জ্যাপ বললেন, আপনি কি এরকম দুঃসংবাদ আশা করেননি? মি. ব্লাস্ট?
একদম না, অবশ্য ড. মর্লের সম্পর্কে আমার বিশেষ কিছু জানা নেই। আহাম্মকের মতো নিজের গুলিতে শেষ হবার মানুষতো তিনি নন। অন্তত যেটুকু সময় আমি তাকে দেখেছি তাতে ভাবা যায় না; যমন ঘটনাও ঘটাতে পারেন তিনি। আজ সকালে তাকে কেমন দেখেছিলেন? বেশ হাসিখুশি, খোলা মেজাজেই ছিলেন, অবশ্য ডাক্তারের চেয়ারে বসার সঙ্গে সঙ্গেই আমার শরীরে কাঁপন জেগেছিল। তাছাড়া ওই বিশ্রী ড্রিল চালানো। ওটা আমি একেবারেই সহ্য করতে পারছিলাম না। তাই পারিপাশ্বিক কিছু লক্ষ্য করিনি। তবে কাজ শেষ হবার পর তার বেশ স্বচ্ছন্দ্য বোধ হয়েছিল।
আপনি এর আগেও কি মর্লের কাছে গিয়েছিলেন?
হ্যাঁ, তিন-চারবার গিয়েছিলাম। আসলে গত বছর থেকে আমি দাঁতের যন্ত্রণায় ভুগছি। কার মারফত আপনি তার কাছে গিয়েছিলেন, পোয়ারো প্রশ্ন করলেন। ভাববার জন্য সময় নিলেন মি. ব্লাস্ট। বিড় বিড় করে বললেন, আমার দাঁত ভেঙে যাওয়ায় আমি খুব কষ্ট পাচ্ছিলাম। তখন কে যেন কুইন শার্ট স্ট্রিটের ঠিকানা দিয়েছিল? কে বলেছিল মি. মর্লের কাছে যেতে? দুঃখিত, আমি কিছুতেই মনে করতে পারছি না।
পোয়ারো তাকে আশ্বস্ত করে বললেন, বেশ, মনে পড়লে আমাদের জানাতে দ্বিধা করবেন না। অবশ্যই। এটা কি গুরুত্বপূর্ণ কোনো সূত্র? ব্লাস্ট অবাক হয়ে বললেন। হলেও হতে পারে। আমরা সবকিছু গুরুত্ব সহকারে দেখছি, পোয়ারো বললেন। কোথায় কি লুকিয়ে আছে বলা মুশকিল। ব্লাস্টের কাছে বিদায় নিয়ে জ্যাপ ও পোয়ারো প্রাসাদের বাইরে বেরিয়ে এলেন। প্রাসাদের সামনে দাঁড়ানো একটি গাড়ি তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করল। অদ্ভুত ধরনের স্পোর্টিং গাড়ি।
একটি অল্প বয়সি তরুণী সেই গাড়ি থেকে নেমে এল। সে চোখ তুলতেই তিন জোড়া চোখের দৃষ্টি বিনিময় হল। তারপরেই মেয়েটি চেঁচিয়ে বলল–এই যে শুনছেন? একটু শুনুন না? দুজনে দাঁড়িয়ে পড়লেন। তাদের দুজনের চোখে জিজ্ঞাসা, মেয়েটি এগিয়ে এল। মেয়েটি কৃশকায়, দীর্ঘাঙ্গী। হাত-পায়ে একটা অবিনত্ব আছে। গায়ের ত্বক কিছুটা তাকাটে। জীবনী শক্তিতে ভরপুর। তাই কুশ্রী চেহারা চাপা পড়ে গেছে। পোয়ারোর দিকে তাকিয়ে মেয়েটি বলল, আপনাকে আমি চিনি–আপনি সেই রহস্য সন্ধানী এরকুল পোয়ারো। তাকে বেশ উত্তেজিত মনে হল।
পোয়ারো বিনয়ের সঙ্গে বললেন, আপনি ঠিক ধরেছেন, মাদামোয়াজেল। আমিই সেই অধম। আর ইনি চিফ ইন্সপেক্টর জ্যাপ। পোয়ারো জ্যাপের পরিচয় দিলেন। তরুণীর নেত্রযুগল ভয়ে বিস্ফারিত হল। সে রুদ্ধশ্বাসে বলল, আপনারা এখানে? আমার কাকার কি কিছু হয়েছে? মেয়েটির কথায় মার্কিনী টান আছে। পোয়ারো আবার প্রশ্ন করলেন, আপনার একথা মনে হওয়ার কারণ কি, মাদামোয়াজেল? মেয়েটি পোয়ারোর প্রশ্নের জবাব না দিয়ে বলল, ওঃ বাঁচা গেল। কাকা সুস্থই আছেন। জ্যাপ পোয়ারোর প্রশ্নটা ঘুরিয়ে করলেন। আপনি কি আশা করেছিলেন, মি. ব্লাস্টের কোনো অঘটন হবে? মেয়েটি এবার নিজের পরিচয় দিয়ে বলল, আমি জেন অলিভেরা। এটা আমার কাকার বাড়ি। অ্যালিস্টেয়ার ব্লাস্ট আমার কাকা হন। বাড়িতে গোয়েন্দার উপস্থিতি মনে তো ভয়ের উদ্বেক করবেই স্যার। মি. ব্লাস্টার সম্পূর্ণ সুস্থ ও বহাল তবিয়তে আছেন। আমরা এসেছিলাম অন্য কাজে। আজ সকালে কুইন শার্ট স্ট্রিটে একটা আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। সে ব্যাপারে মি. ব্লাস্ট কিছু জানেন কিনা জানতে, মিস অলিভেরা।
জেন চিৎকার করে জানতে চাইল, কে করেছে আত্মহত্যা? কেন করেছে? মি. মর্লে নামে এক দন্তচিকিৎসক। কেন করেছেন সেটা এখন বলা যাবে না। জেন অলিভেরা চিন্তাক্লিষ্ট কণ্ঠে বলল, ওহ! জ্যাপ বললেন, অদ্ভুত মহিলা তো। বাদ দিন ওসব কথা, এবার যাওয়া হবে সেইনসবারি সীলের আস্তানায় তারপর আমাদের গন্তব্য হবে স্যাভয় হোটেল। প্লেনগেরি কোর্ট হোটেল। স্বপ্নলোকিত লাউঞ্জ। কথা ছিল মিস সেইনসবারি সীল এখানে থাকবেন। জ্যাপ ও পোয়ারা হোটেলের ভেতরে ঢুকতেই দৃষ্টি গোচরে হলেন। চেয়ারে বসে চা পান করছিলেন। তাদের দুজনকে মিস সীল আগে থেকেই চিনতেন। তাই সাদা পোশাকে ওদের দুজনকে আসতে দেখে তিনি একটু সচকিত হলেন। জ্যাপ ও পোয়ারো তার সামনে যেতে তিনি বললেন, অফিসার, কথা বলার মতো নিরাপদ জায়গা এটা নয়। আপনারা কি চা পান করবেন? জ্যাপ হাত তুলে বললেন, আমি নই, মাদাম, ধন্যবাদ।
মিস সীল বললেন, ঠিক আছে। চলুন ড্রয়িংরুমে। একটা কোণ দেখে বসা যাবে। কথাটা শেষ করেই মিস সীল ড্রয়িংরুমের দিকে এগিয়ে গেলেন। জ্যাপ ও পোয়ারো তাকে অনুসরণ করলেন। কোণের দিকে দুটি সোফা তাদের নজরে পড়ল তারা সেখানে গিয়ে বসলেন। মিস সীল বলতে লাগলেন, তাহলে ইন্সপেক্টর-না, না চিফ ইন্সপেক্টর ঘটনাটা খুবই মনস্তিক তাই না? বেচারা মি. মর্লে। তিনি কি অবসাদগ্রস্ত মানসিক রোগী ছিলেন? আপনি কি তার মধ্যে কোনোরকম পরিবর্তন লক্ষ্য করেছিলেন, মিস সীল? মিস সীল চুল ঠিক করতে করতে বললেন, মানে–আমি ঠিক লক্ষ্য করিনি, তবে দেখে মনে হয়েছিল ভালই আছেন তিনি। তাছাড়া আমি ভীষণ ভীতু।
আপনি একটু মনে করে বলুন তো, সে সময় ওয়েটিং রুমে কাকে কাকে দেখেছিলেন? আমাকে একটু ভাবতে দিন–আমার যাওয়ার আগে এক তরুণ সেখানে বসেছিল। বসে থাকতে থাকতে সে অস্থির হয়ে উঠেছিল। তারপর হঠাৎ সে লাফ দিয়ে চলে গেল। তখন আমার মনে হয়েছিল সে দাঁতের যন্ত্রণায় খুব কষ্ট পাচ্ছিল।