মি. পোয়ারো সব ব্যাপারটার নিষ্পত্তি করুন।
আপনার কথা আমি ঠিক বুঝতে পারছি না, মি. জ্যাপ।
আমি বলছি, হেনরি আত্মহত্যাই করেছেন। খুন হননি, মোটিভ খুঁজে পেয়েছি।
-যেমন?
–অ্যামবেরিওটিসের মৃত্যুর পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট আমার হাতে এসে গেছে। সেই রিপোর্টে বলা হয়েছে, অতিরিক্ত অ্যাড্রিনালিন ও কোকেনের প্রয়োগে তার মৃত্যু হয়েছে। এটা তার হার্টে প্রতিক্রিয়া করেছে। আর তাতেই তিনি মারা যান। গতকাল তিনি তার শরীর খারাপের কথা বলেছিলেন আমাকে। তখন আমি তা আমলই দিইনি। ভেবেছিলাম আমাকে এড়িয়ে যাচ্ছেন। আপনি জানেন অ্যাড্রিনালিন ও কোকেনের মিশ্রণে ইঞ্জেকশান তৈরি হয়। তাঁর সেই ইঞ্জেকশান দাঁতের ডাক্তাররা মাড়ীতে দিয়ে থাকেন ফলে ওই জায়গাটা অবশ হয়ে যায়। এতে দাঁতের যে কোনো রোগের চিকিৎসা করার সুবিধা হয়। মর্লে ভুল করেছিলেন এবং সেই ভুলটাও তিনি বুঝতে পেরেছিলেন। তাই, বাস্তবের মুখোমুখি যাতে দাঁড়াতে না হয় তিনি নিজেকে গুলি করে শেষে করে দিয়েছেন।
পোয়ারো প্রশ্ন করলেন যে পিস্তল তার নিজের নয় সেটা দিয়ে?
–হয়তো ওটা তার নিজেরই। তার পরিচিত জনদের কাছে তিনি গোপন করেছিলেন। এমন তো কত কথাই অজানা থাকে। পোয়ারো সায় দিয়ে বললেন–হ্যাঁ, এটা অবশ্য ঠিক বলেছেন। জ্যাপ দৃঢ় কণ্ঠে বললেন–এই যুক্তিটা আপনি মেনে নিয়েছেন নিশ্চয়ই?
পোয়ারো বললেন–বন্ধু, এটা আমার মনঃপূত হল না। এই ইঞ্জেকশান অনেক রোগীর সহ্য হয় না। অ্যাড্রিনালিনে অনেক প্রতিক্রিয়া হয়। কোকেনের মিশ্রণে তা আরও মারাত্মক হয়। তবে ডাক্তার বা দাঁতের ডাক্তাররা সেজন্য আত্মহত্যা করে না!
অবশ্যই নয়, তবে আপনি যা অকাট্য যুক্তি দেখাচ্ছন তা সাধারণ ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। সেক্ষেত্রে সকলকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় না। রোগীদের শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে। এক্ষেত্রে মি. মর্লে ওষুধের পরিমাণ বেশি দিয়েছিলেন। অতএব মর্লে নিশ্চিত ভুল করেছিলেন। তবুও বলব এটা ভুলই। এটা অপরাধ নয়।
-না, তা বলছি না। কিন্তু এতে তার পশার কমে যেত। কোনো রোগীই আর তার কাছে ভয়ে আসবে না। হেনরি খুব অনুভূতিপ্রবণ মানুষ ছিলেন। তাই ভুলটা বুঝতে পেরে নিজেকেই দায়ী করেছেন। বাঁচার অন্য কোনো পথ নেই ভেবেই এহেন আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন।
তবুও পোয়ারো বাধা দিয়ে বললেন–মর্লে কি তাহলে এ সম্পর্কে কিছু লিখে রেখে যেতেন না? অন্তত তার বোনের উদ্দেশ্যে কিছু লিখতে পারনে? জ্যাপ হেসে বললেন, বুঝতে পারছি। আপনি কোনো খুনের ঘটনাকে খুন বলেই প্রমাণ করার চেষ্টা করেন। আর এই সন্দেহ আমিই আপনার মাথায় ঢুকিয়েছি, স্বীকার করছি। মনে রাখবেন, এর । অন্য কোনো ব্যাখ্যা থাকতে পারে।
–হুঁ, তা থাকতে পারে। আমিও ভেবেছি এ বিষয়ে, তবে তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। আপাতদৃষ্টিতে ধরলে মর্লেকে অ্যামবেরিওটিস গুলি করে খুন করেছেন। তারপর তিনি হোটেলে গিয়ে আত্মহত্যা করেছেন অ্যাড্রিনালিন ও কোকেন মিশ্রিত ওষুধ দিয়ে। যা তিনি মর্শের ঘর থেকে চুরি করেছিলেন। যদি আপনি এটা ভেবে থাকেন, তাহলে আমি বলব এ একেবারে অন্যায়। আমি ইয়ার্ডে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি, গ্রীসে তার একটি ছোট হোটেল ছিল কোনো একসময়। তারপর তিনি রাজনীতিতে আসেন। জার্মানি ও ফ্রান্সে গুপ্তচরবৃত্তি করে বেশ কিছু টাকা কামিয়েছেন। লোককে ব্ল্যাকমেল করতেও সিদ্ধহস্ত ছিলেন। গত বছর ভারতে গিয়ে সেখানকার ধনী লোকেদের টাকাপয়সা সম্পত্তি বেদখল করেছিলেন। তিনি একজন দুষ্কৃতি জেনেও প্রমাণের অভাবে তাকে বেশিদিন জেলবন্দী করা যায়নি। এক্ষেত্রে তেমন কিছু ঘটতে পারে। কোনো বিষয় নিয়ে মর্লেকে ব্ল্যাকমেল করতেন। মলেও সুযোগ পেয়ে অতিরিক্ত মাত্রায় তার মাড়িতে ওষুধ দিয়েছিলেন এতে লোকটার কিছু না হলেও মর্শে নিজের ভুল বুঝতে পেরেছিলেন। তাই অনুশোচনায় নিজেই নিজেকে দায়ী করেছিলেন এই জঘন্য কাজের জন্য। এবং নিঃশব্দে পৃথিবী থেকে সরে গেছেন। তবে মর্লেকে আমি খুনি বলছি না। ভুলের বশবর্তী হয়ে তিনি এই কাজ করেছেন। আমার মতের সঙ্গে একমত হয়েছে অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনারও।
পোয়ারো নরম সুরে বললেন–বুঝতে পারছি।
জ্যাপ বললেন–হয়তো আমি আপনাকে হতাশ করেছি। তবুও এবারের মতো আপনি ক্ষমা করে দেবেন, বন্ধু। জ্যাপ ফোন ছেড়ে দিতে পোয়ারো তার প্রিয় টেবিলের সামনে গিয়ে বসলেন। তিনি আধুনিক ডিজাইনের আসবাবপত্র বেশি পছন্দ করতেন। তার টেবিলটিও চমৎকার সাজানো। সেই টেবিলের ওপর একটা চার কোনা কাগজ রাখা ছিল। তাতে মর্লের সব রোগীদের নাম ঠিকানা লেখা ছিল। যেমন–
হাওয়ার্ড রেইকস? এই নামটার পাশে শুধু জিজ্ঞাসা চিহ্ন। নিচে উদ্ধৃতি দেওয়া একটি লাইন। কিন্তু এসে অসম্ভব!??
একটু গ্যাপ রেখে আবার লেখাঃ
অ্যামবেরিওটিস। গুপ্তচরবৃত্তি পেশা। সেই কারণে গতবছর ভারতে যান এবং ইংল্যাণ্ডে এখন এসেছেন। দাঙ্গা বাধাতে ওস্তাদ। এজেন্ট হিসেবে কমিউনিস্টে যোগ দিয়েছিলেন। একটু খালি জায়গার পর লেখাঃ
ফ্র্যাঙ্ক কার্টার। মর্লের অপছন্দের পাত্র। সম্প্রতি তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। কিন্তু কেন? এরকুল পোয়ারোর মাথার মধ্যে এইসব প্রশ্নের উত্তর পাক খাচ্ছিল। বাইরে জানালার সামনে একটি কাঠ ঠোকরা পাখি ঠোঁট দিয়ে ঠকঠক আওয়াজ করছিল। তিনি ওই কাগজে আরও কিছু লিখলেন : হেনরি মর্লের দন্ত চিকিৎসালয়। অফিস ঘর। কার্পেটের ওপর একটা দাগ। সম্ভাবনাময়।