না–স্যার।
রোগী সেজেও কেউ আসেনি?
আগে থেকে নাম না লিখিয়ে কাউকে দেখেন না মি. মর্লে। তাই সকলকেই নাম লেখাতে হয়।
পোয়ারো আবার প্রশ্ন করলেন বাইরে থেকে কেউ বাড়িতে ঢুকতে পারে?
না–স্যার, তার জন্য চাবির প্রয়োজন হয়। বিজ্ঞের মতো উত্তর দিল অ্যালফ্রেড।
তবে কি বাড়ি থেকে বের হবার অন্য কোনো দরজা আছে?
না স্যার। কিন্তু হাতল টেনে দরজা খুলে বাইরে আসা যায়। তার জন্য চাবি লাগে না।
বুঝলাম, এবার বলো তো সকালে প্রথমে কোন রোগী এসেছিল? পরে কে কে। এসেছিল?
অ্যালফ্রেড একটু ভেবে বলল–একজন মহিলা তার বাচ্চা মেয়েকে নিয়ে প্রথমে এসেছিলেন। তিনি মি. রেইলিকে দেখাতে এসেছিলেন। আর মি. মর্লেকে দেখাতে আসেন মিসেস সোপ।
পোয়ারো বললেন–এরপর।
এরপর আসেন একজন বয়স্ক মহিলা। গোলগাল চেহারা তার। তিনি একটা ডেমলারে চড়ে এসেছিলেন। তিনি চলে যেতেই এলেন একজন সৈনিক ভদ্রলোক। তারপরে এলেন আপনি, পোয়ারোকে দেখিয়ে অ্যালফ্রেড বলল।
ঠিক আছে। বলে যাও।
তারপর আসেন এক আমেরিকান যুবক…
জ্যাপ হাত তুলে বাধা দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন–আমেরিকান। তুমি বুঝলে কি করে?
হ্যাঁ–স্যার তিনি যে আমেরিকান তা ওর কথা শুনে আপনিও বুঝতে পারতেন। তাকে আসতে বলা হয়েছিল সাড়ে এগারোটার পর। সবচেয়ে আশ্চর্য হল তিনি এসেছিলেন আগে কিন্তু না দেখিয়ে চলে গিয়েছিলেন। তিনি অতক্ষণ অপেক্ষা করেননি।
পোয়ারো বললেন তাহলে উনি আমার চলে যাওয়ার পরে চলে গেছেন। কেন না আমি যতক্ষণ এখানে ছিলাম ততক্ষণ তিনি এখানে ছিলেন।
ঠিক বলেছেন স্যার। আমি পরের জনকে ওপরে পৌঁছে দেবার আগে আপনি বেরিয়ে যান। তিনি হলেন মি. ব্লাস্ট। মস্ত ধনী চমৎকার একটা দামি গাড়ি চড়ে এসেছিলেন তিনি। রোলস গাড়ি। আপনি চলে যাবার পর একজন মহিলাকে ভেতরে নিয়ে আসি। নাম তার বারি সীল মনে হয়। এরপর আমার খাবারের সময় হয়েছিল। তাই আমি খেতে রান্না ঘরে চলে যাই। খেয়ে নিচে আসতেই বেল বাজার শব্দ পাই। সেটা ছিল মি. রেইলির বেল। আমি তড়িৎগতিতে উপরে উঠে আসি। কিন্তু আমেরিকান ভদ্রলোককে খুঁজে পাইনি। ততক্ষণে তিনি চলে গেছেন। হয়তো রাগ করেই তিনি চলে গিয়েছেন। সঙ্গে সঙ্গে আমি মি. রেইলিকে জানালাম। তিনি রাগে বক বক করতে লাগলেন। এটাই তার স্বভাব, একজন পেশেন্টকেও তিনি হাত ছাড়া করতে চান না। অমনি মেজাজ তাঁর গরম হয়ে যাবে।
পোয়ারো বিরক্ত হয়ে বললেন–অত ব্যাখ্যা করতে হবে না। তুমি বলে যাও। অ্যালফ্রেড মাথা চুলকে বলল–স্যার একটু ভেবে নিই। এরপর কি হয়েছিল ঠিক মনে পড়ছে না। কিছুক্ষণ পর আবার সে বলতে শুরু করল। া হা মনে পড়েছে। মি. মর্লের বেল বাজতেই আমি মিস সীলকে ডাকতে গেলাম। তখনই দেখতে পেলাম সেই ভদ্রলোক যিনি রোলস চড়ে এসেছিলেন, তিনি চলে যাচ্ছেন। তারপর আমি মিস সীলকে মি. মর্লের ঘরে পৌঁছে দিলাম। এরপর দু’জন ভদ্রলোক এসেছিলেন। তাদের মধ্যে একজন বেঁটে। চির্চি করে কথা বলছিলেন। নামটা এখন আর মনে নেই। তিনি মি. রেইলির পেশেন্ট। আর একজন স্থুলকায়, তিনি এসেছিলেন মি. মর্লেকে দেখাতে।
মিস সীল অবশ্য বেশি সময় নষ্ট করেননি। কিছুক্ষণ পরেই তিনি মি. মর্লের ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন। তাকে বাইরের দরজাটা দেখিয়ে দিয়ে আমি চলে আসি। সেই বিদেশী ভদ্রলোককে মি. মর্লের কাছে এবং দ্বিতীয় জনকে মি. রেইলির ঘরে পৌঁছে দিয়েছিলাম যথা সময়।
জ্যাপ প্রশ্ন করলেন–তুমি সেই বিদেশী ভদ্রলোক অর্থাৎ মি. অ্যামবেরিওটিসকে চলে যেতে দেখোনি?
না স্যার, আমি ওই দুজনের কাউকেই বেরিয়ে যেতে দেখিনি। মনে হয় তারা নিজেই চলে গিয়েছিলেন।
বেলা বারোটার পর তুমি কোথায় ছিলে?
না স্যার, আমি কোথাও যায়নি। যতক্ষণ না দু’জায়গার কোথাও বেল বাজা বন্ধ হয় ততক্ষণ আমি এলিভেটরেই বসে থাকি।
পোয়ারো রসিকতা করে বললেন আমার মনে হয় তুমি সেই সময় বই পড়ছিলে, ঠিক না?
এ কথায় অ্যালফ্রেডের মুখ লাল হয়ে উঠল। সে বলল–হ্যাঁ, স্যার, কোনো কাজ না থাকলে আমি বই পড়ি। কেন স্যার, কোনো অন্যায় হয়েছে?
না, না–তুমি কোনো অন্যায় করোনি, যে বই পড়ছিলে তার নাম কি?
অদ্ভুত মজার নাম স্যার ‘পৌনে বারোটায় খুন’। একটা আমেরিকান গোয়েন্দার গল্প। ভালো গল্প স্যার, শুধু বন্দুকের লড়াই। একেবারে বন্দুকবাজদের গল্প।
পোয়ারোর ঠোঁটের কোণে হাসি। তিনি বললেন–তুমি যেখানে বসেছিলে সেখান থেকে বাইরের দরজার বেলের শব্দ শুনতে পাও?
না–স্যার শুনতে পেতাম না। কারণ এলিভেটরটা হল ঘরের পেছনে।
এবার জ্যাপ প্রশ্ন করলেন আর কে ডাক্তার দেখাতে বাকি ছিলেন?
অ্যালফ্রেডের ভ্রু-যুগল কুঁচকালো। মিনিট কয়েক ভাবল। তারপর মনে পড়ে যেতে বলল, ওহ, মনে পড়েছে। মিস সার্ডিই শেষে মর্লের ঘণ্টা ধ্বনির অপেক্ষায় আছি। কিন্তু তিনি ঘন্টা বাজাননি। মিস সার্ডি অনেকক্ষণ বসে ছিলেন। তিনি অধৈর্য হয়ে গজ গজ করছিলেন।
মি. মর্লে পরের রোগীর জন্য প্রস্তুত কিনা তা জানার আগ্রহ তোমার হয়নি? দেরি হচ্ছে বলে তুমিও একবার দেখে আসতে পারতে।
অ্যালফ্রেড জোরে জোরে মাথা নাড়ল। না–তা কখনোই সম্ভব নয়, স্যার আমি মনে করেছিলাম শেষ যিনি গেছেন তার কাজ তখনও শেষ হয়নি তাই ঘণ্টাও বাজেনি। তবে এটা সত্যি আমি আগে যদি বুঝতে পারতাম যে মি. মর্লে নিজেকে ওভাবে শেষ করে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাহলে তার সঙ্গে সঙ্গে থাকতাম।