অ্যালফ্রেড ভালো জানতে পারে, কেননা ও ভীষণ সিনেমা দেখে।
বার্নেস? উনি কোথায় থাকেন? বেঁটেখাটো একজন মানুষ, মজার মজার কথা বলে লোককে হাসাতে পারে তিনি আগে সরকারি কর্মচারী ছিলেন। ইদানীং অবসর নিয়েছেন। ইলিং-এ থাকেন।
আর মিস নেভিল? তার সম্পর্কে আপনার মত কি? জ্যাপের মুখে হাসি ঝিলিক দিয়ে উঠল।
গোল গোল চোখ করে মি. রেইলি বললেন মি. মর্লের সুন্দরী সেক্রেটারির কথা বলছেন? যার সোনালি রঙের একগুচ্ছ চুল। না, না, ওকে নিয়ে হেনরির কোনো দুর্বলতা নেই। সেদিক দিয়ে হেনরির মন পরিষ্কার ও পবিত্র। একজন মালিক কর্মচারীর নির্ভেজাল সম্পর্ক ওদের। এ বিষয়ে আমি একশো ভাগ নিশ্চিত।
জ্যাপ এই ধরণের রসিকতা একদম বরদাস্ত করতে পারলেন না। তিনি বললেন–আমি এভাবে বলতে চাইনি মি. রেইলি।
রেইলি বললেন–পরে হয়তো, আমারই বুঝতে ভুল হয়েছে। ক্ষমা চাইছি। আমি ভেবেছিলাম প্রেমঘটিত ব্যাপারে টাকাকড়ির বিষয়টা বেশি থাকে। সেটাই জানার উদ্দেশ্য ছিল আপনার। আপনাদের ভাষাতে কথা বলার জন্যে আমি সত্যিই দুঃখিত, মি. জ্যাপ।
জ্যাপ বা পোয়ারো কিছুক্ষণ কোনো কথা বললেন না। মিনিট কয়েক পরে জ্যাপ প্রশ্ন করলেন মিস নেভিল যে ছেলেটিকে বিয়ে করার অঙ্গীকার করেছিলেন তার সম্পর্কে আপনি কতটুকু জানেন?
ছেলেটির নাম ফ্রাঙ্ক কার্টার। মর্লে ওকে ভালো চোখে দেখত না। ও মিস নেভিলকে ওই তরুণের সংস্রব ত্যাগ করতে বলেছিল। এতে কার্টারের প্রতিক্রিয়া কিরূপ ছিল? স্বাভাবিক কারণেই বিরূপ হয়েছিল তাতে সন্দেহ নেই। একটু থামলেন রেইলি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে জ্যাপ ও পোয়ারোকে নিরীক্ষণ করলেন তিনি। আবার বললেন, আপনারা নিশ্চয়ই আত্মহত্যা করেছে ধরে নিয়ে তদন্তে এগোচ্ছেন, খুন নয় তো?
জ্যাপ বললেন, যদি মি. মর্লেকে খুন করা হয়, তাহলে সাহায্য করতে আপনি রাজি আছেন? রেইলি তীব্র স্বরে বললেন, না, আমার পক্ষে সেটা সম্ভব নয়। জর্জিনা পারবে আপনাকে সাহায্য করতে ও বুদ্ধিমতী, শান্ত স্বভাবের মানুষ। তবে সুযোগ পেলে নীতিকথা শুনিয়েও দেয় ও। তবে আমি সবার অলক্ষ্যে দোতলায় গিয়ে হেনরিকে গুলি করে খুন করতে পারতাম। আসলে কে এই গোবেচারাকে খুন করতে পারে তা আমার ধারণার বাইরে। তবে সে যে নিজে গুলি করে আত্মঘাতী হবে তাও আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। ওর এইরকম আচরণে আমি সত্যিই দুঃখ পেয়েছি। আমার কথায় অন্য মানে করবেন না দয়া করে। আসলে আমাদের দুজনের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব ছিল। ওর অভাব আমি কোনোদিনই পূরণ করতে পারব না। রেইলির শেষের কথাগুলোতে বিষাদের সুর ছিল।
স্যাভয় হোটেলে মি. অ্যামবেরিওটিসের রুমের টেলিফোনটা বেজে উঠল। তিনি রিসিভার তুলে হ্যালো বলতেই ও প্রান্ত থেকে উত্তর এল আমি চিফ ইন্সপেক্টর জ্যাপ বলছি। আপনি কি মি. অ্যামবেরিওটিস?
মি. অ্যামবেরিওটিস সন্দিহান হয়ে বললেন, কি ব্যাপার?
জ্যাপ বললেন, মি. মর্লের মৃত্যু বিষয়ে আপনার সঙ্গে দেখা করতে চাই?
দুঃখিত মি. জ্যাপ আজ আমার শরীর খারাপ আজ কারো সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছে নেই আমার। কথাটা শেষ করেই গম্ভীর মুখে রিসিভারটা নামিয়ে রাখলেন তিনি।
এদিকে জ্যাপের মুখে কালো মেঘের আনাগোনা। তিনি পোয়ারোর দিকে তাকিয়ে উচ্চস্বরে বললেন, আমার সঙ্গে দেখা করতেই হবে তাকে। তাকে আমি কিছুতেই পালাতে দেবো না। যে করেই হোক তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। মি. পোয়ারো আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন। ও আমাদের জালে ধরা পড়বেই। আমার একজন অনুচর আছে স্যাভয় হোটেলে। তাকে সব নির্দেশ দেওয়া আছে। সে সর্বদা তাকে অনুসরণ করবে।
পোয়ারো স্মিত হেসে বললেন, আপনি মি. অ্যামবেরিওটিসকে মি. মর্লের খুনি ভাবছেন কি? তিনি মর্লেকে গুলি করে পালিয়েছেন।
তা নয়। তবে তাকে সন্দেহের বাইরে রাখতে পারছি না। কেন না তিনিই মর্লেকে জীবিত অবস্থায় শেষ দেখেছিলেন। তাছাড়া তিনি সেদিনই প্রথম তাকে দেখাতে এসেছিলেন। ওর কথা অনুযায়ী তিনি মর্লের ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন বারোটা পঁচিশে। তিনি তখন মর্লের হাবভাবে সন্দেহজনক কিছু লক্ষ্য করেননি। আর তিনি সুস্থ ও স্বাভাবিক ছিলেন। কথাটা যদি সত্যি হয় তাহলে অন্য কথা ভাবতে হবে আমাদের। ঘটনার স্রোত কোন দিকে গেছে তার খোঁজখবর নিতে হবে। পরবর্তী রোগীর জন্যে তখন তার হাতে পাঁচ মিনিট সময় ছিল। তাহলে ওই পাঁচ মিনিটের ফাঁকে কেউ কি তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল? কে হতে পারে? রেইলি না কার্টার? এইটুকু সময়ের মধ্যে নিশ্চয় জীবিত ছিলেন না–তাহলে পরের রোগীদের জন্যে বেল বাজাতেন তিনি। অথবা আর রোগী দেখবেন না বলে মেসেজ পাঠাতেন। হয় তিনি তখন খুন হয়েছিলেন, কিংবা কেউ তাকে কিছু কথা বলে উত্তেজিত করেছিল। যার ফলে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে নিজেকে শেষ করে দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। একনিঃশ্বাসে এতগুলো কথা বলে জ্যাপ দম নেবার জন্য থামলেন।
দুজনেই কিছুক্ষণ নীরবে কাটালেন। আবার জ্যাপ বলতে শুরু করলেন, ঘটনার গতি প্রকৃতি কোন দিকে গড়িয়েছে তা জানার জন্য আমি মর্লের সব রোগীদের সঙ্গে দেখা করে কথা বলব। আমার স্থির বিশ্বাস কেউ না কেউ সঠিক পথের সন্ধান দিতে পারবে। হয়তো মলে তাদের কাউকে কিছু বলে থাকতে পারেন।