটাই উল্লেখ আছে, তার পেটে কোনো ওষুধ ছিল না। তাকে ইঞ্জেকশান করেই হত্যা করা হয়েছে। অতএব এটাই প্রকৃত ঘটনা। এই যুক্তি অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনারও মেনে নিয়েছেন।
–আর যে মহিলা বেপাত্তা তার সম্পর্কে তিনি কি মত প্রকাশ করেছেন?
–মিস সীল? না, এখনও তার খোঁজ-খবর চলছে। পোয়ারো বিদ্রুপের সুরে বললেন, অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনারের কি স্থির বিশ্বাস ওই ভদ্রমহিলা নিরুদ্দেশ হয়েছেন?
-হ্যাঁ, তারও ওই একমত। তবে জীবিত অথবা মৃত যে অবস্থাতেই হোক তাকে আমরা খুঁজে বের করব। কিন্তু এখনও পর্যন্ত মৃতের তালিকায় তাকে রাখেনি।
-কেন?
কারণ তার দেহ কোথাও না কোথাও পাওয়া যেত।
জ্যাপ, তাহলে কি বুঝব, আপনারা সব সমস্যার সমাধান সহজেই করতে পারেন?
বুঝতে পারছি, আপনার অনুমান যে খুন হয়েছে।
–আপনি কি জোর দিয়ে বলতে পারেন বেশির ভাগ নিরুদ্দিষ্ট মানুষকে খুঁজে পেয়েছেন আপনারা?
–চেষ্টা করি, মেয়েদের ক্ষেত্রে বলতে পারি, অন্তত দশজনের মধ্যে আটজনের খোঁজ পাওয়া গেছে। দেখা গেছে তিনি হয়তো কোনো পুরুষ বন্ধুর সঙ্গে পালিয়ে গেছেন।
তাহলে সত্যিই মিস সীলকে খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা আছে?
–আমরা তার ছবি পাঠিয়ে দিয়েছি বিভিন্ন সংবাদ পত্রে, তার বর্ণনা দিয়ে ছবি ছাপা হবে। বি.বি.সি.র-ও সাহায্য চেয়েছি আমরা। ঠিক খুঁজে বের করব।
–এতে কাজ হলেও হতে পারে। ঠিক আছে বন্ধু। বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত। ফোন রেখে দিলেন পোয়ারো। গম্ভীর মুখে সোফায় গিয়ে বসলেন।