–সত্যিই কি কেউ আছে?
লজ্জায় রক্তিম হয়ে গেল গ্লাডিসের সমস্ত মুখ। সে মুখ নিচু করে বলল না, না, আসলে বেশ কিছুদিন হয়ে গেছে তার চাকরি নেই সে বেকার তাই সে সন্দেহপ্রবণ হয়ে উঠেছিল। যত উদ্ভট চিন্তা ভাবনা তার মাথায় ঘুরপাক খেত।
পোয়ারো হেসে বললেন–তাই সেদিন আপনাকে না পেয়ে সে অস্থির, উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছিল।
হ্যাঁ, সে একটা নতুন চাকরি পেয়েছিল। সপ্তাহে দশ পাউণ্ড করে বেতন পাবে। সেই আনন্দের খবর আমাকে জানানোর জন্য ছুটে এসেছিল। ও জানতো আমি সে সময় মি. মর্লের দন্ত চিকিৎসালয়ে থাকি তাই সেখানে গিয়েছিল। তাছাড়া খবরটা মি. মর্লেকে শোনানোর আগ্রহ ছিল তার কিছুদিন আগে তিনি ফ্র্যাঙ্ককে যাচ্ছেতাই বলে অপমান করেছিলেন। সেই আঘাত ও ভুলতে পারেনি। এমনটা ওর সম্পর্কে আমাকে নানা কথা বলে আমার মন বিষিয়ে দিয়েছিলেন।
পোয়ারো দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন–আপনার বন্ধুর সঙ্গে আমার পরিচয় করিয়ে দিন; তাকে আমার কিছু জিজ্ঞাস্য আছে মিস নেভিল।
-ঠিক আছে আঁসিয়ে পোয়ারো। তবে রবিবার ছাড়া তার সঙ্গে দেখা করা সম্ভব নয়। তার রবিবার ছুটি থাকে। সে দিনই সে এখানে আসে। আর সপ্তাহের দু’দিন বাইরে বাইরে ঘুরে কাজ করে। তবে ফ্র্যাঙ্ক লন্ডনের একটা ঠিকানা দিয়েছে আমাকে। আমার প্রয়োজন হলে সেই ঠিকানায় আমি চিঠি পাঠাই। ওরা সেটা ফ্র্যাঙ্কের হাতে পৌঁছে দেয়।
–ওহ, সেই নতুন চাকরি? আচ্ছা কাজটা কি?
মিস নেভিল আমতা আমতা করে বলল–মানে, আমি ঠিক জানি না। হবে হয়তো কোনো কেরানি বা সেক্রেটারির চাকরি।
পোয়ারো আর কথা না বাড়িয়ে অবাক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে রইলেন।
মিনিট কয়েক কেটে গেছে। হঠাৎ মনে পড়ার মতো করে বললেন–তাই না। আসুন না আপনারা দু’জনে, মধ্যাহ্নভোজের নিমন্ত্রণ রইল। খাওয়ার ফাঁকে আপনাদের দু’জনের সঙ্গে হেনরি মর্লের মৃত্যু রহস্য নিয়ে কিছু আলোচনা করা যাবে।
গ্ল্যাডিস সম্মত্তি জানিয়ে বলল–ঠিক আছে, আমরা যাচ্ছি, আমার মনে হয় ফ্রাঙ্কেরও আপনার সঙ্গে কথা বলতে ভালো লাগবে।
পরদিন রবিবার। দুপুর বারোটা। লোগানস কর্নার হাউস। এরকুল পোয়ারো আগেই সেখানে গিয়ে হাজির হয়েছিলেন। তারপর এল মিস গ্ল্যাডিস নেভিল। সঙ্গে ফ্রাঙ্ক কার্টার। পোয়ারো তাকে দেখেই চিনতে পারলেন।
মাঝারি চেহারার এক তরুণ। হাবভাবে প্রগলভতা ফুটে উঠেছে। কোনো কারণে বিব্রত বোধ করলে চোখ দুটো তার অস্বস্তিকরভাবে চঞ্চল হয়ে ওঠে। তারা পোয়ারোর পাশাপাশি দুটি চেয়ারে এসে বসল। গ্ল্যাডিস দু’জনের পরিচয় করিয়ে দিল। গোড়াতেই তার মন সন্দিহান হয়ে উঠেছিল। তাই অসহিষ্ণু স্বরে বলল–আপনার আমন্ত্রণ আমি উপেক্ষা করতে পারিনি। তবে আশ্চর্যও কম হইনি। গ্ল্যাডিস আমাকে কোনো কথাই বলেনি।
পোয়ারো হাসতে হাসতে বললেন–গতকাল ঠিক করা হয়। মিস নেভিল, মি. মর্লের মৃত্যুতে অত্যন্ত নার্ভাস হয়ে পড়েছিল। তাই ভাবলাম এ বিষয়ে আমরা একসঙ্গে যদি কিছু কথা বলি।
ফ্র্যাঙ্ক কার্টার তীক্ষ্ণ স্বরে বাধা দিয়ে বলল–কি! মি. মর্লের মৃত্যু? শুনে শুনে কান পচে গিয়েছে। আমি তোমাকে কত বার বলেছি ওকে ভুলে যেতে গ্ল্যাডিস।
বিরক্ত হয়ে গ্ল্যাডিস বলল–আঃ ফ্র্যাঙ্ক, এভাবে বলছ কেন? জানো তো উনি আমাকে একশো পাউণ্ড দিয়ে গেছেন। কাল রাতে মিসেস মর্লের কাছ থেকে জানতে পেরেছি।
ফ্র্যাঙ্ক দমে গিয়ে বলল–তা অস্বীকার করছি না। এর বিনিময়ে তোমাকে প্রচণ্ড পরিশ্রম করতে হত। আর উনি হয়েছেন লাভবান।
–তা করেছেন, তবে আমার উপযুক্ত বেতন দিতে উনি কার্পণ্য করেননি কখনও।
–আমি বিশ্বাস করি না। তুমি সরল বলে ওকে চিনতে পারোনি। তা নাহলে আমার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে তোমাকে চাপ দিতেন না উনি।
–তিনি ভুল করেছিলেন।
-না, না তিনি জেনে বুঝেই করেছিলেন। উনি মারা গেলেন, না-লে আমি সেদিন যা খুশি দু-চার কথা শুনিয়ে আসতাম।
এতক্ষণ এরকুল পোয়ারো ওদের দুজনের কথা চুপচাপ শুনছিলেন। এবার তিনি জেরা শুরু করলেন মি. মর্লের মৃত্যুর দিন সকালে আপনিও সেখানে উপস্থিত ছিলেন?
ফ্র্যাঙ্ক কার্টার কর্কশ স্বরে বলল–হ্যাঁ, গিয়েছিলাম। এর থেকে আপনি কি প্রমাণ করতে চাইছেন? তাছাড়া আমি গিয়েছিলাম গ্ল্যাডিসের সঙ্গে দেখা করতে।
–আপনার সঙ্গে কি মিস নেভিলের দেখা হয়েছিল?
না, ওই ছোকরা চাকরটা জানায়, সে আসেনি।
–তারপর আপনি কি করলেন? চলে এসেছিলেন?
–না, বসেছিলাম। আমার ইচ্ছে ছিল মি. মর্লের সঙ্গে দেখা করার। তাকে বলতাম, আপনি জঘন্য খারাপ লোক। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যে কথা বলে গ্ল্যাডিসকে প্ররোচিত করেছেন। আমি ভাল একটা চাকরি পেয়েছি। সুতরাং ও আপনার এখানে আর কাজ করবে না। আজই চাকরি ছাড়ার নোটিশ দেবে।
–সত্যিই আপনি তার সাথে দেখা করে এসব কথা বলেছিলেন?
–না, ওই ঘরটায় বসে থেকে আমার দমবন্ধ হয়ে আসছিল, তাই তাঁর সঙ্গে দেখা না করে চলে এসেছিলাম।
কখন গিয়েছিলেন এবং কখন চলে এসেছিলেন, ঠিক সময়টা বলুন তো মি. কার্টার।
–ঠিক সময়টা আমার এখন আর মনে নেই। তবে মনে হয় যখন গিয়েছিলাম তখন বারোটা বেজে গিয়েছিল। কখন বেরিয়ে এসেছিলাম সেটা মনে নেই।
–আপনি যখন ওয়েটিং রুমে বসেছিলেন তখন সেখানে আর কে কে ছিলেন?