আপনি কি ভাবছেন ঘটনাটা এই রকমই কিছু? পোয়ারো জানতে চাইলেন।
মি. বার্নেস চশমা মুছতে মুছতে বললেন–হ্যাঁ, তাই। এইসব মানুষদের ধরা কঠিন। এদের বাঁচানোর মতো বড় বড় চাই আছে। এটা নিশ্চয়ই বিশ্বাস করবেন, দাঁতের ডাক্তারের চেয়ারে বসলে সব মানুষই নিজেকে অসহায় বোধ করেন। এই অভিজ্ঞতা আপনার এর আগে অবশ্যই হয়েছে। তারা মর্লেকে একটা কুপ্রস্তাব দিয়েছিল। মর্লে সেই প্রস্তাবে রাজি হননি। এছাড়া মর্লে তাদের বিষয়ে অনেক কিছু জেনে ফেলেছিলেন। সেই কারণে মর্লেকে তাদের হাতে মরতে হল।
–পোয়ারোর চোখে প্রশ্ন ঝিলিক দিল–তা হবে, তারা কারা?
তারা হল সেই দল যারা এসবের পিছনে আছে। অবশ্য এদের একজন নেতা আছে। সেই আড়ালে থেকে কলকাঠি নাড়ছে।
কে সে? আপনি কি তাকে চেনেন?
–আন্দাজ করতে পারি। তবে আমার আন্দাজ ভুলও হতে পারে।
–আপনি কি রেইলির কথা ভাবছেন?
–আপনি ঠিক ধরেছেন। আমার মনে হয় মর্লেকে দিয়ে ওরা কাজটা করাতো না। কাজটা করতে রেইলি। মলে শুধু রোগীকে রেইলির হাতে তুলে দিতেন। আর ওই দুঃখজনক পরিস্থিতির শিকার হতেন বিখ্যাত ব্যাঙ্কার অ্যালিস্টেয়ার ব্লাস্ট। হতভাগ্য দাঁতের ডাক্তার মর্লে নিজের দোষ কবুল করতেন আদালতে এবং দুঃখ প্রকাশ করতেন। যেমন সাধারণত হয়ে থাকে। পরে পেশা থেকে অবসর নিয়ে অন্যত্র কোনো ব্যবসা ফেঁদে বসতেন। হাজার হাজার পাউণ্ড আয় করে সম্পত্তির পরিমাণ বাড়াতেন। এটা কোনো গল্প কথা নয়, এটাই বাস্তবচিত্র।
–আপনার মত যদি মেনে নিই তাহলেও অ্যামবেরিওটিস যে এই খুনের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন, তার প্রমাণ কি?
–তা আমি বলতে পারব না। তবে দলের হয়ে কাজ করত এতে আমি নিশ্চিত। আর মর্লেকে ফাঁসানো হয়েছে।
–আপনার সন্দেহ ঠিক হলে এরপরের ঘটনা কি হতে পারে তাও আপনি জানেন?
মি. বার্নেস শান্ত ধীর স্থির হয়ে বললেন–ওরা আর একবার চেষ্টা করবে। ওদের হাতে সময় কম। এ ব্যাপারে পুলিশকে সন্দেহের বাইরের মানুষদের ওপরও নজর রাখতে বলুন। তার নিজের পরিজনরা, পুরোনোদিনের চাকররা, ডাক্তারখানায় যে ওষুধ বানায় তাকে, যে মদের জোগান দেয় তাকেও সন্দেহের তালিকায় রাখুন। ব্লাস্টকে খুন করার বিনিময়ে বহু কোটি টাকা পাওয়া যাবে। যা দিয়ে সারা জীবন স্বচ্ছন্দে কাটানো যাবে।
–এতটা হবে আশা করেন?
–এর থেকে বেশি কিছুও হতে পারে। প্রথম থেকেই রেইলির কথা আমার মাথায় ছিল। আইরিশ বিপ্লববাদী ব্যক্তিত্ব বলে?–না, তা নয়। মর্লের ঘরের কার্পেটের একটা দাগ আমাকে প্রথম দিন থেকেই ভাবচ্ছে। মনে হয় সেটা মৃতদেহ টেনে নিয়ে যাওয়ার দাগ। কোনো রোগীর মলেকে গুলি করার ইচ্ছে থাকলে তাহলে সে সেটা সার্জারিতে করতে পারত, টেনে নেবার দরকার হত না। আর এর থেকে আমার সন্দেহ তীব্র হয় যে সার্জারিতে না করে অফিস ঘরেই তাকে গুলি করা হয়েছে। এর থেকে প্রমাণিত হয় খুনি বাইরের কেউ নয়, তার বাড়িরই কেউ।
মি. বার্নেস উচ্ছ্বসিত হয়ে বললেন–নিখুঁত আপনার কল্পনাশক্তি।
এরকুল পোয়ারোর যা জানার তা জানা হয়ে গেছে। এবার তিনি উঠে দাঁড়ালেন। বার্নেসের সঙ্গে করমর্দন করে বললেন আমার সঙ্গে সহযোগিতা করার জন্য ধন্যবাদ। তদন্তের খাতিরে প্রয়োজন পড়লে আপনাকে ডেকে পাঠাব। এরকুল পোয়ারো এবার এলেন প্লেনগাউরি কোর্ট হোটেলে। সেখানে মিস সেইনসবারি সীলের সঙ্গে দেখা করেন। তার সঙ্গে কিছুক্ষণ কাটিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন তিনি। পরদিন। সকাল বেলা। চিফ ইন্সপেক্টর জ্যাপকে পোয়ারো ফোন করলেন।–গুড মর্নিং বন্ধু। আজই তো ইনকোয়েস্ট, তাই না?
-হ্যাঁ, আপনি আসছেন নিশ্চয়?
–ইচ্ছে নেই, প্রয়োজনে লাগবে না বলে? আপনারা মিস সেইনসবারি সীলকে ডেকে পাঠিয়েছেন, আশা করি?
না, ডাকছি না। তিনি আমাদের কোনো উপকারে লাগছেন না।
–কেন? তার কাছ থেকে কোনো তথ্য সংগ্রহ করতে পারেননি, তাই?
–না, আর তা পেতে আমরা আগ্রহী নই।
–আমি অবাক করা একটা খবর জানাই আপনাকে, মিস সীল নৈশভোজের আগে প্লেনগাউরি হোটেল ছেড়ে চলে যায়। আর ফিরে আসেননি।
তবে কি তিনি গা ঢাকা দিয়েছেন?
অকাট্যে ব্যাখ্যা চাই।
মি. জ্যাপের কণ্ঠস্বরে চিন্তার ছাপ। তিনি বললেন–কেন তিনি গা ঢাকা দেবেন? আমরা তাকে সন্দেহ করিনি। তাঁকে প্রশ্নবানে জর্জরিত করিনি। কলকাতায় আমরা টেলিগ্রাম করেছিলাম। তার উত্তরও পেয়েছি। গত তিন বছর ধরে তিনি ওখানে বাস করছেন। উনি আমাদের যেসব কথা বলেছেন তা সব সত্যি। বিয়ে নিয়ে একটু বিভ্রাট ঘটেছিল। তিনি একটি হিন্দু ছেলেকে বিয়ে করেছিলেন। দাম্পত্য জীবন সুখের ছিল না। তাই কয়েক বছরের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়ে যায়। মিশনারীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। এমন একজন মহিলার দ্বারা খুন করা সম্ভব নয় বলেই আমি ভেবেছি। আর এটাও হতে পারে হোটেলটা ওর ভাল লাগেনি, তাই তিনি চলে গেছেন।
তার সব মালপত্র হোটেলের ঘরে রয়ে গেছে। কিছুই তিনি নিয়ে যাননি, পোয়ারো জানালেন।
–তিনি কখন বেরিয়েছেন?
–পৌনে সাতটা নাগাদ। হোটেলের কর্মচারীরা এ বিষয়ে কোনো আলোকপাত করতে পেরেছে?
–তারা খুব উদ্বিগ্ন। ম্যানেজার মহিলা ভীষণ ঘাবড়ে গিয়েছেন। ওরা পুলিশে খবর দিয়েছে।
না, কোনো মহিলা এক রাত বাইরে কাটাতে পারেন। আবার ফিরে আসতেও পারেন। এসে যদি দেখেন তার অনুপস্থিতির জন্য পুলিশে খবর দেওয়া হয়েছে, তখন তিনি নিশ্চয়ই খুশি হবেন না। তিনি ক্ষুদ্ধই হবেন। ম্যানেজার মিসেস হ্যারিসন খুব করিৎকর্মা মহিলা। তিনি সব জায়গায় লোক পাঠিয়েছেন তাকে খুঁজতে;এমনকি হাসপাতালেও খোঁজ নিয়েছেন। যদি কোন দুর্ঘটনার কারণে মিস সীল হাসপাতালে ভর্তি হন। তিনি পুলিশ ডাকবেন বলে মনস্থির করেন। ঠিক সেই মুহূর্তে আমি ওখানে গিয়ে উপস্থিত হই। আমাকে সামনে দেখে তিনি খুশি হলেন। আমাকে যা যা ঘটেছে সব খুলে বললেন। আমি তাকে পরামর্শ দিই একজন পুলিশ অফিসারকে জানানোর জন্য।