পোয়ারো জিজ্ঞেস করলেন–আচ্ছা, এর আগে কখনো রোগী নেমে আসার আগেই ঘণ্টা বেজেছিল? অ্যালফ্রেড জবাব দিল–এ্যা, স্যার এরকম মাঝেমধ্যে হয়। বেশিরভাগ সময় রোগী নেমে আসার কয়েক মিনিট পরেই স্যার ঘন্টা বাজাতেন। যদি তার তাড়া থাকে তাহলে তিনি রোগীরা তার ঘর ছাড়ামাত্রই ঘন্টা বাজাতেন।
বুঝতে পারছি, অ্যালফ্রেড আর একটি প্রশ্নের উত্তর দাও তো তুমি কি মি. মর্লের আত্মহত্যার পিছনে আশ্চর্য কিছু দেখতে পাচ্ছ?
অ্যালফ্রেড চোখ বড়ো বড়ো করে বলল–মি. মর্লে কারো হাতে খুন হননি তো স্যার?
ধর, তাই যদি হয়ে থাকে, তাহলে তুমি কি খুব অবাক হবে? তা আমি বলতে পারব, না স্যার। কে যে মি. মর্লেকে মারতে চাইবে? কি তার উদ্দেশ্য? আমার যেন কেমন সব গোলমাল হয়ে যাচ্ছে। তার মতো একজন ভদ্র অমায়িক মানুষ কার শত্রু হতে পারেন?
পোয়ারো ভারিক্কি গলায় বললেন–প্রতিটি সম্ভাবনাই আমরা অনুসন্ধান করব। তুমি আমাদের গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী। তোমার ওপর নির্ভর করছে এই কেসটা। তুমি মনে করে দেখো সকাল থেকে যা যা ঘটেছে তা সবটাই বলেছ, কিছু বাদ পড়েনি।
না–স্যার, আর কিছু মনে পড়ছে না। কোনো কথা গোপন করিনি স্যার।
বুঝলাম, তোমার কথার সূত্র ধরেই বলছি–বাড়িতে রোগীরা ছাড়া আর কেউই আসেনি আজ সকালে?
কোনো অচেনা লোক আসেনি স্যার। হা একজন যুবক এসেছিল। সে মিস নেভিলের প্রেমিক। আজ নেভিল এখানে আসেনি, তা জানতে পেরে সে খুব রাগারাগি করছিল।
জ্যাপ বললেন–যুবকটি কখন এসেছিলেন?
অ্যালফ্রেড ভ্রু-কুঁচকে মনে করার চেষ্টা করল। বলল–বারোটার কিছু পরে হবে। মিস নেভিলকে না পেয়ে মি. মর্লের অপেক্ষায় ছিল। আমি তাকে ব্যাজার মুখে পায়চারি করতে দেখে বললাম স্যার খুব ব্যস্ত, লাঞ্চের আগে তাকে পাওয়া যাবে না। শুনে ক্রুদ্ধ স্বরে বলল, এতে কিছু যায় আসে না, তাঁর সঙ্গে দেখা আমাকে করতেই হবে।
পোয়ারো জানতে চাইলেন সে কতক্ষণ অপেক্ষা করেছিল?
অ্যালফ্রেড ভয়ার্ত স্বরে বলল–ওই, সেটা তো ভুলে গেছি। পরে ওয়েটিং রুমে তাকে আমি দেখিনি। হয়তো অপেক্ষা করে করে বিরক্ত হয়ে সে চলে গিয়েছিল। ভেবেছিল পরে আরেকদিন আসবে।
অ্যালফ্রেডকে বিদায় দিয়ে জ্যাপ তীক্ষ্ণস্বরে বললেন ছেলেটাকে খুনের কথা বলা আমাদের কি উচিত হয়েছে? ও বাইরের লোকের কাছে এই কাহিনি প্রচার করে দেবে।
পোয়ারো কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললেন–প্রিয় জ্যাপ, আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন। আমার ধারণা ছেলেটি তা করবে না। ও গোয়েন্দা কাহিনি পড়ে, সে অপরাধ নিয়ে ভাবে ওর যা মনে পড়বে না এবার সেই সব অপরাধমূলক বিষয়গুলি স্মৃতির ভান্ডার থেকে বের করে আনবে।
হুঁ, মনে হচ্ছে আপনিই ঠিক পথে এগোচ্ছেন। এবার যাওয়া যাক রেইলির চেম্বারে। মি. রেইলির চেম্বার দোতলায়, পাশেই সার্জারি রুম, এই ঘরদুটি মি. মর্লের ঘরের তুলনায় বড়ো। তবে আলো খুবই কম। আর আসবাবপত্রের আধিক্য নেই বললেই চলে।
মি. রেইলির রঙ কিছুটা কালো, মি. মর্লের চেয়ে বয়সে ছোটো, ঘন এক মাথা কালো চুল অবিন্যস্ত হয়ে কপালে এসে পড়েছে। সুমধুর কণ্ঠস্বর, দুচোখে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি।
পোয়ারো ও জ্যাপ মি. রেইলিকে নিজেদের পরিচয় দিলেন। এবার জ্যাপ বললেন মি. রেইলি, আপনি নিশ্চয় আপনার অংশীদারের আত্মহত্যার ঘটনাটা শুনেছেন। আর আমরা আশা করি, এ বিষয়ে আপনি আমাদের আশার আলো দেখাতে পারতেন।
মি. রেইলি জবাব দিলেন–দুঃখিত, আপনারা ভুল জায়গায় এসেছেন। আমি আপনাদের এ ব্যাপারে কোনো সাহায্য করতে পারব না। শুধু একটা কথা বলতে পারি, হেনরি মর্লে কখনোই এমন অবিবেচকের মতো কাজ করতে পারে না। কাজটা করা আমার ক্ষেত্রে যতটা বিশ্বাস যোগ্যের, তারপক্ষে তা নয়। কারণ নিজের জীবন শেষ করে দেবার মানসিকতাই তাঁর ছিল না।
পোয়ারো জানতে চাইলেন, কেন আপনি একথা বলছেন, মি. রেইলি? কারণ আমার পাহাড় প্রমাণ দেনা, নানা সমস্যায় আমি জর্জরিত। আয়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আমি একেবারেই চলতে পারি না, কিন্তু মলে সর্বদা সতর্ক থাকনে। অনুসন্ধান করলে দেখবেন তার কোনো ঋণ নেই বা কোনো সমস্যাও ছিল না। এটা আমি হলপ করে বলতে পারি, মি. রেইলি দৃঢ়তার সঙ্গে বলে গেলেন।
জ্যাপ বললেন, প্রণয় ঘটিত কোনো সমস্যা ছিল না?
এই কথার উত্তরে মি. রেইলি দরাজ গলায় হেসে বললেন, মি. মর্লে করবে প্রেম? পাগল নাকি? ওর জীবনে আনন্দ বলে কিছু ছিল নাকি কখনো। ও তো ওর দিদির হাতের পুতুল। স্বাধীনভাবে চিন্তা করার মতো তার মনই ছিল না।
এরপর জ্যাপ আজ সকালে দেখা রোগীদের সম্বন্ধে জানতে চাইলেন, মি. রেইলির কাছে।
প্রথমেই আসে ভারী মিষ্টি দেখতে একটি ছোট্ট মেয়ে। নাম বেটি হিথ। ওর পরিবারের লোকেরা আমার বহুদিনের পরিচিত। ওদের চিকিৎসা আমি করে থাকি, এরপর আসেন সৈনিক পুরুষটি। কর্নেল অ্যাবারোক্রম্ব। তিনিও আমার বহুদিনের পুরোনো রোগী। এরপর একে একে আসেন মি. হাওয়ার্ড রেইকম ও বার্নেস।
জ্যাপ প্রশ্ন করলেন, মি. হাওয়ার্ড কে?
মি. হাওয়ার্ড সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। তিনি এর আগে কখনোও আমার কাছে আসেননি। তিনি আজ সকালে টেলিফোন করেছিলেন। আমাকে দেখানোর জন্য আসতে চেয়েছিলেন।
তার ঠিকানা?
হাবনি প্যালেস হোটেল। তার কথা শুনে বুঝলাম তিনি আমেরিকার অধিবাসী। হ্যাঁ, অ্যালফ্রেডও তাই বলেছিল।