–হুম। জ্যাপের গলায় উৎকণ্ঠা ঝরে পড়ছে। তিনি বললেন, দেখছি কি করা যায়। সকালটা ইনকোয়েস্টের জন্য ব্যস্ত থাকব। পরে প্লেনগোরি কোর্ট হোটেলে যাব আমি।
চিফ ইন্সপেক্টর জ্যাপ ও এরকুল পোয়ারো প্লেনগোরি হোটেলে হাজির। তারা ড্রইং রুমে ম্যানেজার মিসেস হ্যারিসনের জন্য অপেক্ষারত। হঠাৎ জ্যাপ প্রশ্ন করলেন–কী অদ্ভুত ব্যাপার? মহিলা কেন পালাতে গেলেন বলুন তো?
পোয়ারো হেসে বললেন–তাহলে ব্যাপারটা অদ্ভুত বলে মনে হচ্ছে তো, বন্ধু?
ঠিক সেই মুহূর্তে তাদের সামনে এসে দাঁড়ালেন মিসেস হ্যারিসন। তাঁকে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই তিনি সজল নয়নে বলতে লাগলেন, কেন যে মিস সীল অদৃশ্য হয়ে গেলেন সেটা কিছুতেই ভেবে পাচ্ছি না আমরা। কি যে হল তার। কোনো দুর্ঘটনা? এদিক ওদিক লোক পাঠিয়েছি খবরের জন্যে কিন্তু কেউ তার সন্ধান আনতে পারেনি। খুব ভালো মানুষ ছিলেন। আরামপ্রিয়ও বটে।
জ্যাপ অনুরোধের সুরে বললেন–দয়া করে আপনি যদি অনুমতি দেন তাহলে আমরা মিস সীলের ঘরটি দেখতে পারি, মিসেস হ্যারিসন। ম্যানেজার ভদ্রমহিলা ঘাড় নেড়ে সায় দিলেন স্বচ্ছন্দ্যে যেতে পারেন।
জ্যাপ ও পোয়ারো এলেন যে ঘরে মিস সীল থাকতেন। তাদের দুজোড়া চোখ লাটুর মতো ঘরের চারদিকে ঘুরে গেল। ঘরের এককোণে দুটো সুটকেস রয়েছে। রয়েছে একটি দেয়াল আলমারী। তাতে রাখা আছে বেশ কিছু চটকদার। পোশাক বিছানার ওপর পড়েছিল রাত পোশাক। ড্রেসিংটেবিলের তলায় দেখা যাচ্ছে কয়েক জোড়া জুতো। একজোড়া অক্সফোর্ডের, দুজোড়া ভেড়ার চামড়ার তৈরি, মার্টিনের একজোড়া নতুন জুতো রয়েছে। এসব দেখতে দেখতে পোয়ারো ভাবছিলেন ভদ্রমহিলা বেরোনোর আগে জুতোর ছেঁড়া বকলেসটা সেলাই করিয়েছেন কিনা।
জ্যাপ ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার টেনে খুললেন। তার মধ্যে কিছু চিঠিপত্র ছিল। তিনি সেগুলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলেন। এরকুল পোয়ারো কয়েকটা ড্রয়ার খুলে দেখার চেষ্টা করলেন। তার একটিতে ভর্তি কিছু পশমী অন্তর্বাস আর একটিতে রয়েছে এক জোড়া পুরনোমোজা।
জ্যাপ প্রশ্ন করলেন–কিছু কি পেলেন? না বৃথাই পরিশ্রম হল?
পোয়ারো ওই মোজা জোড়া হাতে নিয়ে বললেন–সস্তা রেশমী জিনিস, দাম হবে জোর দুশিলিং। লম্বায় ন’ ইঞ্চির মতো।
জ্যাপ বললেন আমার অবস্থাও ওই একইরকম। এই ড্রয়ার থেকে পাওয়া গেল ভারত থেকে আসা দুটি চিঠি, দাঁতব্য প্রতিষ্ঠানের দুখানা রসিদ। মহিলার চরিত্রে কোনো কলঙ্ক নেই। সবই স্বচ্ছ নির্মল।
পোয়ারো বিমর্ষভাবে মন্তব্য করলেন কিন্তু পোশাকের ক্ষেত্রে কুরুচির পরিচয় দিয়েছেন।
জ্যাপ বললেন–সম্ভবতঃ পোশাককে ভোগের উপকরণ হিসেবেই দেখেন তিনি। জ্যাপ তাঁর নোটবইতে দুটো ঠিকানা লিখে নিলেন। হ্যাঁম্পস্টেডের ঠিকানা। শুনেছি এদের সঙ্গে মিস সীলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। এদের কাছ থেকে কিছু খবর পাওয়ার আশা আছে।
প্লেনগোরি কোর্ট হোটেল থেকে তেমন কিছু উত্তেজক তথ্য পেলেন না জ্যাপ ও পোয়ারো। কেবল তিনি বেরিয়ে যাওয়ার সময় তার বন্ধু মিসেস বোলিথোর সঙ্গে দেখা করে গেছেন। বলে গেছেন, ডিনারের আগেই তিনি ফিরবেন। প্লেনগেরি কোর্টে একটি প্রথা চালু আছে। সেটি হল কেউ বাইরে খাবার খেলে তা আগে জানাতে হবে। মিস সীল কিন্তু তা করেননি। এর থেকে প্রমাণিত হয়, তাঁর ফিরে আসার কথা মাথায় ছিল। অথচ তিনি ক্রনওয়েল স্ট্রীটে গিয়ে আত্মগোপন করেন।
জ্যাপ ও পোয়ারো ঠিকানা খুঁজতে খুঁজতে এসে পৌঁছলেন ওয়েস্ট হ্যামস্টেডেঠিকানাটা মিস সেইনসবারি সীলের ঘর থেকে পাওয়া গিয়েছিল। একটি চিঠিতে ঠিকানাটি উল্লিখিত ছিল। শান্ত নিরিবিলি পরিবেশ। বাড়িটিও বেশ মনোরম গথিকে তৈরি। এই বাড়ির বাসিন্দারা হলেন অ্যাডমস পরিবারের সদস্যরা। এদের মার্জিত ভদ্র ব্যবহার সকলকে মুগ্ধ করে। যৌথ পরিবার। বহু বছর ভারতে বসবাস করেছিলেন। মিস সীলের সঙ্গে হৃদ্যতা ছিল। তবে কোনো উপকার করার আশ্বাস পাওয়া গেল না তাদের থেকে।
কিছু দিন ধরেই সেইসবরি সীল ওয়েস্ট হ্যামস্টেডে যান নি। ইস্টারের ছুটিতেও যাননি। অন্তত এক মাস তাদের সঙ্গে মিস সীলের যোগাযোগ বন্ধ। তারা জানতে পেরেছেন ওই সময়ে তিনি রাসেল স্ট্রীটের একটি হোটেলে থাকতেন। মিসেস অ্যাডামস সেখানকার ঠিকানা দিলেন। এছাড়া তার কয়েকজন অ্যাংলো ইন্ডিয়ার বন্ধুরও ঠিকানা পাওয়া গেল অ্যাডামস পরিবার থেকে। তারা থাকেন ট্ৰীথ্যাসে।
পোয়ারো ও জ্যাপ এবার চললেন ট্ৰীথ্যাসের পথে। দেখা করলেন মিস সীলের পরিচিতজনদের সঙ্গে। কিন্তু তাদের কাছ থেকেও মিস সীলের কোন হদিশ পেলেন না তারা। অন্তত এমন একটা কু যেটা তাদের কাজে সাহায্য করতে পারে। জ্যাপ হতাশা হয়ে বললেন–আর একটাই জায়গা আছে মিস সীলের যাবার মতো। পোয়ারো আশ্চর্য হয়ে বললেন–সেটা কোথায়?
–হাসপাতালে চলুন সেখানে একবার যাওয়া যাক। সেখানে গিয়েও তাদের নিরাশ হতে হল। কারণ সেদিন হাসপাতালে সেরকম কোন মানুষকে আনা হয়নি। এ যেন কর্পূরের মতো উড়ে যাওয়া, কোথায় যে অদৃশ্য হয়ে বসে আছেন তিনিই জানেন!
পরদিন সকাল। এরকুল পোয়ারো হাজির হলেন হাবোর্ন প্যালেস হোটেলে, মি. হাওয়ার্ডের আস্তানা। তিনি ভাবলেন ইনিও না অদৃশ্য হয়ে যান। পোয়ারো জানতে পারলেন মি. হাওয়ার্ড হোটেলেই আছেন এবং তিনি প্রাতরাশে ব্যস্ত।