সে যে ডাক্তারের চেম্বার ছেড়ে রাস্তায় বেরিয়ে এসেছিল সেটা কি জানেন? না, সেটা জানি না। তবে আমার অনুমান ডাক্তার দেখতে না পেয়েই ও চলে যায়। তখন মি. মর্লের ওকে ডাকার কথা নয়। সে সময়টা আমাকে দেওয়া হয়েছিল। তাই তার চাকর আমাকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল। ডাক্তার দেখিয়ে বেরিয়ে আসার সময় কি আপনি আবার ওয়েটিং রুমে গিয়েছিলেন মিস সীল?
না। আমার টুপি ব্যাগ সঙ্গে নিয়েই মি. মূর্লের ঘরে গিয়েছিলাম। এইরকম একটা মজার ঘটনা ঘটেছিল আমার বন্ধুর যে বেচারার নতুন টুপির ওপর একটা বাচ্চা বসে পড়েছিল। আর তাতেই টুপিটা চ্যাপ্টা হয়ে গিয়ে বিশ্রী দেখতে হয়েছিল। সেই থেকে আমি কখনো টুপি হাতছাড়া করি না।
পোয়ারো নরম সুরে বললেন, খুবই দুঃখের। মিস সীল আবার বললেন, এর জন্য কিন্তু ওই বাচ্চাটির মা দায়ী। কারণ বাচ্চাকে নজরে রাখা তার কর্তব্য। জ্যাপ বললেন, তাহলে আপনি বলছেন, ওই ঘরে একমাত্র ওই যুবকই ছিলেন? না, না, আর একজনকে দেখেছিলাম। মি. মর্লের ঘরে যখন আমার ডাক পড়েনি তখন এক বিদেশী ভদ্রলোক বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। সেই মুহূর্তে পোয়ারো বলে উঠলেন, ওই ভদ্রলোকটি আমি, মাদাম। ওহ মাপ করবেন, সেই সময় আপনাকে আমি ঠিক চিনতে পারিনি। ভুলের জন্য ক্ষমা চাইছি। ড. মলের মুখে অ্যামবেরিওটিস নামে কোনো রোগীর কথা শুনেছিলেন কি? না, না, দাঁতের ডাক্তারেরা যে প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলে থাকেন তিনিও তাই বলেছিলেন। পোয়ারোর স্মরণ এল কতগুলো কথা যা মি.মর্লে বলে থাকেন। মুখ খুলুন…………কুলকুচো করুন……..এবার আস্তে আস্তে মুখ বন্ধ করুন বেশি কথা বলবেন না……..।
জ্যাপ মিস সীলকে ইনকোয়েস্ট সাক্ষ্য দেবার কথা বলতেই তিনি দেখে বললেন। তার আপনিও দেখে বললেন। তার আপত্তি দেখে জ্যাপ নানাভাবে বোঝালেন। শেষে অনেক কষ্টে তাকে রাজি করাতে সক্ষম হলেন তিনি। জ্যাপ দেখলে মিস সীলের জীবনের নানা কথা জেনে নিলেন। মিস সীল আগে ভারতের বাসিন্দা ছিলেন। মাত্র ছ’মাস আগে ইংল্যান্ডে এসেছেন। নানা হোটেল বদল করে করে শেষে এসে উঠেছেন প্লেনগোরি কোর্টে এখানকার জলহাওয়া তার খুব পছন্দ। ভারতে বেশির ভাগই তিনি কলকাতায় কাটিয়েছেন। সেখানে মিশনের হয়ে কাজকর্ম করতেন। ছোটবেলায় অভিনয় শিখেছিলেন। শেকসপীয়ার বানডি শ র লেখা কাহিনিচিত্রে ছোট ছোট রোলে মঞ্চে অভিনয়ও করেছেন। অনর্গল ইংরাজি লিখতে ও বলতে পারতেন। অপেশাদার নাট্যদল গঠন করেছেন কর্মসূত্রে বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করেছেন। প্রেম করে বিয়ে করেছেন। আবার বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। একবন্ধুর কাছ থেকে অর্থ সাহায্য নিয়ে একটা আবৃত্তির স্কুল তৈরি করেছেন। তিনি তার কিছু কাগজপত্র জ্যাপ ও পোয়ারোকে দেখালেন। মিস সীল উৎসাহিত হয়ে বললেন, যদি সাক্ষ্য দিই তাহলে আমার নাম নিশ্চয়ই সংবাদপত্রে ছাপা হবে? তবে দয়া করে দেখবেন নামের বানানটা যেন ঠিক লেখা হয়। আমার পুরো নাম ম্যাবেল সেইনসবারি সীল। আমি যে কোন এক সময় শেক্সপীয়ারের অ্যাজ ইউ লাইফ ইট-এ অভিনয় করেছি, তা যেন ওরা লেখে। তাহলে আমি ভীষণ খুশি হব………….। ।
নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই, তাই হবে–বলতে বলতে জ্যাপ কোনো রকমে সেখান থেকে পালিয়ে এলেন, এর বিপজ্জনক দিকটাও তার অজানা নয়। জ্যাপ সোজা এসে ট্যাক্সিতে উঠলেন। কপালের ঘাম মুছলেন। তারপর বললেন–ওই মহিলা সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া মনে হয় কষ্টের হবে না। যদি সত্যি কথা বলে থাকেন। পোয়ারো মাথা ঝাঁকালেন। চিফ ইন্সপেক্টর আবার বলতে লাগলেন আমার আশঙ্কা ছিল ইনকোয়েস্টের কথায় উনি ভয় পাবেন। সব বয়স্ক মহিলাদের ক্ষেত্রে এমনটাই হয়ে থাকে। উনি অভিনেত্রী বলেই প্রচারের আলোয় আসতে চেয়েছেন। তাই আমাদের কথায় সম্মতি জানিয়েছেন। পোয়ারো বললেন আপনি কি সত্যিই ওকে সন্দেহের তালিকায় রাখলেন? সম্ভবত না। তবে আমি নিশ্চিত এটা আত্মহত্যা নয়, খুন।
যদি তাই হয়, তাহলে মোটিভ কি বুঝতে পারছেন? না, এখনও আন্দাজ করতে পারিনি। নানা কারণ থাকতে পারে। এর মধ্যে একটা হল, কোনো এক সময় মর্লে অ্যামবেরিওটিসের মেয়েকে কুপ্রস্তাব দিয়েছিলেন? পোয়ারোর মুখে কথা নেই। তিনি কল্পনার মধ্যে প্রত্যক্ষ করলেন মি. মর্লে মদিরক্ষি এক গ্রীক সুন্দরীকে তার প্রেম স্বরে জর্জরিত করছেন। পরমুহূর্তের তার ঘোর কাটল। তিনি জ্যাপকে বললেন, আপনি ভুলে যাচ্ছেন কেন মর্লের অংশীদারের কথা। তিনি বলেছেন মলের জীবনে আনন্দ বলে কিছু ছিল না। জ্যাপ বললেন, দেখি অ্যামবেরিওটিস কোনো আলোর দিশা দিতে পারেন কিনা? ট্যাক্সি এসে থামল স্যাভয় হোটেলের সামনে। ভাড়া মিটিয়ে দুজনে প্রবেশ করলেন হোটেলের ভেতরে। কাছাকাছি। কাউকেই দেখতে পেলেন না তারা। তারা রিসেপশনের দিকে এগিয়ে গেলেন। কেরানি গোছের একজন ভদ্রলোককে সেখানে দেখতে পেলেন। তিনি আপন মনে নিজের কাজ করছেন।
জ্যাপ তাকে জিজ্ঞেস করলেন মি. অ্যামবেরিওটিস কত নম্বর ঘরে আছেন? আমরা তার সঙ্গে দেখা করতে চাই। সেই ভদ্রলোক উদাস চোখে তাকিয়ে বললেন, মি. অ্যামবেরিওটিস? দুঃখিত স্যার। তার সঙ্গে দেখা হবে না। জ্যাপ রাগত স্বরে বললেন, কেন হবে না, নিশ্চয়ই হবে। এই বলে তিনি নিজের পরিচয়পত্র দেখালেন। কেরানি ভদ্রলোক বলল, আমার কথার ভুল মনে করেছেন আপনি স্যার। তিনি আর ইহ জগতে নেই। আধ ঘন্টা আগে মারা গেছেন। জ্যাপ হতাশ হয়ে বসে পড়লেন আর পোয়ারোর চোখের সামনে অন্ধকার নেমে এল।
০৩. পাঁচ ছয় কাঠি গোটাকয়
অ্যামবেরিওটিসের মৃত্যুর একদিন পর পোয়ারো জ্যাপের কাছ থেকে ফোন পেলেন জ্যাপ কর্কশ স্বরে বললেন–