এদিক ওদিক মাথা নেড়ে রেইকস বললেন–আমি আপনাকে বিশ্বাস করি না। আপনি ব্লাস্টের নিয়োগ করা গোয়েন্দা। তাকে আপনি বাঁচাতে সাহায্য করবেন। কিন্তু অকৃতকার্য হবেন। তাকে আমরা বাঁচতে দেবো না কিছুতেই। ওকে মরতেই হবে। এই পচা ঘূণ ধরা অর্থনীতির অবসান হবে, নতুন সূর্য উঠবে। মাকড়সার জালের মতো চারদিক ঘিরে রয়েছে ধনী ব্যাঙ্কাররা। এদেরই মতো একজন অ্যালিস্টেয়ার ব্লাস্ট। সেই আমাদের সামনে বাঁধার প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুরোনো সব নিয়ম নীতি বিসর্জন দিতে হবে। কেউ আটকাতে পারবে না। কি কিছু বুঝেছেন?
পোয়ারো দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। উঠে দাঁড়িয়ে বললেন–বুঝতে পারছি আপনি একজন আদর্শবাদী, যাকে কোনো মৃত্যু বিচলিত করতে পারে না।
–রেইকস বললেন–কে এক দাঁতের ডাক্তার তার মৃত্যুতে আমার কি আসে যায়? পোয়ারো করুণ সুরে বললেন–এতে আপনার কিছু আসে যায় না, তবে আমার অবশ্যই যায়। আর এখানেই আমাদের দুজনের মধ্যে পার্থক্য।
পোয়ারো বাড়ি ফিরে এলেন। সেখানে তার জন্য একটা চমক অপেক্ষা করছিল।
পোয়ারোকে দেখে তার পরিচারক জর্জ বলল–স্যার, এক ভদ্ৰমিহলা এসেছেন। তাকে বসার ঘরে বসিয়ে রেখেছি। দেখে মনে হল উনি কোনো কারণে ভীত সন্ত্রস্ত। পোয়ারো আন্দাজ করার চেষ্টা করলেন কে হতে পারে? মিস সীল কি? না, তার ধারণা ভুল প্রমাণিত হল। তিনি বসার ঘরে ঢুকে চমকে উঠলেন। মিস গ্ল্যাডিস নেভিল। যে একদা মৃত মি. মর্লের সেক্রেটারী ছিল।
মিস নেভিলের চোখ গেল পোয়ারের দিকে। সে উঠে দাঁড়াল। তারপর বিষণ্ণ কণ্ঠে বলল–ওহ, মঁসিয়ে পোয়ারো, আপনাকে বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত। আপনার মহামূল্যবান সময়ের কিছুটা আমাকে দিতে হবে। জানি আপনি ব্যস্ত মানুষ, তবুও অনুরোধ করছি, একটু সময় যদি দিতে পারেন।
ইংরেজদের সম্পর্কে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকেই পোয়ারো জানতে চাইলেন আপনাকে কি এক কাপ চা দিতে বলবো, মিস নেভিল?
উচ্ছ্বসিত হয়ে গ্ল্যাডিস বলল–হ্যাঁ, দিলে ভালোই হয়। আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ, মঁসিয়ে পোয়ারো।
এরকুল পোয়ারো জর্জকে চা আনতে হুকুম করলেন। জর্জ চা দিয়ে গেল। মিস নেভিল চায়ে চুমুক দিলেন, সে যেন আগের সত্ত্বায় ফিরে এল। এবার বলল গতকালের ইনকোয়েস্ট আমাকে ভীষণ দুর্ভাবনায় ফেলেছে স্যার।
পোয়ারো শান্ত কণ্ঠে বললেন সেটাই স্বাভাবিক।
আমাকে সাক্ষ্য দেবার জন্য ডাকা হয়নি তবুও আমি বাধ্য হয়েই মিস মর্লের সঙ্গে গিয়েছিলাম। কেননা মিস মর্লে, মি রেইলির সঙ্গে যেতে রাজী ছিলেন না, তাই আমাকে নিয়ে গিয়েছিলেন। পোয়ারো বললেন–আপনার কর্তব্য আপনি করেছিলেন।
হ্যাঁ, আপনি ঠিক বলেছেন। আমার কর্তব্য। বেশ কয়েক বছর মি. মর্লের কাছে চাকুরিরতা ছিলাম আমি। এই দুর্ঘটনা আমাকে আঘাত দিয়েছে। আমার মন এমনিতেই ভেঙে পড়েছে, তার ওপর এই ইনকোয়েস্ট আরও খারাপ করে দিয়েছে।
–তা বটে।
মিস নেভিল পোয়ারোর আরও কাছে এগিয়ে এল। তারপর নিচু গলায় বলল–ওই ইনকোয়েস্টে যেসব যুক্তি দেখানো হয়েছে সেটা পুরোটাই মিথ্যে মঁসিয়ে পোয়ারো। এর মধ্যে গভীর একটা ষড়যন্ত্র আছে।
–আপনার কি মনে হয়, মাদামোয়াজেল?
–আমার মনে হয় ওরা যা বলছে তা ঠিক নয়। চিকিৎসায় গাফিলতি কখনও মি. মর্লে করেননি। ভুলবশতঃ কোনো ওষুধ প্রয়োগ করে রোগীর ক্ষতি করা তার পক্ষে অসম্ভব। হ্যাঁ, আমি স্বীকার করছি, হয়তো কোনো কোনো রোগী কড়া ইনজেকশন সহ্য করতে পারে না। তবে তা ঘটে যাদের হার্ট দুর্বল তাদের ক্ষেত্রে। তবে আমি নিশ্চিত মাত্রা বেশি হওয়া অবাস্তব কথা। ডাক্তারেরা কখনও এ ধরনের ভুল করতে পারেন না।
পোয়ারো মাথা ঝাঁকিয়ে বললেন–আমিও বিশ্বাস করি না। আপনি কী এসব কথা ইনকোয়েস্টে বলেছেন?
মাথা নেড়ে মিস নেভিল বললেন–না, আমি বলিনি, কারণ আমি ইচ্ছে করেই কেসটাকে জটিল করতে চাই নি। তবে আমার স্থির বিশ্বাস মি. মর্লে কখনও ভুল করে বা ইচ্ছে করে এমন জঘন্যতম কাজ করতে পারেন না। সে একটু থামলো। পোয়ারোর মুখভঙ্গী জরিপ করে আবার বলতে শুরু করলো, তাই আপনার কাছে ছুটে এসেছি, মঁসিয়ে পোয়ারো। কেননা আপনি সরকারি পক্ষের কেউ না। বেসরকারি রহস্য সন্ধানী আমার মনে হল কাউকে কিছু বলতে হলে আপনাকেই কেন বলবো না। আপনি নিশ্চয়ই বিশ্বাস করবেন। ফুঙ্কারে উড়িয়ে দেবেন না। পোয়ারো সায় দিয়ে বললেন, আপনাকে যে টেলিগ্রাম পাঠিয়ে ডাকা হয় সে ব্যাপারে কিছু কথা কিছু বলুন।
সচকিত হয়ে মিস নেভিল বললেন–আসলে আমি ওই টেলিগ্রাম নিয়ে ভাবছি না। কারণ যে এটা পাঠিয়েছে তিনি আমার সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। এমনকি আমার দিদিমা কোথায় থাকেন তাও তিনি জানেন।
হ্যাঁ, আপনার ঘনিষ্ঠ কেউ। হয়তো বন্ধু বা ওই বাড়িতে বসবাসকারী এমন কেউ।
আমার কোন বন্ধু নেই যিনি এতবড় রসিকতা করতে পারেন। তবে আমি এটাও ভাবছি মি. মর্লে কি ওই টেলিগ্রম পাঠিয়েছিলেন? কেন এই কথা ভাবছেন? ফ্রাঙ্ক কার্টারকে বিয়ে করতে তিনি আমাকে নিষেধ করেছিলেন। তার পরামর্শ আমি গ্রাহ্য করিনি। আমি ফ্র্যাঙ্কের বাগদত্তা। তাই তিনি চেয়েছিলেন আমাকে ফ্রাঙ্কের থেকে দূরে রাখতে। তাঁর আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর আমাকে টেলিগ্রাম করবেন তা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। আমি সমারসেট গিয়েছিলাম। সেকথা শুনে ফ্রাঙ্ক রেগে গিয়েছিল। তার ধারণা আমি অন্য কারোর সঙ্গে বেড়াতে যাব বলে আমি নিজেই একাজ করেছি।